Thokbirim | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

মাৎগ্রিক ।। পর্ব-৪ ।। সঙ্গীতা এম সাংমা

প্রকাশিত : আগস্ট ২৬, ২০২১, ১৬:৩৩

মাৎগ্রিক ।। পর্ব-৪ ।। সঙ্গীতা এম সাংমা

বিয়ের দিন প্রথমে বাকদান পর্ব চলে , এই পর্বে সমবেত আত্মীয় স্বজনের সামনে পাত্র ও পাত্রী বিয়েতে তাঁদের সম্মতির মতামত প্রদান করে। বাকদানের সময় পাত্র এবং পাত্রী পক্ষ উভয়ই তাদের হবু বউ ও জামাই এর জন্য সামর্থানুযায়ী সোনা বা রুপোর আংটি বাকদানের প্রতীক হিসাবে নিয়ে আসে। মতামত নেয়ার পর সেই উপহার সামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় পক্ষই একেঅন্যের সাথে দেয়ানেয়া করে। বাকদান অনুষ্ঠান করার পর আর বিয়ে ভাঙ্গা যায় না এবং এই পর্ব শেষ হলে শুরু হয় পানচিনি রাগত্তা বা পানচিনি বিনিময়।

মেয়ে পক্ষ পান ও চিনি এবং বাতাসা নিয়ে আসেন সবার জন্য এবং নিজ হাতে উপস্থিত সকলের মধ্যে বিতরণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী হবার কারণে গারো রীতি-রেওয়াজ শেষ হলে খ্রিস্ট ধর্ম অনুযায়ী শাস্ত্রপাঠের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের এক সপ্তাহ পরে পাত্র/পাত্রী তার নিজের বাড়িতে আসে বাবা মাকে খাওয়াতে, এই নিয়মকে ফিরাগমন বা ফিরাফিরি বলা হয়।

 

বিয়ে শেষ হবার আগেই আমি খেতে বসে পরলাম। যেটা নজর কাড়ল সেটা হল কোন থালা বা প্লেট নয় খাবার পরিবেশন করা হল কলাগাছের ঢঙ্গলে। কয়েকবছর আগে অবধিও আমার গ্রামে শুধু নয় উত্তর বঙ্গের সব গারো গ্রামেই এই ঢঙ্গলেই খাবার দেবার চলছিল। এখন যুগের সাথে পরিবর্তন এসছে , অনুষ্ঠানগুলিতে জায়গা করে নিয়েছে প্রথমে শাল পাতা তারপর প্লাস্টিক বা থার্মোকলের প্লেট। খাবারের আয়োজন ছিল খুব সাধারণ- ভাত, একটা ঘণ্টসবজি, ঐতিহ্যবাহী কিছু গারো রান্নার পদ যেমন- গারোদের প্রিয় শূকরের মাংসের ফুরাখাড়ি (চালের গুড়ো ও খাবার সোডা দিয়ে তৈরি) ,মুরগির মাংসের কাপ্পা এবং জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে আনা চালতার চাটনি।

উত্তর বঙ্গে দমনপুর, কালকূট বস্তি, পানিয়ালগুড়ি বাদে অন্যান্য গারো গ্রামগুলি অত্যাধিক বাঙালি এবং অন্য জাতির সাথে বাস করবার কারণে তাঁদের পোশাক ও খাদ্যাভাসে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আসাম ,মেঘালয় এমনকি বাংলাদেশের গারোরা মনে করেন যে উত্তর বঙ্গের গারোরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায়। তাঁদের ধারণা আমরা আমাদের ভাষা , নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার-আচরন , আদব-কায়দা সব ভুলতে বসেছি। কিন্তু এমনটা নয়, আমরাও অন্য গারোদের মত খুব সামাজিক। এখনো গ্রামে কারো বাড়িতে বিয়ে ,শ্রাদ্ধ বা অন্য যেকোন অনুষ্ঠানে সবাই মিলেমিশে কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, বিয়ে হলে দুদিন আগে থেকে শুরু হয় আনন্দ করা। গারো সমাজের কাউকেই আলাদাভাবে নিমন্ত্রন করতে হয় না বা কাজ করতে আসবার জন্য বলতে হয় না। তাঁরা মনে করেন এটা নিজেদের দায়িত্ব এবং উপস্থিত থেকে সকল প্রকার সাহায্য করে। রাত জেগে কীর্তন, নাচ-গান, কাজ-কর্ম সবই করা হয়। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল যার বাড়ি অনুষ্ঠান তার যাতে আর্থিক সমস্যা না হয় তাই গ্রামের সব গারো পরিবার নিজেদের সামর্থ্যকে চাল-ডাল-সবজি, কেউ মশলাপাতি, কেউ মাছ-মাংস অথবা কেউ টাকা তুলে দেয় বাড়ির কর্তা/ কর্ত্রীর কাছে। গারো কৃষ্টিমতে , এই সাহায্যগুলো ভবিষ্যতে ফিরিয়ে দিতে হয় , কেউ মুরগি বা ছাগল দিয়ে সাহায্য করলে তাকেও তার বাড়ির কোন অনুষ্ঠানে একই জিনিস দিতে হবে নয় ঋণ থেকে যাবে।

চলবে…



লেখক পরিচিতি

সঙ্গীতা এম সাংমা কোচবিহার জেলার পুটিমারি গ্রামের বাড়ি।  মাতা – নন্দিতা সাংমা পিতা – সঞ্জীব কুমার চিসিম। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।

মাৎগ্রিক ।। পর্ব-৩।। সঙ্গীতা এম সাংমা

সঙ্গীতা এম সাংমা




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost