পটভূমি
এই প্রকাশনাটি মূলত আদিবাসী তরুণ লেখকদের প্রবন্ধের একটি সংকলন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি হেতু লকডাউন সময়কালীন ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের সময় দিবসের মূলসুরকে (কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম) ভিত্তি করে যে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, সেই প্রয়াসেরই ফসল এই প্রকাশনা। কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাটিতে মূলত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী ছাত্র-যুবদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মোট ১৩ জন যুবক-যুবতীদের মাঝ থেকে ৩ সদস্য (আদিবাসী) বিশিষ্ট বিচারক মণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত ১০ শাণিত দর্পণ যুবক-যুবতীদের প্রবন্ধ নিয়ে করা হয়েছে এ বিশেষ প্রবন্ধ সংকলন। কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে শিক্ষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতির উন্নয়ন, সচেতনতা, সক্ষমতা ও নেতৃত্বের বিকাশ এবং জনসংগঠন সমূহ শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহে আবহমানকাল থেকে বসবাসরত ৮টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং বঞ্চনার প্রভাবে তুলনামূলক নাজুক। বৈশ্বিক মহামারি এ প্রেক্ষাপটে যেন মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুগে যুগে নানারকম বঞ্চনার শিকার হয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দরিদ্র আদিবাসীদের জীবন-জীবিকাকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে কোভিড-১৯ মহামারি। আদিবাসীদের প্রচলিত ভূমি ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী জীবন-জীবিকা পরিবর্তন হওয়ার ফলে অনেক আদিবাসী জীবিকা নির্বাহে অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে বা কর্মক্ষেত্র সমূহের উপর নির্ভরশীল, যারা এই মহামারি দ্বারা বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া আদিবাসী নারীদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক, যাদের উপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। এ আদিবাসী নারীদের অনেকেই বিউটিপার্লারে বা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী বা সহায়তাকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কর্মহীন, অনিশ্চিত অসহায়তায় নিপতিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াও বিভিন্নমূখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আদিবাসীরা। আদিবাসীদের জীবনজীবিকার উপর কোভিড-১৯ মহামারির বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব বিবেচনায় রেখে জাতিসংঘ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মূলসুর নির্বাচন করে ‘‘COVID-19 and Indigenous Peoples’ Resilience” বা “কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবনজীবিকার সংগ্রাম”। বাংলাদেশ, তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবসীরা কোভিড-১৯ মহামারির দ্বারা কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রভাবিত তা চিহ্নিতকরণ, সমস্যাসমূহ মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শের সমাবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় কিছুটা হতাশ যুব সমাজ নিজ নিজ এলাকায় থেকে প্রতিনিয়তই আদিবাসীদের নানারকম জীবন-যুদ্ধ ও বঞ্চনার সাক্ষী হচ্ছে। এ অনাকাঙ্খিত অবসর সময়ের যথাযথ ব্যবহার দ্বারা, ছাত্র-যুবদের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতা প্রসূত পর্যবেক্ষণ কোভিড-১৯ মহামারি ও আদিবাসী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠতে পারে কালের প্রয়োজনে। সেই উপলব্ধি আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় মহামারি প্রভাবিত ৯ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে উপলক্ষ করে কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল এর আলোক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী যুবক-যুবতীদের জন্য প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা ও প্রবন্ধ সংকলনের আয়োজন করার।
এ বিশেষ প্রবন্ধ সংকলনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যুবক-যুবতীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্যি অনুপ্রেরনাদায়ক। ঐতিহাসিক এই মহামারী আদিবাসীদের জীবনজীবিকা, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে কী প্রভাব ফেলছে, কীভাবে তারা এর মোকাবিলা করছে, এ সকল কঠিন জীবন অভিজ্ঞতার চালচিত্র কালের সাক্ষী হিসেবে উঠে এসেছে এ দশজন যুব প্রতিনিধিদের লেখনিতে। এই বিশেষ চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে এই দশ যুব দর্পনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি, সুদূর প্রসারী ভাবনা, সুপারিশ ইত্যাদি আদিবাসীদের উন্নয়নে নানাভাবে কাজে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এই প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা তরুণ লেখকদের প্রতি, যাদের লেখনীতে এই প্রকাশনার সফলতা। শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বিচারক মণ্ডলীর সদস্য মি. সৃজন রাংসা(সাংমা), মি. মতেন্দ্র মানখিন এবং মি. পরাগ রিছিল-এর প্রতি, যারা তাদের মূল্যবান সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে প্রবন্ধগুলো বিচার-বিশ্লেষণ ও নির্বাচন করেছেন। বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি থকবিরিম প্রকাশনী’কে যারা এই সংকলন প্রকাশে অংশীদার হয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং নির্বাচিত ১০টি প্রবন্ধ তাদের অনলাইন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটি এবং কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলের সম্পৃক্ত সকল সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই আয়োজন সফলতা পেয়েছে।
সংকলনটির অনঅভিপ্রেত সকল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, নির্মল, ভালোবাসাময় সবুজ পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের সকলের দায়িত¦শীল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
অপূর্ব ম্র্রং
আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল।
আদিকাল থেকে এ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্ন মহামারির সাথে সংগ্রাম করে পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। রোগ জীবাণুর সাথে লড়াই যেনো আমাদের একটা সংগ্রাম। মানবজাতির এই সংগ্রাম যেন পৃথিবীর একটা চিরন্তন বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদিকাল থেকে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু যেমনÑ যক্ষা, কলেরা, কালাজ্বর, হাম, প্লেগ, জিকা ইত্যাদি মহামারির পর আমরা আবার করোনা ভাইরাসের সম্মুখীন হয়েছি। কোভিড-১৯ এর এই প্রকোপ পৃথিবীর ১৮৮টি(বিবিসি বাংলা) দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, বাংলাদেশেও এর প্রভাব স্পষ্ট। সারাদেশে লকডাউনের ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় একটা দেয়াল এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই এখন ঘরবন্দী, আমাদের সকল প্রকার কার্যক্রমে এসেছে অস্বাভাবিকতা। এর ফলে আমাদের আদিবাসীদের জীবনেও এসেছে এর প্রভাব। আমরা আদিবাসীরা এমনিতেই অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে অনেকটা পিছানো, করোনা এর প্রকোপে আমরা আগে যতটুকু এগিয়ে গেছিলাম তার চেয়ে দ্বিগুণ পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংস্কৃতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন, আমরা প্রতিনিয়ত সবাই অনিশ্চিত জীবন পার করছি। তারপরও আশার কথা হলো অনেক উন্নত দেশ যেমন-চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ভ্যাকসিন আবিস্কারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আবার রাশিয়ার আবিষ্কারকৃত ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য কার্যকর এটা প্রমাণিত হয়েছে। আশা করি, করোনার এই প্রকোপ থেকে আমরা অচিরেই মুক্ত হবো।
করোনা ভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায়, যেগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণি এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেক সময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্যকিছুও হতে পারে যেমন-রা ভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন-সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন-মুরগির মধ্যে এটা ঊর্র্ধ্ব শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরের এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মতো কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাস ঔষধ আজও আবিস্কৃত হয়নি। তবে বৃটেন, রাশিয়া একটা ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে।
করোনা ভাইরাস ১৯৩০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামণ ব্রস্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-কাশি-হাঁচিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি মনুষ্য করোনা ভাইরাস-১৯ই এবং মনুষ্য করোনা ভাইরাসও সি-৪৩ নামে নামকরণ করা হয়। তবে অনেকের সন্দেহ যে এই ভাইরাসটি চীন সরকার তার দেশের গরিব জনগণকে শেষ করে দেওয়ার জন্য নিজেরাই তৈরি করে নিজেরাই ছড়িয়ে ছিলো। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালে এসনআরএস-সিওভি, ২০০৪ সালে এইচ সিওডি, ২০১২ সালে এমইআরএস-সিওভি এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে চীনের এসএআরএস-সিওভি-২ পাওয়া যায় (যা বর্তমানে সাধারণত নোভেল করোনা ভাইরাস নামেই পরিচিত। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা যায়। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)
২০১৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রমণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ২০১৯ এনসিওভি নামকরণ করে। ২০২০ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্তপ্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২৭,৩,০৬,৮৭৯ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ৮,৯৩,৩২৫ জন, সুস্থ হয়েছে ১৯,৩৭,৮,৮৩২ জন (বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী)। আর বাংলাদেশে ৮মার্চ ২০২০ সাল থেকে প্রথম রোগী শনাক্তের পর থেকে ২০২০ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩,২৭,৩৫৯ জন, ব্যক্তির মৃত্যু ৪,৫১৬ জন আর সুস্থ হয়েছে ২,২৪,৫৭৩ জন। উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি এসএআরএসসিওভি প্রজাতির সাথে ৭০% জিনগত মিল পাওয়া যায়। অনেকেই অনুমান করেছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ অথবা বাঁদুড় থেকে এসেছে, যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধিতা করেন। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)
সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনার প্রভাব। বাংলাদেশে প্রথম করোনারোগী ধরা পড়ে মার্চের ৮ তারিখে কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা জানুয়ারির শেষ দিকেই আসতে শুরু করেছে, কিন্তু আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ভাইরাস শনাক্তের কীট না থাকায় তার সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাফিলতির জন্য অনেকটা এই বিষয় চাপা পড়ে যায় (বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য)। এই পরিস্থিতিতে সব কিছু লকডাউনে থাকায় সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে মন্দা আবহাওয়া বিরাজ করছে। তার সাথে সাথে আমাদের মনুষ্যত্ব বোধটা মানুষ হিসেবে কতটুকু তা প্রকাশ পাচ্ছে, অনেকের দুর্নীতিমূলক কাজগুলো প্রকাশিত হচ্ছে আর একই সাথে আমাদের সমাজের মানুষের আন্তরিকতার এবং সৌজন্যতার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর রপ্তানির হার অনেক কমেছে, এর প্রভাব পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি। শেয়ার বাজারে চলছে মন্দা যার ফলে মাঝারি আর ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এর ফলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে, নিম্ন আয়ের মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে, দরিদ্র সীমার নিচে তারা বাস করছে। তার সাথে বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা, লাখ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারাচ্ছে, বেকারত্বের হার বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দরিদ্রতা।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, এবারে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো, “কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম” আমরা আদিবাসীরা অতীতকাল থেকে এই বর্তমানকাল পর্যন্ত সংগ্রাম করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলছি। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মাঝেই আছি, আর এই করোনারকালীন সময়ে আরো বেশিই সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। কিন্তু অনেক মানুষের আজাহারির জন্য আমাদের দুঃখ-কষ্টগুলো চাপা পড়ে যায়, আমাদেরকে নিয়ে ভাবার এবং লেখার, আমাদের দাবিগুলো স্পষ্ট করে তুলে ধরার মানুষ কম। আমাদের আদিবাসীদের জীবন এমনিতেই কষ্ট, অত্যাচার এবং সংগ্রামে ভরপুর, এই সংগ্রাম কখনও প্রকৃতির সাথে কখনওবা মানুষরূপী অমানুষদের সাথে। যুগ যুগ ধরে আমরা অবহেলিত-উপেক্ষিত এবং নিপীড়নের স্বীকার, তারপর আবার এই অত্যাধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আজ আমরা আমাদের সংস্কৃতিগুলো চর্চা করতে ভুলে যাচ্ছি তার সাথে অন্য সংস্কৃতিগুলো বেশি অনুসরণ করছি। এর ফলে আমরা নিজের সংস্কৃতি প্রায় ভুলতে বসেছি। বিগত বছরগুলোতে আমরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলাম সামাজিক, অর্থনেতিক এবং সংস্কৃতিতে, কিন্তু করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা তার দ্বিগুণ পিছিয়ে গেছি। শত শত আদিবাসী পরিবার চাকরি হারিয়ে অসহায়ভাবে দিন যাপন করছে করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় যেন আমরা আমাদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ছি।
আমাদের বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে আদিবাসীদের দুভাগে বিভক্ত করেছে সমতল এবং পাহাড়ি (পার্বত্য চট্টগ্রাম) এর মধ্যে ৫০টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৫ টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠীর বাস এই সমতলে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর বাস করে সাঁওতাল, ওঁরাও, কড়া, মাহাতো, মুন্ডা, মালো, পাহান, সিং, মাহালিসহ বেশ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসী জনগণ, আবার উত্তর-পূর্ব বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং সিলেটে গারো, খাসিয়া, হাজং, কোচ, বর্মন, হদি, ডালু আর বানাইদের বসবাস। আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের বেশিরভাগ আদিবাসী পরিবারের লোকজন কৃষক এবং নিম্ন আয়ের চাকরি করে অর্থ উপার্জন করে। এছাড়াও কিছু মানুষ সীমান্তে ব্যবসা, লাকড়ি ব্যবসা এবং ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত কয়লাখনিতে কাজ করে অর্থ উর্পাজন করে, তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। আর এই কাজগুলো অনেক ঝুকিপূর্ণ, কিন্তু পেটের দায়ে কাজগুলো করতে তারা বাধ্য। যেহেতু অনেক আদিবাসী মানুষ আগে পড়ালেখা করেনি কারণ তারা জানতো না পড়াশোনা করলে নিজের জন্য আর নিজের জাতির জন্য কিছু ভাবা যায় সেই সময় এতটা সচেতন ছিলো না আমাদের আদিবাসী সমাজ, তারপর আবার ছিলো অর্থ-সংকট। কিন্তু এখন অনেকটা সচেতন আমরা শিক্ষার ব্যাপারে, অর্থনৈতিকভাবেও কিছুটা হলেও সচ্ছলতার মুখ দেখছিলাম। আমরা অনেকটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষার দিক দিয়ে কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতিতে আমরা দ্বিগুণ পিছিয়ে গেছি, শুধু যে আমরা তা নয় সারাবিশ্বে সকল আদিবাসী মানুষ আজ অসহায়ভাবে দিনযাপন করছে। করোনার আগেও আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে অত্যাচার- নিপীড়ন, জবরদস্তিভাবে জমি দখল, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এগুলো ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। করোনাকালীনও এই ঘটনাগুলো ঘটছে আগের থেকে আরো বেশি কিন্তু করোনার জন্য এই খবরগুলো এখন খুব কমই আসে, আবার আসলেও অনেকে ব্যাপারগুলো আমলে নেয় না। সমতল আদিবাসীদের অনেক ব্যাপারগুলো ধামা চাপা পড়ে আছে, কথাটা কটু শোনালেও এটা সত্য পার্বত্য আদিবাসীদের অসহায় অবস্থার কথা অনেক সময় অনেক প্রসঙ্গে এসেছে, কিন্তু সমতল আদিবাসীদের জমি হারানোর, আমাদের জমিগুলো দখল করে পার্ক বানানোর পরিকল্পনা কতটুকু এসেছে তা চিন্তার বিষয়। মধুপুর-টাঙ্গাইলের আদিবাসীদের বাসস্থানকে সরকারের পার্ক বানানোর পরিকল্পনা, আমাদের আদিবাসীদের এই বিষয়ে রুখে দাঁড়ানো আন্দোলনগুলো কতটুকু সবার মনে দাগ কেটেছে তা বলা কঠিন। এই ব্যাপারগুলো আরো স্পষ্ট হবে যদি আমরা ২০২০-২১ সালের সরকারের প্রদত্ত বাজেটের দিকে যদি একটুকু খেয়াল করি, অর্থ বছরের এই বাজেটে পাহাড়িদের জন্য ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং সমতলের জন্য মাত্র ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ। (তথ্যসূত্র: বাজেট ২০২০-২১)
আমাদের এই বৃহত্তর ময়মনসিংহ হলো সমতল আদিবাসীদের (গারো, হাজং, কোচ, বানাই) আদিনিবাস, ময়মনসিংহের শেরপুর, নেত্রকোণা, জামালপুর, টাঙ্গাইল-মধুপুরে বেশি সংখ্যক আদিবাসীরা বাস করেন। আর এদের প্রধান আয়ে উৎস হলো কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র -ব্যবসা, শহরবাড়িগুলোতে গৃহপরিচারিকা কাজ, ড্রাইভারি কাজ, সিকিউরিটি গার্ডের কাজ, গামের্ন্টসকর্মী এবং গারো আদিবাসী মহিলাদের বিউটিপার্লারের কাজের মাধ্যমে অর্থ আয় করে। নিজ এলাকাগুলোতে কাজের সুযোগ কম থাকায় উপার্জনের কারণে অনেক আদিবাসী নারী-পুরুষ শহরমুখী হয়ে পড়ছে। কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছে আদিবাসীরা। আমাদের গারো আদিবাসীরা নারীরা অধিকাংশ কাজ করে বিউটিপার্লারে কাজ করে, এই কাজে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমান করতে হয় না বলে তারপর আবার হাতের কাজের ওপর জোর দেওয়া হয় বলে কাজটা পাওয়া অনেক সহজ তাই অধিকাংশ গারো আদিবাসী নারীরা এই পেশায় ঝুকে পড়ছে, আর তাদের অর্থ দিয়ে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করছে। এতে তারা আত্মনির্ভরশীলতার সাথে সাথে পরিবারে সচ্ছলতাও নিয়ে আসছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ থাকায় অনেক আদিবাসী নারী তাদের চাকরি হারিয়েছে। সেই সাথে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে দরিদ্রতা। (উদাহরণ: টাঙ্গাইল-মধুপুরের, বিরিশিরি, ধোবাউড়া, কলমাকান্দার অনেক আদিবাসী নারী আজ কর্মহীন, বিউটিপার্লারে কাজ বন্ধ থাকায় তাদের উর্পাজন বন্ধ আবার কিছু কিছু আদিবাসী নারী উদ্যোগক্তাগণ যারা এই কাজের মাধ্যমে অন্যদের স্বাবলম্বি করছিলো তারাও আজ ব্যাংকের ঋণে জর্জরিত)।
বেসরকারি উন্নয়ন সোসাইটি ফর অ্যানভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউমেন ডেভেলপমেন্ট (সেড) এর ২০১৮ সালের ৪৪টি গ্রামের জরিপে দেখা গেছে মধুপুর এলাকায় ১৭ হাজার ৩শ ২৭জন গারো সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যে ১১শ ৩১ জন নারী দেশের বিভিন্ন জেলায় বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন যা তাদের মোট জনসংখ্যার ৬.৭% (তথ্যসূত্র: নিউজ চ্যানেল আই ১৬ জুন, ২০২০)। তাদের এই অর্থ দিয়ে কেউ বাবার ঔষধের টাকা পাঠাতো, আবার ছোটো ভাই-বোনের জন্য পড়াশোনার জন্য খরচ চালাতো। কিন্তু আজ তারা সবাই নিজ গ্রামে দিনমজুরি কাজ করে পরিবারে অর্থের যোগান দিচ্ছে।
এছাড়াও যে আদিবাসী নারীগণ বিভিন্ন হাউজগুলোতে গৃহপরিচারিকা কাজ করতো তাদের অধিকাংশ মালিক বিদেশি হওয়ায় এই করোনার সময়ে তারাও নিজের দেশে ফিরে গেছে, কখন আসবে তা বলা মুশকিল কারণ করোনার এই প্যানডেমিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না, তাই অনেকেই চাকরি হারানোর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, অনেকেই আবার চাকরি থেকে ছাটাই করা হয়েছে। এর ফলে অনেকেই শারীরিক-মানসিক ভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলছে। গত ২৭শে আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো সংবাদপত্রে আসা আইসিডিআরবি এর করোনার এই মহামারিতে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার জন্য সমতল আদিবাসীগণ নতুনভাবে দরিদ্র হয়েছেন। এ গবেষণা থেকে আরো জানা গেছে, সমতল আদিবাসীদের ৭২% বেতনভোগী কর্মজীবী মানুষ করোনার জন্য চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং তারা এখন বেকারত্বের শিকার, ২০% মানুষ আংশিক বেতন পাচ্ছে, ৮% মানুষের চাকরিতে করোনা ভাইরাসের কোনো প্রভাব পড়েনি। কিন্তু ৭২% মানুষ চাকরিচ্যুত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতিতে, যার দরুণ অনেক আদিবাসী পরিবার এখন অসচ্ছলতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এছাড়াও সমতল আদিবাসীদের দরিদ্রের হার পার্বত্যের তুলনায় ৮০% বেশি, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬৫% (তথ্যসূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার ৯ আগস্ট ২০২০)। শেরপুর, হালুয়াঘাট, সুসং-দূর্গাপুর বিরিশিরি, রানীখং, বিজয়পুর সীমান্তে ব্যবসায়ী আদিবাসীদের নারী-পুরুষের অবস্থাও শোচনীয়। ভারতে বর্ডার বন্ধ থাকায় তারা মালমাল আমদানি করতে পারছে না, আর এই অঞ্চলগুলো প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও-র ত্রাণ এখানে পৌছাইনি, খাদ্যসংকটের মধ্যে রয়েছে অনেক আদিবাসী পরিবার। অনেকে খাবারের অভাবে পাহাড়ি আলু খেয়ে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করেছে। ঘটনাগুলো শোনার পর মনে হয়েছিলো একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা আমাদের দরিদ্র্যতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি, মানুষ হিসেবে মানবাধিকারগুলোও আমরা ঠিকভাবে দিতে পারছি না, আবার ভোগও করতে পারছি না (তথ্যসূত্র: চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ সেচ্ছাসেবীদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য)। করোনার এই সময়ে এই সমস্যার পাশাপাশি আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। নেত্রকোণা, সুসং দূর্গাপুর এলাকার অন্তর্ভুক্ত রানীখং, কামারখালি, বড়ইকান্দি এলাকার মানুষগণ বন্যার কবলে জর্জরিত। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়” এই প্রবাদটি এই সময়ে আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমতল আদিবাসীদের জীবনে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিফলিত। মৌসুমী বৃষ্টি আর পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ার পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেক আদিবাসী পরিবার তাদের বসতভিটে হারিয়েছে। আবার মধুপুর গড়াঞ্চলের বাগান চাষীরাও করোনার এই সময়ে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত, দীর্ঘ তিনমাস যাবত গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক বন্টণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার নেত্রকোণা জেলায় অন্তর্ভুক্ত ১০৪টি হাজং পরিবার খাদ্য সংকটে ভুগছে। ঠিক একই অবস্থা কলমাকান্দা, ধোবাউড়া আর হালুয়াঘাটের গারো, হাজং, কোচ, বানাই আদিবাসীদের। আমাদের এই চরম সংকটে সরকারের কাছে আমরা কতটুকু সাহায্য পেয়েছি তা আমাদের ভাববার বিষয়। কিছুটা সাহায্য অবশ্যই পেয়েছি বিভিন্ন এনজিও এবং কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে কিন্তু তা আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় ছিলো নগণ্য। সরকারের ১০ টাকা দরে চাল কেনার মতও অনেক আদিবাসীর টাকা ছিলো না। আবার সরকারের গরিব-দুঃখীদের জন্য ২৫০০ টাকার যে সুবিধা ছিলো অনেকেই সে সুবিধাটা আমরা পাইনি, আমাদের তৃণমূল পর্যন্ত এই খবরগুলো আসেনি। আবার সরকারের দেওয়া ত্রাণকাজের ছিলো প্রচুর গাফিলতি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং প্রশাসনের দুর্বল অবকাঠামো, যার দরুণ প্রান্তিক অঞ্চলের অনেকের কাছে এই সেবাগুলো পৌছাইনি। (উদাহরণস্বরূপ: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ২৫০টি গারো পরিবারের ঘরে খাবার ছিলো না (তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল, ১৭ এপ্রিল)। আবার কারিতাসের পক্ষ থেকে যে আর্থিক সাহায্য এবং ত্রাণ প্রদান করা হয়েছিলো সেগুলো আবার আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ছিলো না। তারপরও কারিতাস আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছে।
সরকারের ঘোষিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিলো, আদিবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ১০ জনও এই সুবিধা পেয়েছে কিনা সন্দেহ। তারপর আবার এই বছরে বাজেটে সিংহভাগ বরাদ্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের। এমতাবস্থায় সরকারের নেই কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ।
এই বিরূপ আবহাওয়ার ¯্রােত এসে পড়েছে আমাদের সংস্কৃতিতে। করোনার আগে আমরা যেভাবে আমাদের উৎসবগুলো পালন করতাম তা অনেকাংশেই থমকে আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির মুক্ত বিকাশ এবং চর্চা আগে যতটুকু করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তা এখন অনেক স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। (উদাহরণস্বরূপ: আমরা এই বছর আমাদের বিশ্ব আদিবাসী দিবস ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পালন করতে পারেনি) মুক্ত পরিবেশে আমরা আমাদের কথাগুলো প্রচার করতে পারিনি। করোনা শুরুতে আমরা কিছুটা বর্ণবাদের শিকার হয়েছি, চীন দেশ থেকে করোনার উৎপত্তি হওয়ায় এবং আমরা একই মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীরভূক্ত হওয়ায় অনেক বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আমরা তিরস্কারের শিকার হয়েছি (উদাহরণ: অনেক আদিবাসী ভাই-বোন রাস্তায়, স্কুলে, কলেজে, দোকানপাটে, ভার্সিটিতে, কর্মক্ষেত্রে এর স্বীকার)। যা একই সাথে আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের মানসিক বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনার এই প্রকোপের ভয়াল শিকার আমাদের আগামী প্রজন্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে আরো পিছিয়ে পড়ছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক সংসদ টেলিভিশনে প্রচারকৃত ক্লাসে ৭৫% আদিবাসী শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে না (তথ্যসূত্র: ১৭ এপ্রিল, সমকাল)। সমতল আদিবাসীদের ৪০% মানুষের স্মার্ট ফোন (এন্ড্রয়েড) এবং ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য নেই আবার ১২% মানুষের ফোন এবং ল্যাপটপ থাকলেও পর্যাপ্ত ডাটা কেনার অর্থ এবং সেইসাথে মোবাইল নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা অনলাইন ভিত্তিক ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এ অবস্থায় আমাদের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বইয়ে সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এবং তারা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এক্ষেত্রে বাবা-মাদেরও এই বিষয়ে অবহেলা প্রকাশ পাচ্ছে। আবার অনেকেই এই লকডাউনের মাঝে মাঠে দিনমজুরি কাজ শুরু করে দিয়েছে অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে (উদাহরণস্বরূপ: মধুপুর অঞ্চলের অনেক গারো ছেলে-মেয়ে ৩০০-৪০০ টাকা করে বাগানে দিনমজুরি কাজ করছে, সুসং-দুর্গাপুর বিরিশিরি, শেরপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, আর কলমাকান্দার অনেক যুবক-যুবতী মৌসুমি ধান লাগানোর কাজের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করছে)। এতে করে আমরা সমতল আদিবাসীরা শিক্ষা, গবেষণা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা সরকারের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখছি না, কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে না বরং ইন্টারনেটে বিলের উর্ধগতি আমাদের আরও হতাশ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার করোনাকালীন এই সময়ে স্বফ্ট লোনের মাধ্যমে স্মার্ট ফোন এবং মোবাইল ডাটা কেনার সুযোগ দিচ্ছে, যাতে গরিব এবং পশ্চাৎগামী শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পেয়ে তাদের পড়াশোনা সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো বিভাগে আছে, আবার সেই প্রত্যেক বিভাগগুলোতে আমাদের আদিবাসী শিক্ষার্থী ছাড়াও বাঙালি অনেক গরিব শিক্ষার্থীগণ আছে, এক্ষেত্রে এই সুযোগটা আমরা কতটুকু পাবো তা নিয়ে আমাদের সন্দিহান আছে। আবার সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিটির এক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, তা জানা নেই। এই বিষয়গুলো আদিবাসী সম্পর্কিত এনজিও এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু ভাবছে, কোনো পরিকল্পনা বা কার্যক্রম সামনে আছে কি না তাও আমাদের কাছে অজানা। এই বিষয়গুলো যদি আমরা না ভাবি তাহলে করোনা পরবর্তী সময়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা কতটুকু উৎসাহ নিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে তা আমাদের ভাববার বিষয়। তাই এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা দরকার যাতে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা করোনার পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিকভাবে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক আদিবাসী যুবক-যুবতী করোনার এই সময়ে চাকরি হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে নতুন চাকরির করার স্বপ্ন দেখছিলো, আবার অনেকেই সরকারি চাকরির জন্য কোচিং-এ পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু করোনার এই সময়ে সবকিছু করার ইচ্ছে থাকলেও আমরা করতে পারছি না, সময় এবং পরিস্থিতি আমাদেরকে আজকে ঘরমুখো করে রেখেছে। অনেক আদিবাসী যুবক-যুবতীর এই সময় পড়াশোনা এবং চাকরি না থাকায় অনেকেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে আবার অনেকে মানসিকভাবে বিষন্নতায় দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ ঘরমুখো হয়ে থাকলে মানুষ তার চিন্তার স্বাধীনতা এবং ইতিবাচক উদ্যমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু আশার কথা হলো, করোনা আমাদেরকে ঘরের মাঝে থেকেও অনেক নতুন কিছু ভাবতে শিখিয়েছে। করোনার এই সময়ে অনেক আদিবাসী যুবক-যুবতী আমাদের সমাজের জন্য যেনো নতুন একটা আশা উন্মোচন করেছে। অনেকেই এই সময়ে নিজের এবং নিজের সমাজের জন্য নতুন করে ভাবছে। আমাদের সংস্কৃতি বিকাশের জন্য অনেকেই নতুন কিছু ভাবছে। করোনাকালীন এই সময়ে অনেক আদিবাসী যুবক-যুবতী সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আমাদের সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। (উদাহরণস্বরূপ: বিরিশিরি এলাকার যুবক-যুবতীদের করোনাকালীন সাহায্যকারী দল চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ গ্রুপ বিভিন্ন সচেতনতার কাজ করা থেকে শুরু করে ফান্ডিং খুজেঁ নিজস্ব উদ্যোগে সুসং-দুর্গাপুর, বিরিশিরি এলাকার গরিব অসহায় ৩০০ পরিবারকে ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করেছে। এছাড়াও আদিবাসী ছাত্র সংসদ পরিষদ, বাহাছাস (হাজং যুবক-যুবতীদের সংগঠন) বাগাছাস, গাসু এই সংগঠনগুলো আমাদের আদিবাসী প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনাকালীন এই সময়ে ত্রাণ পৌছে দিয়েছে অসহায় এবং অভাবী মানুষদের হাতে)। এই কাজগুলো তরুণ-তরুণীদের নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের পরোপকারী করে তুলে, আবার এসব কাজ করার মাধ্যমে তারা নিজের জাতির ও সংস্কৃতির বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করতে সক্ষমতা অর্জন করে একই সাথে এ কাজগুলো তাদের নৈতিকতা এবং সামাজিকতা বিকাশে সহায়তা করে। তাই তাদের এই কাজগুলোকে আমাদের উৎসাহ দেওয়া উচিত যাতে জাতির ক্রান্তিলগ্নে তারাই আমাদের আশার পথ দেখাতে পারে। আবার অনেক আদিবাসী যুবক-যুবতী হতাশায় নিমজ্জিত না থেকে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন কোর্সগুলো করে নিজের দক্ষতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করছে কেউবা আবার নিজের জমিতে সবজি বাগান বা খামার বাড়ি তৈরি করছে, নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছে, আবার কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরছে পরিবারে আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য, কেউ কেউ সৃজনশীলমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে। আর এই কাজগুলো তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার পাশাপাশি সময়কে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করছে।
করোনা এই সময়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় এসেছে বিরাট পরিবর্তন, এই পরিবর্তনটা সবার জন্য। কিন্তু আমরা আদিবাসীরা এই পরিবর্তনের চরম সাক্ষী। আদিবাসী গ্রামগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় আমরা উন্নত সেবা থেকে সবসময় বঞ্চিত। সাধারণ কোনো রোগে সুচিকিৎসা পেতে আমাদের হিমশিম খেতে হয় সেখানে করোনাকালীন এই সময়ে আরো দূর্ভোগ আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। এমনিতেই ঐ এলাকাগুলোতে ডাক্তার খুবই কম আসে, আর এই পরিস্থিতিতে ডাক্তার কয়েকমাস না আসার রেকর্ডও আছে। এমন অনেক কাহিনি শুনেছি অনেক আদিবাসী ভাই-বোন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে, করোনার জন্য ডাক্তার নার্সরা রোগীদের না দেখে ফিরিয়ে দিয়েছে, চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। যদিও আমরা আদিবাসীরা শারীরিকভাবে অন্য জাতিগোষ্ঠী থেকে কিছু বলশালী এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, তারপরও আমাদের এই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলা উচিত সেই সাথে আন্তরিকতার সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। তবে আশার কথা হলো, বৃহত্তর ময়মনসিংহে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার তুলনামূলক অনেক কম তারপর আবার মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে।
আদিকাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা আদিবাসীরা (সমতল কি পাহাড়ি) সবাই নিজের অস্তিত্বকে রক্ষার জন্য প্রকৃতি এবং মানুষের (অন্য জাতিগোষ্ঠীর) সাথে সংগ্রাম ও লড়াই করে যাচ্ছি। করোনার আগেও আমরা এই লড়াই করেছি করোনা চলাকালীনও আমরা এই লড়াই করছি। আমরা যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির লালন করছি এই প্রকৃতিকে আমরা রক্ষা করছি তারপরও কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আমাদেরকে প্রকৃতির ধ্বংসকারী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে, তাদের এই ধারণাগুলো আমাদের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রাকে অস্বাভাবিক করে তুলছে। জোরজবরদস্তি ভাবে তারা আমাদের জমি দখল করছে, বন উজার করে পরিবেশের ক্ষতি করছে, আদিবাসী গ্রামগুলোতে চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, বর্ণবৈষম্য, অত্যাচার ও নিপীড়ন করছে। করোনাকালীন এই সময়ে এই দৃশ্যগুলো বিদ্যমান। আমরা চাই আমাদের অন্য চোখে না দেখে মানুষ বলে ভাবা হউক, সাধারণ মানুষের যে অধিকারগুলো আছে সেগুলো আমাদেরকেও সমান ভাবে বন্টন করে মানবাধিকারগুলো নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করা হউক। করোনাকালীন এই পরিস্থিতিতে আমাদের সমতল তথা পাহাড়ি আদিবাসী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যা করা উচিত-
* বাঁচার জন্য চাই খাদ্য, আদিবাসী প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি এবং বিভিন্ন এনজিও-র মাধ্যমে খাদ্যের যোগান সহজপ্রাপ্য করা দরকার।
* আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষার অবকাঠামো মান উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রনয়ণ করে তা বাস্তবায়ন করা দরকার।
* আদিবাসী এলাকাগুলোতে উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা দরকার তার পাশাপাশি করোনার সরঞ্জামেরও পর্যাপ্ত রাখা দরকার।
* আদিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য করোনাকালীন এই সময়ে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। (আইএলও প্রদত্ত নিয়ম অনুযায়ী)
* সমতল তথা পাহাড়ি অঞ্চলের আদিবাসী কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
* সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্য সল্প পরিসরে শিক্ষাবৃত্তি ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে শিক্ষায় মনোনিবেশ করে পারে।
* বিউটিশিয়ান আদিবাসী কর্মজীবি মহিলাদের জন্য করোনাকালীন এই সময়ে ক্ষুদ্র প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ক্ষতি না হয়।
পরিশেষে বলতে চাই আমরা আদিবাসীরা নিজেদের আলাদা না ভেবে মানুষ ভেবে সমাজে এবং দেশে নিজের অধিকার নিয়ে বাস করতে চাই। সাধারণ মানুষের মত সমাজ এবং দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই।
(উল্লেখিত বিষয়টি আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ আদিবাসীদের জন্যও প্রযোজ্য)
লেখক পরিচিতি
লেখক সুলগ্না রেমা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা’ বিষয়ে পড়ালেখা করছেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর থানার বিরিশরি।
কোভিড-১৯ ‘আদিবাসীদের জীবন জীবিকার সংগ্রাম চলছেই’।। জাডিল মৃ
আদিবাসীদের কোভিড-১৯ মহামারির অভিজ্ঞতা ও হাজংদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ।। সোহেল হাজং
করোনায় ‘লিকেজ, ইনজেকশনহীন’ গারো অর্থনীতি ও এক নৈরাশ্যবাদীর আশা ।। উন্নয়ন ডি. শিরা
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
-
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবতোষ যেত্রা আর নেই
: হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পাস্টার...
-
কেনিয়ার কৃষকরা হাতি তাড়াচ্ছে মৌমাছি দিয়ে
: কেনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কৃষকরা।...
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত