শাওনের সাথে কবে, কখন পরিচয় হয়েছিল তা আর স্মরণেই নেই। হয়তোবা আমার অথবা তার প্রাইমারি পড়ার সময়ই, বড়জোর হাইস্কুল। রিছিল মাহারীসূত্রে শাওন আমার জজং, ছোটভাই; তার মা আমার মাসি। উপরন্তু তার আজংয়ের ছেলে ইলিয়াস রিছিল (গম) হাইস্কুলে আমাদের বন্ধু সার্কেলেরই একজন ছিল। সে সূত্রেও তাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। শাওনের বড় দিদি দাদা বলেই ডাকে। কালিয়ানীকান্দা থেকে আসা মেসোও খুব আলাপী-আমুদে মানুষ। আমাদের বাড়ির পাশে কালিয়ানীকান্দা থেকে আসা একঘর বসতি। তারাও গোবরাকুড়া কিংবা কালিয়ানীকান্দা বিষয়ক আলাপে প্রায়ই শাওনের বাবার নাম নিতেন। কাজেই সম্পর্কের নানা সুতোয় ছোটবেলা থেকেই নিশ্চিতভাবে শাওনের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। দুর্বল স্মৃতিশক্তিতে কিছুতেই যা আর মনে পড়ছে না! কিবা জন্মান্তরে বিশ্বাসীদের মত চিন্তা করলে, আগের জন্ম থেকেই হয়তোবা শাওনের সাথে আমার পরিচয়।
সে তো শুধু আত্মীয়তার সম্পর্ক, মাহারীর সম্পর্ক। আত্মার সম্পর্ক কখন গড়ে উঠল, সেসবের খোঁজও নেয়া যাক। হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়ে আমরা বন্ধুরা মিলে “সুনদারে” নামে একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছিলাম। জয়রামকুড়া-মনিকুড়ার মানুষ বেশি হওয়ায় গোবরাকুড়ার সদস্যরা যাতে আবার মনে না করে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। সেই কথা ভেবে জয়রামকুড়ার বন্ধু জাসেংদের বাড়ি থেকে সব বই নিয়ে শিফট করা হল গমদের বাড়ি। আমরা মাঝেমাঝে দেখতে-বেড়াতে যাই। গমের মা-মাসি, খুব পড়ুয়া মানুষ। গেলে আলাপ করেন–এই বইটা ভালো, পড়ে ফেলেছি। এত সংখ্যক বই পড়া শেষ ইত্যাদি। এসবের বাইরেও ঐ রাস্তা দিয়ে আসলে তাদের বাড়ি ঢু মেরে আসতাম। একদিন হলো কী? গমের মা মাসির সাথে আলাপ করছি; উঠোন লাগোয়া বাড়ি থেকে শাওনের মা মাসি এসে বললেন– পরাগ খিন্নাচেং, আকখিসা আলাপ দঙা…। তোমাদের ছোট ভাই তো তোমাদের লাইন ধরেছে। কবিতা লিখছে। শুনে ভেতরে ভেতরে আঁতকে উঠেছিলাম! কারণ টুকটাক লেখালেখির চেষ্টা করছি, ততদিনে সমাজের কিছু মানুষ তা জেনে গিয়েছিল। আর লেখালেখি করে কী হবে? লেখালেখি করে কি জীবন চলবে? সমাজের মানুষের টিটকারি-বিদ্রুপ শুনতে শুনতে অভ্যস্তও হয়ে উঠছিলাম। আতঙ্কের জায়গাটা ছিল সেখানেই–সদ্য লিখতে বসা শাওনের কোমলপ্রাণ হৃদয়ও যদি এই বিদ্রুপ শুনে? যদি ওর মন ভাঙে?
মাসি, লেখালেখি তো কোন খারাপ কাজ না? ও তো আর কোন খারাপ কাজ করছে না? কথাটা বলে গমের মা মাসির দিকে তাকিয়ে ছিলাম সমর্থন লাভের আশায়। সেদিন গমের মা মাসি আর শাওনের মা মাসি দুজনই অভাবনীয় সমর্থন জুগিয়েছিলেন! আর বলেছিলেন, তোমরাও ওর লেখালেখিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিও। সেদিন থেকেই তো গড়ে উঠেছিল আত্মিক সম্পর্কটা…। তারপর কখনো হঠাৎ রাস্তায় দেখা হলে কিছুটা উত্তেজনা নিয়ে জানাতো, দাদা, এই পত্রিকায় আমার লেখা বেরিয়েছে। তোমার ঐ লেখাটা ভালো লেগেছে। আবির্ভাবের এই সংখ্যায় আমার লেখা আছে, হিমেলদা’র সাথে আমার যোগাযোগ আছে। জর্নেশ ফাজং, মতেন আচ্চু’র লেখা কিবা দেখা-কথা হয়েছে সেসব বিষয়ে জানাতো। আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর শিল্প-সাহিত্যকে ঘিরেই হতো আমাদের বেশিরভাগ কথোপকথন।
২০১৯ সালে বনানীতে অনুষ্ঠিত ঢাকা ওয়ানগালায় থকবিরিম প্রকাশনীর স্টল ছিল। আমাদের আসনের মাননীয় সাংসদ অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। হেঁটে হেঁটে স্টলগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে থকবিরিম স্টলের কাছে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে আমাদের যৌথভাবে লেখা ‘সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না’ বইখানিও ছিল। কিছুক্ষণ পর শাওন এসে জানাল, জুয়েল আরেং-এম. পি মহোদয়কে একখানি সৌজন্য সংখ্যা দিয়েছি। সমাহিতের দিন এম.পি মহোদয় এসেছিলেন। শোকাবহ পরিস্থিতির ভেতর কোন বাক্য বিনিময় হয়নি। হলে হয়তোবা বলতাম, শাওন অন্ত:প্রাণ, আপনার একনিষ্ঠ ভক্ত। একবার ঢাকায় শাওন ফোন করে বললো, এক জায়গায় নিয়ে যাব। তার আগে বাসায় ছোট্ট কাজ আছে, সেরে আসতে হবে। বললাম, আচ্ছা, আমি রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকি। না, এই তো রাস্তার পাশেই আমার বাসা, বেশিক্ষণ লাগবে না। চার-পাঁচ মিনিট? অগ্যতা যেতেই হলো। সেদিনই একটু বেশি করে সময় কাটানো হলো একমাত্র সন্তান ‘দামা’র সাথে। যদিও এর আগে কয়েকবার দেখা হয়েছে রাস্তায় বাপ-বেটাকে হাঁটতে বেরুবার সময় কিংবা কোনোকিছু কিনতে যেতে। দেখা হলো ‘মারাক বিল্ডিং’-য়ে থাকা ননোর সাথে যে কিনা বউয়ের দিক থেকে শাওনদের আত্মীয় আর এখন একসাথেই সাবলেট থাকে। শাওনের ইশারায় হুট করে দামার মা প্লেটে ভাত নিয়ে সামনে হাজির। সবার জুরোজুরিতে খেতেও বাধ্য হলাম।
গত থকবিরিম বই মেলায় নিগূঢ় ম্র্রং-য়ের বই বেরিয়ে গেল। সামনের একুশে বই মেলা অথবা থকবিরিম বই মেলায় নিশ্চয়ই শাওন রিছিলের বইও বেরিয়ে যেত? দামা একা একা খেলে, নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে সে পেতো খেলার সাথী ভাই বা বোন? শাওন যে নেই, একথা কখনও আমার মনেই হয় না… কোনো লিপস্টিকের বিষয়ে বা চুমু’র বিষয়ে হুট করে ফেইসবুকে কবিতা পোস্ট দিয়ে বসবে পরবর্তীতে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মুচকি মুচকি হাসবে…।
৯ সেপ্টেম্বর ব্রেইনস্ট্রোক করে তরুণ কবি শাওন রিছিল গুলশানের একটি ক্লিনিকে মারা যান। পরে তার নিজ বাড়ি হালুয়াঘাট থানার দক্ষিণ গোবরাকুড়া গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়। কবি শাওন রিছিল স্মরণে থকবিরিম ‘ বিশেষ স্মরণ সংখ্যা’ প্রকাশ করেছে। সেই সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাগুলো থকবিরিম অনলাইন পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
Git-bibal ।। Motendro Mankhin
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi...
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
‘Git-bibal ।। Motendro Mankhin’
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত