ওয়ানগালার মাঠ কিংবা কোনো উৎসবের মাঠ কি কারো একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা?
খোলা মাঠ খোলা মঞ্চ খাওয়া দাওয়া সবকিছুই তো খোল্লামখোলা তাহলে একজন গারো ব্লগার কিংবা শিল্পী কিংবা সঞ্চালক কেন চুপি চুপি চোরের মতো কিংবা ভয়ে ভয়ে ভিডিও করবে? ছবি তুলবে?
দেখলাম মনোরম চিসিম চু খেয়ে বসে বসে আকাশের তারা গুনছে, চাল্লাং ডিব্রা চু খেয়ে হেলে পড়ছে, কে কে যেনো উন্মত্ত হয়ে গান গাইছে সবার সামনে । আর একজন ব্লগার যার কাজই ভিডিও করা কিংবা একজন সাংবাদিক তার কাজই সংবাদ সংগ্রহ করা সে কিনা ভাবছে- সে কি এইসব ছবি তুলবে? কেউ কিছু বলবে না তো? মারতে আসবে না তো?
যদিও ওয়ানগালার স্থান উৎসবের স্থান সবার জন্য উন্মুক্ত এখানে যা হয় সবই সংবাদ বা ব্লগ হতে পারে বিশেষ কোনো নিষেধ ছাড়া।
সন্ধ্যার পর ওয়ানগালার যে কোনো দোকানে কিছু কিনতে গেলে ভাবখানা এমন মনে হবে- যেন তাদের ব্যক্তিগত ড্রইয়িং রুমে ঢুকে পড়েছি। প্রবেশ নিষেধ!
এই ভাবখানা এমন কেন? চু খায় বলে? গারো সমাজে চু খাওয়া নিষিদ্ধ নয়।
তাহলে?
পেজ কি শুধু মনোরঞ্জনের জন্য ?
একটি পোর্টাল কিংবা পেজ কি শুধু ওয়ানগালার নাচ গানের ভিডিও কিংবা ছবি প্রচার করেই তার দায়িত্ব পালন করবে? ওয়ানগালা শেষে কী হয় কিংবা নাচ গান ছাড়াও ওয়ানগালার ভিন্ন ভিডিও হতে পারে খবর হতে পারে সেই সংবাদ কি সরবরাহ করবে না?
পেজ কি শুধু মনোরঞ্জনের জন্য ?
নাকি জনগন শুধু নাচ গান দেখতেই পছন্দ করে? তাদের পছন্দের বাইরে গেলেই খারাপ হয়ে যাবে? জাত চলে যাবে?
জনগণ শুধু নিদির্ষ্ট ছকবাধা চক্রেই ঘুরতে পছন্দ করে, ছকের বাইরে গেলেই সর্বনাশ?
এই চাওয়া কিসের আলামত?
থকবিরিমের ভিডিও সবার হুক্কা হুয়া
থকবিরিম একটি ভিডিও করলো যেহেতু খোলা মাঠ একটা উৎসবের জায়গা সবাই যার যার মত খাচ্ছে, নাচছে হেলে পড়ছে স্বাধীন বাংলা । সেই ভিডিও তৈরি করলো রিল সাথে জুড়ে দিলো চু বিষয়ক গান। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে চমকে গেলো-আরে শালা করসে কি থকবিরিম! তার মায়ের বাপ… এতোবড় সাহস আমার চু খাওয়া ভিডিও করসে? গান সারসে আমাদের? তার একদিন কি আমার একদিন। সে সবাইকে ফোন করা শুরু করে দিলো। পারলে মারে ধরে তখনই সব ব্লগের ভিডিও ছবি ফিনিশ করে দেয়। রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে পরিচিত সবাইকে ফোন করলো। থকবিরিমকেও ফোন করে এক হাত নিলো(তার কথায়)।
সে সবাইকে এই বলে বুঝালো যে, চু খাওয়া ভিডিও করলে তো জাত যাবে গারো জাতির, ওয়ানগালায় চু খায় গারোরা এটা ভাইরাল হয়ে যাবে ভিন্ন জাতির কাছে, তারা আমাদের নিয়ে ভিন্ন ধারনা পোষণ করবে। ডিলিট করতে বলো। সবাই বলল, তাইতো! ডিলিট ডিলিট…
মাথামোটা ফেসবুক পেজার, কমেডিয়ান ব্লগার বুদ্ধিজীবীরা সবাই বলল- ডিলিট করতে বলো। জাত গেলো গারোদের। সেই লেজ কাটা শিয়ালের গল্পের মতো। সবাই একই সুরে হৈ হৈ করলো।
ফরফরানি পুটিমাছ তো পেজে এসে ভিডিও করে- আসল চেহারা দেখিয়েই দিলো। আহা থকবিরিম এটা কী করলো? কী করলো জাত তো যায় যায়! তাদের কাছে এটা আশা করিনি। তারা শুধু পেট ভাসিয়ে কোমড় দুলিয়ে নাচের ভিডিও করবে আর সেটাই প্রচার করবে।
কী মায়া কান্না জাত গেলো বলে। আহারে.. ব্লগার, কমিডিয়ান সব কি সার্কাস?
লেজকাটা শিয়াল তো চালাক। আর চালাক না হলে তো সমাজে তার জায়গা হবে না। টিকতে পারবে না। সে সবাইকে নিজের আয়ত্বে আনার চেষ্টা করলো । ভাবলো- এবার সাংবাদিক ব্যাটা তুই যাবি কই? সব পেজার, ব্লগার তো আমার হয়ে গেছে কেনা গোলাম হয়ে গেছে। তারা তোর বিরুদ্ধে ভিডিও ছেড়েছে তোর দিন শেষ!
আসলেই কি দিন শেষ?
তাই মনে হয়?
কেউ কেউ থকবিরিম বর্জনের ঘোষণা দিলো। ফেসবুক একটি ভাসমান দুনিয়া-হুজুগে কতকিছু হয়। যে কোনোদিন নাচেনি যে কোনোদিন গান করেনি সেও- ওও আ আ’ করে ভাইরাল হয়ে যায়। রানু মণ্ডলের মতো। আবার নিভেও যায়। বর্জন বলা সেখানে সহজ নয় কি? একটু লিখে দিলেই হলো।
রিপোর্ট মারো রে..
মেরেছে তো?
সংগঠনের পাতি নেতারাও বলল- বর্জন। অথচ নিজেদের সংগঠন ফোঁড়া হয়ে ফেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে সেদিকে নজড় নাই, নজর শুধু পরের দিকে। একটু হলেই বয়কট, মারো, এইছাড়া আর কী যোগ্যতা তাদের, ফোঁড়া সারানোর? তাই মনে হয়?
চু গারোদের প্রধান পানীয়
চু গারোদের প্রধান পানীয়। চু খেয়ে কী না হয় গারো অঞ্চলে?
চু খেয়ে উদোম হয়ে পড়ে থাকে না?
মারামারি করে না ?
চু খেয়ে পরের স্ত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা কি ঘটে না?
মটকা ভাঙে না?
ওয়ানগালা মাঠ উৎসবের মাঠ এখানে চু খাবে এটাই স্বাভাবিক
কিন্তু মাতলামির দায় কে নেবে?
ভিডিও করলেই সমস্যা?
জাতির মান চলে যাবে?
চু খেয়ে পড়ে থাকার ভিডিওতে জাতির মান চলে গেছে নাকি?
চু খেয়ে তুমি কী আচরণ করছো সেটা তুমি নিজেই ঠিক করবে। অন্যজন করবে না। ওয়ানগালার কমিটি করবে না। করবে কি? করলে তুমি মানবে? তখন আবার বলবে না- কমিটি খারাপ? আমার স্বাধীনতা আমি উৎসবে কী করবো কমিটি বলার কে? টাকা দিয়ে টিকিট করি না?
ওয়ানগালার মাঠ সবার জন্য খোলা, সবার জন্য উন্মুক্ত। জাত যাবার ভয় থাকলে ওয়ানগালা উৎসব নিশ্চয়ই খোলা মাঠে উদযাপিত হতো না। হতো কি?
মিডিয়ার লোকদের প্রেস রিলিজ দিয়ে ডেকো আনতো না। আনতো কি?
ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা
ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা দেখতে সুন্দর তিড়ির বিড়িং করে কিন্তু সে বড় অভাগা। তিন নাম্বার বাচ্চা সম্পর্কে ব্যাখা কাদের লাগবে?
জাত গেলো বলে ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে তিড়িংবিড়িং করার অর্থ কী দাঁড়ালো?
নাকি গোপনে গোপনে ভিউ আর শেয়ার দরকার ছিলো?
দরকার তো ছিলোই নইলে একজন ব্লগার হয়ে তুমি নিজেও তো ভাইরাল করতে সহায়তা করেছো। ভিডিও করে জাতির উদ্ধার কর্তা সেজেছো।
অথচ আদিবাসীদের বিভিন্ন জাতীয় সংকটগুলোতে কথিত পেইজার, ব্লগার টু শব্দও করে না। তখন আপনাদের জাত যায় না?
তাহলে অর্থ কি দাঁড়ালো? শেয়ার ভিউ কার বাড়লো?
এক ঢিলে দুই পাখি কে মারার চেষ্টা করলো?
জনগণ ? ব্লগার? ইউটিউবার? কে?
যার গান রিলে যুক্ত করেছি তাদের মাথা নষ্ট। ফোন করছে তো করছে। একবার গিটারিস্ট ফোন করে তো আরেকবার ম্যানেজার। বলে- ভিডিওর জন্য গানের কপিরাইট ঝামেলা করছে। ভিডিও থেকে গানটা ডিলিট করে দাও।
প্রশ্ন করতে চাই-
ভিডিওর সাথে নিজেদের গান মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে?
তোমরা যে গান বানিয়েছো সেই গানের সাথে তো চু খেয়ে পড়ে থাকা কিংবা মাতলামি করার ভিডিও দারুন মানায়, মানায় না?
মঞ্চে যখন তোমরা গানটি গাও তখন গানের সাথে সাথে তরুণরা উন্মাদ হয়ে নাচে, ভালো লাগে না?
লাগে লাগে…
আমাদেরও ভালো লাগে। ভীষণভাবে ভালো লাগে।
কিন্তু চু খেয়ে পড়ে থাকা দৃশ্যের সাথে নিজেদের গান দেখে শুনে মনে প্রশান্তি পাচ্ছো না?
কিংবা গানের সাথে এমন ভিডিও হতে পারে কেউ ভাবোনি?
আগামীতে এই গান নিয়ে রুস্ট হতে পারে বা ভিডিও কেউ করবে না তার কি নিশ্চয়তা?
তখন কি তোমরা বয়কট করবে রুস্ট দাতাকে?
নাকি লাঠি-স্টিক নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের মতো মাঠে নামবে?
নাকি জাতির সম্মান গেলো বলে কল করে বেড়াবে জনে জনে?
একটি গান শ্রোতা যেভাবে পরে যেমনে পারে শুনবে, নাচবে, নাচাবে। নেটের দুনিয়ার কেউ কারো গান আটকে রাখতে পারে?
গানটি রিলিজই হয়েছে নেটে। তাহলে ভয় কিসের?
একটি গান যদি সমাজের জন্য দেশের জন্য মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে তাহলে ভয়ের তো কিছু থাকার কথা না? যত ভাইরাল হবে তো মঙ্গল না?
কিন্তু রাবুগার বেলায় তো উল্টো দেখলাম। তারা বরং থামিয়ে দিতে চাইলো প্রচার।
কেন? কিসের জন্য? কী উদ্দেশ্যে?
তবে ভাবনার বিষয় হচ্ছে-
যাদের একটু গিলু আছে বলে মনে করি তারাও লেজকাটা শিয়ালের সাথে তালে তাল মিলিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে হুক্কা হুয়া ডাকতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন করতে চাই-
চু খেয়ে টাল হওয়া ভিডিওতেই কি গারো জাতির জাত যাবে?
নাকি গানের জন্য জাত যাবে?
কোনটা?
নাকি দুটোতেই?
জাত কি চু খেয়ে নাচলে যায়? না চু খেয়ে পড়ে থাকলে যায়?
কোনোটাতেই যায় না, শুধু ভিডিও করে সাথে গান জুড়ে নেটে ছাড়লে যায়?
নিজেকে বারবার প্রশ্ন করি…
চু বিক্রি করে জেলখানায় গেলে তখন জাত কই থাকে?
বিজাতি বিয়ে করে জমাজমি নিয়ে ঝামেলা করলে, মামলা মোকদ্দমা করলে তখন জাত যায় না?
বাবা কিংবা মা বিজাতি পুরো গারো এলাকায় সংকর হয়ে ঘুরে বেড়ায় ছেলেমেয়ে ভিন্ন চেহারায় তখন জাত যায় না?
ভিন্ন জাতি বিয়ে করলে সম্মান হানী হয় না?
গারোদের চেহারা তো এমন ছিলো না এখন কেন এমন?
টলমল চোখ, বাঁশির মতো নাক, কারো কারো তামাতে নয় শ্যামলা বরণ কেন?
গারোদের ভোঁচা নাক, ছোট চোখ, খাড়া চুল গেলো কই?
গারোদের চেহারায়-আচরণে এতো পরিবর্তন কীভাবে?
স্পাতে গিয়ে ধরা খাও তখন জাত কই থাকে?
নিজ ভাষা না পারলে জাত কই থাকে?
ঘরে বউ রেখে কচি কাঁচা মেয়েদের সাথে গোপনে পরকীয়া করে ধরা খেলে জাত যায় না?
ব্লগ দেখে ভিডিও দেখে কী মনে হয়, আছে?
মুখ বেঁকিয়ে বুক ফুলিয়ে (পড়ুন বুক খোলে) দুই আঙুল দেখিয়ে চোখ মেরে ঠোঁট ফুলিয়ে একটা ভিডিও করে- আমরা এয়েচি…দেখ মফিজ দেখ জুলেখা দেখ মন্টু ….পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে-ছবি বা ভিডিও করলেই জাতের উদ্ধার করা গেলো?
আপামর জনগণ কি তাই ভাবে?
২০২৪ সাল সবার মঙ্গল হোক!
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
-
গারো লেখক অভিধান : মিঠুন রাকসাম (Mithun Raksam)
: Mithun Raksam He was born on December 25, 1983 in...
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত