Thokbirim | logo

৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমার মা ডাক্তারের চেয়েও বড় ।। গৌরব জি. পাথাং

প্রকাশিত : মে ০৯, ২০২১, ১৭:২৩

আমার মা ডাক্তারের চেয়েও বড় ।। গৌরব জি. পাথাং

আমার মা ডাক্তারের চেয়েও বড়। একজন ডাক্তার হয়তো ঔষধ দিয়ে রোগ সারিয়ে তুলতে পারে তবে সেখানে ভালবাসা ও সেবা নাও থাকতে পারে, কিন্তু একজন মা ঔষধ না দিয়েও তার ভালবাসা ও সেবা দিয়ে রোগীকে সারিয়ে তুলতে পারে। তাই একজন মা ডাক্তারের চেয়ে বড়। ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে গ্রামের বাড়ি ঘিলাগড়ায় গিয়েছিলাম। তখন গরমও ছিল তীব্র। মনে হচ্ছিল সূর্য মাথার উপর এসে আলো দিচ্ছে। তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিল মানুষের জীবন। গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রামের মানুষ সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। শীতল বায়ূর প্রত্যাশায় সবাই বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। সম্ভবত প্রচন্ড গরমের কারণে তখন আমার গায়ে দেখা দিয়েছিল অ্যালার্জি জাতীয় রোগ। সারা শরীর লাল হয়ে গিয়েছিল, ঘামলেই শরীর চুলকাত। মুখে, বুকে, মাথায় বলতে গেলে সারা শরীরেই ব্রুণের মত ছোটবড় পাহাড় জন্মেছিল, তা তীব্র ব্যথা করত এবং সেখান থেকে পুচ বের হত। সেই যন্ত্রণায় আমি ঘুমাতেই পারছিলাম না। গ্রামে ভাল ডাক্তার নেই তবু বাবা বাজারে গিয়ে ঔষধ নিয়ে এলেন। কিন্তু ঔষধ খেয়েও কোন কাজ হচ্ছিল না। আমার এই কষ্ট দেখে মা আর সহ্য করতে পারছিলেন না। রৌদ্রের মধ্যে বনে ঘুরে ঘুরে গাছের লতাপাতা, শিকড় সংগ্রহ করে ঔষধ তৈরী করে আমার গায়ে লাগিয়ে দিলেন। নিমপাতা সিদ্ধ করে আমাকে ¯œান করালেন এবং লেবুর শরবত বানিয়ে খাওয়ালেন। তারপর আমাকে শুইয়ে দিয়ে একটা পাখা নিয়ে সারাক্ষণ বাতাস করলেন। তার শীতল পরশ পেয়ে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। জেগে দেখি মা তখনও বাতাস করছেন। তিনি যদিও রোগ সারিয়ে তুলতে পারেননি কিন্তু তার সেবা শুশ্রুষা দিয়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছিল।

 

নিঝুক নীরবে সহে

মায়ের সাথে আমার বিরোধ ছিল আবার বুঝাপড়াও ছিল। তার সাথে অভিমান করে কতবার কত রাত খাইনি, কতবার গাছের উপরে রাত কাটিয়েছি তা বলতে পারব না। মা আমাকে বেশি ভালবাসতেন বলেই হয়তো এমনটা করতাম। ছোটবেলায় মা আমাকে খুব শাসন করতেন। মায়ের ছিল খুব রাগ। তার রাগ দেখে পরিবারের অন্যান্য ভাইবোনেরা ভয় পেত। আমিও খুব ভয় পেতাম। তার রাগের কারণে আমি ভয়ে পালিয়ে থাকতাম। ঘরে ফিরতে চাইতাম না। তার রাগ কমে গেলে খুঁজতে যেতেন। আর আদর করতেন। তখন তার ভালবাসা দেখে রাগের কথা মনেই থাকত না।
সেদিন মায়ের পায়ে কাঁটা বিঁধেছিল। তাই হাঁটতে পারত না। অনেক দিন আগে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যদি না যাই তবে আর কোনদিন যাওয়া হবে না। সকালে মা বললেন, আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। কথা শুনে মনে মনে খুব বিরক্ত হলাম। তবু তার কথায় রাজি হলাম। শর্ত দিয়ে বললাম, আমি যাওয়ার পথে তোমায় নিয়ে যাব। কিন্তু তোমাকে একাই ফিরে আসতে হবে। আমি তোমাকে নিয়ে ঘরে ফিরে আসব না। মা তাতেও রাজি হলেন। তাকে বাইসাইকেলে নিয়ে বাজারে গেলাম। ডাক্তারের কাছে রেখে আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম।
বন্ধুর বাড়িতে খুব আনন্দে দু’দিন কাটালাম। তখন আমি মাকে কষ্ট দিয়েছি। জানি না, সে দিন কি করে বাড়ি ফিরেছিল। বাজার থেকে ঘরে ফিরে আসার জন্য কোন যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। কারণ আমাদের গ্রাম থেকে বাজারে যওয়ার জন্য কোন প্রসস্ত রাস্তা ছিল না। কোন রকম করে সাইকেল চলতে পারত। মাকে কোনদিন সেই কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি। এত বছর আজ সেদিনের কথা মনে পড়ছে। মা নিশ্চয় খুব কষ্ট করে বাড়ি ফিরেছিলেন। একা একা নিশ্চয় হেঁটে এসেছেন। পথে কতবার থামতে হয়েছে কে জানে। আমার আনন্দের কথা ভেবে হস্তক্ষেপ করেননি। “নিকটেতে দূর যেন পুষ্পেতে কণ্টিকা।”

কভার প্রচ্ছদ ; ফাদার ও লেখক গৌরব জি. পাথাং-এর মা কবিতা পাথাং



মধুপুর জলছত্রে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

করোনায় পাহাড়ি আদিবাসীদের সংকটময় জীবন যাপন

করোনায় কেমন যাচ্ছে আদিবাসীদের জীবন 

করোনাকালীন তিনটি কবিতা ।। মতেন্দ্র মানখিন

একজন ভালো মনের মানুষ ব্রাদার গিয়োম ।।  কিউবার্ট রেমা

ttps://www.youtube.com/watch?v=WtVe7pOQaQ8&t=182s




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost