Thokbirim | logo

২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বংশীবাদক ।। নীলু রুরাম

প্রকাশিত : জুলাই ১৮, ২০২১, ০৯:৪৯

বংশীবাদক ।। নীলু রুরাম

অনিলেশ স্নাল (এখন পাস্টর জিবিসি) বহু দিন পর দেখা কোন এক জায়গায়। কোন জায়গায় সঠিক মনে পড়ছে না। সুপ্রভার স্বামী, ধাইরপাড়া।
জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখনো বাঁশি বাজাও!
-মাঝে সাঝে বাজাই। বয়স হয়েছে তো, বেশি ক্ষণ বাজাতে পারি না।
ষাট দশকের কথা।
আমি তখন মাসেক খানেকর জন্যে বিড়ইডাকুনী মিশনে অবস্থান করছি সেমিনারীয়ান হিসেবে। সম্ভবত: এটা আমার দ্বিতীয় বর্ষ ফিলোসফী কোর্স করাচী খ্রাইষ্ট দা কিং মেজর সেমিনারীতে।বিড়ইডাকুনী হাইস্কুলে ক্লাস নিতে বলল ভিকার জেনারেল ফাদার পিটার গমেজ।অনিলেস তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সাদা শার্ট ও সাদা পায়জামা ছিল তার নিজস্ব পোষাক।তখনই সে বাঁশি বাজাত। বেশ বড় সাইজের বাঁশি। কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে বাঁশি বাজাত।
অবশ্য বাঁশি বাজাতে গিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়েছিল কিনা জানা যায়নি।
নিধন’দা একবার বর্ষণ মুখর রাতে আমাকে বলছিল, বুঝছ জর্জ, এক কালে আমি দারুণ বাঁশি বাজাতে পারতাম।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, কৈ, আমি তো আপনাকে বাঁশি বাজাতে দেখেনি!
বলল, তিনি তরুণ বয়সে বাঁশি বাজাতেন।বলল, আমি তখন শোলপুর থাকি
হাই স্কুলে পড়ি।
রাতে তখন বাঁশি বাজাতাম। যখন রাত বাড়তে থাকে, নীরবতা ঘণীভূত হয় তখন তিনি বাঁশিতে ফুঁ দিতেন। এত রাতে বাঁশি বাজাতে গিয়ে পাড়া প্রতিবেশিরা ও গ্রামের মুরিব্বীরা তাঁকে গাল মন্দও করেছে।
– তখন তো আমি যুবক। যুবকের চরিত্র তো তখন বুঝই। আমি এগুলো বড় একটা আমলই দিতাম না।
তিনি বলে চললেন স্টার সিগারেটে একটা ধুমসে টান দিয়ে,  একদিন রাতে ঝমঝম বৃষ্টি নামছে। বৃষ্টিতে পড়াশুনায় মন নেই। বাঁশি হাতে নিলাম। জানি এ সময় বৃষ্টিতে কেউ আমার বাঁশির আওয়াজ শুনবে না। টিনের ঘর। অনবরত শব্দ করে বৃষ্টি নামছে।
সবে মাত্র বাঁশি বাজানো শুরু করলাম, কোথায় যেন ছমছম পায়েলের আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমি বাজানো বন্ধ করে কান খাড়া করে শুনলাম। কিন্তু কোন আওয়াজ নেই!
যখন আবার বাজানো শুরু করলাম আবার সেই ছমছম আওয়াজ। একজনের নয় একাধিক পায়লের আওয়াজ!  তখনি আমি জানতে পারলাম মুরুব্বীদের কথা। রাতে বাঁশি বাজালে পরী নামে। সারা শিরা উপশিরায় এক অজানা রোমাঞ্চ আমাকে তখন পেয়ে বসল। মনে একটু একটু ভয়। এরপর থেকেই আমি আর বাঁশি বাজাই না!
আরেকটি নিজস্ব এলাকার বাঁশির গপ্প।
বর্তমান শান্তি মেচেংয়ের দাদী মালতী মেচেংয়ের ঘরে এক যুবক চাকর হিসেবে কাজ করত। সম্ভবত: তার বাড়ি খুজুরা গ্রামে।
তখন মালতীর ( নলের মা) যথেষ্ট জমি জমা ছিল। বেশির ভাগ জমি মানু মা’র ভিটার পশ্চিমে। এ যুবকটিও বাঁশি বাজাত।
সোমেশ্বরী নদীরপাড়ে বসে আপন মনে বাঁশি বাজাত। তখন ফুটবল মাঠের পূব উত্তর দিকে এক লম্বা একটি গাছ ছিল। লোকেরা বলত এ গাছে বর্মাদাসী বাস করে।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে এলাকার লোকেরা এ গাছের কাছে আসলেই গা ছমছম করত।
একদিন পূর্ণিমা রাত। চারিদিক চাঁদের আলোয় ভরে গেছে। যুবকটি গাছটিগে হেলান দিয়ে আপন মনে বাঁশি বাজাতে লাগল। বাঁশি বাজাতে বাজাতেই সে দেখছে তার বাঁশির সুরের তালে তালে নেচে নেচে গাছের উপর থেকে পরি নামছে। তবুও সে বাজানো থামেনি। দেখতে দেখতে আরেকজন নামতে শুরু করল। তারপর দুই পরী মিলে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে জোরাজুরি করতে লাগল।  পুরুষ মানুষের সাথে কি মহিলারা পাত্তা পায়! নিতে পারল না যুবকটিকে।
কিন্তু তারপর থেকে সে আবোলতাবোল বলা শুরু করল। স্বাভাবিক জীবন যাপন সে করতে পারল না। পাগলের মত যেখানে সেখানে ঘুরতে লাগল।

# রাত ২২:১৪, শনিবার, ১৭ জুলাই, ২৯২১
রাণীখং, নীলিমা হাউস।



 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost