পটভূমি
এই প্রকাশনাটি মূলত আদিবাসী তরুণ লেখকদের প্রবন্ধের একটি সংকলন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি হেতু লকডাউন সময়কালীন ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের সময় দিবসের মূলসুরকে (কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম) ভিত্তি করে যে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, সেই প্রয়াসেরই ফসল এই প্রকাশনা। কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাটিতে মূলত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী ছাত্র-যুবদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মোট ১৩ জন যুবক-যুবতীদের মাঝ থেকে ৩ সদস্য (আদিবাসী) বিশিষ্ট বিচারক মণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত ১০ শাণিত দর্পণ যুবক-যুবতীদের প্রবন্ধ নিয়ে করা হয়েছে এ বিশেষ প্রবন্ধ সংকলন। কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে শিক্ষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতির উন্নয়ন, সচেতনতা, সক্ষমতা ও নেতৃত্বের বিকাশ এবং জনসংগঠন সমূহ শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহে আবহমানকাল থেকে বসবাসরত ৮টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং বঞ্চনার প্রভাবে তুলনামূলক নাজুক। বৈশ্বিক মহামারি এ প্রেক্ষাপটে যেন মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুগে যুগে নানারকম বঞ্চনার শিকার হয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দরিদ্র আদিবাসীদের জীবন-জীবিকাকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে কোভিড-১৯ মহামারি। আদিবাসীদের প্রচলিত ভূমি ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী জীবন-জীবিকা পরিবর্তন হওয়ার ফলে অনেক আদিবাসী জীবিকা নির্বাহে অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে বা কর্মক্ষেত্র সমূহের উপর নির্ভরশীল, যারা এই মহামারি দ্বারা বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া আদিবাসী নারীদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক, যাদের উপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। এ আদিবাসী নারীদের অনেকেই বিউটিপার্লারে বা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী বা সহায়তাকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কর্মহীন, অনিশ্চিত অসহায়তায় নিপতিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াও বিভিন্নমূখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আদিবাসীরা। আদিবাসীদের জীবনজীবিকার উপর কোভিড-১৯ মহামারির বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব বিবেচনায় রেখে জাতিসংঘ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মূলসুর নির্বাচন করে ‘‘COVID-19 and Indigenous Peoples’ Resilience” বা “কোভিড-১৯ মহামারিতে আদিবাসীদের জীবনজীবিকার সংগ্রাম”। বাংলাদেশ, তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবসীরা কোভিড-১৯ মহামারির দ্বারা কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রভাবিত তা চিহ্নিতকরণ, সমস্যাসমূহ মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শের সমাবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় কিছুটা হতাশ যুব সমাজ নিজ নিজ এলাকায় থেকে প্রতিনিয়তই আদিবাসীদের নানারকম জীবন-যুদ্ধ ও বঞ্চনার সাক্ষী হচ্ছে। এ অনাকাঙ্খিত অবসর সময়ের যথাযথ ব্যবহার দ্বারা, ছাত্র-যুবদের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতা প্রসূত পর্যবেক্ষণ কোভিড-১৯ মহামারি ও আদিবাসী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠতে পারে কালের প্রয়োজনে। সেই উপলব্ধি আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় মহামারি প্রভাবিত ৯ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে উপলক্ষ করে কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল এর আলোক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী যুবক-যুবতীদের জন্য প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা ও প্রবন্ধ সংকলনের আয়োজন করার।
এ বিশেষ প্রবন্ধ সংকলনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যুবক-যুবতীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্যি অনুপ্রেরনাদায়ক। ঐতিহাসিক এই মহামারী আদিবাসীদের জীবনজীবিকা, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে কী প্রভাব ফেলছে, কীভাবে তারা এর মোকাবিলা করছে, এ সকল কঠিন জীবন অভিজ্ঞতার চালচিত্র কালের সাক্ষী হিসেবে উঠে এসেছে এ দশজন যুব প্রতিনিধিদের লেখনিতে। এই বিশেষ চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে এই দশ যুব দর্পনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি, সুদূর প্রসারী ভাবনা, সুপারিশ ইত্যাদি আদিবাসীদের উন্নয়নে নানাভাবে কাজে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এই প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা তরুণ লেখকদের প্রতি, যাদের লেখনীতে এই প্রকাশনার সফলতা। শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বিচারক মণ্ডলীর সদস্য মি. সৃজন রাংসা(সাংমা), মি. মতেন্দ্র মানখিন এবং মি. পরাগ রিছিল-এর প্রতি, যারা তাদের মূল্যবান সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে প্রবন্ধগুলো বিচার-বিশ্লেষণ ও নির্বাচন করেছেন। বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি থকবিরিম প্রকাশনী’কে যারা এই সংকলন প্রকাশে অংশীদার হয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং নির্বাচিত ১০টি প্রবন্ধ তাদের অনলাইন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটি এবং কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলের সম্পৃক্ত সকল সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই আয়োজন সফলতা পেয়েছে।
সংকলনটির অনঅভিপ্রেত সকল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, নির্মল, ভালোবাসাময় সবুজ পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের সকলের দায়িত¦শীল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
অপূর্ব ম্র্রং
আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল।
করোনাকালে আদিবাসীদের করুণ অবস্থা
লিয়ন রিছিল
করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবীতে আজ স্থবিরতা বিরাজ করছে। সারা বিশ্বের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সব কিছু অচল, এক জায়গায় স্থির। মানুষের সকল কর্মক্ষেত্র বন্ধ, কল-কারখানার কালো ধোয়া বের হচ্ছে না, যান বাহনের চাকাও ঘুরছে ধীর গতিতে। আর প্রকৃতি যেন নিজেই নিজের ছুটি করে নিল। অশান্ত – দূষিত গ্রাম-শহর-বন্দর সমগ্র পৃথিবীকে সবকাজ থেকে বিরতি দিয়ে নিজে এখন সাময়িক বিশ্রামে। মৃত্যুর হাত থেকে কোন প্রাণিই রেহাই পায় না। একদিন না একদিন মরতে হবেই। কিন্তু এই করোনা মহামারিতে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। প্রতিদিন সৎকার করতে হচ্ছে সহ¯্র মৃতদেহ। বিশেষ করে পশ্চিমাবিশ্ব যেন এক মৃত্যুপুরিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও যে করোনার আগমন হয়ে গেছে। সুজলা সুফলা, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই সবুজ ভূখণ্ডেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। দক্ষিন এশিয়ার, বঙ্গোপসাগর পাড়ের এই জনগোষ্ঠী বরাবরই অসচেতন, তাই সংক্রমনের হার বেড়েই চলেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমশই বৃদ্ধিলাভ করছে। কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনের মতো অচেনা বিদেশি শব্দগুলো আজ সবার মুখে মুখে।
বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরামের সূত্র মতে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টিরও বেশি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা সমতল ও পাহাড় মিলিয়ে ৩০-৩৫ লক্ষাধিক। গোটা বিশ্বের জনগণের মতো বাংলাদেশের আদিবাসীরাও করোনা মহামারি কবলিত।
বাংলাদেশের আদিবাসীরা বরাবরের মত সংখ্যাগরিষ্ঠদের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি সব দিক দিয়েই পেছনের সারিতে অবস্থান করছে তারা। নিজস্ব বর্ণিল বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই আদিবাসীরা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হয়েছে চরমভাবে বিপর্যস্ত।
কোভিড-১৯ আদিবাসীদের জীবনগ্রন্থে এক কালো অধ্যায় হিসেবে দেখা দিয়েছে। যার ফলে পাহাড় ও সমতলের এই ভূমিপুত্রদের দিন কাটছে অভাব ও চরম সংকটে। প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীদের জীবন মান উন্নয়নের পথে হাঁটতে শুরু করেছিল বিগত কয়েক দশকে শহরমূখী হওয়ার কারণে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ছাড়াও বিত্তবানদের বাসা বাড়িতে গৃহ পরিচারিকা হিসেবে, বড় বড় শপিংমলগুলোতে সেলসগার্ল- সেলসম্যান হিসেবে, বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান, গার্মেন্টস শ্রমিক, ড্রাইভিং, সিকিউরিটি গার্ড এমন অনেক কাজে যুক্ত হয়ে অনেক আদিবাসীদের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ও সাবলম্বি হয়ে উঠেছে এবং উঠছে। সমাজে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছিলো। অনেক আদিবাসীই এখন অবস্থাপন্ন। অনেকেই বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে রাষ্ট্রের, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর্মরত আছেন। কেউ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কেউবা জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, জজ কোর্টের বিচারক, অ্যাডভোকেট এমনকি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব। শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেকদূর এগিয়ে গেছে আদিবাসীরা। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বনামধন্য স্কুল- কলেজগুলোতে শত শত আদিবাসী শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। কিন্তু তাদের জীবনের সবকিছু ওলট-পালট করে দিলো এই করোনা মহামারি।
পাহাড়ে আদিবাসীদের আয়ের একটি বড় উৎস পর্যটন শিল্প। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে পাহাড় পর্যটক শূন্য। তাই আয় রোজগার বন্ধ। ঢাকা শহরে যারা বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা অথবা রাঁধুনির কাজ করতো, তাদেরও এখন আর কাজ নেই। কারণ বিদেশের লোকেরা নিজ দেশে ফিরে গেছে। অনেক আদিবাসী মেয়েই বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। বিশেষভাবে ময়মনসিংহ – টাঙ্গাইল মধুপুর এলাকার গারো মেয়েরা পার্লারে কাজ করে অভাবী সংসারের হাল ধরেছে। বৃদ্ধ মা বাবার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে পার্লারের টাকাই।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট-এর ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায় টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকার ১১শত ৩১ জন গারো নারী দেশের বিভিন্ন জেলায় বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করে, যা মধুপুরে তাদের মোট জনসংখ্যার ৬.৮ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে সব বিউটি পার্লার বন্ধ থাকার কারণে হাজার হাজার আদিবাসী নারী বিউটিশিয়ানরা পড়েছে বিপাকে। তাদের অনেকেই গ্রামে গিয়ে পেটের দায়ে কলা বাগান অথবা আনারস বাগানে আগাছা পরিস্কারের কাজ করছে। কিন্তু এই নারীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কেউ।
সৌন্দর্য শিল্প খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসংখ্য নারীদের জন্য সরকার থেকেও প্রনোদনার কোন ব্যাবস্থা করা হয়নি। বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের সাথেও জড়িত ছিলো অসংখ্য আদিবাসী নারী-পুরুষ। তাদেরকে কাজ থেকে ছাটাই করে দেওয়া হয়েছে, কেউ পুরো মাসে অর্ধেক বেতন পাচ্ছে। শত শত আদিবাসী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কর্ম নাই, অর্থ নাই। অর্থাভাবে না পারছে নিজে খেতে, না পারছে পরিবারের খরচ দিতে। আর এখন গলা কেটে রক্ত দেওয়া সম্ভব কিন্তু বাড়ি ভাড়া দিবে কীভাবে।
সম্প্রতি ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (আইপিডিএস) এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, সমতলের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ৯২ ভাগের আয় কমেছে। তাদের মধ্যে ৫ লাখ মানুষ নতুন দরিদ্র হয়ে পড়েছে, বেতনভোগীদের ৭২ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন আর যাদের চাকরি আছে তারা আংশিক বেতন পাচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে আদিবাসীরা নগর ছেড়ে অরণ্যে, নিজের পাহাড়ে ফিরে যায়। সেখানে অন্ততপক্ষে জীবনটা বাঁচিয়ে রাখা যাবে, এই আশায়। আর গ্রামে গিয়ে তারা ফিরে পেয়েছে আগের চির-চেনা সেই জীবন। আবারো পাহাড়ের লাল মাটিকেই তারা আপন করে নিচ্ছে। কেননা দিনশেষে এই পাহাড়ই যে আমাদের মা। আর নিজ সন্তানকে কাছে পেয়ে মাতৃভূমি অবশ্যই খুশি হবে। সন্তানের প্রতি কৃপণতা মা কখনোই করবে না।
সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে করোনাকালীন ত্রান সাহায্য দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে নামমাত্র আদিবাসী সেগুলো পাচ্ছে। এখনো পাহাড় ও সমতলের কয়েক লক্ষ আদিবাসী পরিবার সরকারি-বেসরকারি ত্রান সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে। এই ভূখন্ডের ভূমিপুত্ররা এখন ভূমিহীন হয়ে বেদখল হয়ে যাওয়া নিজের জমিতেই মজুর খাটছে। কর্মহীন অভাবগ্রস্ত এই আদি জনগোষ্ঠী নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে জংলি আলু, কুচিয়া, কাঁকড়া, শামুক ও পাহাড়ি লতা পাতার উপর নির্ভর করছে। এক প্রকার মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা।
সরকার এই অর্থবছরে বিশাল আকারের বাজেট প্রণয়ন করলেও আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ নেই। যার ফলে আদিবাসীদের জীবন আরো শোচনীয় হয়ে উঠছে এবং এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের এক অংশ। বিভিন্ন সংস্থার সূত্রমতে দেশের সমতলের আদিবাসিরা শতকরা ৭০ শতাংশ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে।
বাংলাদেশের এই আদিবাসী জাতি গোষ্ঠিগুলো যুগ যুগ ধরেই বঞ্চনা বৈষম্যের মধ্য দিয়েই বসবাস করে আসছে। সেই বৃটিশ আমল থেকে বর্তমান, প্রায় সবক্ষেত্রেই আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্য। করোনা ভাইরাস মহামারির সময় সেই আরো বেশি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ ২০২০-এ ইতালি ফেরত এক প্রবাসীর দেহে। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পাহাড়ি আদিবাসীদের করোনা ভাইরাসের বাহক আখ্যা দিয়ে নানান ভাবে অপমান অপদস্ত করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনেকে। এর কারণ হলো আদিবাসীদের বর্ণগতভাবে মঙ্গোলয়েড ও খাদ্যাভ্যাস চায়নিজদের সঙ্গে মিল থাকার কারণে।
অথচ এই আদিবাসীরাই এই ভূখণ্ডের স্বাধীনতার জন্য প্রথম বৃটিশবিরোধী আন্দোলন করেছিল যা ১৮৫৫ সালের ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’নামে পরিচিত। তাছাড়া চাকমা বিদ্রোহ, বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাগলপন্থী গারো বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, টংক বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অসংখ্য আদিবাসী যুবক -যুবতী অংশগ্রহণ করে। আর অনেকে দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলো। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকুও পায়নি। এই ভূখ-কে ভালোবেসে জীবন দিয়েও তারা তাদের মূল্য পাচ্ছে না, তাদের সন্তানরা মানবেতর জীবন কাটায়।
সারা বিশ্ব যখন করোনার করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত, তখন রাঙ্গামাটির সাজেক ও বান্দরবনের লামায় হাম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ত্রিপুরা ও ম্রো আদিবাসী শিশুরা। যা কোভিড-১৯ মহামারির চেয়ে মোটেও কম নয়। এর আগেও হাম আক্রান্ত হয়ে অনেক আদিবাসী শিশু মারা গেছে। মরার আগে সুচিকিৎসা তাদের ভাগ্যে জুটেনি। আর নেত্রকোণার দুর্গাপুরেপাহাড়ি নদী সোমেশ্বরীর প্রবল ভাঙনে নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক আদিবাসীদের ঘর বাড়ি। কামারখালি, বহেরাতলি, বরইকান্দি ইত্যাদি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলো সোমেশ্বরীর বুকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার অপেক্ষাই প্রহর গুনছে।
আদিবাসীদের জীবনে শুধু এই করোনা ভাইরাসই একমাত্র সমস্যা নয়। এমন আরো অনেক ভয়াবহ সমস্যা যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা মোকাবেলা করে আসছে। বেশিরভাগ আদিবাসীই ঝরনার পানিকে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু বর্ষাকালে সেই ঝর্নার পানি ঘোলা হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। যার ফলে তাদের অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া দুর্গম পাহাড়ে নেই কোন হাসপাতাল, নেই কোন স্কুল কলেজ। তারা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর অনেক জায়গায় স্কুল থাকলেও আদিবাসী ছেলে মেয়েয়া নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। এতে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
এই মহামারিতেও একটুখানি স্বস্তির সংবাদ হচ্ছে বাংলাদেশে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হার তলানিতে পড়ে আছে। যেমন সিলেট শ্রীমঙ্গলের খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে এখনো করোনা ভাইরাসে কেউই আক্রান্ত হয়নি। এগুলো সম্ভব হয়েছে আদিবাসীদের সচেতনতার কারণে। আদিবাসী জনগোষ্ঠী সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেই পছন্দ করে এবং বরাবরই তারা স্বাস্থ্য সচেতন।
মহামারিতে মোটাদাগে নজর কাড়ে যে বিষয়টা, তা হলো আদিবাসী যুবক-যুবতীরা নিজ নিজ উদ্যোগে নিজেরাই নিজেদের গ্রামের প্রবেশ পথ বন্ধ করে লকডাউন নিশ্চিত করেছে এবং বহিরাগতদের প্রবেশ সীমিত করেছে। যার ফলশ্রুতিতে আদিবাসী লোকালয়গুলোতে করোনা এখনো তেমন ভাবে ছড়াতে পারছে না। আর এই দুর্ভোগের সময় অনেক আদিবাসী ছাত্র সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী দলগুলো এগিয়ে এসেছে প্রান্তিক মানুষদের দ্বারপ্রান্তে। পরিমাণে সামান্য হলেও তাদের সাধ্যমতো তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু পাহাড়ের আদিবাসীরা এতো গহিন ও দুর্গম এলাকায় থাকার কারণে সহজে সেখানে ত্রাণ সাহায্য পৌছায় না। যার কারণে তারা সবসময় সরকারি তালিকার বাইরে চলে যায়। আর যদি কেউ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময়তো মাঝপথেই পৃথিবীকে বিদায় জানাতে হয়।
করোনা মহামারি পৃথিবীর সকল মানুষকে ঘরবন্দি করে বিশ্বকে বানিয়েছে অনলাইনকেন্দ্রিক। এই সময় ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্লাশ সব হয়ে গেছে অনলাইন নির্ভর। অনেক আদিবাসী শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে পড়ালেখা করে। তাদের ক্লাশও চলে অনলাইনে। অনলাইন ক্লাশ করার জন্য প্রয়োজন একটি ডিভাইস ও ভালো নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা। কিন্তু দুর্গম আদিবাসী এলাকায় ভালো নেটওয়ার্ক আশা করা তো কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। অনেকে উচু গাছের মগডালে উঠে চেষ্টা করে ক্লাশ করার। তাতেও কিছু হয় না। আর যদি কোন কোন এলাকায় নেটওয়ার্ক সংযোগ পেয়েও থাকে, তবুও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে তো মেগাবাইট প্রয়োজন। দুমুঠো ভাতই মুখে দিতে পারছে না, মেগাবাইটা আসবে কোত্থেকে? যার ফলে দেখা যায় সমগ্র আদিবাসী সম্প্রদায় এগিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত আগামিতে। কিন্তু এই করোনা মহামারির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখছে অনেকেই। তারা তাদের জীবনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে।
লকডাউনে ঘরে বসে বসেই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। তারা অইলাইন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শ্রম ও দক্ষতায় জীবনকে অন্যরকমভাবে সাজাতে চাইছে। অনেকেই অনলাইন সপে গ্রামের তাজা, ফরমালিন মুক্ত ফল শাক সবজীর যোগান দিচ্ছে ক্রেতাদের বাসায়। অনেকে আবার আদিবাসীদের নিজস্ব খাবার রান্না করে অনলাইনেই ডেলিভারি দিচ্ছে। কেউবা আদিবাসী পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে কাজ করছে। আর কেউ কেউ ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করে দিয়ে হাজার হাজার টাকা আয় করছে। এভাবে তারা অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
আদিবাসী সমাজে উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে আসতে পারে একমাত্র যুবসমাজেরাই। যুবশক্তিই পারে সমাজকে বদলে দিতে। আর তাই আদিবাসী যুবকদের হতে হবে শিক্ষিত ও যোগ্য। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলি থাকতে হবে প্রত্যেক আদিবাসী যুবক-যুবতীর।
বিখ্যাত লেখকদের বই পড়তে হবে, জানতে হবে নিজের অধিকার বিষয়ে। বই হলো জ্ঞানের উৎস। যত বেশি বই পড়া যাবে, ততই জ্ঞান বাড়বে। আমেরিকা প্রবাসী গারো লেখক বাবুল ডি নকরেক লিখেছেন, “অনেক গারো ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে খুব কম বই পড়ে! তারা না পড়ে নিজেদের সমাজ সংস্কৃতির বই, না পড়ে শিল্প সাহিত্যের বই। তাহলে দেখুন আমাদের এই বিশাল গারো সন্তানেরা তাদের মেধা মনন কোথায় কাজে লাগায়? (সূত্র: গারো সমাজের সংক্ষিপ্ত সাতকাহন)।
তাই বেশি বেশি বই পড়া প্রয়োজন। ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে থ্রি জি, ফোর জি গতিতে ছুটে চলতে হবে আদিবাসীদের। জীবনে পরিবর্তন এনে, সুন্দর করে গড়তে হবে। তাই স্বপ্ন দেখতে হবে। কলিন পাওয়েল এর ভাষায়, A dream doesn’t become reality through magic, it takes sweat, determination and hard work ”
অর্থাৎ আমাদের স্বপ্ন ম্যাজিকের মতো হুট করে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে না, এর জন্য ঘাম ঝড়াতে হয়, আত্মপ্রত্যয়ী ও পরিশ্রমী হতে হয়।
করোনা ভাইরাস চলে গেলে, বদলে যাবে পৃথিবীর চিত্র। করোনা পরবর্তী বিশ্ব হতে যাচ্ছে ভিন্ন এক পরিবর্তিত বিশ্ব। সবার মতো বদলে যাওয়ার হাওয়াটা আদিবাসী সমাজ সংস্কৃতিতেও লাগবে। সেই পরিবর্তিত বিশ্বে স্বীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটা আদিবাসীদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিপদকে সবাই মিলে রুখতে হবে, তাই সচেতন হতে হবে, সবার সাথে একতা বজায় রাখতে হবে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলার অভ্যাস করে নিতে হবে। আশা রাখি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী অবশ্যই সামনে অগ্রসর হতে পারবে।
তথসূত্র-
১। সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)
২। দৈনিক ইত্তেফাক
৩। দ্য ডেইলি স্টার
৪। কাপেং ফাউন্ডেশন
৫। ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (আইপিডিএস)
৬। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
লেখক পরিচিতি
ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানার গিলাগড়া গ্রামের তরুণ লেখক লিয়ন রিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করছেন।
## ধারাবাহিকভাবে ৭টি নিবন্ধ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ প্রকাশ করা হলো লিয়ন রিছিল-এর নিবন্ধ।
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত