ম্রো বা মুরং জাতিসত্তার সদস্য লংঙান ম্রো (Longngan Mro)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য এবং প্রাচুর্যের আবাস বান্দরবানের বাসিন্দা। ইয়ুথ উইথ এ মিশন—ময়মনসিংহের একজন স্টাফ। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় জন। সুদূর বান্দরবানের দুর্গম একটি গ্রাম থেকে দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ফিরেছেন নিজ কর্মস্থল ময়মনসিংহে। গ্রাম থেকে বান্দরবান জেলা শহরে লংঙানকে পায়ে হেঁটে আসতে হয় প্রায় দেড় ঘন্টার পথ। পথ বলতে প্রায় তিন-চারেক বড় বড় পাহাড় ডিঙানো। অরণ্যেঘেরা এক পাহাড় বেয়ে নেমে আবার আরেক পাহাড়ে উঠা। স্বপ্নপূরণে তবু এ কষ্ট যেন কষ্টই নয়। কথা বলেন ভাঙা ভাঙা বাংলায়। করোনাকালীন ম্রো এলাকার যাপিতসময় এবং শৈশবকালীন বেড়ে ওঠার নানান অভিজ্ঞতা জানা গেলো দুজনের আলাপ চারিতায়। থকবিরমের বিশেষ প্রতিনিধি দে. রেমার সাথে আলাপ চারিতার বিশেষ অংশ প্রকাশ করা হলো- বি. স।
দে. মারাক : করোনাকালীন অনির্দিষ্টকালের ছুটি কেমন লাগল?
লংঙান: দীর্ঘদিন পর মা-বাবা, ভাই-বোন, এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কাটাতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। মা-বাবার জন্য বেশ অনেক দিন পেলাম সময় দেওয়ার মত। বন্ধুবান্ধদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি। সময়টা বেশ উপভোগ্য ছিল। মা-বাবার সাথে জুম ক্ষেতে কাজ করেছি। বিকালে খেলাধূলা করতাম। বুধবার এবং রবিবারে চার্চে যেতাম। সকালবেলা মেডিটেশন করতাম। এটাই আমার রুটিন ছিল।
দে. রেমা : তবে এই করোনা ক্রান্তিকালে স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে মঙ্গোলীয় অনেক আদিবাসীর মত অনুসরণীয় এবং চোখে পড়ার মত আপনাদের প্রাচীন ম্রো ব্যবস্থা অনুসরণ করেছেন….
লংঙান: হ্যাঁ। মহামারী আরম্ভ হওয়ার প্রাক্কালেই আমরা গ্রাম লকডাউন করে দিয়েছি। এক পাড়ার লোক অন্য পাড়ায় আসতে পারত না এমন কি ভাইবোন বা প্রতিবেশী হলেও না। বহিরাগত প্রবেশ ত একদমই নিষেধ ছিল।
দে. রেমা : আদিবাসী ম্রো বা মুরংদের জনজীবনে করোনার প্রভাব সম্পর্কে কিছু বলুন।
লংঙান: দুঃখজনক হল করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের দুয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশেষভাবে জীবিকার তাগিদে যাদের শহরে যাতায়াত করতে হত, মানুষের সংস্পর্শে যেতে হত। এছাড়া, মহামারীর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব হল যদিও জুমচাষ করছে তবু প্রচণ্ড অর্থনৈতিক ধ্বস নেমেছে। অর্থসংকট প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে কারণ ফল-ফসলাদি এবং সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছে না। প্রথম দিকে দুয়েকবার ত্রাণ-সহায়তা পেলেও এখন অবশ্য সেরকম কিছু নেই কিন্তু লকডাউন বিদ্যমান রয়েছে।
দে. রেমা : আপনি ত ময়মনসিংহে গারো, বাঙালি, চাকমা প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে স্টাফ হিসেবে আছেন। ম্রো জাতিগোষ্ঠীর পক্ষে একাই প্রতিনিধিত্ব করছেন। নিশ্চয় মাতৃভাষায় কথা বলার ভীষণ অভাব বোধ করেন?
লংঙান: হ্যাঁ, নিশ্চয় করি। যদিও মোবাইলে পরিবারের লোকদের সঙ্গে, গ্রামের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলি তবু যেন এই অভাব আসলে মিটে না। সবসময় সামনাসামনি ফ্রাঙ্কলি বলার মত হয় না। এর মধ্যে বাংলা বলি আধো আধো, ফ্লুয়েন্টলি বলার মত দখল আসেনি।
দে. রেমা : কাজেকর্মে যখন একঘেয়েমিতা এসে যায় অথবা কখনো একা বোধ করেন সেক্ষেত্রে কী করেন?
লংঙান: তখন ফোনে মা-বাবার সাথে কথা বলি, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলি। একা চুপচাপ বসে থাকি কিংবা চিন্তা করি (হাহাহা)তখন নানা চিন্তা করি। কেমন আছে আমার পরিবার। বন্ধুবান্ধবেরা কেমন আছে। আমি ত এখানে একা। তাদের সাথে যদি এ সময়ে থাকতে পারতাম, লেখাপড়া করতে পারতাম। মূলত এইসব চিন্তাগুলোই করি।
দে. রেমা : আপনার কোন শৈশব-স্মৃতি?
লংঙান: আমরা বন্ধুবান্ধবেরা সবাই মিলে পাহাড়ে গাছে চড়ে চড়ে ‘মানুষ এবং বানর’ খেলা খেলছিলাম। ম্রো ভাষায় এটাকে বলে ‘ইয়োকখেলা’। একজন মানুষ থাকবে, আর সবাই হবে বানর। তো আমি বানরের দলে ছিলাম। এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফিয়ে যেতে হত। লাফ দিতে গিয়ে একসময় ডাল ভেঙে পড়ে যাই। পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে বাবার সাথে। কানের কাছে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম। ঘটনাটা মনে প্রচণ্ড দাগ কেটে আছে।
ছোটবেলার স্মৃতি অবশ্যই মধুর। নয়-দশ বছর বয়সে বাবা এবং বন্ধুবান্ধবের সাথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ এবং সৈকতে বাবার সাথে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে খেলাটা আমার খুব মনে পড়ে।
দে. রেমা : অবসর সময়ে কী করেন?
লংঙান: অবসর সময় মোবাইল গেমস খেলি, ফেইসবুক চিটচ্যাট করি, বই পড়ি। বিশেষভাবে ম্রো ভাষায় রচিত বাইবেল পড়তে খুব ভালো লাগে।
আরো লেখা…
জুম পাহাড় মানুষের জীবন লিখতে বললে আমি অনেক কিছুই লিখতে পারবো ।। ইয়াংঙান ম্রো
কামারখালি গ্রামবাসীর দুঃখের কথা শুনলেন ধর্মগুরু বিশপ পনেন পল কুবি
‘সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস’
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব......বিস্তারিত
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
-
গারো লেখক অভিধান : মিঠুন রাকসাম (Mithun Raksam)
: Mithun Raksam He was born on December 25, 1983 in...
-
সাংসারেক ওয়ান্না, গোড়ামী আর উপসাংসারেক-এর গল্প
: আমার ধারণা-মিদ্দি রাবুগা, সালজং আমার উপর অধিক খুশি হয়ে বর...
-
কালাচাঁদপুরে চলছে মাসব্যাপী গারো বইমেলা
: কালাচাঁদপুরের শিশু মালঞ্চস্কুল প্রাঙ্গণে চলছে গারো বইমেলা। বইমেলা শুরু হয়েছে...
-
প্রকাশিত হলো লিয়াং রিছিল-এর Bi·sarangni Goserong
: প্রকাশিত হলো আ·চিক ছড়াকার লিয়াং রিছিল-এর প্রথম অনবদ্য সাহিত্য-কর্ম ‘Bi·sarangni...
‘শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য’
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার......বিস্তারিত
‘সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস’
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব......বিস্তারিত