Thokbirim | logo

১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আদিবাসী কোটা নিয়ে আন্দোলন আবারো জোরালো হল কেন?

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৮, ২০২২, ১৩:২৬

আদিবাসী কোটা নিয়ে আন্দোলন আবারো জোরালো হল কেন?

গত ৩০ মার্চ তারিখে ৪০তম বিসিএস-এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেখানে পিএসসি মোট ১,৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। আদিবাসীদের জন্য ১ম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে পূর্বের মতো ৫% কোটা বহাল থাকলে সুপারিশপ্রাপ্ত মোট সংখ্যার মধ্যে হয়তো এবার ৯৮ জন আদিবাসী প্রার্থীর বিসিএস হওয়ার সুযোগ থাকতো। কিন্তু কোনো কালেই আদিবাসীদের ৫% কোটা সম্পূর্ণ পূরণ হয়েছে এরকম শোনা যায়নি। আদিবাসী প্রার্থী পাওয়া যায় না বলে আদিবাসী কোটা খালি থাকে এরকমটিই শুনতাম।

কিন্তু ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক নোটিশে ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল ধরনের বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হয়। তাহলে সাড়ে ৩ বছর পর আজ হঠাৎ করে আবার আদিবাসী শিক্ষার্থীরা কোটার দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে গেল কেন? আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৮ সাল থেকে তাদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা না করে মাঝখানে চুপ থেকে এখন কেন তারা আবার ফুঁসে ওঠছে! তাদের এ জেগে ওঠার কথা কি গুরুত্ব সহকারে এখন কেউ শুনবে?

আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে এখানে দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের এই পুনরুত্থান ঘটেছে। এক. বিসিএস ক্যাডারে আদিবাসী প্রার্থীদের আর অভিগম্যতা না হওয়ার আশঙ্কা। দুই. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাভঙ্গ।

প্রথম কথার পক্ষে যে যুক্তিটি চলে আসে তা এরকম। ৪০তম বিসিএসটি ছিল সকল কোটা বাতিলের পর কোটাহীন প্রথম বিসিএস। কোনো কোটা না থাকলেও আদিবাসী চাকরি প্রার্থীরা যথারীতি এ বিসিএস পরীক্ষাতেও অংশ নেয়। বিসিএস-এর  সকল ধাপে অংশ নিয়ে মেধার ভিত্তিতেই লড়াই করে শুনেছি অবশিষ্ট ২০ জনের মতো পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী প্রার্থী চূড়ান্ত ধাপের মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সুপারিশের অপক্ষোয় ছিল। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত কেউই সুপারিশপ্রাপ্ত হয়নি। হয়তো আদিবাসী কোটা থাকলে তাদের কোটার কাতারে ফেলে সুপারিশ করা হতো। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আদিবাসী চাকরি প্রার্থীরা আশঙ্কা করা শুরু করছে হয়তো ভবিষ্যতে যত মেধা নিয়েই আদিবাসী প্রার্থীরা সরকারি চাকরি বা বিসিএস-এ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হোক না কেন তাদের পক্ষে সুপারিশ পাওয়া কঠিন হবে। এভাবে আস্তে আস্তে একসময় সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মস্থলে আদিবাসীদের অভিগম্যতা শূন্যতায় চলে আসবে!

আর দ্বিতীয় কথাটির যুক্তিটি অতি মানবিক। যে মানবিকতার আশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন কোটা বাতিলের পরবর্তী সময়ে। গত ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ঢাকার বেইলি রোডে ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধনকালে তিনি বলেছিলেন “যদিও আমরা কোটা প্রত্যাহার করেছি তারপরও আমার নির্দেশ আছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বলে দিয়েছি, পার্বত্য অঞ্চল বা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, পাহাড়ি হোক, সমতল ভূমি হোক, সেখানে যে প্রার্থী থাকবে; তারা সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। এটা আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি এবং করে দেব; সেটা আপনাদেরকে আমরা কথা দিতে পারি।“ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বা দেয়া কথার প্রতিফলন ৪০তম বিসিএস ফলাফলে আদিবাসীরা দেখতে পায়নি বলেও তারা হতাশ ও অবাক হয়েছে। তাহলে কি ধরে নেব পাবলিক সার্ভিস কমিশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা আমলে নেয়নি! প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী প্রধানমন্ত্রীর সরকার এখনও অব্যাহত রয়েছে তাতেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সরকার পরিবর্তন হলে এসব প্রতিশ্রুতি কি আর কেউ গুরুত্ব দেবে এটাও সঠিক সময়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ধরতে পেরেছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। তাই তারা এই সময়টিতে বসে না থেকে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমে পড়েছে।

  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এও বলেছেন, ‘কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলেও প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে’ (৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ‘বাংলা ট্রিবিউন’)। আমরা কর্মসংস্থানের সে নতুন নীতিমালার মুখ আজও দেখিনি।

উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের শুরুর দিক থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃহৎ আন্দোলনের ফলে সরকার এক নোটিশে ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল ধরনের বিদ্যমান কোটা বাতিল করে দেয়।কিন্তু আন্দোলনকারীরা কিছু কোটা রেখে কোটা সংস্কার চেয়েছিলেন। সকল কোটা বাতিল নয়। দেশের আদিবাসী, প্রতিবন্ধীসহ এসব অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখার পক্ষে ছিল প্রায় সবাই।

।। সোহেল হাজং- মানবাধিকারকর্মী ও কলাম লেখক।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost