ডিসেম্বর মাস মানেই বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে গারো জাতিগোষ্ঠীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। বাঙালির পাশাপাশি গারো মুক্তিযোদ্ধারাও জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। শহিদ হয়েছেন। আমরা স্মরণ করি শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল দ্রংকে। স্মরণ করি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের যারা এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। কবি জেমস জর্নেশ চিরান তার প্রবন্ধ গ্রন্থে লিখেছেন ‘মোট ১৩,০০(তেরশত)জন গারো মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলো বলে জানা যায়।’ আমরা সঠিক তালিকা এখনও পাইনি যা পেয়েছি তাও সঠিক নয় কারণ অনেক গারো মুক্তিযোদ্ধাগণই ইন্ডিয়াতে চলে গেছেন ফলে তাদের নামের তালিকা আসেনি বা করা হয়নি। থকবিরিম এই বিজয়ের মাসে গারো মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি, সাক্ষাৎকার ভিডিও প্রকাশ করার চেষ্টা করবে। পাঠক আসুন আজকে বীর মুক্তিযোদ্ধা তরুণ সাংমার নিজের মুখে যুদ্ধের কথা শুনি। https: //www.youtube.com/watch?v=ESdwASCg818&list=UUIN1jWNhsu6FJvLX6wdQABg&index=1
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল প্রায় ২০-২১ বছরের মত। আমি সে সময় কক্সবাজারের দোলহাজারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। সেখানে আমার দিদি নার্সিং করত বিধায় আমিও সেখানে দিদির সাথে থাকতাম আর পড়ালেখা করতাম। আমার বাবার নাম পরিমল ঘাগ্রা (মারাক) এবং মায়ের নাম হিরাবতি জাম্বিল। আমরা তিন ভাই এক বোন। আমি ছিলাম প্রথম ছেলে। আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭০ সালে এসএসসির ফরম ফিলাপ করেই আমি বাড়িতে চলে আসি। যখন দেখলাম যে, দেশের পরিস্থিতি ভাল না তখন আমি আর কক্সবাজারে যাইনি। একদিন রংরায় ফুটবল খেলতে গেলাম। তখন খবর পেলাম যে, কালকের মধ্যে এক দল মুক্তিযোদ্ধা নেওয়া হবে যারা আগ্রহী তারা যেন নাম দেয়। পরের দিন আমি সতিশ বাবু আমার বন্ধু তার সাথে দলে চলে যাই। আমরা সেখানে এক মাস ট্রেনিং গ্রহণ করি, সেখানে আমাদের জঙ্গল ট্রেনিং চলে।
গারো বীর মুক্তিযোদ্ধা তরুণ সাংমা
আমাদের প্রথম আক্রমণ ছিল বিজয়পুরে। সেখানে উভয় পক্ষ গোলাগুলি করি, গ্রেনেড চার্জ করি তবে কেউ হতাহত হয়নি। সেখানে মাসব্যাপি ছিলাম। তারপর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে যেতাম।
আমার জীবনে একটা স্মরণীয় ঘটনা আছে। একবার আমাকে লিডার করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিজয়পুরে। বিজয়পুরের ওয়াগিসেফের উপরে যে টিলা তার নিচে ছিল পাকিস্তানিদের সৈন্যদের আস্থানা। তিনজন সঙ্গী সহ আমাকে পাঠানো হয়। আমরা চারজন সেখানে যাই। আমি তাদেরকে বললাম আমি যখন ফায়ার করবো তখন তোমরা ফায়ার করবে। মাত্র কয়েকটা ফায়ার যেন করা হয় তারপর যেন আমরা ব্যাক করতে পারি। সেখানে দেখলাম কয়েকজন মিলিটারি ব্যাংকারের উপরে রোদ পোহাবার জন্য ঘুরাঘুরি করছে। হয়তো তারা মনে করে নাই এখানেও তাদের শত্রু থাকতে পারে। আমি এক্সএলআর চালাতাম। ভাল করে নিশানা করে রাখলাম, যেন টার্গেট মিশ না হয়। মিলিটারিরা যখন হাঁটাহাঁটি করতে করতে আমার নিশানার মধ্যে চলে এল আমি সাথে সাথে ফায়ার করলাম, আমার সাথে থাকা তিনজনও ফায়ার করলো। সেখানে দুজন মিলিটারি মারা যায় একজন আহত হয়। পরে এ খবর ছড়াছড়ি হয়ে যায়।
এরপর আমরা চলে আসি ল্যাঙ্গুরা, নাজিরপুর। এখানেও পাকিস্তানিরা সময় সময় আসতো। তবে বেশির ভাগ সময় আমরা থেকেছি কমলাকান্দাতে। এখানেও সময় সময় আমাদের সাথে রাজাকার, পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ হয়েছে। তারপর আমরা চলে আসি নেত্রকোনাতে। এভাবে আমরা ময়মনসিংহ পর্যন্ত চলে আসি। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের দেশটাই স্বাধীন হয়ে যায়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ময়মনসিংহে আমাদেরকে এক মাস রেখে দেওয়া হয়েছিল। তারপর আমাদের অস্ত্র জমা দিয়ে আমরা গ্রামে ফিরে আসলাম। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় যখন চলে আসলো। আমাকে পরীক্ষা দিতে বলল আমিও পরীক্ষা দিলাম। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অনেক কষ্টে পাশ করি কারণ আমার বই পত্র ছিল না, তাই পড়াশোনা ঠিক মত করতে পারিনি। আমার এক বন্ধু আমাকে প্রবেশিকা গাইড বই দিয়ে সাহায্য করেছিল। এটাই আমাকে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করতে সহায়তা করে।
তারপর বাইবেল ক্রশ স্কুলে কাজ করার জন্য অফার করে আমিও সেখানে চলে যাই এবং প্রায় ৩ বছরের মত কাজ করি। সেখানে আমি ৫৫০ টাকা বেতন পাই। সরকারি স্কুল শিক্ষক পদে কাজ করতে পারতাম কিন্তু তাদের বেতন ছিল খুবই কম তখন তারা পেত মাত্র ২০০ টাকা। তাই আমি বেশি গুরুত্ব দেইনি।
বর্তমানে আমি কিছুই করি না। আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় সবার বিয়ে হয়েছে শুধু ছোট মেয়েটার এখনো হয়নি সে পড়াশোনা করছে। সব ঘরে নাতি আছে, মোট চরজন নাতি। বাড়িতে এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে আছি।
‘লেখক অভিধান : পরাগ রিছিল’
: পরাগ রিছিল কবি-গবেষক-সংস্কৃতিকর্মী জন্ম : ১৯৮১ সালের ৩ জুলাই জন্মস্থান......বিস্তারিত
-
লেখক অভিধান : পরাগ রিছিল
: পরাগ রিছিল কবি-গবেষক-সংস্কৃতিকর্মী জন্ম : ১৯৮১ সালের ৩ জুলাই জন্মস্থান...
-
নিগূঢ় ম্রং-এর দুটি কবিতা
: অদ্ভুত নেশা —————– খোঁপায় বুনোফুল লাল টকটকে দকমান্দা পড়া উদাসী...
-
Git-bibal ।। Motendro Mankhin
: Git-bibal Bijak-samjak dongja somai ongkuja Migaru-mikopba min.nin minkuja Nang nokchi...
-
প্রমোদ মানকিন- আমার কিছু স্মৃতি।। মিঠুন রাকসাম
: ২০০৭ সাল ঢাকা শহরের দুই ওয়ানগালা ঢাকা ওয়ানগালা দুভাগ হয়ে...
-
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য চিরানকে সংবর্ধনা
: দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ লাভ করায় অরন্য...
-
তর্পণ ঘাগ্রার একগুচ্ছ গারো লোকছড়া
: 1 Do.o wakki-chongprot. Susumimani mimang kam.o, Wak mat.chu ra.sotana. Bijak-songa...
‘লেখক অভিধান : পরাগ রিছিল’
: পরাগ রিছিল কবি-গবেষক-সংস্কৃতিকর্মী জন্ম : ১৯৮১ সালের ৩ জুলাই জন্মস্থান......বিস্তারিত
‘লেখক অভিধান : পরাগ রিছিল’
: পরাগ রিছিল কবি-গবেষক-সংস্কৃতিকর্মী জন্ম : ১৯৮১ সালের ৩ জুলাই জন্মস্থান......বিস্তারিত