প্রায় দুই বছর বাদে রাজধানী ঢাকা শহরে গেলাম।করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন আবার নতুন করে ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে,তবুও গেলাম। মনে ভয়, ভয়ের বাস্তবতা থাকলেও চলেই গেলাম। সকালে যখন পৌঁছালাম প্রচুর জ্যাম (ভিআইপি জ্যাম), তবুও ঠিকমত পৌঁছাতে পেরেছিলাম নির্দিষ্ট গন্তব্যে। করোনার মধ্যেও ঢাকা যাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি কারণ চেয়েছিলাম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলাম একটি নতুন সংগঠনের পথচলার সময়ে। ১৯ মার্চ’২১ ‘বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম’ নামে সংগঠনটি আত্নপ্রকাশ ঘটলো। পরের দিন অনন্ত বিকাশ ধামাইকে সভাপতি, অন্ত্যনি রেমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিধি রাখা হয়।
১৯ মার্চ শুক্রবার। দুপুরে খাওয়ার পরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, আগারগাঁও এর পেছনে ছোট চায়ের দোকানে শরীরকে চাঙা করতে চা খেতে গেলাম। অনেকদিন বাদে একজনের সাথে দেখা হলো বিধায় মাতৃভাষায় কথা বলতে বলতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই দোকান থেকে আওয়াজ আসলো, না’সং মান্দি’মা? (তোমরা গারো কিনা?) কিছুটা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “হইয়ো”(হ্যাঁ)। তিনিই প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় বাড়ি? বললাম,”মধুপুর”। এমন করেই আস্তে আস্তে আলাপ জমে উঠলো। তিনি নিজের সম্পর্কে বলতে লাগলেন। আমার নাম তমাস মানখিন, বাড়ি মাটারতলি(ভালুকাপাড়া,ধোবাউড়া)। আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম কারণ তিনি এখানেই থাকেন, তবে একা(গারো)। খুব হাসিখুশির মানুষ কোন দুশ্চিন্তার ছাপ দেখলাম না। চা খেতে খেতে বললেন, এখানে আছি প্রায় তিনবছর, আগে শাক-সবজি বিক্রি করতাম কিন্তু মানুষ যখন পরিচিত হয়ে যায় বাকি দেওয়া লাগে তাই না করতে পারি নাই। পুঁজির টাকা বাকিতে চলে যায় তখন টাকা উঠাতে না পেরে এখন রিক্সা চালাই। ভাইরাসের কারণে আয় রোজকার কমে গেছে। আগের দিনে একহাজারের মধ্যে একটু উঠানাম করতো এখন অনেক কমে গেছে। তবুও বেঁচে আছি এটাই সৌভাগ্য। জীবন আর কতদিন! বয়স তো হয়ে গেছে। যখন রিক্সা চালাতে পারবো না তখন আবার শাক-সবজি বিক্রি শুরু করবো। জীবন যতদিন চলে এমনি করেই চলতে থাকবো।
আমি মনযোগ দিয়ে শুনছিলাম আর বুঝতে চেষ্টা করছিলাম আমাদের দেখে কতইনা তিনি খুশি হলেন। আমরা আবেং(গারো) ভাষা দিয়ে কথা বলছিলাম। মনে হলো,তিনি অনেক দিন পরে নিজের মাতৃভাষায় কথা বলছেন। মাতৃভাষার মতো মধুর ভাষা কী আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় ভাষা হতে পারে! অবশ্যই না। তিনি মাতৃভাষা দিয়ে এমন সুন্দর করে কথা বলছিলেন আমি চুপ করেই শুনছিলাম। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণের বেশিক্ষণ থাকা হয়নি। বুঝতে পারছিলাম, তিনি চাইছিলেন আমরা যেন আরো কিছু সময় ধরে থাকি। কিন্তু আমাদের আসতেই হলো।
আসার সময় জিজ্ঞাসা করলাম তিনি সিগারেট খান কীনা? তিনি বললেন, পাইলট(!)টাকা দিতে যাবো তখনি বলে উঠলেন আমার কাছে টাকা আছে আমিই বিল দিয়ে দিবো। তিনি দোকানদারকে বললেন যেন টাকা না রাখি।তবুও জোর করেই দিলাম । আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম, মনে মনে ভাবতে থাকলাম সত্যিই মানুষের(গারো) মন অনেক সুন্দর সত্যবাদী সহজসরল… আমি কী এমন সহজ সরল স্বীকারোক্তি মানুষ হতে পারবো(!)ভালো মানুষ হওয়া কী এত সহজ!
অল্প সময়ে মানুষকে বিচার করা বোকামি, তবুও আমি বোকামিটাই করলাম। মনে হয়েছে এমন মানুষের সাথে দেখা হওয়া যেমন সৌভাগ্যের তেমনি জীবন কে নতুন করে উপলদ্ধি করতে সাহায্য করে। তার জীবন সুস্থ্যতা কামনা করি। এই জীবনে হয়তো আবার দেখা হবে কিংবা নাও হতে পারে…
‘সাংসারেক ওয়ান্না, গোড়ামী আর উপসাংসারেক-এর গল্প’
: আমার ধারণা-মিদ্দি রাবুগা, সালজং আমার উপর অধিক খুশি হয়ে বর......বিস্তারিত
-
সাংসারেক ওয়ান্না, গোড়ামী আর উপসাংসারেক-এর গল্প
: আমার ধারণা-মিদ্দি রাবুগা, সালজং আমার উপর অধিক খুশি হয়ে বর...
-
কালাচাঁদপুরে চলছে মাসব্যাপী গারো বইমেলা
: কালাচাঁদপুরের শিশু মালঞ্চস্কুল প্রাঙ্গণে চলছে গারো বইমেলা। বইমেলা শুরু হয়েছে...
-
প্রকাশিত হলো লিয়াং রিছিল-এর Bi·sarangni Goserong
: প্রকাশিত হলো আ·চিক ছড়াকার লিয়াং রিছিল-এর প্রথম অনবদ্য সাহিত্য-কর্ম ‘Bi·sarangni...
-
আমরা আটকে গেছি ।। মৃগেন হাগিদক
: প্রগতিশীল নেতাদের অভিমত, আমরা (আচিক, মান্দি বা গারো) আটকে আছি,...
-
গারো জাতি সত্তার কবি মতেন্দ্র মানখিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
: আজ কবি মতেন্দ্র মানখিনের জন্মদিন। জন্মদিনে থকবিরিম পরিবারের পক্ষ থেকে...
-
Noksil ।। Labison Sku
: Noksil Mosla nonga bringni do.bipani japingko cha.ai Da.au mangmang...
‘সাংসারেক ওয়ান্না, গোড়ামী আর উপসাংসারেক-এর গল্প’
: আমার ধারণা-মিদ্দি রাবুগা, সালজং আমার উপর অধিক খুশি হয়ে বর......বিস্তারিত
‘সাংসারেক ওয়ান্না, গোড়ামী আর উপসাংসারেক-এর গল্প’
: আমার ধারণা-মিদ্দি রাবুগা, সালজং আমার উপর অধিক খুশি হয়ে বর......বিস্তারিত