গারো শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির জগৎ কেমন ছিলো ২০২৩ সালের? তাদের নতুন গান কিংবা নতুন গ্রন্থ কিংবা নতুন কোনো নাটক সিনেমার খবর কী? সেইসব নিয়ে থকবিরিমের সালতামামি।
উৎসব আনন্দ মান্দি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের যাপিত জীবনে উৎসব যেন লেগেই আছে। তাদের প্রধান উৎসব ওয়ানগালা হলেও বর্তমানে ওয়ানগালাকে কেন্দ্র করে কিংবা বিভিন্ন সময়কে উপলক্ষ করে সারা বছর উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করে পুরো গারো অঞ্চল। ২০২৩ সালও তার ব্যতিক্রম ছিলো না। পুরো বছর জুড়েই গারো এলাকায় উৎসবের আমেজ লেগেই ছিলো। এই উৎসব যেন শুরু হয় জানুয়ারির ১ তারিখ ছোটদিন বা নববর্ষকে গ্রহণের মধ্য দিয়েই।
২০২৩ সালের পুরো জানুয়ারি মাসে খ্রিস্টান গারোদের ৭জন যাজকত্ব অভিষেক বরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরো জানুয়ারি মাস হাসি আনন্দ গান নাচের উৎসবে মেতে ওঠে মান্দিপাড়া।
সাংসারেকদের উৎসব রংচু গালা এবং ওয়ান্না
মধুপুর আবিমায় কতিপয় সাংসারেক মান্দিদের পরিচালনায় অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তায় অনুষ্ঠিত হয় সাংসারেক ওয়ান্না জয়নাগাছ গ্রামে। ওয়ান্নার একমাস আগে হয় রংচু গালা। রংচু গালাকে কেন্দ্র করে আবিমার গ্রামে গ্রামে বেশ উৎসব মুখর পরিবেশ ছিলো। ২০২৩ সালে সাংসারেক শীতল স্নাল, জেসি দালবত প্রমুখদের আয়োজনে সাংসারেক ওয়ান্না উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ান্না আদি সাংসারেক মান্দিদের প্রধান ধর্মীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আবিমার বেশিরভাগ মান্দিরা বর্তমানে খ্রিস্টানধর্মের অনুসারী। কতিপয় সংসারেক মতবাদে বিশ্বাসীগণ ওয়ান্না করে আসছেন বেশ কয়েকবছর ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় জয়নাগাছা গ্রামে সাংসারেক ওয়ান্না অনুষ্ঠিত হয়। কিংবদন্তি খামাল জনিক নকরেক-এর মৃত্যুর পর তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় ওয়ান্না উদযাপিত হয়নি এবছর তার পরিবর্তে ছোটআকারে ওয়ান্নাকে স্মরণ করে ওয়ানখেলতাব্বা হয়েছে।
আবিমা ফেস্টিভাল
প্রতি বছরের মতো ২০২৩ সালেও আবিমা ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হয় মমিনপুর গ্রামে। আবিমা ফেস্ট প্রতিবছর একই গ্রামে বা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় না। প্রতিবছরই ভেন্যু পরিবর্তন হয়ে নতুন কোনো গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। সে কারণে আবিমা ফেস্টকে কেন্দ্র করে পুরো আবিমায় তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতিবছর অনুষ্ঠানের নতুনত্ব আর বর্ণিল বৈচিত্র্যে মুগ্ধ করে আগত দর্শক শ্রোতাদের। ২০২৩ সালের আবিমা ফেস্টকে কেন্দ্র করেও পুরো আবিমা তথা মমিনপুর গ্রাম ছিলো উৎসব মুখ পরিবেশ। আবিমা ফেস্টে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মানুষজন আসেন উৎসবে যোগ দিতে। প্রায় ২০টির মতো গ্রাম সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়ানগালা ওয়ানগালা
ওয়ানগালা গারোদের প্রধান উৎসব হলেও বর্তমানে ওয়ানগালাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল। চার্চ কেন্দ্রীক খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীগণ খ্রিস্ট রাজার পর্বের সাথে ওয়ানগালা উদযাপন করছেন নভেম্বর সামের শেষ সপ্তায় মহাআনন্দের সাথে। আবার প্রগতিশীল গারো নেতৃবৃন্দ আদি সাংসারেকদের রীতিমতে নিজস্ব শেকড়ে ফেরার তাগিদে ওয়ানগালা করছেন নিজেদের আয়োজনে বিশাল মঞ্চ তৈরি করে বর্ণিল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। যেখনে ব্যান্ডশো’র মতো কনসার্টও অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। ২০২৩ সালে ময়মনসিংহসহ ঢাকা শহরে ৪টি ওয়ানগালা অনুষ্ঠিত হয়। ময়মন সিংহ ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর কক্সবাজারে ওয়ানগালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এইসব শহুরে ওয়ানগালা দিনশেষে মূলত মহামিলনমেলা কিংবা আনন্দ মেলায় পরিণত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বেচাকেনা কিংবা কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে পুরো দিন অতিবাহিত হয় অতি আনন্দে।
ওয়ানগালা অনুষ্ঠান চু ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কারণ দেবতার উদ্দেশ্যে অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রীর সাথে চু উৎসর্গ করতে হয়।
ইদানিংকালে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে চুয়ের ব্যবহার নিত্যপন্য কোকাকোলা কিংবা চায়ের মতোই হয়ে গেছে। ফলে অতিরিক্ত চু খেয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এমনকি মারামারি-হাতাহাতি হতেও দেখা গেছে। বানানী বিদ্যানিকেতন স্কুল মাঠে বাড্ডাবাসীদের আয়োজিত ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে চু খেয়ে মাঠে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যা ভিডিওর মাধ্যমে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল রেশমা
পুরো ২০২৩ সাল ছিলো গারো মডেল রেশমাকে নিয়ে ট্রল হাসি তামাশা মজাক বলা যায় নেট দুনিয়া কাঁপিয়ে দাপিয়ে বেরিয়েছে। নেটের দুনিয়ায় ভাইরাল একটি সংক্রামক বস্তু বটে। কারণ ভাইরাল না হলে নাকি চাকরি থেকে অভিনয় কিছুতেই কিছু হয় না। আর ভাইরালেরকালে গারো সমাজেও দু একটা ঘটনা ঘটেনি তা নায়। গারোদের মডেল কিংবা মডেলিংয়ে কাজ করার মন মানসিকতা যেমন নেই তেমনি যোগ্য মডেলও নেই। কিন্তু নেই বললে তো হবে না তৈরি যে হবে না তা নয়। তেমনি রেশমা একজন সাহসী মেয়ে যে কিনা মডেল পেশায় নিজেকে জড়িয়েছে এবং পোশাকআশাকে সাহসী দেখিয়েছে। যা এর আগে কোনো গারো মেয়ে পারেনি। সেদিক থেকে রেশমা সারাবছরই আলোচনা সমালোচনায় ছিলো।
২০২৩ সালের শেষ মাসে আর জে নিরবকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে হয়েছেন পুনরবার ভাইরাল। পোশাক নিয়ে তৈরি করছেন নানা প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন। কেউ মেনে নিয়েছেন কেউ নিতে পরেননি। তবে রেশমাকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
ভাইরাল ভিডিও ভাইরাল ‘বিচ্চি বিচ্চি’
বছরের সেরা ভাইরাল ভিডিও ছিলো দা রাবুগা ব্যান্ডের নতুন এবং প্রথম গানের সাথে চু খেয়ে পড়ে থাকার ভিডিও। ভিডিওর সাথে গানটি ছিলো- বিচ্চি বিচ্চি। গানটি গারো জাতির প্রধান পানীয় চু নিয়ে লেখা। গানটি বছরের শেষে এসে ভাইরাল হয়ে যায় থকবিরিমের একটি রিলের সাথে যুক্ত হবার কারণে। ভিডিওর সাথে গানটি এমনভাবে মিশে যায় যে মনে হয়েছে গানটির অরজিনাল ভিডিও এবং গানটির জন্য ভিডিওটি পারফেক্ট। ফলে ভিডিওটি আর গান দুটিই ভাইরাল হয়ে যায়। চু খেয়ে মাঠে পড়ে থাকা মানুষজন যেমন তেমনি দা রাবুগার গানটিও সমানভাবে সমালোচনার মুখে পড়ে। গানটি নিয়ে তরুণ সমাজ উচ্ছসিত প্রশংসায় ভাসলেও প্রবীন সমাজে প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেকেই গানটি নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও বিভিন্ন আড্ডায় বলতে শোনা যায়- গানটি তরুণ সমাজকে চুয়ের নেশার দিকে ধাবিত করছে না তো? যেভাবে তরুণ সমাজ দা রাবুগার বিচ্চি বিচ্চি গানের সাথে নেশায় বুদ হয়ে নাচানাচি করছে মাতোয়ারা হয়ে আনন্দ করছে এটা একধরনের চুয়ের প্রতি তরুণ সমাজকে ধাবিতত করছে না তো? চুয়ের প্রতি আকৃস্ট তৈরি করছে না তো?
গান
২০২৩ সালের সংগীতের ভুবনে বছরজুড়েই মাতামাতি করতে দেখা গেছে সংগীত প্রেমিদের। এই মাতামাতির দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলো বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিল। বছরজুড়ে আলোচিত শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের ২০২৩ সালে ৬টি গান(Akansha, ARARA 2 , Chabo Ringbo- Tangbangchina, Suk Ongja, Nangnan Gisik Grapaha) রিলিজ হয়েছে। তার মধ্যে Akansha, ARARA 2 , Chabo Ringbo, Suk Ongja শ্রোতাদের মনে বেশ সাড়া ফেলে।
দিসন অন্তু রিছিল ছাড়াও টগর দ্রং সমাপন স্নাল ও লাক্সমী থিগিদী এই তিনজনের ` মিনিল বিচ্চি’ শিরোনামে একটি অডিও গান রিলিজ হয়।
ব্রিং’ ব্যান্ডের নতুন মৌলিক গান-আবিমা
গারো সংগীত প্রেমিদের কাছে অতিপরিচিত ব্যান্ড ‘ব্রিং’ ব্যান্ড ‘আবিমা’ নামে তাদের একটি মৌলিক অডিও গান রিলিজ করেছে নিজস্ব চ্যানেলে। গানটি লিখেছেন লিয়াং রিছিল ও জাদু রিছিল। গানটি সুপার হিট না হলেও ব্রিং ভক্তদের হতাশ করেনি। ইতোমধ্যে ব্রিং ব্যান্ডের- মুড়ি খা, নাম্মি দংবো গানগুলো বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে।
দ্যা রাবুগা’ ব্যান্ডের ‘বিচ্চি’
গারো ব্যান্ডের আকাশে নতুন একটি ব্যান্ড উদয় হয়েছে ২০২৩ সালে। উদয় হয়েই তাদের নতুন গান দিয়ে বাজিমাত করেছে। বছর শেষে আলোচনা সমালোচনায় তুঙ্গে ছিলো তাদের নতুন রিলিজ হওয়া ‘বিচ্চি’ গানটি। গানিটির ভোকাল সবুজ মাজি অসাধারণ গেয়েছেন।
বছরের শেষের দিকে গানটি একটি ভিডিও কারণে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও ছিলো দা রাবুগা ব্যান্ডের নতুন এবং গানের সাথে বনানী ওয়ানগালায় চু খেয়ে পড়ে থাকা নারনারীর ভিডিও। ভিডিওর পাশাপাশি দা রাবুগার গানটিও সমানভাবে সমালোচনার মুখে পড়ে। গানটি নিয়ে তরুণ সমাজ উচ্ছসিত প্রশংসায় ভাসলেও প্রবীন সমাজে প্রশ্ন তৈরি হয়।
Bleeding For Survival : SAKSAN
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের শেষে Bleeding For Survival ’ তাদের ‘SAKSAN’ শিরোনামে একটি গান রিলিজ করে। গানটির Lyrics: Broni D Shira, Tune: Broni D Shira & Wesley Hadima. ভোকাল- Wesley Hadima.
২০২৩ সালের সংস্কৃতি অঙ্গন ছিলো সরগরম। গারো ছাত্রসংগঠন গাসু কর্তৃক আয়োজিত হয় গারো ব্যান্ড নিয়ে প্রি খ্রিস্টমাস কনসার্ট। বিরিশিরি ইয়ুথ গ্রুপ YWMC প্রাঙ্গণে আয়োজন করে প্রি খ্রিস্টমাস কনসার্ট।
।। থকবিরিম
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
-
গারো লেখক অভিধান : মিঠুন রাকসাম (Mithun Raksam)
: Mithun Raksam He was born on December 25, 1983 in...
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত