Thokbirim | logo

৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মহাখালী থেকে চেন্নাই অতঃপর আসকিপাড়া ।। সুমনা চিসিম

প্রকাশিত : মে ০৫, ২০২১, ১১:২৩

মহাখালী থেকে চেন্নাই অতঃপর আসকিপাড়া ।। সুমনা চিসিম

ব্রাদার গিউম এর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী হয়ে গেল ১৫ এপ্রিল ২০২১। আসকিপাড়ায় আমাদের বাড়িতে ধুমধাম করে না হলেও অন্যরকম করে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১৭ এপ্রিল। তাই জন্মদিন উপলক্ষ্যে সেরেনজিং পালা পরিবেশনার কথা ছিল। করোনার কারণে সেটাও আর সম্ভব হয়ে উঠল না। ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালনও হয়েছিল আসকিপাড়াতেই। সে অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। আরেকবার  পঁয়ত্রিশ বছর আগে ৪০তম জন্মবার্ষিকী পালন হয়েছিল ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায়। কমলাপুর রেল স্টেশনে যাদের আস্তানা অর্থাৎ পথশিশু আর তেজগাঁও বস্তির কিছু শিশু মিলে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশজনের মত আমরা বড় এক বাস গাড়ি ভাড়া করে চিড়িয়াখানায় গিয়ে ছিলাম এবং সারাদিন ছিলাম। যারা কোনদিন চিড়িয়াখানা দেখার সুযোগ পায়নি, সেইসব শিশুদেরকে ব্রাদার নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ৪০তম জন্মবার্ষিকী পালন করতে। পিকনিক এর মত খাওয়া দাওয়া খেলাধূলা করে কত না আনন্দ পেয়েছিল শিশুরা। তাছাড়া চিড়িয়াখানার পশু পাখিদের দেখে আসতেও চাইছিল না কেউ কেউ।  ছোট ছোট শিশুরা ব্রাদারের কোলে পিঠে ঝুলে ঝুলে কত বিরক্ত করেছে তারপরও ব্রাদার  কোন বিরক্ত প্রকাশ করেননি। ব্রাদার ছিলেন এমনই। সুযোগ বঞ্চিত শিশুদের জন্য কতরকমের প্রোগ্রাম যে করে বেড়ান তিনি তা আমাদের মত মানুষের পক্ষে চিন্তা করা সহজ নয় !!!

আসকিপাড়ায় পদ মোড়লের পুকুর পাড়ে ব্রাদার

আসকিপাড়ায় পদ মোড়লের পুকুর পাড়ে ব্রাদার

বেশির ভাগ সময়ই সাইকেল করে এখানে ওখানে বেড়িয়েছেন। আরাম আয়েশ করে বেড়ানো ফাস্ট ক্লাশে চড়া এসবে উনার কোন মোহ ছিল না। রেলে চড়লেও বেশির ভাগ চড়েছেন রেল-এর ছাদে। আর পাবলিক বাসের শেষ সিটে!

ব্রাদারের সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছিল মহাখালী টিবি গেইট বাসায়। সম্ভবত ১৯৮৩ সাল। আমি সরকারি তিতুমীর কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। মহাখালী টিবি গেইট-এর বাসায় আমরা কয়েক ভাইবোন মিলে থাকতাম। আমাদের বাসার কাছেই এক মারমা পরিবার থাকতো। সন্ধ্যায় বা ছুটির দিনে যাওয়া আসা করতাম। তারাও আমাদের বাসায় আসতেন। মারমা পরিবারের কর্তা চিংদা আমার দাদা প্রদীপ চিসিমের কলিগ ছিলেন একসময় মধুপুরের জলছত্রে। একদিন সন্ধ্যায় চিং’দার বাসায় কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বাসায় যাব বলে বের হতেই দেখলাম সলিলদা (সলিল ঘাগ্রা) সাথে এক বিদেশি লোক। দাদা বলল তোমাদের বাসায় যাচ্ছি। আচ্ছা চল তাহলে। বাসায় গিয়ে পরিচয় হলো। তিনি হল্যান্ডের লোক। তেইজে ব্রাদার। লম্বা ডাচ নাম মনে করতে পারবো না বলে ছোট নাম গিউম বলে পরিচয় দিলেন। মান্দিদের নিয়ে কাজ করতে চান। সব শুনে বললাম ভাল হবে যদি করা যায়। সেদিনকার মত চা নাশতা দিয়ে বিদায় দিলাম। তবে খুব বেশি গুরুত্বও দিইনি। কত বিদেশি আসে যায় কত কথা বলে । সে আমাদের গ্রামের বাড়ি হোক বা এই মহাখালী বাসা-ই হোক।

তারপর কতদিন হয়ে গেল ব্রাদাম-এর কোন খবরাখবরও পাইনি বা আমরাও নিইনি।  পরবর্তীতে অ-নে-কদিন পর হঠাৎ একদিন একা একাই আমাদের বাসায় আসলেন তিনি। ঢাকা শহরে মান্দিদের নিয়ে কাজ করার জন্য কথাবার্তাও হলো। বিশেষ করে যারা বাসা বাড়িতে গার্মেন্স-এ কাজ করে তাঁদের কথা। কাজ করার আগে জরিপ করা দরকার বলে ধারণা দিলেন। আর ঠিকানা দিয়ে বললেন, আমরা র্ফামগেটে থাকি– ঠিক আনন্দ সিনেমা হলের পশ্চিম পাশের গলি দিয়ে কিছুটা সামনের দিকে। তোমরা একদিন আমাদের এখানে আসলে অনেক কথা হবে।

লিচু গাছ তলায় ব্রাদার

আসকিপাড়ার গাছ তলায় ব্রাদার

যাই হোক একদিন মালবিকা, আল্পনা কুবি ও আমি র্ফামগেটে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে বাসা খুঁজে পেলাম। ব্রাদার আমাদের ডাইনিং রুমে বসিয়ে চা কফি কী খাবে জানতে চাইলেন। তিনি নিজেই কফি বানিয়ে আমাদের সাথে বসে আলাপ করলেন। মান্দিদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তাই আমরা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি তারই আলোচনা হলো। প্রথমত জরিপ দরকার যারা বাসা বাড়িতে কাজ করে তাদের। কে করবে জরিপ। তিনি প্রস্তাব করলেন যেন আমরাই করি। কিছু পারিশ্রমিক দিবেন। ঠিক হলো আমি, আল্পনা, মালবিকা ও দেবানন্দ চিসিম এই চারজন জরিপ কাজে সহযোহিতা করবো।

আমরা চারজন লেগে গেলাম জরিপ কাজে। কলেজের পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করছি আমরা। এ কাজ করতে গিয়ে ভালো মন্দ মিলে অনেক অভিজ্ঞতাও হলো আমাদের। বাসা বাড়িতে অনেক ছোট ছোট মান্দি শিশু কাজ করে আর অত্যাচার নির্যাতনও করতো বাড়ির মালিকরা। জরিপ করতে করতে আমরা যে সব অভিজ্ঞতা পাচ্ছিলাম তা ব্রাদামের কাছে এসে বলতাম। তিনি এবং ব্রাদার ফ্রাঙ্ক খুব চিন্তা করতেন কী করা যেতে পারে। কী প্রোগ্রাম বা কার্যক্রম নিলে এসবের সমাধান সম্ভব। আমরা বুঝে উঠতে পারতাম না। কী করা উচিত বা করা যায়। সেসময় মাত্র কলেজে পড়ি। কিছুই বুঝে উঠা সম্ভব ছিল না। তারপরও জরিপের কাজ প্রতিদিন করতাম আর বিকেলে র্ফামগেটে গিয়ে জরিপের কাগজ জমা দিয়ে আসতাম।

একদিন কাজের ফাঁকে ব্রাদাম আমাদের নিয়ে গেলেন র্ফামগেটের মাদার তেরেজা হোমে। এই প্রথম মাদার তেরেজা হোমে আসা। আশ্রয়হীন অসহায় তারা আশ্রয় পাচ্ছেন এই হোমে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার জন্যই এই হোম। কেউ অন্ধ, আবার কেউ প্রতিবন্ধী আবার কেউ বা হাত পা ভাঙা, আবার কেউবা এতিম। এরকম নানান ধরনের সমস্যার কারণে তাঁরা এই মাদার তেরেজা হোমে আশ্রয় পেয়েছেন আর চিকিৎসাও পাচ্ছেন। সিলেটের এক মান্দি ছেলে সে গাছ থেকে পড়ে  কোমড় ভেঙে অনেকদিন ধরেই এই হোমে চিকিৎসারত। আরেক বয়স্ক গারো মহিলা বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর কাছে গিয়ে ব্রাদার কী যেন বলছেন। কিছুক্ষণ পর আমাদের ডেকে বললেন গারো গান শুনতে চান তিনি। মান্দি গান। তোমরা মান্দি গান গেয়ে শোনাও। এমন পরিস্থিতিতে আমরা লজ্জা পাচ্ছিলাম কীভাবে গান গাবো। দেবা গারো ভাষায় বলল ‘বুয়ারি সুয়ারি’ এখানে গান গাওয়ার দরকার নাই। ব্রাদার বারংবার বলতেই আছে শুনতে চাচ্ছে গারো গান-গাও তোমরা। কী করা দেবা বুদ বুদ করে শুধু না না করছে। কিন্তু দেবার কথা শুনবো নাকি ব্রাদারের কথা শুনবো আর কী করা উচিত বুঝে উঠতে পাচ্ছিলাম না। পরে আমি মালবিকা ও আল্পনা খাদং জাচিম চিংআদে’ গানটি গাইতেই ব্রাদারও গাইতে শুরু করলেন আমাদের সাথে সাথে। পরে মাদার তেরেজা হোম থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফুটপাতে—ব্রাদার হঠাৎ ‘এখানে হাত দেখা হয়’-এর সামনে দাঁড়ালেন। আমরাও দাঁড়ালাম। টিয়া পাখি নিয়ে বসে আছেন এক লোক। তা দেখে ব্রাদার বললেন দেখবে নাকি তোমাদের ভাগ্য। বললাম না না ব্রাদার আমরা বিশ্বাস করি না। তিনি বললেন দেখে নেওয়া খারাপ না আর ক্ষতিও হবে না।

ময়মনসিংহ তেইজে হাউজে ব্রাদার

ময়মনসিংহ তেইজে হাউজের বাগানের সামনে ব্রাদার

এই রকম নানান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছিলাম ব্রাদারের সাথে কাজ করতে গিয়ে। আসলে মাদার তেরেজা হোমে গিয়ে অনেক কিছুই নিজ চোখে দেখে শিখতে পারলাম। অসহায় মানুষজনকে মাদার তেরেজা ভালবেসে আপন করে নিয়েছেন আর প্রতিনিয়ত লালনপালন যত্ন আত্তি করছেন। আমরা একজনের দায়িত্ব নিতেই গড়িমসি করি। নানান অজুহাত দিয়ে পার করি। জরিপের কাজে সমস্যা ছিল বিশেষ করে গুলশান ধানমন্ডি এলাকায়। কলিং বেল বাজালে দরজা গেট খুলতো ঠিকই কিন্তু জরিপ করার কথা শুনলেই গেট বন্ধ করে দিতো। এরকম নানান সমস্যায় পড়লেও আমরা ছাড়িনি যেভাবেই হোক ঐ বাসার মেয়ে বা ছেলে যেই হোক তার নাম ঠিকানা নিতে বারংবার যেতাম। তাছাড়া গার্মেন্টস-এ যারা কাজ করে তাঁদের বেলাতেও একই সমস্যা হয়েছিল। আমরা টঙ্গী পর্যন্ত জরিপ করেছিলাম। তখন কতজনকে যে পেয়েছিলাম মনে করতেও পাচ্ছি না। পরিশেষে এই জরিপের ফলে নকমান্দি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উদ্দেশ্য ছিল মান্দিরা ঢাকা শহরে এসে যেন আশ্রয় পায় ও যে কোন কাজে আসলে নকমান্দি যেন সহযোগিতা করে ও নানাবিধ সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করে।

জরিপ কাজ করতে করতেই একসময় তেইজে ব্রাদারদের আয়োজনে ভারতের তামিল নাডু অঙ্গরাজ্যের মাদ্রাজ বর্তমান চেন্নাইশহরে আন্তর্জাতিক যুব সন্মেলন হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে মোট সাতচল্লিশজন যুবক যুবতী এতে অংশগ্রহণ করে। আমিও সুযোগ পেয়েছিলাম। গারোদের মধ্যে যতদূর মনে পরে সুবর্ণ চিসিম, ভিসন চিসিম, সুভ্র দ্রং, মৃনাল মূর্মু, কোহিমা দারিং, পাপড়ি আরেং ও মালবিকা চিসিম, রঞ্জিত রুগা, ডেভিদ চিরান, মার্শেল চিরান, ভিনসেন্ট ম্রং(কস্তা), প্রলয় হাউই প্রমুখ অংশগ্রহণে সুযোগ পায়। নিজের কিছু খরচ আর ব্রাদার থেকে কিছু খরচ দেয়া হয়েছিল। ব্রাদার গিউম সংগে গিয়েছিলেন আমাদের সাথে। প্রথম মাদ্রাজবা চেন্নাই যাওয়া আমাদের। বেনাপল চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে গিয়েছিলাম কলকাতা। সে এক অভিজ্ঞতা। এটা ছিল ডিসেম্বর মাসের তেইশ তারিখ। কলকাতায় ছিলাম পঁচিশ তারিখ পর্যন্ত। সেন্ট যোষেফ স্কুল রুমে ছিলাম। বেঞ্চ জোড়া দিয়ে ঘুমিয়েছি আমরা। ছাব্বিশ তারিখ রাত ১০টা ৩০ মিনিটে হাওড়া রেল স্টেশন থেকে রেল ছাড়বে। ভারতের রেল চড়ার অভিজ্ঞতা কারোরই ছিল না।

এলাহিকাণ্ড বলা চলে। হাওড়া স্টেশনে গিয়ে দেখি এতো এতো যাত্রী আর দেখলাম প্রায় যাত্রীরা কোমড়ে শিঁকল দিয়ে বাক্স পেট্রা বেঁধে বসে শুয়ে আছে। এই দেখে আমাদের ল্যাগেজগুলো মাঝখানে রেখে চারিদিকে গোল হয়ে পাহাড়া দিয়ে রেখেছিলাম। নিমিষেই চুরি হয়ে যায় বলে এমন অভিনব কৌশল নেওয়া আরকি। যাই হোক ব্রাদার গিউম আমাদের সাবধান করেছিলেন যেন আমরা সচেতন হয়। তারপর ট্রেনে উঠার সময়ও কী কা-!! রেলের কামরার প্রতিটি দরজার দেয়ালে যাত্রীদের নাম সেঁটে দেওয়া ছিল। তা খুঁজে খুঁজে যাত্রীরা উঠছে। আমরা এগুলো কিছুই জানতাম না। হুড়মুড় করে উঠতে পারলেই যেন বাঁচি এমনই ধারণা ছিল। ব্রাদার আমাদেরকে নাম দেখতে বলছেন। আমরা দৌঁড়াদৌঁড়ি করে নাম খুঁজতে লাগলাম। আমাদের নাম ছিল না কোথাও। আসল কথা আমরা ওয়েটিং এ ছিলাম। তাই নাম খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমাদের মধ্যে একজনেরই কনর্ফাম হয়েছিল। কে ছিল তা আর মনে করতে পাচ্ছি না। পরে ব্রাদার বললেন উঠে পড়ো একজনের সিটে সকলে মিলে বসে বসে যেতে পারবে। উঠে পড়লাম। ছেলেরা কোন কামরায় মেয়েরা কোন কামরায় তা আর বুঝে উঠা সহজ ছিল না। যাই হোক পাপড়ি, মালবিকা, কোহিমাদি ও আমি এক সিটে ঘেষাঘেষি করে বসে আছি। লম্বা ৩৬ ঘন্টার জার্নি কি বসে বসে যাওয়া যাবে!!!

আসকি পাড়ার মানুষজনদের সাথে ব্রাদার

আসকি পাড়ার মানুষজনদের সাথে ব্রাদার

আমরা এ কদিন কলকাতায় অনেক ঘুরাঘুরি করেছি তাই অনেকেই ক্লান্ত। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্ক, মাদার তেরেজা হোমসহ অনেক জায়গায় যাওয়া হয়েছে। ব্রাদার বড়দিন উপলক্ষ্যে এক বাসায় নিয়েও গিয়েছিলেন। বড়দিনের নিমন্ত্রণ!! বড় আশা নিয়ে আমরা দলবেঁধে যাচ্ছি হয়তো অনেককিছু খাওয়া দাওয়া হবে। কিন্তু আশা মত হলো না। মাত্র একটা করে সিদ্ধ সিম ও ছোট্ট এক মিষ্টিসহ লাল চা দিয়েছিলেন সেই বাড়ির লোকজন। আমরা বলাবলি করছিলাম বড়দিনে এই খাওয়া। এর চেয়ে মাদার তেরেজা হোমস্-এ গেলেই তো আরও ভাল খাবার পেতাম। বড়দিন উপলক্ষ্যে গরিব দুঃখীজনদের জন্য মাংস খিচুরি দিচ্ছিল। যুব বয়সে খাওয়াটার দিকেই চোখ পড়ে যায় আর ক্ষুধা যেন লেগেই থাকে।

সে কথা থাক। এদিকে ট্রেন চলছে । আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়!! এক সিট থেকে আরেক সিটের মাঝখানে জায়গায় চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম কোনমতে। হঠাৎ রাত একটার দিকে দরজায় কে যেন নক করলো। টিটি সাহেব এসে টিকিট চেক করছেন। আমাদের কী দশা হবে এখন! টিটি জানতে চাওয়ার সাথে সাথে বললাম আমাদের জরুরিভাবে যাওয়া লাগছে। সন্মেলন আছে বলে ওয়েটিং-এ থাকলেও উঠে পড়েছি। তিনি কী যেন বললেন মনে পড়ছে না এখন। তারপরও যাওয়া যাচ্ছে বলে মনে স্বস্তি পেলাম। সকাল হলে কোন স্টেশনে যেন ট্রেন থামলো। ছেলেরা নেমে আমাদের খোঁজখবর নিতে জানালায় এসে ডাকাডাকি শুরু করলো। বললো নাস্তা কিনে দিবো কিনা। আমাদের জন্য পরোটা ও ডিম ভাজি দিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ট্রেন আবার ছেড়ে দিল। সারাদিন চললো কোন কোন রাজ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা সাপের মতো চলছে ট্রেন। কোনটায় পাহাড়ি এলাকা আবার কোনটায় সমতল। গল্পে গল্পে যাচ্ছি আর চলতে চলতে আবারও সন্ধ্যা নেমে আসলো। সেই ঘেষাঘেষি করেই শুয়ে বসে যাওয়া। সারা রাত ট্রেন চলছে আর ভাবছি এত দূর মাদ্রাজ বা চেন্নাই—!! পৌঁচ্ছতে আর কতদিন লাগবে!!! ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। অবশেষে দুই দিন দুই রাত শেষে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পৌঁচ্ছে গেলাম মাদ্রাজ রেল স্টেশনে। দলের সকলকে দুই দিন দুই রাত পর দেখতে পেলাম। মেয়েদের জন্য ফাতেমা কনভেন্ট-এ আর ছেলেদের কোন এক স্কুলে থাকার ব্যবস্থা ছিল। ব্রাদার আমাদের দিয়ে চলে গেলেন। আর রাতে সকলকে খড়ুড়ষধ ঈড়ষষবমব-এর ঠিকানা দিয়ে বললেন ফ্রেশ হয়ে তোমরা মেট্রোতে করে চলে এসো কলেজে।

 প্রিয় মানুষজনের সাথে ব্রাদার

প্রিয় মানুষজনের সাথে ব্রাদার

কথামত আমরা মেট্রোতে করে চলে গেলাম। ভাড়া ছিল এক রুপি পঞ্চাশ পয়সা। কলেজেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। কত জাতের, কত দেশের যুবক যুবতী একসাথে জড়ো হয়েছে তা কল্পনার বাইরে ছিল। প্রায় ত্রিশ হাজারের মত। ভাষা যেমন ভিন্ন ভিন্ন, গঠন ও গায়ের রঙটাও ভিন্ন ভিন্ন। পাশে হেঁটে যাচ্ছে কী ভাষায় কথা বলছে বোঝা মুস্কিল। ভাষা না বুঝলেও সকলের হাসিখুশি দেখে খুব ভালো লাগছিল। কোনদিন এত বড় সন্মেলনে যোগ দিইনি আগে তাই অন্যরকম ভাললাগা।

খাবারের টোকেন দেওয়া হয়েছিল রেজিস্ট্রেশন করার সময়ই। টোকেন নিয়ে দাঁড়িয়েছি— এ দেখছি অনেক লম্বা লাইন। খাওয়া পেতে পেতে অনেক রাত হয়ে যাবে ভাবছি। কিন্তু যা ভাবছি তা আর হয়নি। দেখলাম শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালে সময়েই খাবার বিতরণ হয়ে যায়। অবশেষে খাবারের প্যাকেট পাওয়া গেল। আমরা কয়েকজন মাঠের একপাশে গিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম। কিন্তু খাবারে কোন স্বাদ নেই। স্রেফে নারিকেল তেল দিয়ে ভাজা ভাত। এটাই নাকি এখানকার স্বাভাবিক খাবার। প্রথম দিন বলে এমন খাবার মনে করেছিলাম কিন্তু প্রতিদিনই একই খাবার। আমরা বাংলাদেশ থেকে যারা, তাদের মধ্যে কেউ কেউ শহরে কোথায় খাবার পাওয়া যায় তা খোঁজাখুঁজি করে পেয়েছিল ভাতের রেস্তোরা। নারিকেল তেল ছাড়া সাদা ভাত। কিন্তু সব তরকারিগুলো টক আর নারিকেল তেল দিয়ে রান্না। আবহাওয়া খুব গরম বলে এখানকার মানুষ টক জাতীয় খাবারই বেশি খায়।  কটা দিনের ব্যাপার কষ্ট করে খেতে হবে বলে দিন পার করলাম।

সন্মেলনের ফাঁকে ফাঁকে সমুদ্র সৈকতসহ অন্যান্য জায়গা দেখতে বেড়িয়ে ছিলাম। তার মধ্যে সেন্ট থমাস-এর কবর। তিনি ছিলেন এই উপমহাদেশের প্রথম খৃষ্টধর্ম প্রচারক। পাহাড় বেয়ে বেয়ে উঠে তবেই কবর। আর পাহাড়ের ওপারে বিশাল সমুদ্র। মোট কথা অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য। এই করতে করতে পাঁচদিন কেটে গেলো। আবার ফিরে যাওয়ার সময়।  ট্রেনে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এবার আমরা নিজ নিজ সিটেই আসতে পেরেছিলাম। কষ্ট হয়নি তেমন আর। কলকাতায় আরও দুইদিন থাকতে হয়েছে আমাদের। এই দুইদিনে মিউজিয়াম, পার্ক, কফিহাউস, কলেজ স্ট্রিট সবখানে যাওয়া হয়েছে আমাদের। নিউমার্কেট-এ টুকিটাকি কেনাকাটাও করেছিলাম সকলে মিলে। ব্রাদার ঠিক ঠিক মত গাইড দিয়ে আমাদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন।

ফিরে আসার পর অনেকদিন হয়ে গেলো ব্রাদারের সাথে দেখা হয়নি আমাদের। আমরা নিজেরাও কলেজ স্কুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে তেইজে ব্রাদাররা ময়মনসিংহ শহরে চলে গেলেন। সার্কিট হাউসের পাশে চার্চ অব বাংলাদেশের মিশন কম্পাউন্ড। সেই পুরানো গির্জাঘর আর একটা টিনের ঘর ছিল। সেখানেই অল্প স্বল্প মেরামত করে থাকতে শুরু করেন। ব্রাদার ফ্রাঙ্ক সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন। তিনিই সব দেখাশোনা করতেন। সময় সুযোগ পেলে ময়মনসিংহে ব্রাদারের সাথে দেখা করতে যেতাম। একদিন আমি ও আমার ছোট বোন লিপি ব্রাদার গিউমের সাথে দেখা করতে গেলে আমাদেরকে জামালপুর শহরে নিয়ে যেতে চাইলেন। রাজিও হয়ে গেলাম। পরে টাঙ্গাইল বাস স্ট্যান্ড-এ গিয়ে জামালপুরের এক লোকাল বাসে উঠলাম। ভীষণ ভিড় ছিল। আমরা একদম পিছনের সিটে বসে যাচ্ছি। অনেক ঠেলাঠেলি করে কোন মতে জামালপুর পৌঁচ্ছলাম। পৌঁচ্ছে এক মাজারে নিয়ে গেলেন। ব্রাদারের পরিচিত ছিল। এরা নাকি জাতে সওদাগর। আমরা মাজারের ভিতর বসে কিছুক্ষণ আছি। অনেক লোকজন জড়ো হচ্ছে। আমাদেরকে দেখছে। মাজারের ভিতর খুব বেশি জায়গা ছিল না। অনেকেই আমাদের সাথে বসে পড়লো। আবার কেউ কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে। এই  সেই করতে করতে হঠাৎ ব্রাদার বলে বসলেন একটা বাংলা গান গাও। কিন্তু আমরা তো গান পারি না। আমাদের এ কথা কেউ শুনছেনই না। ব্রাদারের সাথে সাথে আশেপাশের অনেকেই গাওয়ার জন্য বলতে লাগলো। কী করি কী করি–দোনামোনা করছি। গানও তেমন পারি না। তাছাড়া মাজারের বিষয় আশয় কিছুই জানি না। জীবনে প্রথম মাজারে আসা। ঘেষাঘেষি করে মাজারের চারিপাশে মাটিতে বসে আছি। উপায় না পেয়ে গান ধরলাম ‘আগুনের পরশ মণি ছোঁয়াও প্রাণে…এ জীবন পূণ্য করো এ জীবন পূণ্য করো…! যাক কোনমতে কয়েক লাইন গেয়ে শেষ করলাম।

তারপর ঋষিপাড়ায় যাবো বলে মাজার থেকে বের হতেই কয়েকজন লোক বললেন আপা আপনাদের বাড়ি কি আসকিপাড়া??? আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। হতভম্ভ হয়ে গেলাম বলে কী? চিনতে পারলো কীভাবে? আমরা হ্যাঁ না কিছু বলবো বলে ভাবছি। এমন সময় বললেন প্রবোধদা প্রহরদাকে চিনেন? আমরা একসাথে কয়লা ব্যবসা করেছিলাম। কী আর করা। চিনে ফেললো শেষমেষ। কোথাও অচেনা অজানা জায়গায় এভাবে চিনে ফেললে কেমন লাগে। হ্যাঁ আমাদের দাদা। আমরা ছোট বোন। আপনাদের দেখে তাই মনে হলো। এজন্যই বললাম। কিছু মনে করলেন কি? না না কিছু মনে করিনি বরং ভালোই লাগলো আপনাদের এখানে এসে।

মাজার থেকে বেড়িয়ে শহর থেকে কিছু দূরে ঋষিপাড়ায় গিয়ে ঋষিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে কিছুক্ষণ গ্রামে কাটালাম। পরে শহরে এসে কিছু খেয়ে রওনা দিলাম ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। পৌঁচ্ছতে পৌঁচ্ছতে সদ্ধ্যা হয়ে গেল। ব্রাদার গিউমের সাথে গিয়ে এই রকম নানান জাতের মানুষের সাথে পরিচয় হতে হয় ও অভিজ্ঞতাও হয়। আরেকদিন ময়মনসিংহে ব্রাদারের সাথে দেখা করতে গেছি। আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেলেন। বললেন বেঁদেরা কিভাবে জীবন চালায় দেখতে পাবে– চল। যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু মনে মনে ভাবছি বেঁদেরা তো সাপ পুঁষে, সাপ ধরে ঘরে রাখে!! আমি যে সাপে ভয় পাই–!!

যাহোক ভয় মনে নিয়ে গেলাম। ঘুপছি মত বাড়িঘর। মানে অস্থায়ীভাবে পলিথিন দিয়ে, আবার কোন কোন পুরানো টিন দিয়ে ছোট ছোট ঘর। কথা বলতে বলতে এক বেঁদের ঘরে ঢুকলাম। ওমা একি কা—ঐ বেঁদে মহিলার শাড়ির ভাজে এক সাপ—!!! মহিলাটি সাপ ধরে ধরেই আমাদের সাথে কথা বলছে। সাপও যেন দেখছে আমাদের–!!! আর আমি বেচারা ভয়ে আধমরা—!! কিছু একটা বলবো তাও পাচ্ছি না। ব্রাদারের কোন ভয়ধর নেই দেখছি –!! তারপর ঘরের বাইরে অনেকজনের সাথে আমাকে পরিচয় করে দিলেন আর আমি শুধু ভয়ে ভয়ে হে হ্যাঁ করে যাচ্ছি। কথা বলছি ঠিকই কিন্তু আমার নজর চারিদিকে। কোথা থেকে কি সাপ এসে পড়ে এই ভয়। আরে এক বাচ্চা ছেলের হাতে এক ছোট্ট সাপ—!!! এ দেখে তো ভয়ে আমি আরও শেষ। কিন্তু বাচ্চারও কোন ভয় ধর নেই। খেলছে  তো খেলছেই জীবন্ত সাপ নিয়ে। মনে হলো সাপই তাঁর খেলার সাথী। আসলে যে যেমনে অভ্যস্থ তার জীবন তেমনই হয়, চলে যায়। দূর থেকে শুধু অজানা এক ভয় কাজ করে। অজানা বলেই যত ভয়। ব্রাদারকে দেখলাম তাদের সাথে সাবলিলভাবে কথা বলে যাচ্ছেন। কীভাবে তাঁদের জীবন চলে আমি খুব বেশি আর চিন্তা করতে পারিনি। সাপের ভয়ে কিছু আর জানতেও চাইলাম না। এখন আফসোস হয় কেন সুযোগের হাতছাড়া করলাম।

আরেকদিন ব্রাদার ঢাকায় আসছেন আর আমাকে সঙ্গে নিয়ে  গেলেন ফার্মগেটে। ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজারের পথ ধরে হাঁটছি। আমি জানতে চাইলাম কিসের জন্য যাচ্ছি ব্রাদার। বললেন ফিলিপস্ রেডিও কিনতে হবে কারাগারে বন্দি এক মান্দি লোকের জন্য। র্ফামগেট থেকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা কাওরান বাজার পর্যন্ত খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কোথাও ফিলিপস্ রেডিও পাচ্ছিলাম না। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে এক দোকানে পাওয়া গেল। মাঝারি ধরনের ফিলিপস্ রেডিও। ব্রাদার খুব খুশি যে অবশেষে পাওয়া গেল।

আসকি পাড়ায় ব্রাদারকে সম্মাননা

আসকি পাড়ায় ব্রাদারকে সম্মাননা

তারপর ব্রাদার বললেন চল তেজগাঁ বস্তিতে। রেল লাইন ঘেষে অনেক বস্তি। ব্রাদার আমাকে বস্তির অনেকজনের সাথে পরিচয় করে দিচ্ছেন। আর সময় সময় কিছু ছবিও তুলছেন। বস্তির সকলে ব্রাদারকে চিনেন। তাদের সাথে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ এক লোক আমাদের সামনে এসে বললেন কেন ছবি তুললেন আপনি? কেন আপনারা এই বস্তিতে… অনেক কথা কাটাকাটি হচ্ছে ব্রাদারের সাথে। আর বস্তির লোকজন বলছেন না না উনি ভালো লোক– আমাদের এখানে প্রায়ই আসেন। আমাদের খোঁজ খবর নেন। মাঝে মধ্যে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতাও করেন। নারী পুরুষ অনেকেই বলছেন এই সব কথা। কিন্তু লোকটি শুনছেনই না। বললেন আপনারা তথ্য পাচার করছেন! জানেন আপনাদের আমি থানায় নিতে পারি–!! ব্রাদার বললেন নিতে চাইলে নিতে পারেন। সমস্যা নাই আমি যেতে প্রস্তুত। আমি একটু ভয় পাচ্ছিলাম কেন এই লোকটি এভাবে কথা বলছেন। পরে জানলাম তিনি স্পেস্যাল ব্রাঞ্চের লোক–!! অনেকক্ষণ এই সেই বলে বলে আমাদের ছেড়ে দিলেন। কী ঝামেলায় না পড়েছিলাম। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম! ব্রাদার ভয় পেতেন না কোন কিছুতেই। আমার শুধু ভয় ছিল—-না জানি কোন বিপদে পড়তে হয় বা নাজেহাল হতে হয়।

যাহোক সেদিনের মত ঝামেলায় পড়লেও ভালোই ভালোই ফিলিপস্ রেডিওসহ বস্তির এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় ফিরলাম। চিন্তা করছিলাম ব্রাদার কীভাবে ম্যানেজ করেন এসব নানাবিধ ঝঁক্কি-ঝামেলা। ভালো বাংলা বলতে জানেন বলেই হয়তো এখানকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম তিনি।

একদিন সকাল সকাল ব্রাদার আমাদের বাসায় এসে বললেন ‘চল তোমাদেরকে এক জায়গায় নিয়ে যাই— মানে গুরুনানক দুয়ারে’। আমরাও একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। তারপর চা খেয়ে পাঁচজন আমিসহ ছোট বোন লিপি, তরুণ চিসিম ও সুবর্ণ চিসিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি এর আগে কখনও গুরুনানক দুয়ারে আসিনি। এই প্রথম। দিনটি ছিল শুক্রবার। ব্রাদার বললেন ওখানেই দুপুরের খাবার খাওয়া যাবে। প্রার্থনা শেষে সকলকে মন্দিরে খাওয়া দেয়। আর সুবর্ণ ও তরুণ শোন… তোমাদের কিন্তু মাথায় কাপড় দিতে হবে। সমস্যা নেই ওখানেই তাঁরা দিবে। প্রার্থনায় পুরুষদের মাথায় কাপড় দেওয়া নিয়ম। মহিলারাও দেয়। তবে আলাদা কোন কাপড় লাগে না। তাঁরা ওড়না বা শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা ঢাকে। আমরা সাড়ে দশটার দিকে পৌঁচ্ছে গেলাম। প্রার্থনা শুরু হয়ে গেছে। মন্দিরের দরজায় একটি কাপড়ের বাস্কেট থেকে যারা-ই ঢুকছেন সকলকে এক এক করে ছোট রুমালের মত কাপড়টি দিয়ে দিচ্ছেন। সকলে মাথা ঢেকে মন্দিরে বসে যাচ্ছেন। আমরাও বসে পড়লাম। তরুণ ও সুবর্ণ আমাদের থেকে একটু দূরে। তরুণ মাথায় কাপড় দিয়ে কাঁচুমাঁচুভাবে বসে আছে। দেখতেও কেমন জানি লাগছিল তাঁদের। এমন দৃশ্য ভুলবার নয়। দেখে হাসিও পাচ্ছিল আমার। মাথায় কাপড় দিয়ে একটু লজ্জ্বা লাগছিল মনে হয়। মন্দিরের ভিতরে বাংলাদেশেরই এক শিল্পী নাম মনে আসছে না তিনি প্রার্থনা সংগীত গাইছেন। গান শেষে প্রার্থনা শুরু হয়ে গেল…।

প্রায় সাড়ে বারটার দিকে প্রার্থনা শেষে শিখ গুরুর সাথে দেখা করলাম। কথা বলে ভাল লাগলো। তাছাড়া তিনি ভারতের স্বর্ণ মন্দিরে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানালেন। বললেন যখনই যাবেন জানিয়ে গেলে আপনাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। মন্দিরেই থাকার ব্যবস্থা আছে। কথা বলতে বলতে প্রসাদ দিয়ে গেলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতে নিযেই খেয়ে নিলাম। তাঁদেরই একজন মিষ্টি জাতীয় প্রসাদ বানিয়ে এনেছিলেন। ঘি দিয়ে বানানো। খুবই সুস্বাদু ছিল। তারপর দুপুরের খাবারের জন্য সকলকে মেঝেতে লাইন করে বসতে বললেন। আমরাও বসে গেলাম। না খেলেও চলতো। কিন্তু ব্রাদার খেতে বসে আমাদেরকেও ডাকলেন বসো বসো খুব ভাল খাবার। নিরামিষ খাবার ছিল। ডাল ভাত ও সবজি। খুব ভালো খুব ভালো বলে বলে ব্রাদার খাচ্ছেন আমরাও হ্যাঁ ভালো—ভালো বলে সাই দিয়ে খেয়ে নিলাম…!


করোনায় পাহাড়ি আদিবাসীদের সংকটময় জীবন যাপন

করোনায় কেমন যাচ্ছে আদিবাসীদের জীবন 

করোনাকালীন তিনটি কবিতা ।। মতেন্দ্র মানখিন

একজন ভালো মনের মানুষ ব্রাদার গিয়োম ।।  কিউবার্ট রেমা





সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost