Thokbirim | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

গারো লোককাহিনি গারোদের সম্পদ ।। শরীফ মল্লিক

প্রকাশিত : আগস্ট ০৪, ২০২১, ১২:৩৩

গারো লোককাহিনি গারোদের সম্পদ ।। শরীফ মল্লিক

পৃথিবীর সব দেশের, সব জাতির, সব গোত্রের রয়েছে আলাদা আলাদা কৃষ্টি কালচার ও সংস্কৃতি। রয়েছে নিজস্ব কিছু সম্পদ। এই সম্পদ একজনের কাছ থেকে আরেকজন পেয়ে থাকে বংশ পরম্পরায়। গারো লোককাহিনিও তেমনি একটি মূল্যবান সম্পদ। লেখিকা সুমনা চিসিম সেই সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা থেকেই নতুন প্রজন্মের জন্য তিনটি কাহিনিকে মলাটবদ্ধ করে স্থায়ী রূপ দিলেন।

প্রথম গল্পটি ডরান ও অপ্সরী জুগে বালজের। জুগে বালজে ছিলো মিসি সালজং এর নাতনি। মিসি সালজং হলো স্বয়ং ঈশ্বর। সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে বাস করতো এক যুবক। তার নাম ডরান। সে ছিলো সৎ এবং স্বাস্থ্যবান। মাছ ধরা ছিলো তার প্রধান নেশা। সে সাধারণত চিবক নামের এক জলাশয়ে মাছ ধরতো। কিন্তু একদিন সে চিবক থেকে অনেক ভিতরে অন্য এক জলাশয়ে গেল মাছ ধরতে। সেখানের পরিবেশ ছিলো অন্যরকম। জলাশয়টি ছিলো স্বচ্ছ নীল। আশেপাশের পরিবেশ ছিলো অভূতপূর্ব। ডরান এমন পরিবেশে মোহিত হয়ে মনে মনে ভাবছিলো দেব দেবী বা জলপরির কথা। যেই ভাবনা সেই কাজ সত্যি সত্যিই এক পরি এসে হাজির। ডরান তো অবাক। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলো না। মুহূর্তেই সুন্দরী পরির প্রেমে পড়ে গেল ডরান। তারপর আর কী? বিয়ে হলো। স্বর্গে জীবনযাপন করলো সাত বছর। একদিন হঠাৎ করেই ডরানের মনে গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছে জাগলো। স্বর্গীয় অপ্সরী জুগে বালজে বাঁধা দিলেন না। ডরান গ্রামে গেল, সব ঘটনা খুলে বললো মা-বোনকে কিন্তু কেউ বিশ্বাস করলো না তার কথা। উল্টো এক যুবতীকে ধরে এনে বিয়ে করিয়ে দিলো। কিন্তু সেই স্বর্গীয় পরির সাথে ডরানের চুক্তি ছিলো তিন বছরের। তিন বছর পর সে আসবে। আর ডরানও ফিরে যাবে তার কাছে। কিন্তু হায়! কপাল খারাপ। দেখতে দেখতে তিন বছর পার হয়ে গেল। ডরান ভুলে গেল তার প্রতিশ্রুতির কথা। এদিকে স্বর্গীয় পরি জুগে বালজে সময় মতো হাজির। তারপর কী হলো, তা বর্ণনা থেকে বিরত থাকলাম।

দ্বিতীয় গল্প ডম্বি ওয়ারি। এর নায়ক জরেং। সে তার সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে অহংকার করতো আর চিৎকার করে বলতো তার মতো ভাগ্যবান কেউ নেই পৃথিবীতে। কার আছে এমন সুন্দরী স্ত্রী? একদিন নদীতে থাকা মৎস যুবক তার কথাগুলো শুনে আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যেকোন মূল্যে সে সুন্দরী ডম্বিকে খুঁজে বের করবে। সে প্রতিদিন জলাধারের কিনারে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো। একদিন ডম্বি নদীতে পানি তুলতে আসলে সত্যি সত্যিই সে অপূর্ব সুন্দরী ডম্বিকে দেখতে পেল এবং ভালোবেসে ফেলল। ডম্বি পানি তুলতে নদীতে নামা মাত্রই মৎস যুবক তাকে টেনে পানির নিচে নিয়ে যায়। তারপর  ডম্বিও সেই যুবককে ভালোবেসে ফেলে। ডম্বি ভালোবেসে সেই যুবককে পানির নিচেই বসবাস করতে লাগলো। এদিকে ডম্বির দুটি সন্তান ছিলো। একটি ছিলো ছোট। সে মায়ের দুধের জন্য কান্নাকাটি করলে ডম্বি উপরে উঠে আসতো এবং দুধ খাওয়ানো শেষ হলে আবার চলে যেত। সন্তানের মাধ্যমে প্রথম স্বামী জারেং যখন জানতে পারলো এই ঘটনা সে খুব কষ্ট পেল এবং ক্ষুব্ধ হলো। স্ত্রীকে জোর করে নিয়ে এলো নিজের কাছে। ঘর বাঁধলো গাছের উপর। যেন খুঁজে না পায় মৎস যুবক। কিন্তু মৎস যুবকও কম না। সে খুঁজে বের করবেই। অবশেষে পেয়েও গেল। মৎস যুবক কিছুই না বলে প্রতিশোধ নেওয়ার অভিপ্রায়ে নিজের অধিনস্ত সৈন্য সামন্ত নিয়ে গাছের তৈরি বোরাং পযর্ন্ত মাটির নিচ দিয়ে খোড়া শুরু করলো। শেষ পযর্ন্ত মৎস যুবকেরই জয় হলো। একদিন সবকিছু ডুবে গেল পানির অতল গহ্বরে।

তৃতীয় গল্পটা আরো মজার। এটাও নদী ও মৎস কন্যাকে কেন্দ্র করে। গ্রামের নাম চিগা চিরংগি। এখানেই বাস করতো সাওরা স্পরা নামক এক গারো যুবক। একদিন সাওরা অন্যমনস্কভাবে সংড়ু নদীর তীর ঘেঁষে হাটঁছিলো। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সামনে এক অপরূপ সুন্দরী মৎস্য কন্যাকে দেখতে পেল। ভালোবেসে ফেলল এক নিমেষেই। মৎস্য কন্যাও ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলল সাওরাকে। আসলে সে ছিলো মৎস্য রানি। দু’জন দু’জনকে বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মৎস্য রানি পানির গভীরে নিজের রাজ্যে নিয়ে গেল সাওরাকে। সেখানে এক বিশাল রাজত্ব। সাপ, কুমির, কচ্ছপ, বড় বড় মাছ সবাই সেই রানির অধীনে। বিয়েও হলো ধুমধাম। চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত ধরে চলল উৎসব। এদিকে দীর্ঘদিন সাওরা বাড়িতে না আসায় আত্মীয় স্বজনরা মনে করলো সাওরা মারা গেছে। তারা তার সৎকার করে ফেলল। কিন্তু মজার বিষয় হলো অনেকদিন ধরে পানির নিচে থাকতে থাকতে একদিন ইচ্ছে জাগলো সস্ত্রীক আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করবে সাওরা। সে তার ইচ্ছার কথা স্ত্রীকে জানালে স্ত্রী রাজি হয়ে যায় এবং পরিকল্পনা মাফিক তারা বাড়িতে যায়। সবাই তো অবাক এতোদিন পর সাওরা ফিরে এসেছে! তারা বিশ্বাস করতে চাইলো না। সাওরা তাদের সব ঘটনা খুলে বললো। কিন্তু এরপর ঘটে গেল আরো অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। মাত্র তিন ফর্মার বইটিতে কাহিনির মাঝখানে মাঝখানে দেওয়া আছে ছবি। ভাষার প্রাঞ্জলতা এবং বর্ণনার স্টাইল যেকোন পাঠককে টানবে এটুকু বলতে পারি।

বইটি প্রকাশ করেছে গারো সাহিত্যের ছোট কাগজ ও প্রকাশনী ‘থকবিরিম’। প্রচ্ছদ করেছে নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। বইয়ের ভেতরের ছবি একেঁছেন চালাং রিছিল। বইটির মূ্ল্য রাখা হয়েছে ১৮০ টাকা।



শরীফ মল্লিক তরুণ কবি ও স্বজন সংবাদের সম্পাদক।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost