গারো গ্রাম ঘুরলে অনেক সাংসারেক গারোদের পৌরাণিক কাহিনি শুনতে পাওয়া যায়। আমি মোটামোটি সংগ্রহ করতে পেরেছি। আমি মনে করি, সাংসারেক গারোদের এই সকল কাহিনি পালনীয় নয় কিন্তু সংরক্ষণ করা যায়। জনজা তার দুই স্ত্রী। একজনের নাম আজি অপরজনের নাম গিলজি। বলা হয় আগে গারো পুরুষ একের অধীক বিবাহ করতে পারতো। যেমন-
১।জিকপাংমা ২।জিকগিদি ৩।জিকব্রিং
প্রথম স্ত্রীকে বলে জিকপাংমা, দ্বিতীয়কে বলে জিকগিদি আর তৃতীয়কে বলে জিকব্রিং।
ইচ্ছে করলেই জিকগিদি নেওয়া যায় না। যখন সংসার বড় হবে, একজন স্ত্রী সংসারের কাজ করে শেষ করতে পারছে না, তখন স্ত্রীর ভাই মামারা কাজের মেয়েকে জিকগিদি হিসেবে বিয়ে করিয়ে দিবে। এই জিকগিদি সংসারে বৈধভাবেই থাকতে পারবে কিন্তু জিকব্রিংকে পরিবারে আনা যাবে না। জিকব্রিং অর্থ জিক মানে স্ত্রী আর ব্রিং মানে জংগল। তার মানে জিকব্রিংকে সব সময় জংগলেই গোপনে রাখতে হয়। এই স্ত্রী জিকব্রিং কখনো বৈধ হবে না এরকমই বললো।
জনজার বড় পরিবার তাই তার স্ত্রীর ছোট বোন গিলজিকেই জিকগিদি হিসেবে চ্রারা দিয়েছে। দুই বোন নাকি অসম্ভব সুন্দরী। একদিন সালগ্রা মিৎদে বাংলায় সুর্য দেবতা জনজার বাড়িতে বেড়াতে এসে জনজার স্ত্রী আজি গিলজিকে দেখে ফেলে। তাদের রূপ সুন্দর্য দেখে পাগলা হয়ে যায়। সালগ্রা জনজাকে বলে দেয়, আগামি তিনদিন পর ঠিক দুপুরে তোমার দুই স্ত্রীকে জোর করে নিয়ে যেতে আসবো।জনজাও ভয় পাওয়ার পাত্র নয়। কথায় কথায় বলে দেয়, আমিও এমনি ছেড়ে দেব না, শক্তিতে হেরে গেলে পরে বিবেচনা করব।
সালগ্রা চলে যাওয়ার পর জনজা তার অস্ত্র মিল্লাম ধারালো করে রীতিমত যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়।নির্ধারিত দিনের ঠিক দুপুর হওয়ার আগেই জনজা পাহাড়ি বাঁকা পথের আড়ালে ডান হাতে মিল্লাম নিয়ে সালগ্রার জন্য অপেক্ষা করে। অনেক সময় অপেক্ষা করার পরেও সালগ্রাতো আর আসে না। জনজা ভাবে, হয়তো সালগ্রা মিৎদে ভয় পেয়েছে। ঠিক দুপুরের পরে হঠাৎ পূর্ব দিকে ঝড় বাতাসের মত শব্দ শোনা গেল জনজা দেখে আকাশে মেঘ নেই কিন্তু ঝড়-বাতাসের শব্দ আসছে। সে তার হাতের মিল্লাম শক্তভাবে ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। শব্দ আস্তে আস্তে কাছে আসতে থাকে। জনজার মনোবল নড়বড়ে হয়ে যায়।শক্তি সঞ্চয় করে কোনোরকম অপেক্ষা করে। হঠাৎ দেখে সামনে সালগ্রা। সালগ্রার মূখ এতো আলোকিত, এতো উজ্জ্বল সে আলোর জন্যে সালগ্রার মূখ দেখতে পাচ্ছিল না জনজা। জনজা প্রাণের ভয়ে মিল্লাম মাটিতে ফেলে জীবন বাঁচাতে প্রাণপণে পালাতে থাকে।
দুর থেকে মিৎদে সুসুমিমা আইমা দেখে জনজা দৌড়ে আসছে। সে সামনে গিয়ে থামায়। আর প্রশ্ন করে জনজা তুমি পালাচ্ছ কেন? জনজা বলে, দেবতা সালগ্রা আমাকে মেরে আমার বৌদের নিতে আসছে তাই প্রাণের ভয়ে পালাচ্ছি। দেবী সুসুমি বলে, ভয় করো না, এতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, তুমি একটা কাজ করো এই ডিকগি মংএরা নিয়ে যাও আর রাস্তায় ফেলে আসো। এই ডিকগির উপর বা কাছাকাছি সালগ্রার পা লাগলেই সে ঘুমিয়ে পড়বে আর তোমার স্ত্রীদেরকে জোর করে নিতে পারবে না।
জনজা বৌদের বাঁচাতে তাই করলো। সালগ্রা যেতে যেতে যেই ডিকগি মংএরার কাছাকাছি আসতেই তার চোখে ঘুম আসতে থাকে। এক সময় সালগ্রা মাটিতে শুইয়ে গভীর ঘুমে চলে যায়। সালগ্রা ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে পৃথিবীর আলো নিভে যায়, চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে। আর আলো আসে না, দিনও হয় না।এদিকে দিনে বিচরণকারী পশু পাখি, মানুষের মহাবিপদ হয়ে গেল এইভাবেতো রাখা যাবে না তাই দেবী সুসুমিমা আইমা ডিকগি মংএরা সরিয়ে নিয়ে, দেবতা সালগ্রাকে ঘুম থেকে জাগায় আর সাথে সাথে পৃথিবীতে আলো ফিরে আসে। আর সালগ্রাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তার নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আর জনজার দুই স্ত্রী আজি গিলজিও রক্ষা পায়।
লেখক পরিচিতি : তর্পণ ঘাগ্রা লেখক ও গবেষক। তিনি দীর্ঘ সময় বিভিন্ন আদি সাংসারেক গারো এলাকায় ঘুরে ঘুরে লোককাহিনি, গারো গল্প, রেরে, আজিয়া সংগ্রহ করেছেন।
‘গারো সাহিত্যপত্র ‘থকবিরিম’-এর নতুন সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন’
: গারো সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে থকবিরিম। নিয়মিত প্রকাশ না হলেও......বিস্তারিত
-
গারো বইমেলা সমাপ্ত হচ্ছে আজ
: মাস জুড়ে চলা গারো বইমেলার আজ শেষ দিন। আলোচনা সভা...
-
গারো সাহিত্যপত্র ‘থকবিরিম’-এর নতুন সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন
: গারো সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে থকবিরিম। নিয়মিত প্রকাশ না হলেও...
-
আত্মকথা ।। তেইজে ব্রাদার ও আচিক স্কুল ।। তর্পণ ঘাগ্রা
: আমি আনেক বছর ধরে তেইজে ব্রাদারদের সাথে কাজ করছি। প্রথমে...
-
মায়ের ভাষা মাতৃভাষা ।। মানুয়েল চাম্বুগং
: ২০০০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা...
-
প্রাপ্য হিসাব ।। পংকজ খকসী
: কাক দেখলে রাগ হয় , কোকিল দেখলে খুশি কোকিল কি ...
-
অনুবাদক থমাস স্নাল আর নেই
: জবাং ডি মারাক কর্তৃক লিখিত ‘গারো আইন’ বইটির অনুবাদক, লেখক...
‘গারো বইমেলা সমাপ্ত হচ্ছে আজ’
: মাস জুড়ে চলা গারো বইমেলার আজ শেষ দিন। আলোচনা সভা......বিস্তারিত
‘গারো সাহিত্যপত্র ‘থকবিরিম’-এর নতুন সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন’
: গারো সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে থকবিরিম। নিয়মিত প্রকাশ না হলেও......বিস্তারিত