Thokbirim | logo

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আদিবাসীদের অধিকার বাংলাদেশে কবে প্রতিষ্ঠা হবে? ।। থিওফিল নকরেক

প্রকাশিত : আগস্ট ০৯, ২০২১, ০০:৫৭

আদিবাসীদের অধিকার বাংলাদেশে কবে প্রতিষ্ঠা হবে? ।। থিওফিল নকরেক

পটভূমি

জল, জমি, জঙ্গল ও জনজাতি। আদিবাসীদের জীবনে এই উপাদানগুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম থেকে মাটিকে মা বলে সম্বোধন করা আদিবাসীদের সংস্কৃতি। জলধার তাদের জীবনের নিত্য সঙ্গী, জঙ্গল বা বন তাদের অস্তিত্বের বিধাতা। সেই আদিবাসীদের আজ পরিচয় সংকট। তারা উপজাতি, তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তারা অধিবাসী। যার অস্তিত্ব নিয়ে- যার পরিচয় নিয়ে কেউ কথা বলবে বলে সে জানেনা বা বিশ্বাস করেনা।  তার পরিচয় সঙ্কট বর্তমানে গভীরভাবে চলছে এদেশে। যে বন, পাহাড়, নদী, মাটি ও জলকে প্রকৃতির দান ও পবিত্র বলে বিশ্বাস করেছে। যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে ঐতিহ্যগতভাবে বা প্রথানুসারে ব্যবহার করে আসছে। আজ তাকে বলে কিনা বন তোমার নয়, জবরদখলকারী তুমি। পাহাড়ে তুমি অবৈধ, এটা সরকারি সম্পদ। নদী তুমি ব্যবহার করতে পারবেনা কেননা এটাও সরকারি। এদেশে তুমি তুচ্ছ উপজাতি, তোমার পরিচয় ক্ষুদ্র অতি নগন্য নৃগোষ্ঠী। সুধীজনের কাছে আজকের এই উপস্থাপনায় সেই আদিবাসীদের বিষয়ে অবতারণার প্রয়াসমাত্র। রাষ্ট্র কিভাবে আদিবাসীদের বিবেচনা করে এবং ব্যাখ্যা প্রদান করে তা আমরা বিগত দিগুলিতে পেপার-পত্রিকায় দেখছি। মিডিয়ার আশীর্বাদে এখনো আমরা জানতে পাচ্ছি বিষয়টি সম্বন্ধে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ আদিবাসীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু ক্ষতিপূরণ পায়নি। বর্তমানেও নানা ভাবে অবিচার, অত্যাচার ও বঞ্চনা অব্যাহত আছে। অর্পিত সম্পত্তির প্রত্যার্পন আইন তাদের পুরোপুরি নিজ ভিটা-বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

আমরা কেন আদিবাসী ?

আদিবাসী নাম ও পরিচয় নিয়ে বাংলাদেশে আজ কিছু লোকের প্রশ্ন আদিবাসী কীভাবে আমরা?। জাতিসংঘ  ৫ জুন ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থার এর ১৯৫৭ সালের ৪০তম বৈঠকে কনভেনসন ১০৭ অনুচ্ছেদ ১ এর ও ১৯৮৯ সালের আইএলও  কনভেনসন ১৬৯ এর অনুচ্ছেদ ১ এর আদিবাসীর সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ

ক) স্বাধীনদেশসমূহের ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, যাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় জনসমষ্টির  অন্য অংশ থেকে স্বতন্ত্র এবং যাদের মর্যাদা সম্পুর্ণ কিংবা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা ঐতিহ্য অথবা বিশেষ আইন বা বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত;  ও

খ) স্বাধীনদেশসমুহের জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, যাদের আদিবাসী হিসাবে গণ্য করা হয় এই বিবেচনায় যে তারা রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনের কালে অথবা বর্তমানের রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ধারণের কালে এই দেশে কিংবা ভৌগলিক ভুখন্ডে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীর বংশধর তারা তাদের আইনগত মর্যাদা নির্বিশেষে তাদের নিজস্ব সামাজিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আংশিক বা সম্পুর্ণরূপে অক্ষুণ্ন রাখে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞায় আদিবাসী বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করা আছে। কারোর কোনো সন্দেহ বা অসম্পূর্ণতা থাকার কোনো সুযোগ নেই। অথচ এই আদিবাসী নাম নিয়ে যত আপত্তি ও রাজনীতির খেলা চলছে। পরিকল্পিতভাবে এদেশে তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করে একেবারে প্রান্তি পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সনদে আদিবাসী ও তার অধিকারঃ

আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা তার গভর্নিং বডি কর্তৃক আহুত ১৯৫৭ সালের ৫ জুন অনুষ্ঠিত ৪০তম সভায় যার নাম কনভেনশন ১০৭ কনভেনসনে ২৯টি অনুচ্ছেদ এর মাধ্যমে আদিবাসীদের অধিকার দেয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘের আইএলও ১৬৯ কনভেনসনেও আদিবাসীদের অধিকারের সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এবিষয়ে জাতিসংঘেরখ) স্বাধীন দেশসমূহের উপজাতীয় কিংবা আধা উপজাতিয় জনগোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনের কালে উক্ত অধিবাসী কিংবা যে ভৌগলিক ভুখন্ডে দেশটি অবস্থিত, তার অধিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার। এছাড়াও ২০০৭ সালের‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র’ আদিবাসীদের অধিকার প্রদান করা  হয়েছে। যে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার সেই ঘোষণাপত্র মেনে চলা উচিত।

কেন আদিবাসীদের স্বীকৃতিতে অনীহা!

আদিবাসীদের অস্বীকার করার কোন কারণ আছে বলে আদিবাসীদের জানা নেই। তবে ভ্রান্ত ধারণা বা  হীন মানসিকতাকে অনেকেই দায়ী করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে দেশের কতিপয় আমলা এবং গোয়েন্দা সংস্থাসরকারকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রভাবিত করেছেন। আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে কি কি সরকারের দায়বদ্ধতা আছে তা তুলে ধরে সরকারকে ভুল ধারণা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দাবী করছেন যে যদি আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়া হয় তবে তারা দেশে স্বাধীনতা দাবী করে বসবে।এধরণের অনেক কাল্পনিক ও আজগুবি কাহিনী সৃষ্টি করা হচ্ছে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না করাকে কেন্দ্র করে। তবে এটা সত্য যে সংবিধান  ১৫শ সংশোধনী আদিবাসীদের আশাহত করেছে। আদিবাসীরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। তারা বর্তমান সরকারের কাছে এধরণের আচরণ প্রত্যাশা করেনি। আদিবাসীরা চায় ভিন্ন নামে নয় ‘আদিবাসী’ নামেই যাতে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে। এতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না বরং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হবেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদিবাসীদের অধিকারঃ

আদিবাসীদের অধিকার প্রদানের বিষয়ে অনেক দেশ তাদের নিজস্ব নীতি এবং আইন প্রনয়ন করেছেন। জাতিসংঘ তাদের আইএলও কনভেনসন ১০৭ ও ১৬৯ সনদে আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ২০০৭খ্রিস্টাব্দে ‘আদিবাসী অধিকার বিষয়ক সনদ’ পাশ করে আদিবাসীদের অধিকার প্রদান করেছেন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ফিলিপিনস, ইত্যাদি দেশ আদিবাসীদের অধিকার প্রদান করেছেন নীতিমালা এবং আইন তৈরি করে। ফিলিপাইনে  ‘আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কমিশন’আছে।তাদের দেশে ‘আদিবাসী বিষয়ক অধিকার আইন’ পাশ করা হয়েছে। পেরু সরকার আদিবাসীদের দাবী অনুযায়ী সংবিধান বাতিল করে আবার নতুনভাবে সংবিধান সংশোধন করেছেন।

বর্তমান সরকারের আদিবাসীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি :

বর্তমান সরকার নির্বাচনের পূর্বে তাদের ২০০৯ ও ২০১৪  নির্বাচনী ইস্তেহারে সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়ার কথা সুস্পষ্ট করে বলেছেন। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে একই দল আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন এদেশে।তারই মুখপাত্র এদেশে কোনোআদিবাসী নেই বলে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন। সংবিধান সংশোধনের পূর্বে আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা আয়োজন করে মতামত নিয়েছেন  সংবিধান সংশোধনী কমিটি।কিন্তু আদিবাসীদের মতামতের কোন মর্যাদা দেননি কমিটি। বরং নানা ভাবে আদিবাসীদের ভীতিকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেনতারা। সরকার গঠিত কমিটির সুপারিশসহ জাতীয় সংসদে পাশ করা হয় সংবিধানের ১৫শ সংশোধনী গত ৩০ জুন ২০১১। কিন্ত আদিবাসীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। পরের দিন প্রেস রিলিজ দিয়ে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তীব্র হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সরকারকে আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য আবারও দাবী জানিয়েছেন। আদিবাসীরা সংবিধানের ১৫শ সংশোধনীর পর বর্তমানে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের অস্তিত্ব হুমকীর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের ধারণা আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং নিশ্চিহ্ন করার একটি ষড়যন্ত্র গভীর ভাবে দানা বেঁধেছে। আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে এক শ্রেণির মানুষ ছিনিমিনি খেলছে। একসময় বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকদের এবং সাংবাদিকদের ডেকে তৎকালীন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা:দীপু মনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই যারা আছে তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।  তার ধারণা ইকোসক(ঊঈঙঝঙঈ)বাংলাদেশের বিষয়ে যে প্রতিবেদন গৃহীত হয়েছে তা প্রতিবেদনে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তার ভাষ্য মতে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরদেশের বিভিন্ন এলাকায় বাস রয়েছে।সরকারী মুখপাত্রের এধরণের বক্তব্য প্রমাণ করে সরকার আদিবাসীদের প্রতি কত বৈষম্যমূলক আচরণ করে। তাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এটা অব্যাহত প্রচেষ্টার বহিপ্রকাশ। রাজনৈতিকভাবেই শুধু নয় সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। সংবিধানে ২৩  ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/সম্প্রদায় ইত্যাদি। এতে আদিবাসীদের বিভক্ত করার প্রয়াস মাত্র লক্ষণীয়। প্রশ্ন হল কে ‘উপজাতি’? কেই বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী? এবং কেই বা সম্প্রদায়? এদেশের সুশীল সমাজ, লেখক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবি এবং মানবাধিকার কমিশন সরকারী এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গত দিনে বার বার ঢাকায় আদিবাসী সংগঠনগুলো তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয় বরং আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দাবী জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার আলোচনার নামে মতামত নিয়ে সবার সাথে প্রতারণা করেছেন। প্রতারিত হয়েছেন এদেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী। সরকারঅনেকাংশে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা আদিবাসী বান্ধব সরকার। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন এহেন আচরণ করেন তখন আদিবাসী জনগণ কার কাছে ভরসা করবেন? কোথায় তাদের নিরাপত্তা? কে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন? নানা প্রশ্নের জন্ম দেয় আদিবাসীদের আশাহত মনে। একাত্তুরে অকাতরে জীবন দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল এদেশের আদিবাসীজনগণ।  শহীদ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিমল দ্রং, অনিল সাংমাসহ অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা। তার প্রতিদানে পেল দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর রাষ্ট্রীয় প্রতারণা।

রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সমীকরণঃ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক সমীকরণ করে কেউ কেউ এদেশের বাঙালিদের আদিবাসী হিসেবে প্রমাণের অপচেষ্টা  করছেন।  ইতিহাস জ্ঞানের দৈন্যতা ও ভৌগোলিক জ্ঞানের ঘাটতির কারণে ভ্রান্ত ধারণা তাদের। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে সুসং রাজা ছিলেন বৈস্যা মান্দা যিনি গারো সম্প্রদায়ভুক্ত।  ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে কোচ ও গারো রাজাদের পরাস্ত করে ঈশা খাঁ তার আধিপত্য বিস্তার করেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সামন্তরাজগন ছিলেন গারো, হাজং ও কোচ। এতে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে আদিবাসীরা এদেশের ভুমিজ সন্তান।তাদের বহিরাগত জ্ঞান করে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই আদিবাসীরা মেনে নেবে না। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে কামরূপ জেলার কথা বারবার ইতিহাসবিদগন উল্লেখ করেছেন। তদকালীন কামরূপ জেলা ব্রম্মপুত্রের পশ্চিমতীর গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাই কামরূপ জেলা মানে ভারতের আসামে অবস্থিত কামরূপ হিসেব করলে ভুল হবে। দেশভাগ ও প্রশাসনিক বিভাজনের জন্য এখন কামরূপ জেলা ক্ষুদ্র হয়েছে।

একমাত্র রাজনৈতিক সদ-ইচ্ছা আদিবাসীদের সমস্যার সমাধান হতে পারেঃ

আদিবাসীরা বার বার প্রতারণার স্বীকার। সরকার সদ-ইচ্ছা করলে, তার বোধোদয় হলে এখনো সম্ভব সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেখা। রাজনৈতিক বিষয় রাজনৈতিকভাবে সমাধান দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনে আদিবাসীদের মতামতের প্রতিফলন ঘটে নাই। আমরা এখানে ভেসে আসিনাই বা উদ্বাস্ত নই। আদিকাল থেকে আমাদের বসবাস এদেশে। তাই কোনো কারণ নেই যে আমাদের সংবিধানে অস্বীকার করে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকার প্রধান আদিবাসী নেতৃবৃন্দও সংশ্লিষ্ট সকলের অংশীদারিত্ব মতামতের ভিত্তিতে সেই সমাধানের ভীত রচনা করতে পারে।

আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানে সুপারিশমালা:

১.      আদিবাসীদের‘আদিবাসী’ হিসেবেই সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়া।

২.       সমতল এলাকার আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা।

৩.      সমতল এলাকার আদিবাসীদের জন্য ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভুমি কমিশন বা ট্রাইবুনাল গঠন করা।

৪.       আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভুমির মালিকানা স্বীকৃতি দেয়া।

৫.      আদিবাসীদের ভুমি নির্বিচারে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ তালিকাকরণ থেকে বাতিল করা।

৬.      ‘আইএলও কনভেনসন ১০৭’যা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যা স্বাক্ষরিত হয়েছে তা জাতীয় সংসদে আইন করে বাস্তবায়ন করা।

৭.       ‘আইএলও কনভেনসন ১৬৯’ যথাযথভাবে স্বাক্ষর ও রেটিফাই করে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

৮.     জাতিসংঘের ‘আদিবাসী অধিকার ঘোষণা ২০০৭’ স্বাক্ষর করে বাস্তবায়ন করা।

৯.      আদিবাসী অধিকার বিষয়ক আইন তৈরী করা।

১০.    আদিবাসী জনসংখ্যা সঠিকভাবে সার্ভে করে তা জাতীয়ভাবে তুলে ধরা।

উপসংহার

পরিশেষে বলতে চাই যে আদিবাসীরা এদেশের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। গত নির্বাচনে আদিবাসী জনগণ এ সরকারকে ভোট দিয়েছেন। তাদের পাশে আদিবাসীগণ আছেন ও ভবিষতে থাকতে চাই। কিন্ত ১৫শ সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা অচীরই নিষ্পত্তি করে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী। বাংলাদেশের ৪৫টি জাতিগোষ্ঠির ৩০ লক্ষ আদিবাসীদের সাংবিধানিকভাবে মর্যাদা দিলে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হবে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভুমিকা রাখতে পারবেন।‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’ এসডিজি এই লক্ষমাত্রাসমূহকে অনুসরণ করা হলে একজন আদিবাসীও কষ্ট পাবে না। তাদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত সহজেই হবে।

।। কভার ছবি সংগৃহীত



লেখক ও গবেষক থিওফিল নকরেক

লেখক ও গবেষক থিওফিল নকরেক



কাঁদে ভগবান সংখ্যালঘু।। মতেন্দ্র মানখিন

https://www.youtube.com/watch?v=1pSJyIPyg7U&t=907s




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost