করোনার প্রথম ঢেউয়ের আঘাতের রেস কাটতে না কাটতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মানুষের জীবনে আবার নিয়ে এসেছে মরণাঘাত। ইদানিং সারা দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত ও আতঙ্কিত। বিশেষ করে গরিব দুঃখী অসহায় নিন্মবিত্ত ও মত্তবিত্তের জীবনে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মত্তবিত্ত ও নিম্নবিত্তেরা যারা দিন আনে দিন খাই; চাকরী না থাকলে যাদের মুখে আহার জোটে না, তারা করোনা রোগের চেয়ে খাদ্যমন্দা নিয়ে আজ বেশি সংকিত। কারণ কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের জন্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস যদি লকডাউন হয়, তাহলে তারা কি খেয়ে বেঁচে থাকবে? পেটে আহার থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে হলেও তারা করোনার হাত থেকে মুক্তি পাবে কিন্তু পেটে খাবার না থাকলে তো তারা খাদ্যের অভাবে মারা যাবে।
গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় ঢাকা শহরে অবস্থানরত মত্তবিত্ত পরিবারগুলোর জীবনাবস্থা কী করুণ পরিস্থিতিই না ছিল আপনাদের নিশ্চয়ই তা মনে আছে। লকডাউনে চাকরী না থাকায় বেতন পাইনি বলে অনেকেই না খেয়ে থাকতে হয়েছিল। লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে নি। বাসাবাড়ির বিল, কারেন্টের বিল ও ডিসের বিল দিতে না পারাই তাদের শুনতে হয়েছে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। শহরে টিকে থাকার লড়াইয়ে, পেটের জালা নিবারণের জন্য নিজেদের আসবারপত্রসহ, অন্যান্য দৈনিন্দন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো একে একে বিক্রি করতে করতে নিস্ব হতে হয়েছে। একইভাবে গ্রামাঞ্চলের গরিব ভাইবোনেরাও লকডাউনে কাজ না থাকায় তাদের অনেকেই দুর্বিসহ জীবন যাপন করেছে। প্রতিদিনের খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে যে হারে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে; এই অবস্থা যদি সারাবছর থেকে যায় তাহলে মানুষের জীবনে নেমে আসবে খুবই ভয়াবহ করুণ দুর্দশা। এক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধের জন্য সবারই এগিয়ে আসতে হবে।
গতবছর গরিব দুঃখী অভাবীদের চরমদুর্দিনে আমরা দেখেছি সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে যাদের সামর্থ আছে, যারা বিত্তবান তারা শুধু নিজেদের স্বার্থকে দেখে। অসহায়দের সাহায্য করার মনোভাব তাদের নেই। তারা ধনী আরো ধনী হতে চায়। গরিবরা উঠে আসুক উন্নত জীবনযাপন করুক তারা তা চায় না। তবে এর বিপরীত চিত্রও আমাদের সমাজে দেখি, যে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের হৃদয় আসলে বিশাল হিমালয় পাহাড়ের মতো বড়। যারা সবসময়ই পরের জন্য কিছু করার মাঝে অন্তরে প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পান। আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা সেটি লক্ষ্য করেছি; অনেক বিত্তবানেরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন অভাবী, দীন-দুঃখী ভাইবোনদের জন্য। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। একটা জিনিস আমাদের সবারই মনে রাখা দরকার, আমরা চাইলেই নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী গরিব অসহায়দের সাহায্য করতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো বেশিরভাগ সময়ই আমরা সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা ধনীদের সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকি। নিজেরাও যে কিছু করতে পারি সেই চিন্তা করি না। উদ্যোগও নেয় না। শুধু পাওয়ার আশায় থাকি দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় না। সেই সমস্ত মানুষদের পবিত্র বাইবেলের সেই কথা মনে রাখা দরকার, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই তুচ্ছতম মানুষদের একজনেরও জন্যে তোমরা যা-কিছু করোনি, তা আমারই জন্য করোনি” (মথি ২৫: ৪৫)। অর্থাৎ এখানে যেবিষয়টি বুঝাতে চাচ্ছেন সেটি হলো আমি আপনি যদি দীন-দুঃখীদের সাহায্য না করি তাহলে সেই সৃষ্টিকর্তা যে আমাকে আপনাকে তাঁরই প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন আমি আপনি তাঁকেও সাহায্য করছি না; তাঁর ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারছিনা। এক্ষেত্রে সবার অতিপরিচিত মাদার তেরেজা আমাদের জন্য এক বড় আদর্শ। আমরা জানি যে গরিব, দুঃখী, লাঞ্চিত, বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই তিনি আজ বিশ্বব্যাপী মাদার তেরেজা নামে পরিচিতি হয়েছেন। মানব সেবার জন্যই নোবেল পুরুষ্কার পেয়েছেন। একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কীভাবে তিনি মানবসেবার শক্তি পান। তিনি বলেছিলেন, “দীনদুঃখী, অসহায়দের মাঝে আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাই, তাই আমি একাজ অন্তর থেকে করি।” মাদার তেরেজার মতো আমরাও করোনার এই কঠিন পরিস্থিতে মানবসেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করাতে পারি। তবে এর জন্য আমাদের দরকার সুন্দর একটি মন, সুন্দর একটি চিন্তা ও সেবা করার মনোভাব। করোনার এই কঠিন সময়ে আমরা কিভাবে গরিব দুঃখী অসহায়দের সাহায্য করতে পারি নিম্নে কিছু পদক্ষেপসমূহ দেয়া হলো:
১. আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত সামর্থ অনুযায়ী বা ত্যাগ স্বীকার করে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
২. আমরা সমষ্ঠিগতভাবে গ্রামভিক্তিক বা শহরে যারা বিভিন্ন বড় বড় কম্পানিতে-অফিসে কর্মরত আছেন তাদের সবার কাছ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে তাদের সাহায্য করতে পারি।
৩. যুবক-যুবতিরা এদিসেদিক ঘুরাফেরা না করে নিজেদের বাড়ির চারপাশে যে পতিত জমি রয়েছে সেখানে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষাবাদ করে; যারা অর্থের অভাবে সবজি কিনে খেতে পারছে না তাদের বিনামূল্যে সবজি দিয়ে সাহায্য করতে পারি।
৪. ঘরে বা বাসায় সারাক্ষণ ফেইসবুক-ইউটিউব দেখে সময় নষ্ট করার চেয়ে বরং ইউটিউবে আউটসোসিং পেশার বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেখে যেমন- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ইমেজ এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট লেখালেখি, প্রেজেন্টেশন, অনুবাদ ও ডাটাএন্ট্রি প্রভৃতি ছাড়াও অন্যান্য আউটসোসিং থেকে যেকোনো একটি কাজ নিজে করতে পারবে বলে বিশ^াস আছে সেই কাজটি করে অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে ও গরিব দুঃখীদেরও সাহায্য করতে পারেন।
৫. যারা হাতের কাজ জানে তাদের কাছ থেকে কাজ শিখে বিভিন্ন ধরণের নিত্যপ্রয়োজীয় জিনিসপত্র বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে আমরা অন্যদেরকে সাহায্য করতে পারি।
৬. শহরে বা গ্রামের মধ্যে অনেক ধনবান পরিবার রয়েছে যারা ইচ্ছা করলেই পাঁচ-ছয়টি পরিবারের লোকজনদের অনায়াসেই সারা বছর খাওয়াতে পারবে। এই সমস্ত ধনী পরিবারগুলো কাজের বিনিময়ে তাদের খাদ্য দিতে পারেন।
৭. যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদের একটি মাস্ক দিয়েও আপনি একটি দয়ার কাজ করতে পারেন।
৮. করোনা থেকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এখনও যারা জানে না তাদেরকে এবিষয়ে পরামর্শ দিয়েও আপনি একটি মূল্যবান কাজ করতে পারেন।
৯. সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়েও আপনি তাদের সহায়তা করতে পারেন।
১০. প্রত্যেই ধর্মেই আছে সৃষ্টিকতার আশীর্বাদ বা তাঁর সমস্ত দয়াদাক্ষীণের জন্য উপাসনালয়ে প্রার্থনায় মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে কিছু না কিছু দান বা উৎসর্গ করে থাকেন। তাহলে সেই দানগুলো একত্রে সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে মানুষের এই ভালবাসার দান অভাবীদের দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
পরিশেষে সরকারি-বেসরকারির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সেই দয়ালু মানুষদের কাছে বিনীত অনুরোধ করি গত বছর আপনারা যেভাবে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করেছিলেন ঠিক তেমনিভাবে এবছরও তাদের প্রতি আপনাদের সাহায্যের হাত যথাশীঘ্রই বাড়িয়ে দিন। তবে আপনাদের কাছে একটা সদয় আহবান, আপনাদের ভালবাসার দান যেন সুসমবণ্টন হয়; যাতে সবাই পাই, সেদিকে একটু দৃষ্টি দিবেন। কারণ গত বছর আমরা দেখেছি যারা পেয়েছে তারা অধিক পরিমাণে পেয়েছে; যারা পাইনি তাদের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে। আর এদিকে যারা বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে।
করোনাকালীন তিনটি কবিতা ।। মতেন্দ্র মানখিন
একজন ভালো মনের মানুষ ব্রাদার গিয়োম ।। কিউবার্ট রেমা
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
-
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবতোষ যেত্রা আর নেই
: হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পাস্টার...
-
কেনিয়ার কৃষকরা হাতি তাড়াচ্ছে মৌমাছি দিয়ে
: কেনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কৃষকরা।...
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত