Thokbirim | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

সোমেশ্বরী কি অভিশাপ না আশির্বাদ? ।। নীলু রুরাম

প্রকাশিত : জুলাই ০৩, ২০২১, ১৭:৪২

সোমেশ্বরী কি অভিশাপ না আশির্বাদ? ।। নীলু রুরাম

বিগত ২০২০ সালে মার্চ মাস থেকে নদীর পাড় ভাঙন শুরু হয় বিশেষত: কামারখালি বাজারের উত্তরে ও দক্ষিণ এলাকায়। পাড় ধ্বস নামতে নামতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হকের বসত বাড়ির কাছে এসে পড়ে নদীর ঘাট। বাংলা লিঙ্কের উত্তরে দিলীপ সরকার ও উত্তরে ব্যাপকারে নদীর পাড় ধ্বস নামে। কামারখালি বাজারের শতবর্ষীয় বটগাছ সমূলে নদীতে পড়ে যায়। দিলীপ সরকারে বাড়ি থেকে গ্রপরী রুরামের বাড়ি পর্যন্ত নদীর পাড়ের রাস্তা নদীতে ভেঙে জনগণের যাওয়া-আসার পথ ব্যাহত হয়। যুবশক্তি সমূহ বিপদ জেনে সাময়িকভাবে নদীর ভাঙন ঠেকাতে বাঁশ সংগ্রহ করে এলাকাবাসীর সাথে নদীতে নেমে পড়ে। একই সাথে যুবশক্তির সদস্যরা মিডিয়ায় সরব থাকে প্রতিদিনের আপডেট দিয়ে।

সহমর্মী বিভিন্ন এলাকার যুবক-যুবতী, সংগঠন, সংঘ, প্রতিষ্ঠান ও মানবিক সংস্থার সদস্যগণ এগিয়ে আসে জনশক্তি ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সহায়তা করতে। কামারখালি  গ্রামে গঠিত হয় “কামারখালি  সোমেশ্বরী  নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি।” শুরু করে বালু বস্তা দিয়ে ‘স্বেচ্ছাশ্রমের’ ভিত্তিতে নদীপাড়  ভাঙ্গন রোধের কার্যক্রম। দুর্গাপুর উপজেলায় কার্যক্রমটি ব্যাপক আলোড়ন তুলে। এলাকার সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক আপডেট তুলে ধরে বিভিন্ন দেশীয় টিভি চ্যানেলে। দেশি-বিদেশি দাতাগণ সহমর্মিতা প্রকাশ করে প্লাস্টিক,  জিও বস্তা ও আর্থিক  অনুদান প্রেরণ করে এলাকাবাসীর গভীর সংকটে। বহুল প্রচারের জন্যে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ণ মন্ত্রণালয়ের  সচিব পর্যায়ে কর্মকর্তা এলাকায় পরিদর্শনে আসেন।

নদী পাড় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যগণ মানব বন্ধন করে কর্মকর্তাদের আগমনে। এলাবাসীর দাবি ‘স্থায়ী বাঁধ’ নির্মিত হোক। পুরুষ-মহিলা, বৃদ্ধ বৃদ্ধা,  যুবক-যুবতী, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা, শিশুরা নদীর  পাড়ে মানব বন্ধনে ফেস্টুন হাতে নিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহন করেছিল।

লেখা ছিল-

১। নদী শাসনের ব্যবস্থা চাই,

২। জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসনরোধে ব্যবস্থা নিন,

৩। আমারা বাবা মা’র ভিটায় বড় হতে চাই

৪। আমাদের কথা দিয়ে যান,

৫।    We want to live here.

সবার ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে ভাসছে ‘সোমেশ্বরী নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্যে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ লেখা প্লেকার্ডটি।

স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিতে জনবল দিয়ে বেশ কয়েকবার কামারখালিবাসীদের সহায়তা করেছেন “সময়ের বাতিঘর স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, দুর্গাপুর। জনাব এ,কে,এম ইয়াহিয়া তাঁর ছাত্রদের নিয়ে পর্যোপরি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন। এলাকাবাসীর জন্যে সোমেশ্বরীর বন্যা, পাহাড়ী ঢল ছিল একটও আতঙ্ক, হুমকির চিহ্ন। মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত এ স্বেচ্ছাশ্রমের কারণে সরকারী কার্যক্রম সুরু হয় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। পরিতাপের বিষয় বর্ষা মৌসুমের কাছাকাছি শুরু হওয়ায় কার্যক্রমটির চলমান কার্যক্রমটি ব্যাহত হয়। সম্প্রতি নদীতে ঢল নামাতে নদীর পাড় ভেঙেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্তের সন্মুখীন  হয়েছে বহেরাতুলির নদীরপাড়ের এলাকাবাসী।

ভাংতি পাড়ের রমজান বলছিল, “আমার আকাশী বাগানের অর্ধেক  ভাঙ্গিয়া গেসে। ভেঙেছে স্পিড রিছিল, শিপ্রা  বিছিলের নদীর ঘাট, বারেন্দ্র দ্রং-এর ঘাট বহুলাংশে ভাঙনের সন্মুখীন। ধ্বসে পড়েছে বিগত বছর কম্বলমোড়ানো বালুর বস্তাগুলো। জায়গায় জয়গায় ফাটল ধরেছে।

সরেজমিন ঘাট পরিদর্শনে দেখা গেল নদীর পানি অনেক কমেছে। বহেরাতুলি  এলাকার নদীর পাড়ে চর জেগেছে। চরে অনেক লোক রংবেরঙের। সবাই বালু  ‍খুড়ছে। সবাই নতুন কয়লা সন্ধানী। বালু খুড়ছে, কয়লা আছে কিনা চিকন রড দিয়ে পরখ করছে।

সোমেশ্বরীর কয়লা এলাকারবাসী ও অত্রএলাকার পরিবারদের আর্থিক সঙ্গতি ফিরে দিয়েছে। একাজে শতকরা নিরানব্বুই  ভাগ হল বাঙালি পরিবার। সাত সকাল থেকেই তারা কয়লার সন্ধানে  নদীতে নেমে পড়ে। সারাদিনে তিন চার মণ কয়লা সংগ্রহ করতে পারে। তাই যারা নদীতে কয়লা সন্ধান করে সে সমস্ত পরিবারদের জন্যে নদীতে ঢল নামলে, বন্যা হলে একটি সুবর্ণ সুযোগ। বন্যায় জলের সাথে উজান থেকে নেমে আসে তাদের কাঙ্খিত  কয়লা। এ কয়লা আহরণ করেই অত্রএলাকার পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা পেয়েছে।

এক কয়লা ব্যবসায়ী তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়াচ্ছে। ছেলে দশম শ্রেণিতে,  বিষয় বিজ্ঞান। দুর্গাপুরে প্রাইভেট  পড়ে। তাকে  ছেলের প্রাইভেট পড়ানো বাবদ মাসে দু’হাজার দিতে হয়। সে জনগনের নিকট থেকে খুরচা কয়লা ক্রয় করে তারপর লরে বিক্রি  করে। বলছিল-আমিও আগে নদীতে কয়লা তুলতাম। এখন পাইকার হয়সি।

একদিকে পাহাড়ি ঢল নদীর পাড়ের জনগণে জন্য একটি আতঙ্ক, হুমকিস্বরূপ অন্যদিকে এ পাহাড়ি ঢল বা বন্যা এলাকার বহু পরিবারের আর্থিক উপার্জনের একমাত্র উপায়।



 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost