পটভূমি
এই প্রকাশনাটি মূলত আদিবাসী তরুণ লেখকদের প্রবন্ধের একটি সংকলন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি হেতু লকডাউন সময়কালীন ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের সময় দিবসের মূলসুরকে (কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম) ভিত্তি করে যে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, সেই প্রয়াসেরই ফসল এই প্রকাশনা। কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাটিতে মূলত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী ছাত্র-যুবদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মোট ১৩ জন যুবক-যুবতীদের মাঝ থেকে ৩ সদস্য (আদিবাসী) বিশিষ্ট বিচারক মণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত ১০ শাণিত দর্পণ যুবক-যুবতীদের প্রবন্ধ নিয়ে করা হয়েছে এ বিশেষ প্রবন্ধ সংকলন। কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে শিক্ষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতির উন্নয়ন, সচেতনতা, সক্ষমতা ও নেতৃত্বের বিকাশ এবং জনসংগঠন সমূহ শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহে আবহমানকাল থেকে বসবাসরত ৮টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং বঞ্চনার প্রভাবে তুলনামূলক নাজুক। বৈশ্বিক মহামারি এ প্রেক্ষাপটে যেন মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুগে যুগে নানারকম বঞ্চনার শিকার হয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দরিদ্র আদিবাসীদের জীবন-জীবিকাকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে কোভিড-১৯ মহামারি। আদিবাসীদের প্রচলিত ভূমি ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী জীবন-জীবিকা পরিবর্তন হওয়ার ফলে অনেক আদিবাসী জীবিকা নির্বাহে অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে বা কর্মক্ষেত্র সমূহের উপর নির্ভরশীল, যারা এই মহামারি দ্বারা বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া আদিবাসী নারীদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক, যাদের উপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। এ আদিবাসী নারীদের অনেকেই বিউটিপার্লারে বা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী বা সহায়তাকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কর্মহীন, অনিশ্চিত অসহায়তায় নিপতিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াও বিভিন্নমূখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আদিবাসীরা। আদিবাসীদের জীবনজীবিকার উপর কোভিড-১৯ মহামারির বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব বিবেচনায় রেখে জাতিসংঘ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মূলসুর নির্বাচন করে ‘‘COVID-19 and Indigenous Peoples’ Resilience” বা “কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবনজীবিকার সংগ্রাম”। বাংলাদেশ, তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবসীরা কোভিড-১৯ মহামারির দ্বারা কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রভাবিত তা চিহ্নিতকরণ, সমস্যাসমূহ মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শের সমাবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় কিছুটা হতাশ যুব সমাজ নিজ নিজ এলাকায় থেকে প্রতিনিয়তই আদিবাসীদের নানারকম জীবন-যুদ্ধ ও বঞ্চনার সাক্ষী হচ্ছে। এ অনাকাঙ্খিত অবসর সময়ের যথাযথ ব্যবহার দ্বারা, ছাত্র-যুবদের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতা প্রসূত পর্যবেক্ষণ কোভিড-১৯ মহামারি ও আদিবাসী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠতে পারে কালের প্রয়োজনে। সেই উপলব্ধি আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় মহামারি প্রভাবিত ৯ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে উপলক্ষ করে কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল এর আলোক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী যুবক-যুবতীদের জন্য প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা ও প্রবন্ধ সংকলনের আয়োজন করার।
এ বিশেষ প্রবন্ধ সংকলনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যুবক-যুবতীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্যি অনুপ্রেরনাদায়ক। ঐতিহাসিক এই মহামারী আদিবাসীদের জীবনজীবিকা, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে কী প্রভাব ফেলছে, কীভাবে তারা এর মোকাবিলা করছে, এ সকল কঠিন জীবন অভিজ্ঞতার চালচিত্র কালের সাক্ষী হিসেবে উঠে এসেছে এ দশজন যুব প্রতিনিধিদের লেখনিতে। এই বিশেষ চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে এই দশ যুব দর্পনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি, সুদূর প্রসারী ভাবনা, সুপারিশ ইত্যাদি আদিবাসীদের উন্নয়নে নানাভাবে কাজে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এই প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা তরুণ লেখকদের প্রতি, যাদের লেখনীতে এই প্রকাশনার সফলতা। শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বিচারক মণ্ডলীর সদস্য মি. সৃজন রাংসা(সাংমা), মি. মতেন্দ্র মানখিন এবং মি. পরাগ রিছিল-এর প্রতি, যারা তাদের মূল্যবান সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে প্রবন্ধগুলো বিচার-বিশ্লেষণ ও নির্বাচন করেছেন। বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি থকবিরিম প্রকাশনী’কে যারা এই সংকলন প্রকাশে অংশীদার হয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং নির্বাচিত ১০টি প্রবন্ধ তাদের অনলাইন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটি এবং কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলের সম্পৃক্ত সকল সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই আয়োজন সফলতা পেয়েছে।
সংকলনটির অনঅভিপ্রেত সকল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, নির্মল, ভালোবাসাময় সবুজ পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের সকলের দায়িত¦শীল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
অপূর্ব ম্র্রং
আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল।
করোনা মহামারিতে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম
শোভন ম্রং
বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের একটি ছোট দেশ। দেশটি ছোট হলেও জনসংখ্যা অধিক। অধিক জনসংখ্যার ফলে দেশের মানুষ অনেক সমস্যায় জর্জরিত। এছাড়া বিশ্বে নতুন ভাইরাস বা করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির আবির্ভাবে দেশকে বিপাকে ফেলেছে। যার ফলে দেশের মানুষদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। দিন দিন দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভয় ভীতি আতঙ্ক নিয়ে দেশের মানুষ জীবন পার করছে। এমন অবস্থায় দেশে করুণ আকার ধারণ করছে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি, সকল প্রকার চাকরির ক্ষেত্রগুলো বন্ধ। যার ফলে দেশের মানুষ এবং দেশের অর্থনৈতিক দিক গুলো বিপাকে পড়ছে।
দেশে বাঙালি ছাড়াও আরো অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁর মধ্যে আদিবাসী অন্যতম। যখন থেকে করোনা ভাইরাসের কথা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে শুনেছি তখন থেকেই এই ভাইরাসের পরিচিত বেড়েছে। সেই সময়ও আদিবাসীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। আদিবাসীদের সামনে দেখলে বলাবলি করতো এই যে করোনা যাচ্ছে, সামনে থাকা যাবে না, চীনাগুলো বা চাইনিজেরা করোনা নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আরো অনেকভাবে উপহাসের পাত্র হতে হয়েছে আদিবাসীদের। চাইনিজদের সাথে আদিবাসীদের বর্ণ মিলে যাওয়ায় বা আদিবাসীরা মঙ্গোলয়েড যার কারণে আদিবাসীদের এমন বৈষম্য করার কারণ। এ ছাড়াও বছরের পর বছর এদেশের আদিবাসীরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
সরকারি গেজেট সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে (শনিবার, মার্চ ২৩/২০১৯) দেশে ৫০টির মত আদিবাসী জনগোষ্ঠী পাহাড় ও সমতলে বসবাস করে থাকে। দেশে আদিবাসীরা অনেক সমস্যায় জর্জরিত। মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন সমস্যায় সন্মুখীন হতে হয়। তাঁর মধ্যে নতুন আরেকটি সমস্যা বা দুর্যোগ এসে দরজায় করা নাড়ছে তা হলো করোনা (কোভিড-১৯)। করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির আবির্ভাবে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার মান বিঘœ ঘটাচ্ছে। আদিবাসীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও সরকার কর্তৃক আদিবাসীদের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা অতি সীমিত। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং সমতলের ২০ লক্ষ আদিবাসীদের জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের সংখ্যার তুলনাই এটি অতি সামান্য। করোনাকালে আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট বাড়ানোর দরকার ছিলো। আর এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর আদিবাসী ফোরাম ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গুলো আন্দোলন করে যাচ্ছে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহে গারো, হাজং, বানাই, কোচ, বর্মন প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বসবাস। সংখ্যার দিক থেকে গারো জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অধিক। সমতলের আদিবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে এবং বিভিন্ন পেশায় কাজ করে। বেশির ভাগ আদিবাসীরা দিন মজুরি, কৃষক, স্বল্প ব্যবসায়ী আবার অনেকে দৈন্দিন কাজ করে পরিবার পরিচালনা করে এমন পরিবারও আছে। অনেকে পার্লার, গার্মেন্টস, ড্রাইভিং, সেলুন ইত্যাদি জায়গাই কাজ করে থাকে। সরকারি চাকরি বা বড় বড় এনজিও-তে কম সংখ্যক আদিবাসী লোক চাকরি করে থাকে। যার ফলে করোনাকালীন সময়ে অধিকাংশ মানুষের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে গেছে। অনেকের আবার চাকরি চলে গেছে। যার ফলে অধিকাংশ মানুষ গ্রামের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। কিন্তু বাইরের বাড়তি ইনকাম না থাকার কারণে পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। যার ফলে জীবন-যাত্রার মান ব্যাহত হচ্ছে।
করোনা মহামারিতে আদিবাসীদের অবস্থা একদম ভালো না। ৭৮% সমতলের আদিবাসীরা দরিদ্র সীমায় বাস করে। তাঁর মধ্যে করোনাকালে অনেক পরিবারে এমনও সংকটপূর্ণ দিন যাচ্ছে যে ঘরে চাল নেই, তেল নেই। অনেক পরিবারকে নিজের চোখে দেখেছি বাড়িতে খাবার না থাকার কারণে বনের আলু সংগ্রহ করে খেতে। আবার যারা পার্লার, ড্রাইভিং এবং সেলুনে কাজ করত তাদের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে গেছে। অনেকেই আবার চাকরি থাকার পরেও বেতন পাচ্ছে না। আবার অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করতো নিজের পড়াশোনা বা নিজের হাত খরচ বহন করতো সেটাও করোনা মহামারির জন্য শেষ হয়ে গেছে। আর আরেকটা বড় সমস্যা হলো যারা পাঠাও, উবার, সহজ রাইডগুলো শেয়ারিং করতো সেই সব ক্ষেত্রগুলো করোনা মহামারির জন্য অনিদির্ষ্ট কালের জন্য বন্ধ। যার কারণে আদিবাসীদের অবস্থা সূচনীয়। আবার বাড়ি ভাড়া দিতে না পারার কারণে বাড়িওয়ালা চাপ সৃষ্টি করে বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছে। যার ফলে বাসা ছেড়ে মানুষজন গ্রামের বাড়ি চলে এসেছে। পেটের দায়ে দিন মজুরি কাজ করছে। এমন অবস্থায় আদিবাসীদের জীবন-মান একদম সূচনীয়। এই সূচনীয় সময়ে পাহাড় বা সমতলের ২৫% আদিবাসী মানুষ ত্রাণ পেয়েছে। তবে করোনাকালীন সময়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী সংগঠনগুলো বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে, সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কারিতাস, বাগাছাস, বাহাছাস, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলো থেকে কিছু না কিছু ত্রাণ পেয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত না। ফলে আদিবাসীদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবন যুদ্ধ করে দিন পার করছে আদিবাসীরা।
বাংলাদেশে করোনা (কোভিড-১৯) মহামারিতে যত দিন যাচ্ছে আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে কারোনা ভাইরাসে আদিবাসীদের আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম। প্রথম আলো অনুসন্ধানে আদিবাসী অধ্যুষিত ১২টি উপজেলার মধ্যে ৬টিতে আদিবাসীদের করোনাই আক্রান্ত নেই। আবার বাকি ৬টিতে কিছুসংখ্যক আক্রান্ত হয়েছে। শহর কেন্দ্রিক আক্রান্ত হলেও কম সংখ্যক আদিবাসী আক্রান্ত হয়েছে যা বাঙালিদের চেয়ে অতি কম। গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা নাই বললেই চলে। আর মৃতের সংখ্যা গোটা কয়েকজন। আমার মনে হয় আদিবাসীদের আক্রান্তের হার কম হওয়ার কারণ আদিবাসীরা বেশি পরিশ্রমী, সচেতনতা অবলম্বন করে, ফরমালিন মুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যার ফলে আক্রান্তের পরিমাণ একেবারেই কম।
করোনা মহামারিতে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সকলে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। কিন্তু অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই দূর্যোগপূর্ণ সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ডাটা কিনার মত সামর্থ নেই। তা ছাড়া অনেকে আছে যাদের ভালো স্মার্ট ফোন নেই, ল্যাপটপ নেই। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ মাধ্যম বা ব্যবস্থা একদম খারাপ, নেটওয়ার্কের সমস্যা যার ফলে অনলাইন ক্লাস করা আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দুরূহ ব্যাপার। এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে না। ফলে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে। করোনাকালে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক অবসর সময় পার করছে। অনেকে আবার বিভিন্ন কাজও করছে। এই সময়ে আদিবাসীদের ভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা করা দরকার। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সমাজকে কীভাবে পরিবর্তন করা যায় সেই সব কিছু চিন্তা করতে হবে। এই অবসর সময়ে নিজের দ্বারা ভবিষ্যতে কী হবে বা আপনার দ্বারা কি সম্ভব সেটা উপলব্ধি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে জাতি অনেক কিছু আশা করে। আর এই জেনারেশনের তরুণ-তরুণীরা যদি সমাজকে ভালো কিছু দিতে পারে বা নতুনভাবে সমাজের ভাবমূর্তির পরিবর্তন আনতে পারে তাহলে পরবর্তী জেনারেশনগুলো সেই পথে হাঁটা শুরু করবে।
করোনাকালে ভালো দিকটা হলো আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনার পরিবর্তন। অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের দেখেছি পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করে ভালো চাকরি করার চিন্তা ভাবনা বা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা বা সরকারি চাকরি করা। আর পরিবার গুলোতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই ভাবেই গড়ে আসা/আসছে। কিন্তু নিজের চোখে দেখা নতুন তরুণ-তরুণীরা করোনা মহামারির সময়ে অনেকে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছে এবং অনেকে এর মধ্যে শুরু করে দিয়েছে। যে কাজটা ৩-৪ বছর পর করা হতো সেই চিন্তা ধারাটা বা কাজটা এই সময়ে অনেকে করছে যা ভবিষ্যতের জন্য ভালো দিক বলে আমি মনে করি। আদিবাসীদের মধ্যে উদ্যোক্তা আছে গোটা কয়েকজন মাত্র। অনেক তরুণরা আছে যারা চাকরি বদলে উদ্যোগক্তা হওয়ার বাসনা ব্যক্ত করে/করেছে। কিন্তু পরিবারের সেই ধরনের সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ার কারণে তা স্বপ্নই থেকে যায়। কিন্তু নতুন যে জেনারেশন যে চিন্তা প্রসারী বা এই মহামারির সময়ে একটু একটু করে শুরু করছে তা উৎসাহ দেওয়ার মত। কিন্তু আমার দেখা অনুযায়ী গারো অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রায় সব জমিগুলো মহাজনের কাছে বন্দক/লিজ দেওয়া। সেই জমিগুলো যদি বন্দক/লিজ না দিয়ে নিজে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করা যেতো তাহলে পরিবারের সমস্যাগুরো দূর করা যেতো এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া যেতো। কিন্তু সম্ভবনার পথ আমরা নিজেরাই বন্ধ করছি। নিজেদের হাত পা নিজেরাই বেঁধে রাখছি। কিন্তু নতুন জেনারেশনগুলো সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করবে। পরিবার, সমাজ এবং সামাজিক চিন্তাভাবনাগুলো পরিবর্তন করে নতুন সমাজব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো পরিবর্তন করবে। তাই আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
অবশেষে বলতে চাই আদিবাসীরা ভালো নেই। অনেক কষ্টে জীবন পার করছে। তাই এই মহামারিতে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আদিবাসীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসীরা অনিশ্চিত জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে বিধায় আদিবাসীদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ ভাইরাসের ফলে আদিবাসীদের অবস্থা এমনিতেই নাজুক, এমন অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সাহায্য সত্যিই জরুরি। তা না হলে আদিবাসীদের অবস্থা উত্তরণ সম্ভব নয়।
লেখক পরিচিতি
তরুণ লেখক শোভন ম্রং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম নিয়ে ৪র্থ বর্ষে পড়ালেখা করছেন। মধুপুর জেলার পীরগাছা থানার বন্দোরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
কোভিড-১৯ ‘আদিবাসীদের জীবন জীবিকার সংগ্রাম চলছেই’।। জাডিল মৃ
আদিবাসীদের কোভিড-১৯ মহামারির অভিজ্ঞতা ও হাজংদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ।। সোহেল হাজং
করোনায় ‘লিকেজ, ইনজেকশনহীন’ গারো অর্থনীতি ও এক নৈরাশ্যবাদীর আশা ।। উন্নয়ন ডি. শিরা
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
‘আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান’
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত