১
আমার প্রজন্মের বা নতুন প্রজন্মের মানুষ ওয়ানগালার তাৎপর্য অনেকেই জানে না। অবশ্য না জানার পেছনে সমাজ ও সংস্কৃতি আগ্রাসন ও ওয়ানগালার সঠিক চর্চা ও প্রজন্মের সাথে উপস্থাপনার উপরও নির্ভর করে। গারোরা বর্তমান ধর্মের অবস্থান থেকে ওয়ানগালা বলতেই একটি আনন্দ উৎসব মনে করে। আর ওয়ানগালা যে গারোদের আনন্দ উৎসব নয় বিষয়টা এমন নয়। বর্তমান ধর্মের প্রেক্ষিতে ওয়ানগালা বলতেই বিকালের কোনো কনসার্ট, মর্ডান নাচ, গান অনুষ্ঠান মনে করি। তারপর দিনশেষে বাড়ি ফেরা। অথবা ভালো না লাগলে ওয়ানগালা ধর্মীয় পর্বকে সমালোচনা করা। কিন্তু ওয়ানগালা যে সাংসারেক অনুসারীদের আত্মায়, মননে, আধ্যাত্মিকভাবে মিশে আছে। সেক্ষেত্রে একজন গারো খ্রিস্টান হিসেবে সমালোচনা করার অধিকার থাকতে পারে না। কেননা, ওয়ানগালা পালন, আয়োজন ও ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চার সব গারোদের অধিকার আছে। তবে ধর্মীয়ভাবে সাংসারেক অনুসারীদেরই ওয়ানগালাও একটি ধর্মীয় উৎসব। গারো হিসেবে বর্তমান ধর্মের জায়গা থেকে বড় বড় আয়োজন করতে পারে। তবে একজন সাংসারেক খামাল ছাড়া ওয়ানগালা যেনো মলিন। সেক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। আর সাংসারেক ধর্মের খামাল ছাড়া ওয়ানগালা হলে সেটা একপ্রকার ধর্মানুভূতি ও ক্ষমতার পৈশাচিক আচরণের সামিল।
২
ওয়ানগালা ধর্মীয় উৎসবের মধ্যেই আনন্দ বহন করে। সেই হিসেবে তবে গারো সংস্কৃতির নাচ, গান অনুষ্ঠান ওয়ানগালার দিনকে রঙিন করতে গুরুত্ব বহন করে। তবে ওয়ানগালা যে কনসার্টে পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। ওয়ানগালায় মিশ্র সংস্কৃতি চর্চা না হয় সেটাও আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া। কেননা ওয়ানগালা যে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় রিচুয়ালকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা না হয় সেটিও আমাদের খেয়াল রাখা। কেননা ওয়ানগালার রিচুয়ালগুলো গারো সাংসারেক ধর্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ানগালাকে আধ্যাত্মিক জায়গা থেকে ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ানগালা গারো সাংসারেক অনুসারীদের বিশ্বাস। তাদের এই বিশ্বাসের জায়গাগুলো অন্য ধর্মীয় দৃষ্টিতে নেতিবাচক পোষণ করা যে কোনো ধর্মের কাছে দৃষ্টিকটু। বর্তমান ধর্মের জায়গা থেকে সাংসারেক ধর্মীয় খামাল ছাড়া ওয়ানগালা করাটাও আমাদের পক্ষে অসম্ভব। তবে অশনিসংকেত গারো মাঝে তুলনামূলক ৯৯ শতাংশই খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। সেক্ষেত্রে বাকি যতটুকু সাংসারেক অনুসারীরা এখনও আছে। তাদের মধ্যে সবাই পুরোহিত বা খামাল নয়। এর মধ্যে অনেক খামাল পরলোক গমন করেছে। বাকি খামালগুলোকেও যত্ন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সাংসারেক ধর্মের খামাল ও অনুসারীদের বাঁচিয়ে রাখাটা সংস্কৃতি শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে। কেননা তাদের ধর্মীয় মতাদর্শের সাথে আগ্রাসন সৃষ্টি হচ্ছে কি-না সেদিকে খুব সহনশীল হতে হবে।
সাংসারেক খামাল ওয়ানগালায় মিসি সালজংকে শস্য উৎসর্গ ও ধন্যবাদ জানাতে পারে বলেই ওয়ানগালা সুষ্ঠ হয়। কেননা বর্তমান ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে গারোরা ওয়ানগালার অতিথি হিসেবে বলা যায়। তবে সাংসারেক ধর্মীয় দৃষ্টি এভাবেই পরিচয় বহন করে। গারো হিসেবে ওয়ানগালার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে রক্ষা করা যেমন পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য তেমনি গারো হিসেবে আমাদের কর্তব্য। তবে বিকৃত হচ্ছে কি-না তার দিকে নিখুঁতভাবে খেয়াল রাখা।
৩
ওয়ানগালা কী আনন্দ উৎসব! ওয়ানগালাকে ধারণ করতে হলে খামাল এর উপাসনাকে গভীরভাবে ধারণ করতে হবে। ওয়ানগালকে সত্যিকারে গভীরভাবে ধারণ করতে হলে আমাদের অবশ্যই মিসি সালজং এর নামে শস্য উৎসর্গ, রুগালা, সাসাত স’ওয়া, জলওয়াত্তা, দামা-খ্রাম গগাতা গরে রুয়া, আজিয়া, রেরে ও আরো অন্যান্য রিচুয়ালকে সম্মান করতে হবে। ওয়ানগালায় যে রিচুয়ালগুলো হয়ে থাকে, সেটাকে স্বঃশরীরে ধারণ করার জন্য ওয়ানগালায় খামালের পূজা- অর্চনার বিষয়টি উপলব্ধি করা ও জানা অত্যাবশক।
৪
প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্যও একটু বলতে পারি। ওয়ানগালা উৎসবকে আনন্দ উৎসব ভেবে রিচুয়ালগুলোকে কোনোভাবে উপেক্ষা করছি কি-না আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ওয়ানগালা গারো খামাল দ্বারা পূজা- অর্চনা হয়। সাংসারেক বিশ্বাসীদের কাছে এটা খুবই ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ও বিশ্বাসে জায়গা। এই নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা মানেই সাংসারেক ধর্ম বিশ্বাসীদের অনুভূতিতে আঘাত করা। যেটা বর্তমান ধর্মের শিষ্টাচারে মধ্যে পড়ে না। কাজেই আনন্দ উৎসব বলে আমরা বর্তমান ধর্মের জায়গা থেকে ওয়ানগালাকে অসম্মান করছি কি-না এই দিকে ধর্মীয় শিষ্টাচার থেকে লক্ষ্য রাখা।
ওয়ানগালার দিন ভালো পোশাক, ভালো ম্যাকআপ, ভালো সুগন্ধি, ও সাজগোজ, স্মার্টভাবে এসে দু-চারটে ভালো ছবি তোলে হ্যাপি ওয়ানগালা বলে ক্যাপশন দিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে দিলেই ধর্ম, ঐতিহ্য রক্ষা হয়ে যায় না। ওয়ানগালার গুরুত্ব বুঝতে হলে সাংসারেক খামালের মিদ্দি/দেবতা, মিসি সালজংকে শস্য উৎসর্গের অর্চনা খুব কাছাকাছি দেখতে হবে। বিশ্বাস, সম্মান যেমন আধ্যাত্মিকতা বহন করে। তেমনি সেই জায়গা থেকে আলোকপাত করতে হবে। তা না হলে বিগত বছরের টিভি সাংবাদিকের সামনে ভুল-ভাল বলে অপ্রচার করে ওয়ানগালা’কে হাসির পাত্র করে তোলার সামিল হবে।
৫
সাংসারেক বিশ্বাস ওয়ানগালার আরো অনেক ধর্মীয় পর্ব আছে। যেহেতু ওয়ানগালা নিয়ে মানুষের উন্মাদনা সেহেতু উপরোক্ত কথা গুলো ওয়ানগালাকে কেন্দ্র করে বলা নয়। গারো সাংসারেকের সকল পর্ব গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ গারোই যেহেতু বর্তমান ধর্ম অনুসারী কাজেই এই ধর্মীয় জায়গা থেকে কোনোভাবে সাংসারেক খামাল ছাড়া ওয়ানগালা যেনো অসম্পূর্ণ। কাজেই আজকের প্রজন্মের সামনে ওয়ানগালার সঠিক উপস্থাপনাই হবে সুষ্ঠ সংস্কৃতি চর্চার উত্তম উদাহরণ। ওয়ানগালাকে ভুল উপস্থাপনা করলে প্রজন্ম ভুলগুলোই চর্চা করবে। কাজেই সঠিক সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সঠিক ওয়ানগালাকে আমাদের প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে হবে।
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত
-
Git-bibal ।। Motendro Mankhin
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi...
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
-
শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার জন্য
: প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার শরৎ ম্রং-এর প্রথম উপন্যাস-শুধু তোমার...
-
সেকালের জলছত্র ও গারোদের উত্থান।। মোহন লাল দাস
: সুপ্রিয় পাঠক সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ থেকে ষাট উর্ধ্ব...
‘Git-bibal ।। Motendro Mankhin’
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi......বিস্তারিত
‘প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম’
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে......বিস্তারিত