মানুষের জীবনে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যায় যেগুলো ইচ্ছা করলেও মুছে ফেলা যায় না। চিরজীবনের জন্য স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। আর্নির শৈশব জীবনেও সেই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। যে স্মৃতি তিনি আজও ভুলতে পারছে না। একদিন তার সাথে আলাপের সময় তিনি তার জীবনের এই সত্য ঘটনাটি আমাকে বলেছিলেন।
ছোট থাকতে আমি মা-বাবার সাথে আমেরিকায় পারি দেই। সেখানে প্রথমে আমরা নদী তীরবর্তী এলাকায় কুঁড়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করতে শুরু করি। এর ছয়-সাত বছর পর আমাদের চাষের জমিতে যখন ভাল ফসল আসতে শুরু করল এবং আমাদের পালিত গবাদি পশুগুলো যখন বাড়তে লাগলো তখন বাবা সেগুলোর কিছু সংখ্যক বিক্রি করে ইট দিয়ে একটি উন্নতমানের ঘর বানালেন। যার কারণে আগের কুঁড়েঘরটি খেলাঘর হিসেবে খেলতে বাবা আমাকে অনুমতি দেন। এতে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম এবং প্রতিদিনই সেই ঘরে খেলতাম। তবে দুঃখের কথা হলো বাড়ির চারপাশে কোনো খেলার সাথি না থাকায় একা-একা খেলতে আমার বেশি ভাল লাগতো না। তাই আমার সাথে খেলার জন্য মাঝে মাঝে মাকে আমন্ত্রণ জানাতাম। মাও তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার সাথে খেলতে আসতেন, আমার খোঁজ খবর নিতেন।
একদিন আমি মনোযোগ সহকারে পুতুল খেলছিলাম সেই সময় বাইরে থেকে কে যেন দরজায় ভদ্রভাবে দু’বার টুকা দেয়। দরজা খুলে মাকে দেখে বললাম, “ভেতরে এসো মা, তুমি এসেছো বলে আমি অনেক খুশি।” আমাকে এক হাতে কোলে নিয়ে তিনি বললেন, “দেখ মা তোমার জন্য গরম গরম সেমাই বানিয়ে নিয়ে এসেছি।” সেমাই পেয়ে খুশিতে হাত তালি দিয়ে মাকে বলি, “অনেক অনেক ধন্যবাদ আম্মু, তুমি অনেক ভাল। আমার পছন্দের জিনিস কষ্ট করে বানিয়ে এনেছো।” মা বললেন, “ঠিক আছে মামুনি তাহলে তুমি এখন খাও আমি আসছি কেমন, আমার অন্যান্য কাজ এখন করতে হবে।” যাওয়ার আগে সে আমার কপালে একটা চুম্মু দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলেন।”
সেমাইটা টেবিলে রেখে চেয়ারগুলো ঠিক করছিলাম যাতে আমি ও আমার পুতুলগুলো একসাথে মজা করে সেমাই খেতে পারি। ঐ মূহুর্তে একজন মানুষের ছায়া জানালার পাশ দিয়ে যেতে দেখলাম। আশ্চর্য হয়ে সেদিকে লক্ষ্য করি। মনে মনে বলি, “মা তো মাত্র চলে গেছেন সে কোনো মতেই এত দ্রুত আসতে পারেন না। সে যদি নাই আসে তাহলে কে এই ব্যক্তি?”
হঠাৎ দরজায় সেই লোকটি জোরে আঘাত করলো। আঘাতের শব্দে আমি ভীষণ ভয় পাই। ঘরের মধ্যে পায়চারি করি ভেবে পাচ্ছিলাম না আমি তখন কি করবো। দরজা খুলছে না দেখে সে পুনরায় আগের চেয়ে আরো জোরে আঘাত করলো। এইবার আমি সিদ্ধান্ত নিই দরজা খুলে দেখি কে এই ব্যক্তি, কেন সে দরজায় আঘাত করছে, কি চাই সে। বুদ্ধি করে আমার প্রিয় খাবার সেমাইটা সাথে করে নিয়ে দরজা খুলে দেখলাম দৈত্যের ন্যায় উচ্চ লম্বা একজন রেড ইন্দিয়ানকে। যার এক হাতে ধারালো অস্ত্র আর অন্য হাতে বন্ধুক। তাকে দেখা মাত্রই চিৎকার করে মাকে ডাকতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু ভয়ে ডাকলাম না, সে যদি আমাকে কিছু করে ফেলে। তার সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকে শুধু তাকিয়ে রইলাম।
ঘরে ছোট একটি ফুটফুটে মেয়েটিকে (আমাকে) দেখে ইন্দিয়ান লোকটি আশ্চর্য হয়ে একপলক হয়ে তাকালেন। তার নিজের ভাষায় কী জানি বললেন। আর সেমাই এর দিকে চোখ বড় বড় করে দৃষ্টি দিলেন। তার চাওয়ার আগেই তাৎক্ষণিভাবে বুদ্ধি কাটিয়ে সেমাইটি তার দিয়ে বাড়িয়ে মুচকি হেসে বললাম, “দয়া করে এই সুস্বাদু খাবার নিয়ে খান।” সেমাই নিয়ে এমনভাবে খেতে শুরু করল, যেন সে অনেক ক্ষুধার্ত। খাওয়ার শেষে তিনি খুশি হয়ে সেখান থেকে চলে গেলন। তার প্রস্থানের পরপরই খেলাঘর থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে দিলাম দৌঁড়। মায়ের নিকটে গিয়ে ভয়ে আতংকে হাঁপাতে হাঁপাতে লোকটির বিষয়ে বললাম। ঘটনাটা শুনে মা বুঝতে পারলেন, কী ঘটছে দেশে। অস্থির হয়ে বিড় বিড় করে মা আমাকে বললেন, রেড ইন্দিয়ানরা আবার যুদ্ধের জন্য বের হয়েছে; আমরা তাদের কাছ থেকে বেশি দূরে নেই। যেকোনে সময়ে তারা আমাদের বাড়িতে আগুন দিতে পারে। বিশেষ করে তারা রাতে অন্ধকারে আসতে পারে। মা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বার বার বলল, “রাতের আগে তোমার বাবা বাড়িতে ফিরলে ভাল হতো।” মা ও আমি আমরা দু’জনেই বাবার জন্য অপেক্ষা করলাম কিন্তু দুঃখের বিষয় শেষপর্যন্ত বাবা ঘরে ফিরলেন না।”
সন্ধ্যার দিকে আমরা দরজাগুলো ভালমত বন্ধ করলাম এবং বাড়ির সব ওজনের আসবারপত্র দিয়ে দরজা আটকালাম। তারপর আমরা আতংক হয়ে কোনো কথা না বলে চেয়ারে বসে থাকি।
হঠাৎ এমন সময় দরজায় বড় একটা আঘাতের শব্দ শুনলাম। ফিস ফিস করে মা বলল, “ইন্দিয়ানরা মনে হয়ে আবার এসেছে। বুকে সাহস নিয়ে আমি আসতে করে জানালা খুলে দেখতে পেলাম সেই ইন্দিয়ানই এসেছে আবার। যে নাকি সকালে তার খেলাঘরে এসেছিল।”
মাকে বললাম, “আম্মু আমার একটা বুদ্ধি আছে।”
“কী বুদ্ধি মা?”
“তোমার কাছে কি আরো সেমাই আছে?”
“হুম, কেন?”
“আমাকে আর এক প্লেট দাও; আমি আবার সেমাই দিয়ে দেখি; তার মন জয় করা যায় কি-না।”
এক প্লেট সেমাই এনে মা আমাকে দিলেন এবং আমিও জানালা খুলে ভয়ে ভয়ে সেমাইয়ের প্লেটটি বাইরে থাকা ইন্দিয়ানের দিকে বাড়িয়ে নম্রস্বরে মৃদু হেসে বললাম, “দয়া করে নিয়ে খান।” ইন্দিয়ান লোকটা সেমাইয়ের প্লেটখানি নিতে ভুলে গিয়ে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালেন। আর খুব দ্রুত লোভীর মতো খেলেন।
এর পর থেকে কোন সময়ই পুনরায় তাকে দেখতে পাইনি। কিন্তু যখন যুদ্ধ শেষ হলো এবং দেশে শান্তি এলো তখন বুঝতে পারলাম রাতে আসলে কি হয়েছিল। আমাদের বাড়ি ছাড়া অন্যান্য বাড়িগুলো সবই তারা পুরিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের বাড়িগুলো রক্ষা পেয়েছিল শুধুমাত্র ঐ ইন্দিয়ানের প্রতি সুন্দর ব্যবহার ও দরদ দেখানোর জন্য। কারণ সেই ইন্দিয়ান লোকটি তার সহযোদ্ধাদের কাছে বলেছিলেন যাতে আমাদের ঘরগুলো না পুড়ে। সেই বাড়িতে সাদা মানুষ আছে যারা নাকি আমি যখন ক্ষুধার্ত ছিলাম তখন তারা আমাকে খেতে দিয়েছিলে। তারা এমন ভাল কিছু খাবার আমাকে দিয়েছিল যে খাবারের স্বাদ তার আগে পায়নি।
আর্নি ও ইন্দিয়ানের গল্প
মূল: আংকেল আর্থার
ভাষান্তর: মানুয়েল চাম্বুগং
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত