ব্রাদার গিউম তেইজে বাংলাদেশে দীর্ঘ চার দশকের অধিককাল মানুষের সেবা করে আসছেন। বর্তমানে তাঁর বয়স এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হল। সেই আলোকে তিনি তাঁর দীর্ঘ বর্ণিল সেবাকর্ম ও জীবনের অভিজ্ঞতার উপর থকবিরিম-এর সাথে সাক্ষাৎকার দেন। থকবিরিম-এর পক্ষে নদী গবেষক ধীরেশ চিরান ব্রাদার গিউমের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। থকবিরিম-এর সাথে তাঁর এই সাক্ষাৎকার হুবহু নিচে তুলে ধরা হল।
থকবিরিম – ব্রাদার আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন।
ব্রাদার গিউম : আমার নাম ব্রাদার গিউম। আমার পুরা ডাচ নাম উইল্লেম দে ওউল্ফ যা ফ্রেন্স নাম গোইল্লাউম। আমার বাবা মারিনিস নিকলিনিস দে ওউল্ফ, মা উইলহেলমিনা হুগেনবুজেন। আমার জন্ম হয় ১৫ এপ্রিল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ, নেদারল্যান্ড আমস্টার্মডাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ক্রোমেনিয়ে নামক ছোট গ্রামে। সেই গ্রামে আমার শৈশব ও কৈশর কাটে। আমি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে আমস্টার্ডামের ফ্রি ইউনির্ভাসিটি থেকে থিওলজির উপর গ্র্যাজুয়েশন করি।
থকবিরিম – আপনি ব্রাদার হিসেবে কখন কর্মজীবন শুরু করেন?
ব্রাদার গিউম : ইউনির্ভাসিটি ডিগ্রি সমাপ্তির সাথে সাথে তেইজে ব্রাদার্সে যোগ দিয়ে আমি মানুষের সেবার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করি। প্রথমে আমি প্রায় ছয় বছর ফ্রান্সে তেইজে হাউজে ব্রাদারদের সাথে কাজ করি।
থকবিরিম : ব্রাদার, তেইজে অর্থ কী? তেইজে কী ধরনের কাজ করে থাকে?
ব্রাদার গিউম : তেইজে মূলতঃ ফ্রান্সের একটা ছোট গ্রাম। সেখানে কয়েকজন ব্রাদারদের নিয়ে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ব্রাদার রজার সেই গ্রামের নামে তেইজে ব্রাদারস ইকোমেনিকাল কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তেইজে ব্রাদারগণ প্রার্থনাময় জীবন শুরু করেন এবং বিশেষ করে সকল যুবক যুবতীদের ধর্মীয় সেবা কাজে আহ্বান করেন। ব্রাদারগণ মানুষের সেবাকে ব্রত হিসেবে নিয়ে জাতি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল ধরনের মানুষের সাথে জীবন গঠনে আন্তম-লী এবং আন্তধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। তেইজে ব্রাদারগণ ব্রাদার সংঘ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কাজ করে আয় করে থাকে। কাজগুলোর মধ্যে মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, খেলা, শো পিচ, প্রিন্টিং প্রেস এবং আরো অনেক ছোট ছোট কাজ। প্রথমে আমরা ১০০ জন ব্রাদাদের নিয়ে কাজ করি। এর মধ্যে ২৫ জন বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। দেশগুলো হল : ব্রাজিল, বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, সেনেগাল ও কিউবা যেখানে ছোট পরিসরে যুকব যুবতীদের সাথে ইউনিটির জন্য ব্রাদারগণ কাজ করে থাকেন। তবে মূল দল ফ্রান্সের প্যারিশ থেকে সব দেশের তেইজে ব্রাদারদের পরিচালনা করে থাকে।
থকবিরিম : তেইজে ব্রাদারদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
ব্রাদার গিউম : তেইজে ব্রাদারদের প্রধান লক্ষ্য হল দুইটি। (১) সকল খ্রিস্টানদের ঐক্যমতের জন্য কাজ করা, (২) সকল যুবক যুবতীদের সমাজ গঠন ও সেবার কাজে দলে যুক্ত হাওয়ার আহবান করা।
থকবিরিম : তেইজে ব্রাদারগণ কখন বাংলাদেশে আসেন এবং কোথায় কীভাবে কাদের সাথে কাজ শুরু করেন?
ব্রাদার গিউম : তেইজে ব্রাদার ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে প্রথম আসে এবং চিটাগাং অঞ্চলে কাজ শুরু করে। তেইজে ব্রাদারদের মধ্যে ব্রাদার ফ্রাঙ্ক প্রথম বাংলাদেশে আসেন এবং চিটাগং সিটি এলকায় খ্রিস্টসমাজ গঠনে সকল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীদের সাথে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রাদার জ্যাক বাংলাদেশে আসেন এবং ব্রাদার ফ্রাঙ্ক-এর সাথে যুক্ত হন। আমি তেইজে ব্রাদার হিসেবে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে আসি এবং ব্রাদার ফ্রাঙ্ক-এর সাথে যুবক-যুবতীদের মধ্যে চিটাগাং সিটিতে কাজ শুরু করি।
তখন থেকেই আমি এখানে একজন তেইজে ব্রাদার হিসেবে আত্ম প্রকাশ করি। প্রথমে আমি চিটাগাং সিটি এলাকার গরিব, রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক বিশেষ করে বস্তি এলাকার গরিবদের মাঝে বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করি। সাথে সাথে তাদের আত্মিক উন্নয়ন ও প্রার্থনাময় জীবন গঠনে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষামূলক সভা সেমিনার করি। তবে বিশেষ করে সিটির খ্রিস্টান অখ্রিস্টান যুবসমাজের সংগঠিত করে তাদের আপন করে নেয় এবং তাদের শিক্ষামূলক সভা সেমিনার করে আদর্শ মানুষ গঠনে কাজ করি। এছাড়া গরিব মানুষদের শহরতলী এলাকাগুলোতে তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও বস্তির পথ শিশুদের প্রাক্পাঠ দান কার্যক্রম চালু করি। সাথে সাথে পাহাড়ি গ্রামাঞ্চলেও বিভিন্ন ধর্মালম্বী আদিবাসী যুবক যুবতীর সাথে ইকোম্যানিকল বা আন্তম-লী বিষয়ে কাজ শুরু করি।
তবে এক্ষেত্রে বুদ্ধ ধর্মালম্বী চাকমাদের সাথে কাজে তেমন অগ্রগতি হয়নি, যেভাবে ত্রিপুরা মারমা ও অন্যান্য জাতিসত্তার যুবক যুবতীদের সাথে কাজ করতে সহজ হয়েছিল। আমি তাদের বাড়িতে যেতাম এবং অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসায় সহযোগিত করেছি এবং প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের জন্য আরটিফিসিয়াল পা ও রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত দিয়ে এবং সংগ্রহ করে সহযোগিতা করা হয়। এই সমস্ত সহযোগিতা করে খ্রিস্টীয় যুব দল গঠন করেছি এবং যুবক যুবতী ও মিশনারিদের নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার ও ধ্যান সভার মাধ্যমে মানুষের বিপদে সহায়তার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। এই কাজে আমরা সকল ধর্মের যুবক যুবতী ও মিশনারিদের বেশ সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে আমি মেডিকেল সার্ভিস বিষয়ে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি।
থকবিরিম : আপনাদের তেইজে ব্রাদারদের কার্যক্রম কবে ঢাকায় স্থানান্তর হয়েছে?
ব্রাদার গিউম : আমরা ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তেইজে ব্রাদারগণ চিটাগাং-এর কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করি। তখন আমি বিশেষ করে যুবক যুবতী এবং গার্মেন্টস কর্মীদের সাথে কাজ করি। আমি যুবক যুবতীদের সাথে কাজ করার জন্য দায়িত্ব পাই। বিভিন্ন দ্বি-নমিনেশনের যুবক যুবতীদের সংগঠিত করে জীবন গঠন ও সেবা মনোভাবী করাসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতন ও সেবাদানের জন্য সভা সেমিনার রিট্রিট বা ধ্যানসভার আয়োজন করা হয়। আবার বিশেষ করে গরিব অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল ও রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসায় সহযোগিতা করাসহ রোগী পরিদর্শন করে তাদের সাহস দিয়ে তাদের মনোবল শক্ত করা হতো তখন।
ঢাকায় আমি শুধু মান্দি যুবক যুবতীদের সংগঠিত করে কাজ করি। বিশেষভাবে যে সমস্ত মান্দি ভাইবোন ঢাকায় কাজের সন্ধানে গিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও হয়রানি হয়ে অসুবিধায় পড়েছিল তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য জরিপ শুরু করেছিলাম। এই ক্ষেত্রে আমাকে মান্দি যুবক যুবতীরা অনেক সহযোগিতা করে। এই সময় আমরা ঢাকায় মান্দিদের সংগঠিত করে আদিবাসী মিলন দিবস পালন শুরু করি। তবে তখন ময়মনসিংহে এই আদিবাসী মিলন দিবস পালন করা হয়নি।
ঢাকায় অবস্থানের সময় আমাদের অনুভুত হয়, এই ঢাকাবাসী মান্দিদের জন্য কিছু করা দরকার। বিশেষ করে যে সমস্ত মান্দি মেয়েরা কাজের সন্ধানে ঢাকায় অবস্থান করে অথবা ঢাকায় বিভিন্ন গার্মেন্টস এবং বাসা বাড়িতে কাজ করে তাদের জন্য। তারা অনেক সময় অনেক বিপদে পড়ে। এই বিষয়ে আমি ময়মনসিংহের ক্যাথলিক বিশপের সাথে যোগাযোগ করি এবং ময়মনসিংহ ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপ ফ্রান্সিস এ. গমেজের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দ্বি-নমিনেশনের ধর্মযাজকদের নিয়ে ঢাকা আর্মেনিতলা চার্চে আলোচনা করি। অনেক ধর্মযাজকগণ ইতিবাচক সাড়া দেন। বিশপের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে মান্দি ভাইবোন এবং মান্দি সমাজের বিশিষ্টজনদের সাথে বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় বড় ধরনের আলোচনা সভার আয়োজন করি। সভায় মান্দি ভাইবোন এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ বিশষ্টজন সবাই ঢাকায় বিস্তারিত আলোচনা করে মান্দিদের সেবার জন্য একটা সেন্টার স্থাপনের প্রয়োজনীতার উপর গুরুত্ব দেন।
তারই আলোকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫নভেম্বর প্রথমে ঢাকায় তেজতুরি বাজারে ডানিয়েল কুড়াইয়ার বাসা ভাড়া নিয়ে নকমান্দি স্থাপন করে কাজ শুরু করি। পরবর্তী সময়ে বিশপ ফ্রান্সিসের সহযোগিতায় ঢাকার ৩৪ তেজতুরি বাজারে একটি ভবন ক্রয় করে স্থায়ীভাবে নকমান্দির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। নকমান্দি পরিনচালনার জন্য মান্দিদের নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করে শিক্ষা সাংস্কৃতি, চিকিৎসা, ধর্মীয় ও কর্মসংস্থান বিষয়াদি নিয়ে পরিচালনা করি। নকমান্দি দেখার বিশেষ দায়িত্ব ছিল ব্রাদার এরিক তেইজের। যা এখনও নকমান্দি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন নকমান্দিতে ঢাকাবাসী এবং ঢাকায় আসা বিভিন্ন মান্দি এলাকার মান্দিদের আশ্রয়সহ বিপদ আপদে সহযোগিতা করে থাকে। নকমান্দিতে মান্দিদের কর্মসংস্থানও আর্থিক উন্নয়নের জন্য নকমান্দি ক্রেডিট ইউনিয়ন গঠন করে মান্দিদের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে এখন। এই ক্রেডিট ইউনিয়নের মাধ্যমে অনেক মন্দি আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ছোট খাটত ব্যবসা বাণ্যিজ করছে তাদের জন্য স্বল্প সেবামূল্যে ঋণ সুবিধা দিয়ে আর্থিক যোগান দিচ্ছে।
থকবিরিম : ময়মনসিংহ অঞ্চলে কখন আসা হয়েছে এবং কীভাবে কাদের সাথে কাজ শুরু করেন?
ব্রাদার গিউম : তেইজে ব্রাদারগণ ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আসে। আমি ব্রাদার ফ্রাঙ্ক তেইজের সাথে প্রথমে ময়মনসিংহে আসি। তখন মান্দিদের জন্য ময়মনসিংহ নতুন ধর্মপ্রদেশ হয়েছে। এই নতুন ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশে মান্দিদের বৃহত্তর সমাজের সাথে কাজ করার জন্য আমি আসি। আমি বিশেষ করে মান্দি যুবক যুবতীদের সাথে কাজ শুরু করি। আমি যুবক যুবতীদের সাথে কাজ করার জন্য দায়িত্ব পাই। বিভিন্ন দ্বি-নমিনেশনের যুবক যুবতীদের সংগঠিত করে জীবন গঠন ও সেবা মনোভাবী করাসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা ও সেবাদানের জন্য সভা সেমিনার রিট্রিট বা ধ্যানসভার আয়োজন করি। আবার গরিব অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল ও রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসায় সহযোগিতা করি এবং রোগী পরিদর্শন করে সাহস দিয়ে তাদের মনোবল শক্ত করা হত তখন। অতপর আমরা ময়মনসিংহ অঞ্চলে শহরে এবং শহরতলীতে জাতিধর্ম নির্বিশেষে কাজ শুরু করি। এখানে খ্রিস্টান ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের যুবক যুবতীদের নিয়ে সভা সেমিনার রিট্রিট করে সেবার মনোভাব গড়ে তুলি। সাথে পথ শিশুদের এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য কাজ করি।
ময়মনসিংহ এসে বিভিন্ন চার্চের যাজক পাস্টার এবং বিশিষ্টজনদের সাথে একত্রে সভা করি। সভার ফলে অনেক খ্রিস্টভক্ত সাড়া দেয় এবং আমরা এক জন গারো মহিলা পরিমল চিসিমের সহযোগিতায় হালুয়াঘাটের বোয়ালমারা গ্রামে প্রথম গারো ভাষায় স্কুল শুরু করি। গারো যুবক যুবতীদের সংগঠিত করে আচিক ভাষায় গান ও বিভিন্ন গল্প ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের শিখাই এবং গির্জার প্রার্থনায় আচিক ভাষায় বাইবেল পাঠ ও গান করাই।
আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে কলমাকান্দার কাউবাড়ি থেকে সিরেনজিং টিমকে এনে ময়মনসিংহ শহরে বসবাসকারী মান্দি ও অন্যন্য ধর্মালম্বী মানুষদের জন্য সিরেনজিং পালা দেখাই। আমরা ঢাকা এবং ময়মনসিংহে পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করি। ময়মনসিংহে আমরা শান্তিমিত্র সংস্থার মাধ্যমে শান্তি রূপান্তর (চবধপব ইঁরষফরহম ঞৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ), মানবাধিকার (ঐঁসধহ জরমযঃং), শান্তি শিক্ষা (চবধপব ঊফঁপধঃরড়হ), ধর্মীয় সম্প্রীতি (ওহঃবৎ জবষরমরড়ঁং), ছাত্র গঠন শিক্ষা (ঝঃঁফবহঃ ঋড়ৎসধঃরড়হ) ও পথশিশুদের (ঝঃৎববঃ ঈযরষফৎবহ) নিয়ে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টাদের সাথে কাজ করি। অনেক সময় আমরা মুসলমান হিন্দু ও খ্রিস্টান যুবক যুবতীদের আন্তধর্মী তীর্থযাত্রার ব্যবস্থাও করেছি। এই আন্তধর্মীয় তীর্থযাত্রায় সব ধর্মের যুবক যুবতীদের বেশ সাড়া পেয়েছি। এই তীর্থযাত্রার মাধ্যমে সব ধর্মের যুবক যুবতীরা নিজ নিজ ধর্মের সাথে একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠে এবং বিভিন্ন ধর্মের প্রতি জানতে পারে। ফলে সকল ধর্মের সাথে খ্রিস্ট ধর্মের ধর্মীয় একটা সৌহার্দ্যতা গড়ে উঠে এবংসুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কোন বিবাদ হয় না। এছাড়াও আমরা সকল ধর্মের শারীরিকভাবে যারা অক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়েও প্রতি বছর তীর্থযাত্রার আয়োজন করে থাকি। এই ক্ষেত্রে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি।
আমরা হিন্দু, মুসলিম, বাহাই, খ্রিস্টান, শিখদের ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করেছি এবং তাদেও সাথে আর্ন্তধর্মীয় সংলাপ করেছি যাতে একে অপরকে জানতে পারে এবং সকল ধর্মের প্রতি সকলেই শ্রদ্ধাশীল হয়। এই ব্যাপারে এখানে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। এই কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছ্।ে আমরা মনে করি এই কাজ আমাদের জন্য একটা সফল কাজ।
জেল মিনিস্ট্রি : আমারা আরো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নেয়, জেল মিনিস্ট্রি। সেই মিনিস্ট্রির দেখভালের দায়িত্ব আমার কাছে ন্যাস্ত হয়। প্রায় কুড়ি বছর আগে আমি ময়মনসিংহ জেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগক করি। জেল কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হই যে, ময়মনসিংহ জেলে বেশ কয়েকজন খ্রিস্টান বিশেষ করে মান্দি রয়েছে তাদের আত্মিক সেবাদানের জন্য কাজ করা। কাজের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত খ্রিস্টান আসামিদের জন্য জেলখানায় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা, খ্রিস্টপ্রসাদ প্রদান এবং নিয়মিত পরিদর্শনের মধ্যে কাউন্সিলিং করে তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখার জন্য কাজ করি। এছাড়াও আইনের মারপ্যাচে যারা বিভিন্নভাবে জেলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কোর্টে আইনি লড়াইয়ের জন্য উকিল নিয়োগ করে আইনি লড়াই করে সাজা কমিয়েছি। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে কলমাকান্দা উপজেলার কচুগড়া গ্রামের আসামি কারামুক্তিও পেয়েছে।
এখন হলি দিও নামের একজন মহিলাকে জেল মিনিস্ট্রির কাজে সহযোগিতার জন্য নিয়েছি। তিনি এখন ময়মনসিংহ জেলে গিয়ে নিয়মিত খ্রিস্টান আসামিদের দেখভাল করেন। তাদের জন্য প্রার্থনা থেকে মাঝে মাঝে খ্রিস্ট প্রসাদ প্রদানসহ খ্রিস্টযাগেরও ব্যবস্থা করে থাকে।
থকবিরিম : ব্রাদার, আপনারা যুবক যুবতীদের সাথে কীভাবে কাজ করেন?
ব্রাদার গিউম : আমরা অনুভর করেছি সত্যিকার অর্থে মান্দি অঞ্চলে অনেক যুবত যুবতী রয়েছে যাদের সাথে আমরা কাজ করেছি বা করছি। তারা খুব ভাল কাজ করছে। যার মাধ্যমে সমাজে তাদের নিবেদিত ও উৎসর্গীকৃত মানুষের আদর্শকে আমরা অনেক উৎসাহ বোধ করি। আমরা মনে করি তরুণদের সাথে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ভাবে আত্মিক উন্নয়নের জন্য। আমাদের এই কাজের ফলে আনেক মান্দি যুবক যুবতী নিজেদের সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষা চর্চা এবং অনুশীলনে বেশ আগ্রহী হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে মান্দি ভাষার স্কুল চালানোর ফলে ছোট ছোট মান্দি ছেলে মেয়েরা এখন মান্দি ভাষায় লিখতে পড়তে পারছে। অবশ্য এখন প্রাক্ প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারও গারো বা মান্দি ভাষায় কোর্স চালু করেছে।
আমরা মনে করি, আমাদের এই ছোট ছোট কাজ ভাল একটা চাকুরিপাওয়া এবং অর্থ উপর্জনে তেমন কাজে আসবে না, তবে দারিদ্রতার মধ্যেও তাদের নিজেদের সম্প্রদায়ে ভবিষ্যৎ জীবনে পরিবার ও সমাজ এবং আদর্শ মানুষ গঠনে বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা ও বিশ্বাস করি।
থকবিরিম : ব্রাদার, আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আপনাদের সেবা কাজের সহভাগিতা করার জন্য থকবিরিমের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার বয়স ৭৫ বছর পূর্তি সুখময় হোক। প্রার্থনা করি আপনি আমাদের দেশের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে যেন আরো সেবার কাজ করতে পারেন। আপনর দীর্ঘায়ু কামনা করি। ধন্যবাদ।
করোনায় পাহাড়ি আদিবাসীদের সংকটময় জীবন যাপন
করোনায় কেমন যাচ্ছে আদিবাসীদের জীবন
করোনাকালীন তিনটি কবিতা ।। মতেন্দ্র মানখিন
একজন ভালো মনের মানুষ ব্রাদার গিয়োম ।। কিউবার্ট রেমা
https://www.youtube.com/watch?v=WtVe7pOQaQ8&t=182s
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত