এক.
সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব সভ্যতাকে দিয়েছে উন্নত জীবন। আরো অধিকতর সহজ করে তুলছে মানুষের জীবন যাপনের ধরণ। মানুষের প্রয়োজনের তাগিদা থেকে আবিষ্কার হয় প্রযুক্তি/পণ্য। যে প্রযুক্তি কিংবা আবিষ্কার জিনিস বহুল ব্যবহার্য হয়, সেই জিনিস এর চাহিদা থাকে অতুলনীয়। যা ব্যাপকহারে শুরু হয়েছিল শিল্প বিপ্লবের পর থেকে (১৭৬০-১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দ)। এই বিশ শতকে অধিক মাত্রায় প্রযুক্তি ব্যবহারের জয়জয়কার। সবখানেই প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছে যাচ্ছে। যা জীবন যাপনের ধরণ পাল্টে দিয়েছে।
এই সময়ে নিত্যনতুন প্রয়ুক্তি/পণ্য আবিষ্কার হচ্ছে,আবার দ্রুত আপডেট হচ্ছে। যত সময় এগিয়েছে প্রযুক্তি উন্নত থেকে উন্নত হচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মানব সভ্যতা,সাথে যোগ হচ্ছে রোবটিক্স এর ব্যবহার। রোবটিক্স মানুষের নির্দেশে কাজ করছে,কর্মী কম লাগছে,সময় সাশ্রয় হচ্ছে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর অধিক সংখ্যক মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে। কিন্তুু মানুষের এখন সবচেয়ে যে বিষয়টা জরুরি সেটা হচ্ছে,”সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার”। বর্তমান তরুণ সমাজে প্রযুক্তির নির্ভরতা আকাশচুম্বী। এমকি সকল ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে তো বাড়ছেই। ইন্টারনেট (অর্ন্তজাল) ছাড়া জীবন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়(মনে হয়)। কারণ সবকিছু এখন ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। সমাজ ব্যবস্থার কর্মস্থল বা সরকারি বা বেসরকারি সর্বক্ষেত্রে ইন্টারনেট লাগবেই,চাহিদা বাড়ছে। ক’য়েক দশক আগেও যেখানে মানুষ ফোনালাপ বা চিঠিপত্রের মাধ্যমে আদান-প্রদান করে দূর-দূরান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত, আজ সে জায়গায় দখল করে নিয়েছে নানাবিধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
ইন্টারনেটের চাহিদার সাথে সাথে এখন ব্যাপক হারে অনলাইন নির্ভর অনেক প্লাটফর্ম ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত। অনলাইন প্লাটফর্ম থাকার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য,লেনদেন,শিল্প-সাহিত্য,সম্পর্ক স্থাপন,জ্ঞান বিজ্ঞান, যোগাযোগ ইত্যাদি সবকিছুই সহজ হয়েছে। অতি দ্রুততার সাথে কাজ করতে পারছে,দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর নিমিষে পাওয়া যায়,পৌঁছে দেওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করছে। অনলাইনে তৈরি হয়েছে আরেকটা জগৎ। যে জগৎ দেখতে হলে ইন্টারনেট লাগবে,সাথে প্লাটফর্ম। প্লাটফর্ম এর মধ্যে উল্লেযোগ্য যেমন-ফেইসবুক,টুইটার,লিংকডিন,ইন্সটাগ্রাম,ইউটিউব,ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, উই চ্যাট,সিঙ্গনাল, গুগল ইত্যাদি। সোশ্যাল মিডিয়া মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহাকারী সংখ্যা ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। তরুণদের মধ্যে এ হার আরও বেশি, প্রায় ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। বিশ্বব্যাপী ইউটিউব ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ১৫০ কোটি, হোয়াটসঅ্যাপ ১২০ কোটি, ফেসইবুক মেসেঞ্জার ১২০ কোটি ও উইচ্যাট ব্যবহারকারী ৯৩ কোটি ৮০ লাখ(আগস্ট ২০১৭, সূত্র : ইন্টারনেট)। সুতরাং সহজে অনুমেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তিজীবনে কেমন প্রভাব রাখছে।
দুই.
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রাণ হচ্ছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ও আইফোন প্রভৃতি। এই প্রাণের মাধ্যমেই নেটওয়ার্ক গড়ে উঠে,নতুন সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যোগাযোগ থাকে। নিউজ ফিডে ভরে যায় প্রয়োজনী,অপ্রয়োজনীয় সংবাদ ছবি ঘটনা। ফলত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমরা এসব ভার্চুয়াল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছি, এর ফলে আমাদের প্রকৃত সম্পর্কগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। যা ব্যক্তিজীবনে সম্পর্কের কাঠামো নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। সহজেই সম্পর্ক স্থাপনের প্লাটফর্ম থাকার ফলে সম্পর্কগুলো ইমোশন হারিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না,তেমনি অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার ভালো লক্ষ্য নয়। তবুও জেনে না জেনেও আমরা ব্যবহার করছি, অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। অনিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বন্ধুময় সম্পর্ক নষ্ট করে,অসামাজিক আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলে। সর্ব্বোপরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের নিরাপদ ও নিরাপত্তা দেখতে হবে এবং সচেতন থাকাটা খুবই জরুরি।
বাস্তবতা এই,যে নতুন কিছু গ্রহণ করতে পারে না, সে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। যুগের সাথে তাল মিলাতে অবশ্যই নতুনত্ব গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এর সুফল এবং কুফল। সচেতনতা একমাত্র চাবিকাটি,যা দিয়ে সব প্রযুক্তি/পণ্যের বা মাধ্যম গুলো সদ্ব্যবহার করা যায়। নিজে সচেতন থেকে অন্য কে সচেতন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রযুক্তির সাহায্যে যেমন সহজে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যায়, আমরা করতে পারছি। অপরদিকে খারাপ মানুষ গুলো সেটার ক্ষতিও করতে পারে। খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে নিরিহ মানুষের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। যা কিছুই আমরা ব্যবহার করি না কেন,নিরাপদ থাকাটা আমাদের সকলের মাথায় রাখতে হবে। না হলে আপনা আপনি বিপদ দরজায় কড়া নাড়বে।
তিন.
ইতোমধ্যে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়া সংজ্ঞা বলতে এমন,” কিছু আন্তঃক্রিয়ামূলক তথ্য প্রযুক্তিকে বোঝায়, যেগুলি তথ্য, ধারণা, আগ্রহ ও অন্যান্য ধরনের অভিব্যক্তি আন্তর্জালভিত্তিক (ইন্টারনেটভিত্তিক) (ভার্চুয়াল কমিউনিটি) ও জালব্যবস্থাগুলিতে বিষয়বস্তু সৃষ্টি ও ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুবিধা প্রদান করে”(উইকিপিডিয়া)।
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সেই জন্য বাংলাদেশে সরকার ২০০৬ সালে প্রথম সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) প্রণয়ন করে। এছাড়াও ইউরোপে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো একটি আচরণবিধিতে স্বাক্ষর করেছে ২০১৬ সালে। আচরণবিধি অনুযায়ী তারা নোটিস পাবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিকারক কনটেন্ট সরাতে বাধ্য। রাশিয়ায় ২০১৫ সালের ডাটা আইন দিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। জনসংখ্যা বহুল চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী দেশ হলেও ওখানে টুইটার, গুগল বা হোয়াটস এ্যাপ নিষিদ্ধ। সেখানে একই ধরনের কিছু চীনা যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে। যেমন উইচ্যাট, ওয়েইবো, বাইডু ইত্যাদি। উন্নত দেশগুলো তাদের সামাজিক অবক্ষয়, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর,ব্যবহারকারীর ডাটা চুরি, পর্নোগ্রাফি, অসত্য ও মনগড়া তথ্য সংবলিত রিপোর্ট, সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ছবি বা ভিডিও ক্লিপ, ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি রুখতে
এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া যেমন মানব সভ্যতার জন্য আর্শীবাদ তেমনি ভয়ংকর হতে সময় লাগবে না। আমরা পরবর্তী আলোচনায় সোশ্যাল মিডিয়ার সুফল ও কুফল এবং কিভাবে নিরাপদে ব্যবহার করা যায় তার আলোচনা করবো।
চার.
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে মানব জীবনে কেমন প্রভাব ফেলে বা অনিরাপদ ব্যবহারে কেমন সমস্যার সম্মুখীন হই, হতে হয় তা উপরে আমরা কিছু অংশ জানতে পেরেছি। এখন আমরা অনিরাপদ ব্যবহারে কেমন বিপদ হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে কেমন কুফল হতে পারে(?) সেটার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোকপাত করা যাক।
১.ব্যক্তিগত নিরাপত্তা- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে প্রথমেই যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের সর্ব্বোচটুকু দিয়ে ব্যবহাকারীর নিরাপত্তা প্রদানে সচেষ্টা থাকে। কিন্তুু অনেক সময় বিফল হয়ে যায়। তাই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে নিজ থেকে সাবধানতা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়া প্রদানে বিরত থাকতে হবে।
২.দ্রুত নেতিবাচক সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে-সামাজিক মাধ্যমের ফলে যে কোন বিষয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক সংবাদ বা ঘটনা বা ছবি ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগে না। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং নেতিবাচক ঘটনা, সংবাদ বা উস্কানি মূলক পোস্ট থেকে বড় ধরনে দুঘটনা ঘটতে সময় লাগে না।
৩.মানসিক চাপ-তরুণ সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সক্রিয়। তারা নিজেদের নিউজ ফিডে,সংবাদে বা ছবিতে অনেক কিছু লক্ষ্য করে এবং তাদের মত হতে চাই বা কাল্পনিক চিন্তভাবনা করে। প্রত্যেকের যে স্বাতন্ত্র্য ব্যক্তিসত্তা আছে তা ভুলে যায়। অন্যের মত হতে চেয়ে মানসিক চাপে ভোগে।
৪.আসক্তি-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণের আসক্তি বাড়ছেই। ফলত যোগাযোগ মাধ্যমে সময় দেওয়ার ফলে নিজেদের সৃষ্টিশীল কাজ বা চিন্তা ভাবনা করতে অক্ষম হচ্ছে। আসক্তির ঘোরে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। একি জায়গা তে ঘোরপাক খেতে থাকে। সুুতরাং আসক্তি দূর করতে হবে।
৫.আত্নকেন্দ্রিক ও অসামাজিকতা-অতিরিক্ত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে কাছের আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের সাথে মধুময় সম্পর্ক বজায় থাকছে না। অনলাইনে সময় ব্যয়ের ফলে আত্নকেন্দ্রিকতা চলে আসে এবং কোন জায়গাতে অংশগ্রহণ থাকে না বিধায় অসামাজিকতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়াই।
৬.মনযোগ বিঘ্ন-তরুণ বয়সে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া,সৃষ্টিশীল কাজে জড়িত থাকা প্রয়োজন। তারা মাঠে খেলবে,মাছ ধরবে,পানিতে সাঁতার কাটবে,সৃষ্টিশীল জিনিস বানাবে,নতুনত্ব জানার আগ্রহ হবে। কিন্তু অতিরিক্ত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে চিন্তা ভাবনার বিকাশের সময় মনযোগ বিঘ্ন ঘটছে। তখন সৃষ্টিশীল বিকাশের জায়গা থাকে না। বারবার স্যোশাল মিডিয়াতে কী হচ্ছে,কে লাইন দিচ্ছে, কমেন্ট করছে,কার মুভি আসছে,কার সাথে কার প্রেম প্রভৃতি এই সব বিষয় না চাইতেও সামনে আসে। যদি সেখানেই আগ্রহ অনুভব করে তখন মনযোগী কাজ নষ্ট হয়ে যায়।
৭.মানসিক বিকাশ-তরুণদের মানসিক বিকাশের সময় যদি স্যোশাল মিডিয়াতে আসক্ত হয়ে পড়ে তখন মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়েপড়ে। গবেষণায় দেখাগেছে ২০ মিনিটের উপরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে মানসিক বিষন্নতা চলে আসে।
৮.ব্লেকমেইল-অনেক সময় ব্যক্তিগত আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও না চাইতেও লিক হয়ে যায় বা কেউ লক্ষ্য উদ্দেশ্য প্রণীত ভাবে চুরি করে। তখন নিজের স্বার্থের জন্য ব্লেকমেইলের সম্ভাবনা বেশি থাকে বা করে থাকে। হরহামেশাই এখন ব্লেকমেইল এর খবর পাওয়া যায়।
৯.সামাজিক বৈষ্যম-যখন একটা শ্রেণীর কাছে সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে তখন সে সুবিধার প্রান্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকে। প্রান্তিক বা নিরক্ষর লোকেরা যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে না। সেদিক থেকে তারা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে সামাজিক ও শ্রেণী বৈষ্যম তৈরি হয়।
১০.সক্রিয় অপরাধ-যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গ্রুপ খোলা যায়, সহজে পেজ বা গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় জঙ্গি
সংগঠন,মাদক কারবারী,জুয়ার লেনদেন, অর্থ আত্মসাৎসহ,প্রতারকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
১১.সাইবার ক্রাইম-প্রযুক্তির যেমন ক্রমবর্ধমান বিকাশ লাভ করছে, তেমনি সাইবার ক্রাইম বা অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সর্তক থাকাটা আবশ্যক।
১২.মানসিক স্বাস্থ্য-অতিরিক্ত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের আসক্তি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। বিষন্নতা চলে আসে,সৃষ্টিশীল কাজে বিঘ্ন ঘটায়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রযুক্তির আসক্ত কমাতে হবে।
১৩.হীনম্মন্যতা-সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের ছবি ঘটনা সংবাদ সামনে চলে আসে। ফলে অপ্রত্যাশিত,অসামঞ্জস্যপূর্ণ নিউজ ফিড,ভিডিও,ছবি দেখতে হয়। তখন হীনম্মন্যতা তৈরি হতে পারে। হতাশা, বিষন্নতা,অপ্রাপ্তি কাজ করতে পারে।
১৪.তিরষ্কার ও তুলনা-সহজেই যোগাযোগ মাধ্যমে
যে কাউকে তিরস্কার ও কারো সাথে তুলনা করা যায়। যেহেতু সহজেই বিভিন্ন ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যায়,সেক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।
ফলে নিজেকে ছোট,অদক্ষ,অর্কম্মা,লুজার মনে হতে পারে।
১৬.মেজাজ ও ঘুম-সোশ্যাল মিডিয়া অতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষের মেজাজ খিটখিটে থাকে এবং স্বাভাবকি ঘুমের ব্যাঘাট ঘটে। ফলত মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এমন অনেক কারণ আছে যা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং সবসময়ই মনে রাখতে হবে নিরাপদ ব্যবহার ও নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।
পাঁচ.
ইতোমধ্যে আমরা যোগাযোগ মাধ্যমের মারফতে কুফল কী হতে পারে কিংবা ব্যবহারকারীরা কী রকম বাস্তবতার সাথে সম্মুখীন হতে পারে তা জানতে পারলাম। এখন আমরা জানবো যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে মানবজীবনে কেমন করে স্যোশাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ বাহক হয়ে উঠলো। আমেরিকান নাগরিকগণ ৮০ শতাংশ মানুষ সংবাদের জন্য স্যোশাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং স্যোশাল মিডিয়া মানব জীবনে কেমন সাহায্য করছে এবং এর সুফল কী (?)তা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের মাধ্যমে অলোকপাত করা হলো।
১. তথ্য ভাণ্ডার-যোগাযোগ মাধ্যম তথ্য ভাণ্ডারের
এক বিশাল মাধ্যম। পৃথিবীর যাবতীয় ঘটনা,ছবি,সংবাদ নিত্যনৈমিত ঘটনা প্রবাহ,সকল বিষয়ে জানা যায়। তাই নিত্যদিনের তথ্য পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সোশ্যাল মিডিয়া বা যোগাযোগ মাধ্যম।
২.পরিচিত/অপরিচিত সাথে সম্পর্ক-সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ভূমিকা পালন করে যোগাযোগ মাধ্যম। সহজেই পরিচিত/অপরিচিত লোকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, সেটা রক্ষাও করা যায়।
৩.চলমান বিশ্বের পরিস্থিতি-বর্তমান পৃথিবী গ্রামে রুপ নিয়েছে যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে। এখন শুধু মাত্র নিজের চারিপাশ বা এলাকার খবর পাই এমন নয়। বিশ্বের পরিস্থিতি ঘটনা প্রবাহ নিমিষেই আমরা পেয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
৪.বন্ধুত্ব স্থাপন-জীবনে চলার পথে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে বন্ধুত্ব স্থাপন। একাকী জীবন যাপন মানুষের পক্ষে অসম্ভব(ব্যতিক্রম আছে)।তাই তো জীবন চলার পথে বন্ধু লাগবেই। সুতরাং নতুন বন্ধু তৈরিতে, নিজের মনের মত বন্ধু পেতে যোগাযোগ মাধ্যম সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
৫.সহজ তথ্য প্রাপ্তি-যোগাযোগ মাধ্যমে নিমিষেই আমরা প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য পেয়ে থাকি। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে তথ্য প্রান্তি সহজ হয়েছে। মানুষ জীবনযাপন সহজ থেকে সহজতর হয়েছে।
৬. ভাব বিনিময়ের মাধ্যম-দুই বা তিন দশক আগেও মানুষ ভাব বিনিময়ের জন্য অনেক পন্থা ব্যবহার করতো যা ছিল সময় সাপেক্ষ্য ও অনিশ্চিত মাধ্যম। কিন্তুু বর্তমানে ভাব বিনিময় সহজ হয়েছে। অতি দ্রুত সেকেন্ডের মধ্যে ভাব বিনিময় যে কোন প্রান্তে যোগাযোগ করা যায়। ফলে নিশ্চিন্তে থাকা যায় ও সময় কম লাগছে,খরচ কম হচ্ছে।
৭.বিপদগ্রস্তের ভরসা-মানুষের বিপদ কবে কখন আসে,তা বলা মুশকিল। কোন উপায় যদি না থাকে তাহলে বিপদগ্রস্ত মানুষের একমাত্র ভরসা যোগাযোগ মাধ্যম। অতি সহজে সে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে এবং তার প্রার্থনা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
৮.তথ্য প্রযুক্তি- তথ্য প্রযুক্তি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যা যোগাযোগ মাধ্যমে নিমিষেই আমরা নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারি। যা তথ্য পেতে চাই,সেটা আমরা অবলীলায় পেয়ে যায়। তথ্য প্রযুক্তির ফলে স্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে।
৯.দ্রুত যোগাযোগ-যত সময় যাচ্ছে,মানবজীবনের গতিশীলতা তত বাড়ছে। মানুষ এখন এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, সে সবকিছু দ্রুততার সাথে কাজ করতে চাই। সেইজন্য যোগাযোগ ব্যক্তিক্রম নয়। বর্তমানে যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত যে কারো সাথে অতি সহজে যোগাযোগ করতে পারে।
১০.সংবাদের গতিশীলতা-আগে সংবাদ দেওয়া হত মুখে মুখে। পরবর্তীতে এসেছে প্রিন্ট মিডিয়া। বর্তমানে অনলাইনে সকল ধরনের সংবাদ পাওয়া যায়। সুতরাং আগে সময়,খরচ,শ্রম বেশি লাগত, তা কমে এসেছে এবং সংবাদের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
১১.ই-কমার্স-যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে আবিষ্কিত হয়েছে ই-কমার্স। যেখানে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়িরা অতি সহজে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের জীবন কে আরো সহজ করে তুলেছে যার উদাহারণ হল ই-কমার্স।
১২.চাকরি-চাকরি নিয়োগ বিজ্ঞতি,সিলেকশন,ট্রেনিং,কার্যক্রম সকল ধরনের কাজ এখন অনলাইন বা যোগাযোগ মাধ্যমেই করা সম্ভব, করা হচ্ছে।
১৩.সামাজিক কার্যক্রম-বর্তমানে যোগাযোগ মাধ্যম সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। সামাজিকতার সকল পোস্ট কর্মকান্ড সবকিছু সোশ্যাল মিডিয়াতে যাচ্ছে,শেয়ার হচ্ছে। সকলে দেখছে, অনেকে আবার সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভালো কাজে মানুষকে পাশে পাচ্ছে।
১৪.আন্তজার্তিক সম্পর্ক-সোশ্যাল মিডিয়া শুধু মাত্র নিজ কমিউনিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
আন্তর্জাতিক ভাবে বন্ধুত্ব তৈরি হয়,সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এক দেশ থেকে অন্য দেশ,এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের বন্ধু পাওয়া যায়। এবং বিচরণের পরিধি বাড়তে থাকে।
১৫.মার্কেটিং-বর্তমানে সকলে সোশ্যাল মিডিয়া বা যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সংম্পৃত। সেহেতু ব্যবসায়িক বা পণ্যের মার্কেটিং এর জন্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপক আকারে ভূমিকা পালন করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার সুফল আমরা পেলাম। আরো কিভাবে সদ্ব্যবহার করা যায়,সেটা আমাদের ভাবা উচিত। সামাজিক মাধ্যমের সর্ব্বোচ সদ্ব্যবহার করতে হবে। সকলকে জানাতে হবে এর উপকারীতা এবং কিভাবে ব্যবহার করা যায় প্রচারণ চালাতে হবে যাতে সকলেই সুবিধা পেতে পারে।
ছয়.
সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অধিকতর সচেতন থাকাটা আবশ্যক। কেন না বর্তমান
সময়ে তরুণ সমাজ ব্যাপকহারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। ফলে তাদের মধ্যে অনেকেই অসচেতন ভাবে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে। অসাবধানতা ডেকে আনতে পারে বিপদ। তাই সম্ভাব বিপদসমূহ বিষয়গুলো সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন। কিভাবে সচেতন থাকা যায়,সেটা আলোকপাত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার পরিপ্রেক্ষিতে সারসংক্ষেপে এর কুফল ও সুফল ধারণা পেয়েছি। তাছাড়াও আমাদের জানা প্রয়োজন কীভাবে সচেতনতার সাথে যোগাযোগ মাধ্যম আমরা ব্যবহার করবো বা করতে পারি।
সারসংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।
১.সাইবার ক্রাইম বা প্রযুক্তিগত অপরাধ-প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সাইবার ক্রাইম বা প্রযুক্তিগত অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। কিভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়,সাইবার ক্রাইম হলে সমস্যা উত্তরণের উপায় কী তা জানা প্রয়োজন। তা না হলে আমরা যে কেউ সাইবার হামলার শিকার হতে পারি। বর্তমানে যে কোন দেশ কে পঙ্গু করে দিতে পারে এই সাইবার হামলা।
২.যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপত্তা বাড়ানো-যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চত করা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সর্ব্বোচ্চ সিইকিউরিটি বা নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন, যে গুলো করলে নিরাপত্তা বাড়বে সেদিকে নজর দিতে হবে।
৩.বন্ধু তালিকা-যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুর তালিকায় পরিচিত জনের মধ্যে সীমাবদ্ধতা রাখলে নিরাপত্তা থাকে। অপরিচিত বন্ধু কোন না কোন ভাবে ক্ষতি করতে পারে। সেই সংশয় থেকে পরিচিত জনের মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকা আবশ্যক।
৪. প্রাইভেসি সেটিংস নির্বাচন-সর্তকতার সাথে নিজেদের অ্যাকাউন্ট প্রাইভেসি রাখতে হবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জনসাধারণের জন্য উম্মুত্ত না রাখাই ভালো। সবাই যেন প্রবেশ করতে বা দেখতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
৫.টু-স্টেপ নোটিফিকেশন-সর্তকতার জন্য টু-স্টেপ নোটিফিকেশ রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। যদি কেউ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চাই তাহলে নিরাপত্তার জন্য মোবাইল নাম্বারে বা ইমেলে কোড যাবে। সে ক্ষেত্রে এই টু-স্টেপ সেটআপ করা প্রয়োজন।
৬.একটি একাউন্ট থেকে পেজ/গ্রুপ-যোগাযোগা মাধ্যমে অনেক পেজ/গ্রুপ খোলা যায়। সেটা অতি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিরাপত্তার সুবিধার্থে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পেজ/গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করলে ঝুঁকিটা কম থাকে। এবং আকাউন্ট বা পেজ বা গ্রুপ নিরাপদে থাকে।
৭.গেম বা কুইজ-নিউজফিডে বা অপরিচিত অ্যাকাউন্ট থেকে লোভনীয় অফার আসতে পারে। এই গেম খেলে বা কুইজে অংশ নিয়ে এত টাকা পাওয়া যাবে কিংবা এই লিঙ্কে ঢুকলে এই-সেই (গাড়ি,বাড়ি)হবে। এমন লোভনীয় অফার থেকে দূরে থাকতে হবে। এই হলো প্রতারণার একেকটা ফাঁদ।
৮.নিয়মিত চেকাপ-যতবার সম্ভব নিজেদের অ্যাকাউন্ট রীতিমত চেকাপ করতে হবে। অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত আছে কিনা, কেউ প্রবেশের চেষ্টা করছে কিনা,কোন অনাঙ্ক্ষিত জিনিস আছে কিনা। সেইসব সবসময় চেক করতে হবে।তবেই নিজেদের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে।
৯.রিপোর্ট-যদি নিজেদের অ্যাকাউন্টে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন নোটিফিকেশন থাকে,দেখা যায়, ঝামেলা হচ্ছে। তাহলে সাথে সাথে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা প্রয়োজন। যত তাড়াতাড়ি ঝামেলা মেটানো যায় ততই মঙ্গল।
১০.ই-মেইলের নিরাপত্তা-আমরা মোবাইল নাম্বার বা ই-মেইল এর মাধ্যমে সকল ধরণের যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি, অ্যাকাউন্ট খুলি। সেক্ষেত্রে মোবাইল নাম্বর ও ই-মেইল এর নিরাপত্তা দেখাতও জরুরি। ইমেইলে ঝামেলা হলে স্বাভাবিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে প্রভাব পড়বে।
১১.লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখা-আমরা কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গাতে যায়,যেতে হয়। সেক্ষত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের নিজেদের লোকেশন বন্ধ রাখতে হবে। যেন ঘনিষ্ঠ ও পরিচিত ছাড়া কেউ যেন জানতে না পারে কোথায় আছি বা কোথায় যাবো। নিরাপত্তার জন্য আমাদের লোকেশন বন্ধ রাখতেই হবে।
১২.অনলাইনে কেনাকাটা-আমাদদের বর্তমান বিশ্ব অনলাইনের যুগ। সবকিছুই এখন অনলাইনের মাধ্যমে কার্যসার্ধিত হয়। সুতরাং ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের কেনাকাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, আমাদের নিজেদের অ্যাকাউন্ট বা কার্ড যেন অন্যের হাতে চলে না যায়।
সাবধানতার সাথে টাকা পের্ড করতে হবে। এবং নিজেদের কোন তথ্য যেন না থাকে সেইজন্য সব তথ্য মুছে ফেলতে হবে।
১৩.আর্থিক লেনদেন-অনলাইনের ফলে এখন আর্থিক লেনদেন অনলাইনেই হয়ে থাকে। তাই প্রতারক চক্র খুবই সক্রিয় অনলাইনে। যা কিছু লেনদেন করি না কেন,দেখে শুনে বুঝে আমাদের লেনদেন করতে হবে। বিশ্বস্ত ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৪.একাধিক লগিন-আমরা অনেক সময় একাধিক ফোনে বা অন্য ডিভাইসে অ্যাকাউন্ট লগিন করে থাকি। যা নিরাপত্তার জন্য অনেকটা হুমকি। সেই জন্য নিজের ডিভাইস ছাড়া অন্য ডিভাইসে লগিন করা উচিত নয়। নিরাপত্তার জন্য অন্য ডিভাইসে লগিন করা বাদ দিতে হবে।
১৫.পাসওয়ার্ড-যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকতে হলে বা আকাউন্ট খোলার সময় পাসওয়ার্ড দিতেই হবে। সুতরাং নিরাপত্তার স্বার্থে পাসওয়ার্ড কাউকে দেওয়া যাবে না,শেয়ার করা যাবে না। যদি সম্ভব হয় মাসে অত্যন্ত একবার হলেও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা দরকার। এমন পাসওয়ার্ড দেওয়া উচিত যাতে পাসওয়ার্ড শক্তিশালী হয় এবং কেউ ধারণা করতে না পারে।
১৬.অ্যান্টি-ভাইরাস সিকিউরিটি-প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে প্রযুক্তিতে ঘুরে বেড়ায় ভাইরাস। তাই অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত সচল রাখতে অ্যান্টি ভাইরাস ট্যুল ব্যবহার করতে হবে। যে ভাইরাস থেকে অ্যাকাউন্ট নিরাপদে থাকবে।
১৭.সাইবার বুলিং-যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং হচ্ছে। সবচাইতে তরুণ সমাজ সাইবার বুলিং এ শিকার হচ্ছে। সাইবার বুলিং রোধে অপরাধীকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তার ন্যায্য শাস্তির বিচার করতে হবে। সাইবার বুলিং কেন হয় এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে সচেতনতা মূলক সভা সেমিনার কোর্স আয়োজন করতে হবে। তরুণদের বেশি করে সংম্পৃতায় আনতে হবে।
১৮.নেতিবাচক পোস্ট-প্রত্যেক ব্যবহারকারীর উচিত নেতিবাচক পোস্ট দেওয়া বা উৎসাহিত করা থেকে বিরত থাকা। নেতিবাচক পোস্টের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
১৯.মতামতের গুরুত্ব-যোগাযোগ মাধ্যম হল সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। সেখানে বিভিন্ন ধরণের মানুষের সন্নিবেশ ঘটে। ফলত সেখানে নানা জনের নানা মত থাকতে পারে। যুক্তি থেকে যুক্তি দিতে পারে। সেই জন্য নিরাপত্তা বা শ্রদ্ধার জন্য অন্যের মতামত কে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে কারো নিরাপত্তা বিঘ্ন না ঘটে।
২০.আনফ্রেন্ড ও আনফলো-ব্যবহারকারী যদি মনে করে তার বন্ধুর লিস্টে থাকা অন্য ব্যবহারকারী তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আনফ্রেন্ড বা আনফলো বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করাই ভালো। যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরাত্তার স্বার্থে নিজের বুদ্ধি দিয়ে চলতে হবে।
২১.আইন ও প্রতিরোধ-বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে প্রথম সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) প্রণয়ন করে৷ সেটা সকলের জানা প্রয়োজন সমস্যা সমাধান কিংবা আইনগত ভাবে যেতে হলে কী করতে হবে। সেটা জানার জন্য আইন পড়তে হবে ও সমস্যার সম্মুখীন হলে তার প্রতিরোধ করতে হবে।
২২. ক্ষতিকারক বিষয়বস্তুর-নিজেদের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিকর কোন বিষয় বা বস্তু চোখে পড়লে তা এড়িয়ে যেতে হবে। ক্ষতিকর বিষয় কিভাবে হ্রাস করা যায় তা দেখতে হবে। নিজেদের ক্ষতি করবে এমন কিছু রাখা বা অনুসরণ করা যাবে না। সুতরাং যতটা পারা যায়, দ্রুত ক্ষতিকারক বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে।
২৩.তত্ত্বাবধান-সোশ্যাল মিডিয়া সবসময় তত্ত্বাবধানের মধ্যে রাখতে হবে।চোখের আড়ালে অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে। তাই যতটা সম্ভব তত্ত্বাবধান করতে হবে। যদি তত্ত্বাবধানের সক্ষম না হয় তাহলে চিরতরে অ্যাকাউন্ট ডিলিট করতে হবে। যেন কোন তথ্য বা ছাপ না থাকে।
২৪.সোশ্যাল মিডিয়ার ভারসাম্য-নিরাপদ ব্যবহারে ভারসাম্য থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ভারসাম্যহীন ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে। যে কোন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে ভারসাম্যের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
২৫.সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে জ্ঞান-যে কোন মাধ্যম ব্যবহারে জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক। যদি ব্যবহারে অজ্ঞনতা থাকে তাহলে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সেইজন্য বিজ্ঞ বা যে ভালো ব্যবহারকারী, সেই বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান আছে। তার কাছ থেকে জেনেশুনে ধারণা নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।
যোগাযোগ মাধ্যম নিরাপদ ব্যবহারে আমরা কিছু পয়েন্ট দেখেছি। যে পয়েন্ট গুলো প্রাসঙ্গিক। আমাদের নিরাপত্তার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতেই হবে। নিরাপদ ব্যবহার সহজ নয় বিধায় আমাদের প্রত্যেকের সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। প্রত্যেকে নিজেদের নৈতিকতা কে জাগ্রত করতে হবে।এমন কিছু করা যাবে না যাতে নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয়,সমস্যায় পড়তে হয়। নিজেদের কাছেই নিরাপত্তার কাবিকাঠি।
সাত.
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিরাপদ ব্যবহার কিভাবে করা যায় তা জোরেশোরে আলোচনা
করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার যেমন জরুরি তার চেয়ে জরুরি নিরাপদ ব্যবহার। নিরাপদ সচেতন থাকা নিজেদের কাছে। যদি নিরাপদ ব্যবহারে মনযোগী না হই কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি সমস্যা হলে উত্তরণে উপায় কী,কীভাবে নিরাপদ রাখতে পারি সেটা ইতিমধ্যে আমরা অবগত হয়েছি। সুতরাং অবহেলার কোন সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে প্রযুক্তি আটকে নেই,প্রতিনিয়ত নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। আবিষ্কার যেমন হয়,তা ধ্বংশ করতে সময় লাগে না। ধ্বংশের মাত্রা মারাত্নক হতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া বা যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সর্তক হই। তাই অবসর সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে না থেকে বইপড়া, গানশোনা, নাটক দেখা,মুভি দেখা,ঘুরতে যাওয়া, কবিতা শোনা ইত্যাদি সৃষ্টিশীল কাজে মনোযোগী হই। তাহলেই সম্ভব মানসিক বিকাশ ও যোগাযোগ মাধ্যমের সদ্বব্যবহার।
জাডিল মৃ : একজন ব্লগার, তরুণ লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
-
গারো লেখক অভিধান : মিঠুন রাকসাম (Mithun Raksam)
: Mithun Raksam He was born on December 25, 1983 in...
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত