আমার দেখায় ব্রাদার গিউম
পূর্ব প্রকাশের পর…
১. ধর্মপরায়ণ ও ধার্মিক
একজন মানুষকে আমরা তখনি ধার্মিক বলি যখন তাঁর অন্তরের-বাহিরের রূপটি একই প্রকাশ পায়। অর্থাৎ কথা-বার্তায়, চাল-চলনে, আচার-ব্যবহারে ও কাজে-কর্মে সর্বক্ষেত্রেই আধ্যাত্মিক ব্যক্তির রূপ একই দেখতে পাওয়া যায়। ব্রাদার গিউমও একজন আধ্যাত্মিক মানুষ। তিনি যে আধ্যাত্মিক মানুষ তার কথা, কাজ ও ব্যবহারের মধ্যেই আমরা দেখি। ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস রয়েছে। প্রতিদিনই তিনি ঈশ্বরের চরণে প্রার্থনা করেন ও পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উপাসনা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে তিনি উপস্থিত থাকেন। বিশেষ করে দেখা যায় কোনো যাজকীয় অভিষেক বা কোনো ব্রতীয় অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেলে সে অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হতে যথাসাধ্য চেষ্ঠা করেন।
২. সংস্কৃতি সংরক্ষণে উদারপ্রেমী
ব্রাদার একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। তিনি ইউরোপীয় সংস্কৃতির মানুষ হয়েও আদিবাসীদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ভালবাসেন। আর ভালবাসেন বলেই তিনি তাদের সংস্কৃতি যাতে হারিয়ে না যায় এর জন্য সংরক্ষণের জন্য সকল আদিবাসীদেরকে উৎসাহিত করে থাকেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত যেকোনো জায়গায় ওয়ানগাল উৎসবে প্রতিবছরই উপস্থিত হন। তাঁকে কিছু বলতে দিলে প্রথমে তিনি মান্দি গান “কাদং জা চুম চিংআদে ……” গানটি গেয়ে তার অনুভূতি তুলে ধরেন।
৩. স্বপ্ন দ্রষ্টা ব্রাদার
দুঃখে শোকে কাতর যারা তাদের তিনি সবসময়ই আশার বাণী শুনিয়ে থাকেন। যারা অর্থের অভাবে পড়াশুনা করতে পারতো না তাদেরকে স্বপ্ন দিয়ে পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। বিশেষ করে গারো আদিবাসী ভাইবোনেরা যখন বিভিন্ন সময়ে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে ভারতে চলে যেতে চেয়েছিল তখন তিনি তাদেরকে কাছে গিয়ে সান্ত¦না দিয়ে বলেছেন বাংলাদেশ তোমাদের দরকার। তোমাদের সমস্যা সবসময় থাকবে না। তোমরা বরং কিভাবে সমস্যা মোকাবেলা করে জীবন চলা যায় সেইভাবে জীবন যাপন করো। এভাবে তিনি আদিবাসী ভাইবোনদের দুর্দিনে পাশে এসে সান্তনা দিয়েছেন এবং দুঃখ ও কষ্টের সহভাগী হয়েছেন, আর্থিক সহায়তাও দিয়েছেন।
৪. মানবদরদী মানুষ
একদিন ব্রাদারের কাছে আমার ছোট বোনের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আমি গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে শুন্য হাতে ফিরিয়ে দেন। আমার মতো অনেকেই তিনি বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে যারা অভাবী দীনদুঃখী তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবন্ধী যাদের দেখার মতো কেউ নেই তাদের জন্য প্রতিবন্ধী সেন্টার তৈরী করেছেন। মেদাবী থাকা সত্ত্বেও যারা অর্থের অভাবে পড়াশুনা করতে পারে না তিনি তাদের অধ্যয়নের জন্য সাহায্য করেছেন। পথশিশু গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল নির্মাণ করেছেন। তিনি নিজেও মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে পড়ান। পিছিয়ে পড়া আদিবাসী ভাইবোনেরা যারা অর্থের অভাবে এস.এস.সি পাশ করার পর আর পড়াশুনা করতে পারতো না তাদেরকে সাহায্য করেছেন। আজকাল দেখা যায় তাদের মধ্যে অনেকেই ভাল ভাল চাকরী করছেন। দরিদ্র অসহায় ছেলেমেয়েরা যাতে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতে পারে এর জন্য তিনি তাদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছেন। পড়াশুনা করে তারা যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এজন্য তিনি তাদেরকে নানাভাবে উৎসাহ অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছেন। বিশেষ করে এই করোনাকালে যেসব ভাইবোনের চাকরীর হারায় অনেক দুর্বীহ জীবন যাপন করছিল তাদেরকে তিনি দেখতে গেছেন এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যারা দুর্বিসহ জীবনযাপন করেছেন; অনেক দুর্গম গ্রামে প্রচন্দ শীতে যারা অনেক কষ্টে বসবাস করতো তিনি তাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এথেকে বুঝা যায় তিনি আসলেই এক মানবদরদী মানুষ। তিনি মানুষের কষ্টকে নিজ চোখে দেখে সহ্য করতে পান না।
৫. ব্রাদার কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী
ব্রাদারের জীবনে অবলোকন করা যায় তাঁর কথার এবং কাজের মিল। তাঁর জীবন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করেছেন। তিনি যেমন বলতেন শান্তি সম্পৃতির দেশ গড়ে তুলতে হলে হিন্দু-বুদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম সকল ধর্মের মানুষকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। তাই তো তিনি সংলাপের পাশাপাশিবিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের অন্তর্গত সকল সম্প্রদায় অর্থাৎ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও খ্রিস্ট সমাজের সকল শ্রেণীর মধ্যে যেন শান্তি, সম্পৃতি ও মিলনের জন্য খুবই আনন্দের সাথে কাজ করে চলেছেন।
৬. সহজ-সরল ও মিশুক
তাঁর মধ্যে ভোগ-বিলাস, আমোদ-প্রমোদ, জাঁকজমকতা নাই, খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-আশাকে সে খুবই সাধারণ। তিনি এত সহজ সরল যে তাঁর মধ্যে কোনো অংহকার বা দাম্ভিকতা নেই। তাঁর এই সহজ-সরল মনমাসসিকাতর জন্যই সবাই তাকে পছন্দ করে। কর্মক্ষেত্রে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বা পথ শিশুরা তাঁকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ দিলেও তিনি তাদেরকে বকা দেন না। বরং তিনি তাদের আরো কাছে ডেকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন তাদের ভুলক্রুটিগুলো। তাঁর ভিতরের মানুষটাও অনেক সুন্দর। তাঁর সুন্দর একটা মন আছে বলেই তিনি নিঃস্বার্থভাবে মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে পারছেন।
আগামী পর্বে সমাপ্ত।
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
Git-bibal ।। Motendro Mankhin
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi...
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
‘Git-bibal ।। Motendro Mankhin’
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত