‘জীবন-জীবিকার প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ়/ আগামীর পথে বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানকে কেন্দ্র করে গত ৩রা জুন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে জাতীয় বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন। আগামী অর্থবছরের জন্য মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬শত ৮১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং, করোনাকালের বাজেটে গতবছরের তুলনায় এবার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যা দেশের মানুষের জন্য নি:সন্দেহে আশা জাগানিয়া বিষয়। যদিও নানা প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে এই বাজেটকে কেন্দ্র করে। তাছাড়া লক্ষ্য করা গেছে, এবারও প্রান্তিক ও আদিবাসী মানুষের দাবি ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি বাজেটে। সে বিষয়টিতেই এ পর্যালোচানায় একটু নজর দেব।
প্রথমত, এবারের বাজেট বক্তৃতায়ও আদিবাসী বিষয়ে বা আদিবাসীদের উল্লেখ করে কোন প্যারা বা বাক্য রাখা হয়নি। মোট ১৫৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় আদিবাসীদের বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও বাজেট বক্তৃতার উপসংহারে বলা হয়েছে, “আমাদের এবারের বাজেটেও দেশ ও জাতির উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাধিকার পাচ্ছে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ- প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও তাদের জীবন জীবিকা।”
দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে ভেঙে পড়া প্রান্তিক ও আদিবাসীদের জন্য আলাদা ও সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ বা অর্থনৈতিক প্রণোদনার কথা উল্লেখ নেই। আদিবাসীদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২% হলেও তাদের দারিদ্র্য হার কিন্তু ৬০% এর অধিক। আদিবাসীদের দারিদ্র্য হার দেশের জাতীয় দারিদ্র্য হার থেকে অনেক বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রেই সুবিধাবঞ্চিত। তাই বাজেটে আদিবাসীদের এ করোনা দূর্যোগ মোকাবেলায় আলাদা গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল, যা এ বাজেটে আসেনি।
তৃতীয়ত, আদিবাসীদের উন্নয়নে ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের কথা লেখা নেই। পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানেও একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এসব প্রতিজ্ঞার পূর্ণ বাস্তবায়নে যথেষ্ট বরাদ্দ এ বাজেটে উল্লেখ করা নেই।
চতুর্থত, বাজেটে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করলেও আদিবাসী শিক্ষার্থী যাদের অধিকাংশই কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা বা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কথা কিছুই বলা হয়নি। এছাড়া আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ও নিজস্ব ভাষাভাষীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যা আদিবাসীদের একটি অন্যতম দাবি ছিল সে ব্যাপারেও এবার বাজেটে কিছু বলা হয়নি।
পঞ্চমত, সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। একটি আদিবাসী কমিশনও গঠন করা যেতে পারে তাদের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য যাতে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়। কিন্তু এসব কিছু স্পর্শ করা হয়নি এ বাজেটে। তাদের জন্য যেটুকু থোক বরাদ্দ হয় (নি¤েœ তার পরিমাণ উল্লেখ করেছি) তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে তো একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা উচ্চ পর্যায়ে একটি বোর্ড গঠনের দাবি ছিল সমতলের আদিবাসীদের। সেটির কোন উদ্যোগের কথাও লেখা নেই এ বাজেটে।
২০২১-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে তাহলে কী থাকছে দেশের আদিবাসীদের জন্য তা নিম্নে তোলে ধরছি:
দেশের ৪০ লক্ষ আদিবাসীদের জন্য বাজেটে এবারও বরাদ্দ সেভাবে আসেনি। আদিবাসীবান্ধব পলিসি মেকার, সুশীল সমাজ, অর্থনীতিবিদ ও আদিবাসী সংগঠনগুলো যেভাবে বাজেটে আদিবাসীদের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা প্রতিবছরই করে আসছেন। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও এসব বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি ছিল না বরং বাজেটে তাদের আরো উপেক্ষা করে হতাশ করেছে বলা যায়।
# পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট কমেছে
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের বাজেট গতবছরের তুলনায় ৫৩ কোটি টাকা কমিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছে ১,১৮২ কোটি টাকা। যেখানে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,৮৬ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭,৯৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে বাজেট ছিল ১,২৩৫ কোটি টাকা (পরিচালন ব্যয় ৩,৭১ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ৮৬৪ কোটি টাকা)। অর্থাৎ দেখুন, এবারের বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ে পরিচালন ব্যয় ঠিকই বেড়েছে কিন্তু কমানো হয়েছে উন্নয়ন ব্যয়। যদিও, এ উন্নয়ন ব্যয় শুধুমাত্র সেখানকার আদিবাসীদের জন্য কতটুকু খরচ হবে সে বিষয়েও স্পষ্ট লেখা নেই।
# সমতলের আদিবাসীদের জন্য থোক বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও প্রত্যাশার অনুয়ায়ী নগণ্য
দেশের দুই-তৃতীয়াংশ সমতলের আদিবাসীদের জন্য আসলে কোন মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর নেই। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে তাদের জন্য একটি থোক বরাদ্দ প্রতিবছর দেয়া হয়ে থাকে যা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ কার্যক্রমের নাম হল “বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)”। এ খাতে গতবছর বরাদ্দ ছিল ৮০ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে তা ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এই সামান্য বরাদ্দ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিয়ম, জটিলতা তো আছেই আবার মূল আদিবাসীদের কাছে এ সেবাটি পেীঁছাতেও নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
সমতলের আদিবাসীদের জন্য উক্ত থোক বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অধীনে “সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন” নামে বরাদ্দ গতছরের তুলনায় কমিয়ে ধরা হয়েছে এবার ৩২ কোটি টাকা। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৪৬.২৫ কোটি টাকা।
এছাড়া আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট করে আর কোন বরাদ্দ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে উল্লেখ নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অস্পষ্ট উন্নয়ন খাতের কথা বলা আছে- “দরিদ্র, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং দুর্যোগ প্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীর নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য হাউজহোল্ড সাইলো সরবরাহ” নামে এবারেই প্রথম ৪৩.৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যেখানে একই সাথে আদিবাসী এবং দুর্যোগ প্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীর কথা বলা আছে।
পরিশেষে, এবারও বাজেটে আদিবাসীদের জন্য যথার্থ ও সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ আসে নি। তবুও, যতটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেটুকুও আদিবাসী উপকারভোগীদের কাছে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছাবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ এবারও রয়ে গেছে। কারণ, এসব বরাদ্দ বাস্তবায়নে আদিবাসীদের সরাসরি অংশগ্রহণে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। তাই, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নে আদিবাসীদের উল্লেখ করে সকল কার্যক্রমে আদিবাসীদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত যেন তারা উল্লেখিত খাতগুলোতে কোন ধরণের হয়রানি ছাড়া শতভাগ সেবা পেতে পারে।
।। হোসেল হাজং- লেখক ও উন্নয়ন কর্মী।
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
-
গারো লেখক অভিধান : মিঠুন রাকসাম (Mithun Raksam)
: Mithun Raksam He was born on December 25, 1983 in...
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত