Thokbirim | logo

৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিদেশি সাহিত্য ।। সাইকেলের জন্য গর্ত ।। ভাষান্তর : মানুয়েল চাম্বুগং

প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০২১, ১৭:১৪

বিদেশি সাহিত্য ।। সাইকেলের জন্য গর্ত ।। ভাষান্তর : মানুয়েল চাম্বুগং

আপনি কি কখনও শুনেছেন সাইকেলের জন্য কোনো মানুষকে গর্ত কুড়তে? তবে হ্যাঁ সত্যিই সানি নামক বালকটি সাইকেলের আশায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে গর্ত কুড়েছিল। আপনি হয়তো মনে মনে বলছেন গর্ত কুড়েও সে যদি সাইকেল পেয়ে থাকে তবে সেটি হবে অব্যবহৃত বা অকেজো সাইকেল। কারণ মাটির নিচে কোনো সময়ই কোনো জিনিস ভাল থাকতে পারে না। আপনার এই ধারণার সাথে আমিও একমত। কিন্তু এই গল্পটি পড়ে দেখুন, যে এই ছোট বালকটি সত্যি সত্যিই তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে চকচকে একটি নতুন সাইকেল পেয়েছিল।

ঘটনাটি ঘটেছিল এইভাবে। সানি, যার বয়স ১১ বছর। অনেক দিন আগে থেকেই সে তার বাবার কাছে একটি সাইকেল বারবার আবদার করছিল। প্রতিবারই তার বাবা বললেন, ‘স্যারি, সানি সাইকেল কেনার জন্য এখন আমার কাছে টাকা নেই। তোমাকে আরো অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে।’ তো সানি তার বাবার কথায় দিনের পর দিন একটি সাইকেলের প্রত্যাশায় অপেক্ষায় থাকে। আর এদিকে তার বন্ধুরা সবাই একে একে নতুন সাইকেল পাচ্ছে। কেউ পাচ্ছে বড়দিনের উপহার হিসেবে। আবার কেউবা পাচ্ছে জন্মদিনের উপহার হিসেবে। বন্ধুরা যখন তার সামনে দিয়ে সাইকেলে করে স্কুলে যায় তখন তার কষ্ট লাগে এবং আফসোস করে মনের ঘোরে বলে ইস্ কবে যে আমি একটা সাইকেল পাবো।

একদিন রাতে খাওয়ার পর তার বাবাকে সানি জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, এমন কিছু কি উপায় আছে, যে টাকা পয়সা রোজগার করে আমি একটি সাইকেল কিনতে পারি ?’ ছেলের মাথায় সুবুদ্ধি জাগ্রত হয়েছে দেখে পিতা আশ্চর্য হয়ে মুচকি হেসে বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই আছে বাবা, অনেক উপায় আছে, শুধু দরকার তোমার ইচ্ছা। তিনি আরও বললেন, ‘তোমার বহুদিনের প্রত্যাশিত সাইকেল পাওয়ার জন্য এটাই তোমার জন্য উত্তম পন্থা হবে বলে আমি মনে করি। কারণ তুমি তোমার ধনী কাকার কাছ থেকে বিনা পয়সায় সাইকেল পেয়ে যতটানা খুশি হবে এর চেয়ে দশগুণ খুশি হবে যদি তুমি নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে সাইকেল কিনো।’  ‘টাকা রোজগারের জন্য আমাকে কি কাজ করতে হবে বাবা,’ সানি জিজ্ঞেস করলো।

তার বাবা বললেন, ‘অফিসের কাছে ব্যস্ত থাকায় ফুলবাগানে ঠিক সময়মত গর্ত করতে না পাড়ায় আমি বেশ চিন্তিত। এই কাজটি করে দেওয়ার জন্য আমি লোক খোঁজছিলাম। এখন তুমি যদি এই কাজটা করতে রাজি থাক, আমি তোমাকে এই চাকরি দিতে পারি।’

সানি খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, এই কাজটা করলে তুমি কি সতিই আমাকে টাকা দিবে তো, যে টাকা তুমি অন্য কাউকে দিতে?’ ‘হ্যাঁ অবশ্যই আমি দিবো, কাজটা করার জন্য তোমার যতটুকু সময় লাগে তুমি নিতে পারো। কিন্তু তোমার টাকাটা কাজের শেষে আমি দিবো,’ তার বাবা বলেন। ছেলের আনমনা দেখে সে আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি বাবু করবে তো আমার চাকরিটা ?’ ছেলে বলল, ‘হ্যাঁ বাবা আমি আগামীকাল সকল থেকেই কাজ শুরু করবো।’

পরের দিন সকল থেকেই স্কুলে যাওয়ার আগে এবং স্কুল থেকে ফিরে এসে গভীর আগ্রহে ও মনপ্রাণ দিয়ে অনেক ধৈর্য নিয়ে বাগানে সে গর্ত কুড়তে শুরু করলো। মনে কোনো অসন্তুষ্টি বা অভিযোগ না করে সে বাগান কুপাতে কুপাতে পুরো জমিটা চাষ যোগ্য জমিতে পরিণত করলো। যে জমিতে কাজ করতে অন্য কারোর আর প্রয়োজন হবে না। সানি তার অন্তরের ভালবাসা দিয়ে কাজটি করার ফলে কাজটি সুন্দর করতে পেরেছে। যে কাজটি কেউই আগে কখনোও এভাবে করেনি। মাটির ঢেলাগুলো সে এমনভাবে সমান করেছে দেখতে প্রায় তামাটে বিবর্ণর মতো হয়েছে।

সানির কাজ করা দেখে তার বাবা খুশি হয়ে বললেন,  ‘বাবা তোমার পরিশ্রম দেখে আমি খুবই অবিভূত, সত্যি তুমি একজন দক্ষ শ্রমিকের চেয়ে ভাল কাজ করছ।’ পিতার মুখে প্রশংসাবাক্য শুনে সে গর্বিত ও সন্তুষ্ট হয়ে আরো দ্রুত ও অধিক পরিমাণে গর্ত করতে আরম্ভ করল। ছেলের কষ্ট করা দেখে তার মা মাঝে মাঝে চা-নাস্তা এনে দিয়ে তাকে আরো উৎসাহ দিতে লাগলেন। অনেক বারই সে সন্ধ্যাপর্যন্ত অন্ধকারেও কোদাল কুপাতো। তা দেখে অনেকে আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘অন্ধকারে ছেলেটা কিভাবে দেখে।’

পরিশেষে এক সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম করে গর্ত করা শেষ হলে হৃদয়ে সে অনেক আনন্দ পেল। বাড়িতে বাব এলে বলল, ‘তোমার দেয়া কাজ শেষ করলাম, বাবা।’ কাজ শেষ করা হয়েছে শুনামাত্রই তার বাবা খুশি হয়ে তাকে অনেকগুলো টাকা দিল। সেই টাকাগুলো পেয়ে সানি খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাবাকে জরিয়ে ধরে বলল, ‘অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা।’

কয়েকদিন পর তারা দুজনে শহরে গিয়ে সাইকেল খুঁজতে আরম্ভ করলো। খোঁজতে খোঁজতে একসময় তারা একটি সাইকেলের গেরেজ পাই। সেখান থেকে সবচেয়ে ভাল নতুন মডেলের একটি সাইকেল কিনে হেঁটে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা দেই। কারণ তারা বাবা ট্রাফিক জ্যামের কারণে চালাতে দেয়নি, বেচারাকে বেশির ভাগ সময় ধাক্কা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতে হল। কিন্তু তাতে সে কিছু মনে করল না, প্রায় সারা রাস্তায় সে সাইকেলের কেরিয়া ধরে ধাক্কা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসলো।

তার সামনে দিয়ে তার বন্ধুরা যখন সাইকেল চালিয়ে যাই তখন সে তুলনা করে যে তার সাইকেলটি সবচেয়ে ভাল। কারণ সে জানে বিনা পরিশ্রমে এমনে এমনে পাওয়া জিনিসের বেশি মূল্য থাকেনা। সে কিন্তু অনেক পরিশ্রমে কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে সাইকেলটি পেয়েছে । এর জন্য সে তার সাইকেল ভালবাসে খুবই যত্ন করে চালায়।

আমাদের সবার জীবনেও এ ধরনের পরিস্থিতি আসতে পারে যে, কোনো কিছু পাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্খা। কিন্তু টাকার অভাবে সেটি কিনতে পারছি না। আমি মনে করি এই ছোট ছেলের মতো আমরাও যদি অলস না থেকে আমাদের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করি তাহলে নিশ্চয়ই আমরাও আমাদের মনোবাঞ্ছাগুলো পূরণ করতে পারবো।

।। মূল: আংকেল আর্থার




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost