Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

যতদিন ইউটিউবিং করবো ততদিন গারোদের নিয়ে ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা–নীল নন্দিতা রিছিল

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৩, ২০২১, ২২:১৪

যতদিন ইউটিউবিং করবো ততদিন গারোদের নিয়ে ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা–নীল নন্দিতা রিছিল

নীল নন্দিতা রিছিল  প্রথম বাংলাদেশি গারো ইউটিউবার। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর তার চ্যানেলে এক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার পূরণ হয়েছে । বিগত কয়েক বছর ধরে ইউটিউবে  কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন ব্লগার- লেখক ও থকবিরিম-এর বিশেষ প্রতিনিধি জাডিল মৃ’র সাথে। থকবিরিম পাঠকদের জন্য  জাডিল ও নীল নন্দিতার আলাপের বিশেষ অংশ প্রকাশ করা হলো।

জাডিল মৃ : কেমন আছো?

নীল নন্দিতা রিছিল : আছি ভালোই।

জাডিল : লকডাউনের ফলে জীবনযাপনের যে ধরণ সেটা কেমন পাল্টেছে? বর্তমান এবং অততীত?

নন্দিতা : লকডাউন তো নেই প্রায় এক মাসের মতো হতে চলেছে । তবে যখন ছিলো তখন অন্যরকম আর এখন অবশ্যই অন্যরকম ভাবে চলছে সব কিছু । তখন লকডাউনে বাসায় বন্দী ছিলাম, কাজ করতে পারিনি তেমন । আর এখন লকডাউনের শেষে ও খুব একটা কাজ শুরু করতে পারিনি ,পরীক্ষা ছিলো। আমার পরীক্ষা শেষ হলো সবে । এই আর কী..

জাডিল : আমরা জানি তোমার ইউটিউব চ্যানেল বিডি গারো প্রোডাকশন ১ লক্ষ সাবক্রাইবারের মাইফলক ছুঁইয়েছে? অনুভূতি জানতে চাই!

নন্দিতা : হ্যাঁ গত  ১৪ই সেপ্টেম্বর তারিখে আমার চ্যানেলে এক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার পূরণ হয়েছে । বিগত ৩ বছর যাবৎ ইউটিউবে রেগুলার কাজ করার পর এই অর্জন ,আমি খুবই আনন্দিত । প্রত্যেক ইউটিউবারেরই স্বপ্ন থাকে এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পূরণ করে প্রথম একটা বাটন ( সিলভার প্লে বাটন) ইউটিউবের কাছ থেকে আদায় করা । আমারও ছিলো এবং সেটা পূরণ হয়েছে ,তাই আমি খুশি ।

জাডিল : এই যে নিজ মাতৃভাষায় ভ্লগিং করে এত দূর মানে ১ লক্ষ সাবক্রাইবারের মাইফলক পাওয়া কি খুব বেশি কঠিন মনে হয়েছে নাকি সহজ?

নন্দিতা : আসলে নিজেদের গারো ভাষায় ভ্লগিং টা যখন শুরু করেছিলাম ,তখন প্রথম প্রথম কঠিনই ছিলো ব্যাপারটা । ৫০ হাজার হবে সেটাই ভাবি নাই ,কারণ বাংলাদেশের গারোদের জনসংখ্যার অনুপাতে ৫০ হাজার হওয়াটাই বড় কিছু ছিলো। কিন্তু এরপর সেটা ইন্ডিয়ার গারোদের মধ্যে যখন গেলো ,মানে তারা যখন ভিউয়ার্স হিসেবে আসলো তখন ১ লক্ষ সাবস্ক্রাইবারের জন্য কিছুটা হলেও আমি আশা করছিলাম । আর সেইভাবেই কাজ করেছি ,শুধু গারো ভাষায় কাজ করা টা চ্যালেঞ্জ ছিলো এবং এখনো আছে । এই ক্ষেত্রে আমার ভিউয়ার্স শুধুই গারো রা ,তাই চ্যানেল গ্রো , ভিউস সবই তাদের উপরই নির্ভর করতো বা এখনো করে।  তাই ব্যাপারটা দেখতে যত সহজ, করতে তার চেয়েও কঠিন ….

জাডিল : বিডি গারো প্রোডাকশনের দর্শক বাংলাদেশেরর চাইতে ভারতে বেশি,সেটা কেন?

নন্দিতা : হাহাহা  । এটা তো আসলে বলা মুশকিল ! আমি জানি না কেন ,তারপরও যতদূর আমার মনে হয়েছে তার কারণ হলো ইন্ডিয়ান গারো রা নিজেদের ভাষায় বা নিজেদের  কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করে তাই হয়তো বাংলাদেশী গারো হিসেবে আমার চ্যানেলের এক্টিভিটি তারা পছন্দ করছে ,গারো হিসেবে সাপোর্ট ও করছে প্রচুর। আবার  বাংলাদেশি গারোরা যে পছন্দ করে না তা না ,তবে ইন্ডিয়ান দের মতো তারা সব সময় গারো ইউটিউবার দের ভিডিও দেখে না । ইন্ডিয়াতে যেমন গারো ভিউয়ার্স বেশি ,তেমন গারো ইউটিউবারও বেশি । আর আমাদের দুটোরই অভাব..

তাই ঐ যে বললাম ,ইন্ডিয়ান রা গারোদের সাপোর্ট করে সেই ব্যাপার টাই হয়তো । এ ছাড়া কোন রহস্য নাই ,আমার মতে…

জাডিল : ভারতীয় গারোরা তোমার ভিডিও প্রচুর দেখে, এর রহস্য কী?

নন্দিতা : ইন্ডিয়ান গারো রা শুধু আমার ভিডিও দেখে না ,তারা সব গারো ইউটিউবার দের ভিডিওই দেখে । যদি খেয়াল‌ করো তাহলে দেখবে যে ,যতজনই বর্তমানে বাংলাদেশে ইউটিউবিং করছে ,সবার চ্যানেলে ভিউস আর সাবস্ক্রাইবারের পিছনে ইন্ডিয়ান গারোরাই রয়েছে ।

জাডিল : কেন ইউটিউব শুরু করা? এবং শুরুটা কেমনভাবে হয়েছি সংক্ষিপ্তভাবে জানতে চাই?

নন্দিতা : আসলে আমার অনেক আগে থেকেই ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফির সখ ছিলো। আর ভিডিওগ্রাফি রিলেটেড প্রচুর ভিডিও আমি ইউটিউবে দেখতাম ,তখন খেয়াল করলাম যে এত  ভাষায় ভিডিও দেখছি, গারো ভাষায় কোন ভিডিও আছে কিনা সার্চ দিয়ে দেখি। আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রায় শ খানেক গারো ভাষায় তৈরি নানা রকম ভিডিও চোখে পরলো ! আর সব গুলাই ইন্ডিয়ান গারোদের ছিলো । যা আমি জানতাম ই না তখন পর্যন্ত ! সেটার পর আমার নিজের শুধু গারো ভাষায় কাজ করার ইচ্ছা হলো ,আগে থেকেই আমিও ইউটিউবে ভিডিও তৈরির কাজ করতে মনে মনে আগ্রহী ছিলাম । কারণ কাজ টা একদমই ফ্রি ,কারোর অধীনে কাজ করতে হয় না । সে জন্যই আমার আগ্রহ ছিলো আর গারো ভাষায় ভিডিও দেখার পর মাথায় শুধু গারো ভাষায় ভিডিও তৈরীর চিন্তাটাই ঘুরছিলো। এভাবেই ইউটিউবিং এর চিন্তাটা বা শুরুটা .. এরপর আমি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটা ইউটিউব চ্যানেল ক্রিয়েট করি নিজে নিজেই। আর তারও এক বছর আগে থেকেই সেটার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম । কারণ ,আমি চাইছিলাম ইউটিউবে শুধু গারো ভাষায় ভিডিও তৈরি করতে । সত্যি বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না ,কারণ বাংলাদেশি কোন গারো ইউটিউবার তখন শুধু গারো ভাষায় ভিডিও বানাতো না । তাই ,চ্যানেল চলবে কিনা সে ব্যপারে যথেষ্ট সন্দেহ ছিলো সাথে ভয় ও। আর এদিকে আমার নিজের ও কিছুটা ইউটিউব বিষয়ে জ্ঞান আর ভিডিও তৈরি ,এডিটিং বিষয়ে দক্ষতার দরকার ছিলো। তো ঐ রকম সময়টাতেই সাহস করে ইউটিউবিং শুরু করি এবং ভিডিও বানানো ও শুরু করি। শুরুটা মসৃণ ছিলো না ,এক হাজার সাবস্ক্রাইবার পেতে লেগে গেছে ৫ মাস ! তবে আমি হতাশ হই নি ,কারণ আমার লক্ষ্য ইউটিইবে ইনকাম করা ছিলো না ,গারো ভাষায় কাজ করে সেটাতে নিজেদের মধ্যে একটা ভালো কমিউনিকেশন এর মাধ্যম তৈরি করায় ছিলো। এবং সেটা এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে, ইন্ডিয়ান গারোদের সাথে আমাদের সম্পর্ক টা ভিডিওর মাধ্যেমই গড়ে উঠছে ….

জাডিল : গারো ইউটিউবার হিসাবে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছো? এখনো কি সমস্যা হয়?

নন্দিতা : গারো ইউটিউবার হিসেবে যে সমস্যা টা আমার বেশি হয় সেটা হলো ভাষা । আমরা বাংলাদেশে যে গারো ভাষায় সাধারণত কথা বলি ,সেটা ইন্ডিয়ান গারো রা বুঝে না । এদিকে আমার চ্যানেলে প্রায় ৯০% ইন্ডিয়ান গারো ! তাই তারা বুঝতে পারবে সেরকম ভাবে তাদের ভাষা টা আমাকে শিখতে হয়েছে । প্রথম দিকে প্রচুর নেগেটিভ কমেন্ট আসতো এটার জন্য ,তবে আমি খুব দ্রুত ভাষাটা শিখে ফেলার চেষ্টা করেছি যতটুকুই পারি , যার ফলে পরবর্তীতে তারা সেটা বুঝতে পেরে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে । এছাড়া আমি বাংলাদেশি গারো ইউটিউবার হওয়ায় কোন সমস্যায় পরিনি। আর বাকি যে সব সমস্যা সেটা আমার ট্যাকনিকেল কিছু সমস্যা ,যা এখনো রয়ে গেছে । সামনে অবশ্যই কাটিয়ে উঠবো এসবও…

জাডিল : ইউটিউব নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পা কী?

নন্দিতা : ইউটিউব নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অনেক আছে ,বাস্তবায়নটা কতটুকু হয় দেখা যাক ।  যেহেতু আমার চ্যানেলে ভ্লগ নির্ভর ,তাই সামনের দিগুলোতে বাংলাদেশের সব গারো গ্রামগুলোতে ঘুরে ঘুরে ভ্লগ বানানোর ইচ্ছা আছে । সেসব ভিডিও যতদিন ইউটিউবে আমার চ্যানেলে থাকবে ততদিনই লোকজন দেখতে পাবে । ইন্ডিয়ান রাও দেখতে পারবে এ দেশের গারো গ্রাম, তাদের জীবন যাপন ….এই তো , যতদিন ইউটিউবিং করবো ততদিন শুধু গারো ভাষা এবং গারোদের নিয়ে ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা । এর বাইরে আর কিছুই নেই…

জাডিল : নতুন যারা ইউটিউবার হচ্ছে, বিশেষ করে গারো ইউটিউবার তাদের জন্য কোন পরামর্শ?

নন্দিতা : নতুন যারা ইউটিউবে আসছে বা যারা ইউটিউবে কাজ করছে তারা সবাই আমার চেয়েও ভালো বুঝে । হাহাহা.. তারপরও ,আমার পরামর্শ যদি কারো কাজে লাগে তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো ,যে পরিশ্রম করা  এবং সেটা অবশ্যই সৎ পথে করতে হবে । কারণ ,ইউটিউবে অসৎ পথে খুব দ্রুত উঠে যাওয়া যায় ,তবে টিকে থাকা যায় না । যে যত ইউটিউব নিয়ে চিন্তা করবে ,নিজের ভিডিও নিয়ে পরিশ্রম করবে সে তত উপরে উঠবে হোক সেটা একটু দেরিতে।

অনেকে ভাবে যে দামি ক্যামেরা ,দামি কম্পিউটার সেটাপ এসব না থাকলে আজকাল কেউ ভিডিও দেখে না । এটা একদমই ভুল ধারণা ,মানুষ দেখে কনটেন্ট ,এখন সেই কনটেন্ট কত দামি গিয়ার দিয়ে করা বা কত দামি সেটাপ দিয়ে এডিট করা সেটা কেউ জানতে চাইবে না । ভালো কাজের সব সময় মূল্য থাকে ,সেটা ভিউয়ার্স এবং ইউটিউব নিজেও দেয় এবং দিবে । আমি নিজে শুধু একটা স্মার্টফোন দিয়েই এতদূর এসেছি ,আমার অভিজ্ঞতা থেকেও এটা জোর গলায় বলতেই পারি । তাই নতুন যারা আসতে চায় তাদের বলবো ভিডিও করার এবং এডিট করার মতো কিছু একটা থাকলেই ইউটিউবে আসা যায় এবং কাজ করা যায়। আর আমি আমাদের গারো ইউটিউবার যারা আছে তাদের বলবো ,গারো ভাষায় ভিডিও তৈরী টা চালিয়ে যেতে ,কারণ বাংলা দিয়ে তৈরি ভিডিওর অভাব নেই এ দেশে, গারো দিয়ে তৈরি ভিডিওর অভাব । যা কিনা আমরা সবাই মিলে পূরণ করতে পারি…. ধন্যবাদ ,জাডিল সুন্দর একটা প্রশ্ন উত্তর পর্বের আয়োজন করার জন্য ।

জাডিল : তোমাকেও ধন্যবাদ!



 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost