Thokbirim | logo

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আদিবাসী না উপজাতি? ।। দিয়াত মাহমুদ শাকিল

প্রকাশিত : আগস্ট ০৯, ২০২১, ২২:২৫

আদিবাসী না উপজাতি? ।। দিয়াত মাহমুদ শাকিল

স্বাধীনতার পূর্বের থেকেই বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডে বহু জাতির বসবাস। বাঙালির পাশাপাশি সুদূর অতীত থেকে এই ভূখণ্ডে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চগ্যা, মনিপুরি,খাসিয়া, সাঁওতাল, মান্দিসহ ৪৫টি জাতিসত্তার মানুষ বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশের পাহাড়-সমতল মিলে এমন জাতিসত্তার মানুষের সংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই এই চল্লিশ লাখ মানুষ তাদের কিছু দাবি দফা রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরছেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বকৃীতি পাওয়ার দাবিটি অধিক জোরালো। তাদের এই দাবির পক্ষে লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস কম নয়। “হিল উইম্যান্স ফেডারেশন”-এর নেত্রী একজন কল্পনা চাকমার সন্ধান তো ২৩ বছরের মিললো না। সেসব সংগ্রামের কথা না হয় অন্য দিন বলব বরং আজ  তাদের এই দাবির পক্ষে কিছু কথা বলা যাক।

প্রথমে জেনে নেই, আদিবাসী কারা?

জাতিসংঘ কর্তৃক আদিবাসী শব্দটির কোন নিদিষ্ট ডেফিনিশন ঠিক করে দেওয়া হয়নি। তবে, যে কথাটির সাথে বেশির ভাগ রাষ্ট্রবিঙানী সহমত পোষণ করেন সেটি হল,” সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় দখলদার ও অনুপ্রবেশকারী জনগোষ্ঠীর পূর্বে যারা বসবাস করতো(এটা ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত এবং আমেরিকা,কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য -বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়) এবং এখনও করে;যাদের নিজস্ব ও আলাদা সংস্কৃতি,রাজনীতি ও মুল্যবোধ রয়েছে ;যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সাংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগনিত, তারাই আদিবাসী। অর্থাৎ, একটি রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় বসবাসকারি এক জনগোষ্ঠী যারা সাংস্কৃতিকভাবে সংখ্যালঘু,যাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে যা জনতাত্বিক সংখ্যাগুরুর থেকে আলাদা এবং যাদের একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার আছে এবং যারা রাষ্ট্রের সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক তারাই আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি রাখে।

পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র এই থিওরি অনুযায়ী তাদের আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে সরকারের সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব। কেননা উপরের থিওরিটি বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় বাংলাদেশে বসবাসকারী তথা কথিত উপজাতিয় মানুষেরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু শুধু সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবে তারা তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। উল্টো সরকারের পক্ষ থেকে যে যুক্তিটি দেখানো হচ্ছে সেটি হল,”তারা এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা নয়, তারা সবাই বাংলাদেশের ভূখন্ডের বাহির থেকে এসেছেন”। কিন্তু উপরে উল্লেখ যে এই কথাটি শুধু নিদিষ্ট ২/৩ টি দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়াও সরকার আশংকা করছে যে তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়,ভাবমূর্তি ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। কিন্তু পৃথিবীর যে সকল রাষ্ট্র তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানে কিন্তু এইরকম কোন নজির আজ পর্যন্ত স্থাপন হয়নি।বরং সেখাকার আদিবাসঅরা রাষ্ট্রের অন্য সকল নাগরিকদের মতো-ই আচরণ করছেন ও রাষ্ট্রের সকল সুবিধা ভোগ করছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টো চিত্র। তাদের আদিবাসী হিসেবে রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি না দেওয়ার রাষ্ট্রের প্রতি তাদের ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই ক্ষোভের পরিমাণ এতই যে তারা মাঝে মাঝেই রাষ্ট্রীয় বাহিনিকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়।

একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন তখন-ই হবে যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের আত্ম সামাজিক উন্নতি সাধিত হবে। কিন্তু দেখা যায় বাংলাদেশের তথাকথিত উপজাতিয় মানুষগুলো সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে। তাদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এই পিছিয়ে থাকার একটি বড় কারণ।

সুতরাং রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের চিন্তা করা উচিৎ একটি রাষ্ট্রের সকল সম্প্রদায় যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই সম্প্রদায় কেন পিছিয়ে? যদিওবা অনেক দেরি হয়ে গেছে তবুও আশা করি শিগগিরই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে,রাষ্ট্রকে একজাতিকরণের চিন্তা ধারা থেকে সরে এসে সরকার তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সমর্থন দিবেন।



লেখক দিয়াত মাহমুদ শাকিল : শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মী।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost