এক
রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০। বাইরের রাস্তায় হাঁটতে বের হয়েছিলাম। লকডাউনের পুরোটা সময় বাড়িতে থাকতে হয়েছে। ফলত মন শরীরে মরীচিকা ধরে গিয়েছিল। তাই জং ধরা মন-শরীরকে চাঙা-ফুরফুরা করতে অজানা পথে পা বাড়িয়ে ছিলাম। বলে রাখা ভালো, সবেমাত্র লকডাউন শিথিল হয়েছে আস্তে আস্তে গণপরিবহণ চলাচল শুরু করেছে,শফিংমল খুলছে, কলকারখানা-গার্মেন্টস-ব্যবসা বাণিজ্য আস্তে আস্তে লেনদেন শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখনো খুলেনি। একবছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবেই যে একবছর চলে গেলো টের পেলাম না। মনে হয়, এইতো সেদিন মাত্র এলাম। খিটখিটা মনমেজাজ ফুরফুরা করতে, কবেই যে; পীরাগাছা গ্রামে পৌঁছে গেলাম টের পেলাম না। কীসব আজব চিন্তা-ভাবনা করলাম কিছুই মনে ছিল না। তিন কি.মি পথ কীভাবে শেষ হয়ে যায়। ভাবতেই অবাক লাগছিল।
দুই
যখন বেড়িয়েছি তখন বিকেল,সূর্যের লালকুসুম চারিদিকে আলো দিচ্ছিল। শান্ত পরিবেশ, সবুজময় গাছপালা, মানুষবিহীন রাস্তাঘাট, অনেকদিন পর চেনা পথ অপরিচিত লাগছিল। নিজেকে-সহ সবকিছু-যেন অদ্ভুত লাগছিল। এত সুন্দর পৃথিবী, মাহামারিতে বিভীষিকাময় হয়ে উঠে, ভাবা যায়! কত মানুষের প্রাণ গেলো, কত মানুষ মারা যাচ্ছে, অদৃশ্য ভাইরাসের ফলে, সেটা কী মানুষ কল্পনা করেছিল! অবশ্যই না। তবুও মানুষ করোনাকে সঙ্গী করে চেষ্টা করছে বেঁচে থাকার জন্য,স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার জন্য। আরো কতদিন যে সময়ের অপেক্ষা, কারোর জানা নেই। কত অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা খেলা করছিল। ভাবতে ভাবতে পীরাগাছা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের সামনে চলে এলাম। যেহেতু অনেকদূর হেঁটেছি এক কাপ দুধ চা খাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম। যখন দোকানের দিকে পা বাড়ালাম হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হলো। সোজা দৌঁড় দিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকে গেলাম।
তিন
প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলো। ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো। মনে হলো এই বুঝি শীতকাল চলে এসেছে। নিজের শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখি অল্প বৃষ্টিতেই শার্ট ভিজে গেছে। উপায় নেই, তাই ভিজা শার্ট পড়ে থাকলাম। মোবাইল খুলে দেখলাম চার্জ আছে ৯%, সময় ৫টা ৩০ মিনিট। কোথাও বসার জায়গা নেই। তাই দাঁড়িয়ে থেকে মাসিকে বললাম দুধ চা দিতে।
দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি আর বৃষ্টি দেখছি। অনেকদিন পর চায়ের সাথে বৃষ্টি দেখছি মন ফুরফুরা লাগছে। মনে সাতটি রং এ-দিক সে-দিক ছুটাছুটি করলো। নতুন করে বেঁচে থাকার স্বাদ পেলাম। কতইনা ভয়ে ছিলাম এই বুঝি করোনা হলো, এই বুঝি সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে। তখন যে মনের ভেতর কত কিছুই চিন্তা খেলা করে,বুঝানোটা দায়! অনেকদিন পর এমন বৃষ্টি দেখছিলাম। তখন বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করে ছিলাম। লিখেছিলাম. বৃষ্টি সবশুদ্ধ করে দাও পাপীদের, এই জল দিয়ে পাপের কারাদণ্ড যদি মৃত্যু হয়, তাহলে বৃষ্টি দাও পথঘাট মাঠ ধুয়েমুছে যাক, নতুন পাতা ফুল ফুটুক নতুন ঘাস জন্মাক, পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠুক মাহামারির থাবা স্থির থাকুক, বৃষ্টির জলে বৃষ্টি দাও আরো বৃষ্টি দাও করোনা মুছে যাক পৃথিবী থেকে পৃথিবী স্বপ্ন দেখবে নতুন করে পাপহীন স্বর্গরাজ্যে বৃষ্টি দাও,নহো দাদুর সময়ের মতো!
চার
সময় যত যাচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণ তত বাড়ছে। আমিও বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আবার নতুন করে চা নিলাম।পান করতে মন্দ লাগছিল না। তখন নিজেকে একটু অসহায় লাগছিল মোবাইবেলে চার্জ নেই, কথা বলার মতো সঙ্গী নেই। বৃষ্টি থামার নামগন্ধ নেই, একেবারে যাচ্ছে তাই সময়! তবুও আরো ভীষণ করে বৃষ্টি উপভোগ করতে চেষ্টা করেছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একজন বাইক নিয়ে দোকানের বারান্দায় উঠে গেলো।ভিজে একাকার। বাটন মোবাইলে সময় দেখছে।আমিও দাঁড়িয়ে আছি, তিনিও দাঁড়িয়ে আছেন চুপচাপ। ছোট চায়ের দোকানে এত মানুষের ভিড় বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সময় যত যাচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণ তত বাড়ছে। আমি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। এইদিকে রাত নেমে আসছে, বাড়িতে যাওয়া দরকার অথচ বৃষ্টি থামছে না। কার সাথে যাবো সেটাও চিন্তার বিষয়। হঠাৎ দেখি যিনি বাইক নিয়ে বারান্দায় উঠে গিয়েছিলেন, তিনি বাটন মোবাইল নিয়ে টুকাটুকি করছে।মনে মনে ভেবেই নিয়েছি হয়তো অলস্য সময় পার করতে গেম গেলছে। জানার আগ্রহ থেকে তার পাশে গেলাম। উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কী গেম খেলে।কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় গেম খেলছে না দেখি মোবাইলের ক্যালকুলেটার।অনেকক্ষণ ধরে ক্যালকুলেট করেই চলছে।বুঝলাম ব্যবসায়ি মানুষ।
পাঁচ
যখন দেখলাম এত হিসাব নিকাশ করছে, তখন উপল্ধি করলাম,সত্যিই মানুষের বসে থাকার সময় নেই। যে-যত সময়কে সদ্ব্যবহার করে সে তত উন্নতি লাভ করে। আমি এতক্ষণ ধরে চা খেয়ে বৃষ্টি দেখেছি অথচ শুধু দেখেই গিয়েছি। কিছুই করতে পারিনি। সুতরাং আমার সময়ের ফলাফল শূন্য।যিনি ক্যালকুলেটর নিয়ে হিসাব নিকাশ করছিলেন তার সময়কে কাজে লাগানো দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। সত্যিই তাই মানুষের জীবনে সময়কে সদ্ব্যবহার করা উচিত যে বাস্তবতায় থাকুক না কেন! আধঘন্টা পর বৃষ্টি কমতে শুরু করলো। সম্পূর্ণ বৃষ্টি থামার অপেক্ষা না করে বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম এই ভেবে এই করোনাকালীন প্রাদুর্ভাব সময়ে আমার রেজাল্ট কী,আমি কী করতে পেরেছি! আমার অর্জন কী..
করোনায় পাহাড়ি আদিবাসীদের সংকটময় জীবন যাপন
করোনাকালীন তিনটি কবিতা ।। মতেন্দ্র মানখিন
একজন ভালো মনের মানুষ ব্রাদার গিয়োম ।। কিউবার্ট রেমা
https://www.youtube.com/watch?v=WtVe7pOQaQ8&t=182s
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
-
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবতোষ যেত্রা আর নেই
: হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পাস্টার...
-
কেনিয়ার কৃষকরা হাতি তাড়াচ্ছে মৌমাছি দিয়ে
: কেনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কৃষকরা।...
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত