Thokbirim | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

মাৎগ্রিক ।। পর্ব-৩।। সঙ্গীতা এম সাংমা

প্রকাশিত : আগস্ট ২৫, ২০২১, ২০:৪০

মাৎগ্রিক ।। পর্ব-৩।। সঙ্গীতা এম সাংমা

পূর্ব প্রকাশের পর…

এর মধ্যেই আমাকে খেতে দিল “মিমিত্তিম” ভাত যাকে ইংরেজিতে বলে স্টিকি রাইস এবং “দোহ বেনব্রেংআ”অর্থাৎ বাঁশপোড়া চিকেন যা রেস্তোরাগুলিতে ট্রাইবালফুড নামে বেশ বিখ্যাত। এই রান্নাটিও গারোদের খুবই জনপ্রিয় একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।

যেহেতু আজকেই বাড়ি ফিরে যাব আর এখানে সবাই কাজে ব্যস্ত তাই একটুও সময় নষ্ট না করে গ্রাম ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম। আমার হাবভাবে সবাই বুঝে গেছে আমি পশ্চিম বঙ্গ থেকে এসছি। এরাও বাংলাদেশের লোকেদের মত আমাদের বাংলাকে বেঙ্গল বলে। সবাই কী সুন্দর করে জিজ্ঞেস করছে “বেঙ্গলের কোন গ্রামে বাড়ি? তোমার বাড়িতেই সেংচি থাকে? কত গারো আছে ওখানে?” হাঁটতে হাঁটতে গ্রাম ঘুরে হাঁপিয়ে গেছি , একটি বন্ধ দোকানের সামনে বাঁশের মাচা দেখতে পেয়ে বসে পরলাম। অবশেষে ফোনে টাওয়ার এল। দিদার নম্বর থেকে অনেকগুলো মিস্ডকল অ্যালার্ট পেয়ে ঘুরিয়ে ফোন করতেই বলতে লাগল “এদিক সেদিক একা ঘুরিস না অনেক খারাপ লোক আছে জাদুটোনা করতে পারে, সাবধানে থাকিস নয়তো ওষুধ করে অসুস্থ করে দেবে।“ জানি না আদৌ তাঁরা এসব পারে কিনা তবে জঙ্গলের আদিবাসীদের নিয়ে এই বদনামটা থেকেই গেল।

অনেকটা বেলা হল আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলাম বাড়ির দিকে দেরি হলে আবার বিয়েটা অদেখা থেকে যাবে। বাড়ির কাছকাছি এসেই গেছি প্রায় একজন বয়স্ক লোক খুব ধীর গতিতে শুকনো কাঁশি কাশঁতে কাশঁতে এগোচ্ছে ,  জিজ্ঞেস করলাম- ”দাদু ওষুধ খাচ্ছ না?” উত্তর না দিয়ে আমায় পাল্টা জিজ্ঞেস করল “বেঙ্গলের নাকি?” আমি বললাম হুমম। আমাকে আবার জিজ্ঞেস করল-“থাকবে না চলে যাবে?” আমি বললাম খেয়েই চলে যাব। এরপর কথা না বাড়িয়ে উনি হাঁটতে শুরু করলেন নিজের মত করে , আমিও পেছন পেছন এলাম।

এদিকে মেয়ে পক্ষ চলে এসেছে বিয়ের জন্য , মেয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি করে দাকমান্দা পরেছে সাথে গলা ভরে পুঁতির মালা যা গারোরা নিজেদের ভাষায় বলে রিপ্পক এবং তাঁদের অতিমুল্যবান অলঙ্কার যার নাম থাংকা সরা অর্থাৎ রুপোর টাকার তৈরি মালা ও কানে রুপোর তৈরি দুল বা নাদেলেং। ছেলে পরেছে প্যান্ট এবং শার্ট এবং কাঁধ থেকে কোমর অবধি আড়াআড়িভাবে নিয়েছে গারো কাপড় বা পান্দ্রা। তবে বর্তমানে অনেকেই এইসব জাতিগত পোশাকের পরিবর্তে পুরোপুরি খ্রিস্টান মতে বিয়ে করবার জন্য মেয়েরা সাদা গাউন এবং ছেলেরা ব্লেজার ও প্যান্ট পরে। এইদিকে বিয়ের রীতিনীতি শুরু হয়ে গেছে। আমার কাছে এগুলো যদিও চেনা , আমাদের গ্রামেও এই একই রীতি পালন করা হয়। তবে আমাদের উত্তর বঙ্গে ছেলেরাই বউ আনে, খুব কমজন ঘরজামাই আসে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে ঠিক হবার পরেই উভয় পক্ষের অবিভাবকেরা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় পাত্রী ছেলের বাড়িতে আসবে নাকি পাত্র ঘরজামাই হয়ে থাকবে। এই আলোচনা কে বলা হয় চাওয়ারি বা জিক সিংআ । যেহেতু গারোরা এখন বৃহৎ সংখ্যায় খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী তাই বিয়ে ঠিক হবার পরে অভিভাবকেরা ধর্ম যাজককে বিষয়টি জানায় এবং তিনি পাত্রপাত্রীর নাম, তাঁদের অভিভাবকদের নাম, বংশ তালিকা নথিভুক্ত করে নেন যাতে বিয়ের নিয়ম অনুসারে কোন বাধার সৃষ্টির না হয় , এই রীতিকে বলা হয় বান সিংআ এবং এর পরে ধর্ম যাজক সুবিধামত বিয়ের তারিখ নির্বাচন করে দেন। নাম লেখানোর পর তিন সপ্তাহ ধরে গির্জায় নাম ঘোষণা করা হয় যাতে ঐ পাত্রপাত্রীর বিয়েতে যদি কারো কোন সমস্যা বা অভিযোগ থাকে তবে গির্জা কর্তৃপক্ষকে বা ধর্মযাজককে জানাতে পারে। এই নিয়মের বেশ সুবিধা আছে যেমন গ্রামের সকলে জানতে পারছে কবে কার বিয়ে তেমনি কেউ যদি আগে কখনো কোথাও বিয়ে করে থাকে তবে সেটিও সকলে জানতে পারবে।

চলবে….

ছবি : সংগৃহীত



লেখক পরিচিতি

সঙ্গীতা এম সাংমা কোচবিহার জেলার পুটিমারি গ্রামের বাড়ি।  মাতা – নন্দিতা সাংমা পিতা – সঞ্জীব কুমার চিসিম। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost