Thokbirim | logo

৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ওয়ানগালার ইতিহাস ।। রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক

প্রকাশিত : অক্টোবর ১৬, ২০২০, ১০:৩৫

ওয়ানগালার ইতিহাস ।। রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক

আ۰ছক রাংনি মিংসিংগিপা দাল۰আ মানিয়ানি বিলসি

বন, আংআচিবারা দংআ ওয়ানগালানি

ওয়ানা আরো গাল্লা

উনি অর্থ আরা

মিংগিনিয়ান দাল্লা

খুসি অংএ চাএ রিংএ মিদ্দেনা রুগালা

ফাতিগিপা রারাবগিপা মিয়া মিসিরাংকো

আক্কারুকো মেগারুকো মেসু সামবিজাকরাংকো

সালজংনা মিদ্দেনা

অন চেংগিজা চাংনা

আসি নামজা খেন্না।

ওয়ানগালাজানা খিংখিং চাজা, নাম্মি দাক্কেন নিম্মা রেভা. বদোনাথ মোমিন তার প্রকাশিত ওয়ানগালা কবিতার প্রথমার্থে একথাগুলো বলেছেন। এসব কথার দ্বারা বুঝা যায় নন-খ্রিষ্টীয়ান গারোদের কাছে ওয়ানগালা উৎসব কতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।

ওয়ানগালা নন-খ্রিষ্টীয়ান গারোদের প্রধান বার্ষিক উৎসব। এই উৎসব কৃষির সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত, ধমীয় বিশ্বাসের সঙ্গেও এটা সর্ম্পকযুক্ত। বর্ষা বিদায়ের পর শীতের আগমনের আগে বর্ষার ফসল তোলার সেপ্টেম্বর মাসের শেষার্ধ হতে অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে প্রাচীন গারো বর্ষ পঞ্জিকার অষ্টম মাস আঃনিজাতে বাংলার শরৎকালে এ ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হয়। এটাই গারোদের শ্রেষ্ঠ বা সর্বাপেক্ষা বড় কৃষি উৎসব। এ উৎসব গারোদের বিভিন্ন গোত্রে বিভিন্ন প্রকার ও পদ্ধতিতে ও বিভিন্ন নামে উদযাপিত হয়। যেভাবেই উদযাপিত হোক না কেন, উৎসবের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য একই। এ উৎসব বিভিন্ন গোত্রে বা স্থানে ওয়ানগালা, ওয়ানমা, রংচয়া, দ্রুয়া, ওয়ানগালা, ঘুরে ওয়াতা ইত্যাদি নামে পরিচিত। ওয়ানগালার ইতিহাস লিখা খুবই কঠিন কাজ। ইতিহাস হচ্ছে পুরাবৃত্ত বা অতীত কাহিনি। কিন্তু কাহিনি লিখলেই ইতিহাস হয় না। তাকে হতে হবে সঠিক রেকর্ডকৃত তত্ত্বভিত্তিক সঠিক বিবরণ, যেখানে গারোদের কোন লিখিত অতীত কাহিনি নেই, লিপিবদ্ধ বিবরণ নেই, সেখানে ওয়ানগালার ইতিহাস লিখতে যাওয়া একটা দূরহ কাজ। যদিও আমি নন-খ্রিষ্টীয়ান গারো পরিবারের সন্তান, গ্রাম নকমার সন্তান, ছোট বেলায়, ওয়ানগালার রুগালা, সাসাত স۰আ পুরাওয়ান্তি থক্কা, দ্রাম গগাতা বা জলওয়াত্তা দেখেছি। দেখেছি ঘুরে র۰আ বা ঘুরে রদিলা  (ঘোড়া নাচন) গ্রিকা চাম্বিল বিথে খল না, চামে। মিক্কাং মি۰আ ইত্যাদি নাচ, শুনেছি আজেয়া, দরোয়া, গগআ ইত্যাদি গান, তথাপি ওয়ানগালার ইতিহাস পুরোপুরিভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তাই ওয়ানগালার ইতিহাস লিখতে গিয়ে আমাকে নির্ভর করতে হচ্ছে গারো কিংবন্তি, পৌরাণিক কাহিনি ইত্যাদি যা লোক মুখে শুনেছি এবং সম্প্রতি যারা গারোদের সম্বন্ধে কিছু কিছু লিখেছেন তাদের লিখিত বিবরণের ওপর। তাই এটাকে ওয়ানগালার ইতিহাসরূপে না দেখে ওয়ানগালার ইতিহাস অনুসারে একটা প্রচেষ্টারূপে দেখতে হবে।

প্রাচীন এবং আধুনিক অনেক ধর্মে নির্দিষ্ট সময় কাল বা ঋতু কোন পর্ব বা অনুষ্ঠান পালনের জন্যে নির্ধারণ করা ছিলো এবং আছে। এসব পর্ব বা অনুষ্ঠান পালনকেই উৎসব বলা হয়ে থাকে। আর সর্বপ্রকার পর্ব অনুষ্ঠান মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। সুদূর অতীত থেকেই মানুষ যুগে যুগে বিশ্বাস করে এসেছে- এই বিশ্বজগৎ অতি প্রাকৃতিক এক বা একাদিক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ মানুষের জীবন ধারার সঙ্গে জড়িত। তাই কাল বা ঋতুর প্রভাব অনুসারেই মানুষকে তার কর্মময় জীবন-যাপন করতে হয়। কর্মময় জীবন-যাপনের জন্য প্রকৃতিই তার জন্যে অনূকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। আর প্রকৃতি বিরূপ হলে মানুষের জীবন হয় দুর্বিসহ ও বিপর্যস্ত। মানুষ হয়ে যায় অসহায়। তাই মানুষ যুগে যুগে এক বা একাধিক অতি প্রাকৃতিক শক্তিতে বিশ্বাস করে এসেছে। তাদের পোষণের জন্যে, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা দানের জন্যে, মঙ্গল প্রার্থনা জানাবার জন্যে মানুষ যুগে যুগে নানা পূজা, পার্বণ করে এসেছে। বেঁচে থাকার জন্য, কাজ করার জন্যে প্রকৃতি মানুষকে কাল বা সময় দিয়েছেÑবীজ বপনের কাল, শস্য চয়নের কাল-বসন্ত ও শরৎকাল। তাই অতীতের সভ্যজাতিগুলো এ দু ঋতুতেই অধিকাংশ বড় বড় উৎসব পালন করেছে। অনেক প্রাচীন জনসমাজ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি অনুসারে যুগে যুগে নানা উৎসব বিভিন্ন প্রকারে গ্রামে ও শহরে পালন করে এসেছে। এসব উৎসব মানুষের জীবন ও মৃত্যু সংগ্রামের সঙ্গে ছিলো জড়িত। মানুষ এসব উৎসব পালন করে এসেছে যাতে মানুষ সর্বপ্রকার অমঙ্গল থেকে দুর্ভিক্ষ, রোগ-ব্যাধি প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে ও মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। মানুষের মঙ্গল সাধিত হয়- খাদ্য, স্বাস্থ্য ও ধন সম্পদ সে পায়। এভাবে মানুষ যুগে যুগে জীবন সংগ্রামে-প্রতিকূল আবহাওয়া, জলবায়ু, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, জমির অনুর্বরতা, অজন্মা, শস্য হানি, রোগ-ব্যাধি, মহামারী, প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি দেখা না দেয় সে জন্যে মঙ্গলদাতা বা ধাত্রী দেবদেবী আত্মা বা অদৃশ্য শক্তির তোষণার্থে পূজা-পার্বণ করে এসেছে। ঋতু বা কালগত উৎসবগুলো পথ বেয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে শরৎকালের বার্ষিক কৃষি উৎসব। এটাই ছিলো প্রাচীন কৃষি ভিত্তিক জন সমাজের প্রধান ও শ্রেষ্ঠ উৎসব। প্রাচীন জগতেও কৃষি উৎসব সপ্তাহব্যাপী চলতো। এ উৎসবে পবিত্র অভিনয়, মন্দশক্তির কাছে মন্দশক্তির পরাজয়, জগৎ সৃষ্ট বিভিন্ন দেবদেবী উপত্তি প্রভৃতি বলা হতো। উৎসবে নানা লোকনৃত্য, লোকসঙ্গীত, লোকক্রীড়া, নানা আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করা হতো, প্রাচীন মিশরীয়, বাবিলীয়, সুমেরীয় অসূরীয় প্রভৃতি সভ্যতায় এরকম জাকজমক কৃষি উৎসব হতো। এমনকি একেশ্বরবাদী ইস্রায়েল জাতির মধ্যেও কৃষির সঙ্গে যুদ্ধভিক্ষা নৈবেদ্য, পেয় নৈবেদ্য, শস্যের অগ্রিমাংসের আটি দোলনীয় নৈবেদ্য, কুটির বা গ্রহ উৎসব পর্ব এগুলো আমরা বাইবেলে দেখতে পাই। এগুলো আত্মিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত হলেও এক মহারাক্রমশালী অদৃশ্য শক্তি উদ্দেশ্যেই এসব পর্ব বা উৎসব হতো।

গারোদের জীবন কৃষি ভিত্তিক সমাজ জীবন তাদের বসবাস পাহাড়েই হোক কিংবা সমতল ভূমিতেই হোক, তারা বরাবর কৃষি ভিত্তিক সমাজ জীবন-যাপন করে এসেছে এবং এখনো করছে। তাই তাদের পর্বের উৎসবগুলো প্রধানত: কৃষিভিত্তিক। দেন’বিলসিয়া, আ۰সিরকা, মি, আমুয়া, রংচুগালা, ইত্যাদি ঋতু ভিত্তিক পর্ব উৎসব। গারোদের প্রধান ও শ্রেষ্ঠ কৃষিভিত্তিক পর্ব উৎসব হলো ওয়ানগালা। এ উৎসব শরৎকালে হয়। যেমন করে প্রাচীন বাবিলনীয়, সুমেরীয়, অসূরীয়, ইস্রায়েল জাতিগুলো তাদের কৃষি পর্বের বড় উৎসবটি করতো শরৎ কালে।

গারোদের বিশ্বাস-তাতারা (তাত্তারা) হলো বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা, তার আদেশেই বিভিন্ন দেবদেবী বিশ্বজগতের বিভিন্ন জিনিস ও প্রাণি সৃষ্টি করেছেন। তিনিই বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্বভার বিভিন্ন দেবদেবীকে দিয়েছেন। তাই গারোদের বিশ্বাস অনুসারে যিনি সালজং ভূমির উর্বরতার দেবতা, রক্ষিমে শস্যের জননী এবং মুসিমে শস্য রক্ষাকারী ও ধন সম্পদের দেবতা। মানুষের জীবন ধারণের জন্যে প্রয়োজন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও ধনসম্পদ। তাই সালজং রক্ষিমেও সুসিমের ঋতুগ্রহ ও আশীর্বাদ ছাড়া মানষের জীবন ধারণ অসম্ভব। তাছাড়াও রয়েছে শস্য বিনষ্টকারী কতকগুলো অপদেবতা, তাই খাদ্য, স্বাস্থ্য ও জীবন ধারণের জন্যে সালজং রক্ষিমের সুসিমের আশীর্বাদের প্রয়োজন। আর এ প্রাপ্ত আশীর্বাদের জন্যেই কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশের ওয়ানগালা উৎসব। তাদের যথাযোগ্য সম্মান দানের উৎসব। প্রাপ্ত আশীর্বাদের জন্যে আনন্দ উল্লাস প্রকাশের উৎসব ও ভবিষ্যতের জন্যে মঙ্গল প্রার্থনা জানাবার উৎসব।

গারোদের পূর্ব পুরুষদের ধারণা বা বিশ্বাস-পৃথিবীর জলে-স্থলে অবস্থানকারী নানা বস্তু ও প্রাণির সৃষ্টিকারী মা বা মালিক আছে। শস্যেরও জননী বা মালিক আছে। তার নাম রক্ষিমে। সাধারণত: তিনি রক্ষিমেসা দানিয়া বলে পরিচিত। তার নিবাস স্থান সালারাম, মিতেচাক মাগল, আমা রেকবক চিগা। আদিতে জগতের বুকে কোন খাদ্যশস্য ছিলো না। তখনও রক্ষিমে কাউকে শস্যের বীজ দেন নাই। পৃথিবীর মারনচি মারোন্দা তখনও শস্যের মুখ দেখে নাই। তৎকালে বন্য আলু, কচু, গাছের ফল-মূল, লতা-পাতা, খেয়েই জীবন ধারণ করতো কিন্তু কে শস্যের বীজ জগতের বুকে রক্ষিমের কাছ থেকে নিয়ে এলো। কেউ কেউ বলে-বনেফা, জানেফা বা বনে জাস্ক সর্ব প্রথম রক্ষিমের কাছ থেকে শস্যের বীজ পান। তিনি সর্বপ্রথম জমি চাষ করে বীজ বপন করেন। আবার কেউ কেউ বলেন-স্বামীহীনা, পিতৃহীনা মেয়ের জন্যে মিসি সালজং প্রথমে শস্যের বীজ দিয়ে আশীর্বাদ করে যান। আবার কেউ বলেন- তা আকেফা তা কিনমা সালগিরার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে তার কাছ থেকে প্রথমে বীজ পেলেন। তাদের কাছ থেকে গান্না পান জুলুমগিপা জুলুকগিপা খ্নি বিকদিনকিল গিপা ধান্য শস্য প্রথমে বপন করলেন। আর তিনি ধানের বীজ থেকে প্রথমে রূপন করলেন। মদন আজ তাকে বিয়ে করে ধানের বীজ করায়ত্ত করে নিলেন। তারপর তিনি তার স্বামীকে ছেড়ে রক্ষিমের সৃষ্টি ধানের বীজ তার পতিত্যাক্ত স্বামীর কাছ থেকে মনুষ্য সমাজে নিয়ে এলেন।

ধান, আলু, কচু অন্যান্য তরিতরকারি ও অন্যান্য খাদ্যশস্য বপন করলে  রোপন করলেও রক্ষিমে সহায় থাকলে, তার আশীর্বাদ না থাকলে ফলন ভাল হয় না। আর তিনি সর্বদা মানুষের সঙ্গে থেকে আশীর্বাদ করেন না। কিন্তু যে তাকে ডাকে তারে শরনলয়, তাকে বছরে একবারে এসে আশীর্বাদ করে আবার ফিরে চলে যান বলে গারোরা বিশ্বাস করে। তাদের বিশ্বাস, জমির ধান ও অন্যান্য খাদ্যশস্য, আলু, কচু ইত্যাদি ঘরে তুললে তিনি আশীর্বাদে করতে চলে আসেন এবং আশীর্বাদ করে তার নিবাসে মাগলমা রেকবক উপায় ফিরে চলে যান।

মানে তাদের জন্য পূর্বেই তিনি সালজং উপদেশ দিয়েছিলেন-নিজের কল্যাণের জন্যে রক্ষিমে মা, দানিমার স্মরণার্থে, সম্মাণার্থে নতুন ধানের ভাত তাকে ভক্ষ্য দৈবদ্য দিবে। প্রথমে ছাঁকা মদে পেয় নৈবেদ্য দিবে। এসব দেবার জন্যে মানত করবে, দিন তারিখ ঠিক করবে। তাঁকে ভুলে যাবে না, তার নামে, ওয়ানগালা উৎসব করবে। তার এ উপদেশ অনুসারে গারোরা নতুন ফসলাদি ঘরে তুললেই রক্ষিমের ও মিসি সালজং এর সামনে রেখে রক্ষা ও পেয় নৈবদ্য দিয়ে সুগন্ধি ধূপ জ্বালিয়ে বাদ্য যন্ত্রাদি বাজিয়ে নাচেগানে আমোদ-প্রমোদ করে গারোরা ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করে এবং ওয়ানগালায় তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানায়, সম্মানিত করে। তাদের আশীর্বাদের জিনিস নিয়েই তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, ধন্যবাদ জানায়, মঙ্গল প্রার্থনা করে এবং খুশিতে তাদের বিদায় দেয়।

ওয়ানাগালার উদ্দেশ্য আরোও আছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজন খাদ্যের। খাদ্য উৎপাদনের জন্যে প্রয়োজন অনুকুল জলবায়ু, আবহাওয়া, সুস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক অবস্থা। রীতিমত রোদ-বৃষ্টি না হলে ফসল ভাল ফলে না, কীট-পতঙ্গ, বন্য পশু-পাখি ফসল খেয়ে ধ্বংস করে দেয়। অনুকুল জলবায়ু ও আবহাওয়া না থাকলে অজন্মা দেখা দেয়। খাদ্যের অভাব ঘটে, নানা রোগব্যাধি মহামারীর আকারে দেখা দেয়। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্যেও রক্ষিমেমা সালজং ও সুসিমের সহায়তার প্রয়োজন, অনুগ্রহ ও করুণার প্রয়োজন। তাদের বিশ্বাস, জমির ধান ও অন্যান্য খাদ্যশস্য আলু, কচু, ইত্যাদি ঘরে তুললে তিনি আশীর্বাদ করতে চলে আসেন এবং আশীর্বাদ করে তার নিবাসে সাগালাম  ব্লেকক চিপান্তে ফিরে চলে যান।

মানে আজের জন্য পূর্বেই মিসি সালজং উপদেশ দিয়েছিলেন-নিজের কল্যাণের জন্যে রক্ষিমে মং, দানমার স্মরণার্থে, সম্মাণার্থে নতুন ধানের ভাত ভক্ষ্য নৈবেদ্য দিবে। প্রথমে ছাঁকা মদে পেয় নৈবদ্য দিবে। এসব  দেখার জন্যে মানত করবে, দিন তারিখ ঠিক করবে। তাঁকে ভুলে যাবে না, তার নামে ওয়ানগালা উৎসব করবে। তার এ উপদেশ অনুসারে গারোরা নতুন ফসলাদি ঘরে তুললেই রক্ষিমের ও মিসি সালজং এর সামনে থেকে ভক্ষ্য ও পেয় নৈবদ্য দিয়ে সুগন্ধি ধূম জ্বালিয়ে বাদ্য যন্ত্রাদি বাজিয়ে নাচে-গানে আমোদ-প্রমোদ করে গারোরা ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করে, ওয়ানগালায় তাদের অভ্যর্থনা জানায়, সম্মানিত করে। তাদের আশীর্বাদের জিনিস নিতেই তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, ধন্যবাদ জানায়, মঙ্গল প্রার্থনা করে এবং খুশিতে তাদের বিাদয় দেয়।

ওয়ানগালার উদ্দেশ্য আরও আছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজন খাদ্যের। খাদ্য উৎপদনের জন্যে প্রয়োজন অনুকূল জলবায়ু, আবহাওয়া, সুস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক অবস্থা। রীতিমত রোগ-বৃষ্টি না হলে ফসল ভাল ফলে না, কীট-পতঙ্গ, বন্য পশু-পাখি ফসল খেয়ে ধ্বংস করে দেয়। অনুকূল জলবায়ু ও আবহাওয়া না থাকলে অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। খাদ্যের অভাব ঘাটে, নানা রোগব্যাধি মহামারী আকারে দেখা দেয়। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্যেও রক্ষিমেমা, সালজং ও সুসিমের সহায়তার প্রয়োজন, অনগ্রহ ও করুণার প্রয়োজন।

বৃষ্টির উৎস স্থান সমুদ্র- সাগাল আমা মেঘ বৃষ্টির কারণ বায়ু প্রবাহ। আর এসবের মূলে আছে সূর্য কিরণের তারতম্য। ধান-সম্পদ ও সুস্বাস্থ্যদাতা সুদিনে। ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য প্রয়োজন অনেক শ্রমের। স্বাস্থ্য ভাল থাকলে পরিশ্রম করে ধন-সম্পদ অর্জন করা যায়। তাই ভাল ফসল ফলাবার জন্যে অনুকূল জলবায়ু, আবহাওয়া ও সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজন। এমন অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশেই ফসলের ফলন হয় বেশি। তাই গারোরা খুশি মনেই বর্ষা বিদায়ের পর ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করে থাকে। কারণ মেঘ-বৃষ্টি এ সময়ে সাগাল আমায়, রক্ষিমেরা দানিয়ায়, নিবাস স্থানে ফিরে, যায়, পরের বছর সেখান থেকেই মেঘ-বৃষ্টি আবার রক্ষিমেমার আশীর্বাদের ডালি নিয়ে মানুষের কাছে আসে, আশীর্বাদ বর্ষণ করে।

ওয়ানগালা কোথায় প্রথম হয়, কে বা কারা ওয়ানগালা উৎসবটি প্রথম করেছে তা বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকে-তার কারণ লিপিবদ্ধ ইতিহাস বা বিবরণের অভাব। কারও কারও মতে জগতের বুকেই প্রথম ওয়ানগালা হয়েছে। বৈশাখের প্রথম ভারী বৃষ্টির নতুন জল পেয়ে ব্যাঙেরা মাটির কলুপ থেকে বেড়িয়ে এসে নবীন জলে আনন্দ করেছে। যেমন করে প্রতিবছর আমরা দেখতে পাই ব্যাঙেরা বৈশাখের নতুন জলে সবাই মিলে আনন্দ করে থাকে। গারোরাও ব্যাঙেদের এই আনন্দ- উৎসব দেখেই ওয়ানগালা করতে শিখে।

আবার কারও মতে পাতালপুরিতে অগাধ জলের নিচে জল-স্থলের সব প্রাণি মিলে সর্বপ্রথম ওগানগালা উদযাপন করে। এ বিষয়ে দু রকম মতামত আছে। মানুষ প্রথমে মাছের কাছে ওয়ানগালা উৎসবের বিবরণ শুনতে পায়। অতি প্রাচীনকালে এক ধনী লোকের বাড়িতে আওয়াৎ সে۰আ বৃষ্টি এক জংআৎপান্থে নামে এক যুবক কাজ করতো। সে শরৎকালে একদিন একটি নদীর তীরে গেলে নদীর কিনারে দেখতে গেল একটি দাড়ি মাছ (না রনটি)। সে রংবেরংয়ের শরীর নিয়ে নদীর কিনারে শুয়েছিলো। আওয়াৎ মে۰আ জংআৎপান্থে অবাক হয়ে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলো, সে কী করছে, কোথায় এসেছে, তার শরীর কেন বিচিত্র রঙে রঞ্জিত। দাড়ি মাছ বলল যে, সে মনে নেশাগ্রস্ত ও আমোদগ্রস্ত। সে পাতালপুরির ওয়ানগালা উৎসব থেকে আমোদ-প্রমোদ করে মনে নেশাগ্রস্ত হয়ে এসে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। সে ঐ মাছের কাছে ওয়ানগালা উৎসবের বিবরণ আওয়া সে۰আ জংআপান্থেকে বলেছিলো। সে উৎসবে পশু-পক্ষী, মাছ-সরীসৃপ সবাই উপস্থিত ছিলো। সে উৎসবে ফুটকা মাছ দাদা ওখাককিয়া মাছ বাঁশি বাজিয়ে ছিলো না। চিতফা দামা দক্কা না বেরাংনি বাংশি শিক্কা। আর পশু-পাখি অন্যান্যরা আনন্দে নাচ-গান করেছিলো।

আওয়াৎ মে۰আ জংআৎপান্থে তার মালিক নকমাকে এ বিবরণ জানালে, সেই নকমা গ্রামবাসীদের ডেকে পরের বছরে ঐ শোনা বিবরণ অনুযায়ী ওয়ানগালা উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন। পরের বছর দিন তারিখ অনুসারে তারা ঐ বিবরণ অনুসারে রুগালা, সাসাৎ স۰আ, দামা গগাতা বা জল ওয়াত্তা করে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করল। তাদের সেই প্রথম ওয়ানগালা উৎসবে সুসমে কারুফা মানুষের বেশ ধরে, তাদের সঙ্গে ওয়ানগালায় যোগ দিয়েছিলেন। সেই ওয়ানগালা উসবে এক গরিব বিধবা মেয়ে অবহেলিত হয়েছিলো। তার ঘরে উৎসবের কোন লোক যায় নাই। সে গরিব, মদ তৈরি করে ওয়ানগালার জন্যে সে প্রস্তুত হয় নাই। মনে করে সবাই তাকে এড়িয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এই উৎসবের এক সন্ধ্যা রাতে মানুষ বেশধারী সুসিমে কারুফা কয়েকজনকে নিয়ে সে বাড়িতে গিয়েছিলেন। ঐ বিধবা লোকটি গরিব হলেও ওয়ানগালার জন্যে মদ তৈরি করে রেখেছিলো। মহিলাটি তাদের পেয়ে খুশি হয়ে ঐ মদ তাদের খেতে দিল। আর ঐ মদ খেতে খেতে সুসিমে কারুফা লোকদের কথা প্রসঙ্গে ওয়ানগালার কথা বললেন। বললেন যেন তারা প্রতিবছর এমন সময়ে ওয়ানগালা করে, সালজং ও রক্ষিমেমাকে স্মরণ করে ও সম্মান করে। তাহলে ফসলের আজন্মা হবে না শস্যক্ষেতে ঘাস হবে না, খরা ও অতিবৃষ্টি হবে না। কীট-পতঙ্গ, পশু-পাখি, শস্য নষ্ট করবে না। শস্যের অপদেবতা কাছে আসতে পারবে না। মানুষের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। ফসলের ফলন ভাল হবে। এসব বলে সুসিমে কারুফা অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আর সেজন্যই সুসিমে কারুফার উপদেশ অনুসারে গারোরা প্রতিবছর শারৎকালে ওয়ানগালা করে থাকে।

অন্যমতে আদিতে মানুষের মধ্যে ওয়ানগালা উৎসব ছিলো না। পাতালপুরিতে অগাধজলের নিচে যে, এনমা দ্রংমা, (সাং ক্নি নকমা) সর্বপ্রথম ওয়ানগালা উৎসব উদযাপনের ব্যবস্থা করেন। এই উৎসব উদযাপনের আগে তিনি নিজেকে সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন। তার কোন কিছুই অভাব ছিলো না। কোন কিছুর অসুবিধাও তার ছিলো না। কিন্তু কালক্রমে অনেকদিন ধরে বৃষ্টি হলো না। নদীগুলো সাগরে নতুন নতুন পানি এনে দিল না। প্রখর সূর্যতাপে সাগরের বুক শুকিয়ে যেতে লাগলো। অবস্থা দেখে ঐ, এনমা দ্রংমার টনক নড়লো। তার মনে চিন্তা এলো। তাঁর চাইতেও বড় বড় আরও অনেকে আছে। কাজেই গর্ব করা তার উচিত নয়। সব বস্তু ও প্রাণির মালিক সে নয়। নিশ্চয় প্রত্যেক বস্তু ও প্রাণির আলাদা আলাদা মালিক আছে, নিয়ন্ত্রক আছে। এরূপ চিন্তা বিবেচনা করে তিনি জল স্থলের সব প্রাণিকে নির্ধারিত এক সময়ে তার দরবারে নিমন্ত্রন করলেন। কিন্তু মনুষ্য জাতির মধ্যে কেউই সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলো না। স্থলের প্রাণি জাতের মধ্যে মানুষই প্রধান। প্রধান হয়েও মানুষ সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলো না। সেই সম্মেলনেই সবাই মিলে ওয়ানগালা করার সিদ্ধান্ত নিল এবং সম্মেলন শেষে সবাই মিলে আমোদ-প্রমোদ করে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করলেন। কিন্তু মানুষের কাছে সে ওয়ানগালা আপাতত: অজ্ঞাত থেকে গেল। পাতালপুরীতে অগাধ জলের থেকে নিচে ওয়ানগালা উৎসবে মানুষের অনুপস্থিত থাকায় সেই ওয়ানগালার সময়ে মানুষের প্রতিকৃতি তৈরি করে তার উপস্থিতি জ্ঞাপন করেছিলো। সেই প্রতিকৃতি-বলি নিয়ে মানুষ তৈরি করে তার মাথায় পাগড়িতে কাশবনের ফুল দমি (ময়ূরী পালকরূপে) লাগিয়ে নিয়েছিলো। আদিল না থাকায় তাকে বাঁশের চুঁঙ্গা আদিলের প্রতীক হিসাবে দিয়েছিলো। আর সেই সময়েই আপনা থেকে রে-রুমা হাততালি দিলে, হাত তুলে নাচতে আরম্ভ করলো। বাঁশের চুঙা বাঁশি হয়ে বাজলো। খঞ্জন পক্ষী লেজ নেড়ে নেড়ে নাজলো, দোয়েল পাখি কোমড় নেড়ে নেড়ে নাচল। আর সে ওয়ানগালা উৎসবে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে চিহ্নরূপে পুয়াকপুটাককে বিচিত্র সাজে সাজিয়ে দিল। সেই অপরূপ সাজে পুয়াপুটাক(ময়ুর) মনের আনন্দে কেকাধ্বনি করে ডানা মেলে (জাককো বাওয়ুাংএ) নাচলো। পুরোওয়ান্তির তকার মত চংমিচাংকে (অজগর সাপকে) রং মাখিয়ে দিল। সেও মনের আনন্দে সে উৎসবে নাচলো সেই দ্রুআ ওয়ানগালায়-

মে এনমা দ্রংমা মে এনমা দ্রংমা দাক্কে ফিনিজক

দ্রু ওয়ানগালা দারাংমা. সিপাজক।

দংজাসি কিংএ আংকেকো ওয়াতজক

মাংরাপা ইন্নে নকগিপানা অন۰জক।

সবাই জানার জন্যে মালিকের উদ্দেশ্যে কাকড়া উৎসর্গ করে দেখালেন। মে۰এনমা দ্রংমা এভাবে সর্বপ্রথম ওয়ানগালা উৎসব করে দেখালেন।

এভাবে ওয়ানগালা করলে কৃষিকাজের জন্যে অনুকূল বৃষ্টিপাত হয় বলে গারোরা বিশ্বাস করে। মেঘ-বৃষ্টি আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু প্রবাহে কলা গাছের পাতা নড়ে অর্থাৎ নাচে। গাছের শাখায় শাখায়, পাতায় পাতায় লেগে শব্দ হওয়াকে প্রকৃতির আনন্দের হাততালির প্রতীক বলে মনে করে। প্রবল বাতাসে বাঁশের শব্দ যেন বাঁশি বাজানোরই শব্দ। বৃষ্টি বর্ষণে নদী কিংবা পানি বেড়ে গেলে তার কিনারে খঞ্জন ও দোয়েল পাখি নেচে বেড়ায় বৃষ্টি হলে ভিজে। বজ্রপাতের শব্দে ময়ূর আনন্দে কেকাধ্বনি করে নেচে উঠে। এমন আদর্শই গারোদের কাম্য। আর সেরূপ আনন্দই তারা ওয়ানগালা উৎসবে প্রকাশ করে থাকে।

ওয়ানগালার প্রসঙ্গে আসি, মে۰এনমা দ্রংমা, জল-স্থলের সর্বপ্রকার প্রাণি যারা সে উৎসবে যোগ দিয়েছিলো, তারা ঐ উৎসবের শেষে নিজ নিজ নিবাসে চলে গেল। তাদের বলে দেওয়া হলো যারা উপস্থিত থাকে নাই, যেন তারা তাদের ওয়ানগালা উৎসব করা হয় তা দেখায়। পৃথিবীতে মুনেফা মানেফা যখন ওয়ানগালা উৎসবের কথা শুনালেন তখন যারা তাকে শুনিয়াছিলো তাদের মানুষকে ওয়ানগালা করে দেখাতে বললেন, মানুষের মধ্যে তারা আজেমাকে ওয়ানগালা করে দেখালো।

ওয়া, কলমা বাংশি শিকে মেসাজক ইন্না

রে۰রুমা দক্কে ফিন্নিকজকমা

দ۰জেপজেপ-গা জেপ জেপে স্রকে দাকমেসকজক

আজেমা রননিকে দাননিং ফাজক

করিপক বকসাও স্টিল মেরিম গ۰এ

ওয়ান্তি ফিলাতাকো চংমিতং মেসকে,

পুয়াকপুটাক তে,বিকাল মিকসেয়াতাং কো

পি۰নিকজক  রে আংএ আনথাং বিমাংকো

চানচিয়া গিসি গিসিকো মারনচি মারন্দা

বিলসিকারি সকো দাকপানা আনাথাংবা

তা জাংচি দনে মিদ্দেনা গোজক

বিংটি রংজাগিকো রক্ষিমেমা সালজক।

এভাবে আজেমা ও মারনচি মারন্দা দেখে এসে রাজা মুনেফা সানেফাকে ওয়ানগালার পূর্ণ বিবরণ দিল। আর সে বিবরণ অনুসারে পরের বছরে মুনেফা সানেফা ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করলেন। সেই থেকে গারোরা মুনেফা সানেফার অনুসরণে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করে আসছে।



আরো পড়ুন



বহেরাতুলি গ্রামকেও গ্রাস করছে সোমেশ্বরী ।। জর্জ রুরাম

ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিঘলবাগ গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ।। অরন্য ই. চিরান

মেথ্রা জাজং নিয়া বা যুবতীদের চাঁদ দেখা নাচ: জিংজিংগ্রিকগা রওয়া বা প্রিয়জনকে ধরে নাচ ।। তর্পণ ঘাগ্রা

ব্রাদার গিউম পেলেন নেদারল্যান্ড রাজার বিশেষ সম্মাননা ‘অ্যাওয়ার্ড অব দ্যা কিং

ইউটিউবটাই আমার ভালোবাসা ।। নীল নন্দিতা রিছিল

গারো ভাষা ও সাহিত্যের স্বরোপ-৪ ।। বর্ণমালা সংক্রান্ত কিছু তথ্য ।। বাঁধন আরেং

https://www.youtube.com/watch?v=JpMMX0vH0TE




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost