Thokbirim | logo

২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

তিনটি কবিতা ।। অনিমেষ তজু

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৭, ২০২১, ১১:২৩

তিনটি কবিতা ।। অনিমেষ তজু

চিকমাং চ্যুত গারো নক্ষল আত্মা

 

যদি মৃত্যুর পর চিকমাং যেতে হয়,

ওখানে যদি আবার বিচারের সম্মুখীন হতে হয়

ইহকালের সমস্ত হিসাব-নিকাশ যদি চায়,

যদি কড়ায়-গন্ডায় হিসাব মিলিয়ে দিতে হয়;

এমন যদি হয় তবে মরনেও সুখ নাই?

 

ধরা যাক যদি রাস্তায় কোনো যানবাহন নাই,

যেমন-রিক্সা, অটো, বাস, মাইক্রোবাস, ট্রেন!

তাহলে কী হবে মানুষ যা অভ্যাস করেছে,

পায়ে হাঁটা একেবারে ভুলেই গিয়েছে ভবে;

মরার পরেও আবার কী যে কষ্ট হবে!

 

ওখানে সহজে যাওয়া অত সহজ নয়,

পথরোধ করে রাখবে নাওয়ান-থিমবাং

নাওয়াংকে আওয়াং ডেকে পার হয়ে গেলে,

পয়সা বিনে চিয়াংগাল নদী কেমনে পার হবে?

খালি হাতে মরলে বিপদে পড়তে হবে।

 

ধরুন কোনোভাবে মরনাত্মা হয়ে গেল পার,

আদালতে বিচার প্রার্থীর লম্বা এক সারি

দণ্ডায়মান নতশিরে সকল পেশাজীবী,

ধর্মগুরু, মুতে-মজুর সমাজনেতা আরো…

জপছে সবাই করজোড়ে ইয়া নাফসি রবে।

 

ধরুন এখন মরনাত্মার বিচার হলো শুরু…

জিজ্ঞাসিল মাপফু হাকিম ‘‘জগতে কী করলি?’’

‘‘হুজুর ধর্মকর্ম, সমাজসেবা ও স্ত্রীসেবা অতি;

শুধায় হুজুর, ‘’নম্বর খানা কম দিয়েছে তোমার স্ত্রী?’

রায়ে আদেশ, ‘‘ভবে গিয়ে স্ত্রীর কাছে প্রায়শ্চিত কর।’

 

নমে মহামান্যবরে মরনাত্মা ছাড়ল বিচারস্থান,

মনে বেজায় দুই নম্বরি যাব জিঞ্জিরা বা ধুলাইখাল

চুলকায় মাথা, মানুষ হয়ে জন্মে আর কী হবে?

সোজা হিসাব এবার না হয় কুকুর হয়ে জন্মিব সংসারে,

উচ্ছিষ্ট খেয়ে, ঘর পাহারা দিয়ে স্ত্রীকে খুশি করাব।

রচনাকাল ১১/১২/২০২০

 

সাতকাহন প্রেম

 

মনে পড়ে কি সেই দিনের কথা,

কী করে আমাদের ভালোবাসা শুরু হলো?

তোমার কী জানা ছিলো, ভালোবাসা হবে,

না কি কোনো আবেগ ছিলো না মনে!

 

আমি অনুভব করেছিলাম অন্য কিছু,

একেবারেই অন্য কিছু একটা!

স্বপ্নের ছায়া মূরতির ছোঁয়ায় সিক্ত হতো বুক,

সেই কী তুমি কি না জানি না।

 

একটি বেপরোয়া স্বপ্নের হাতছানি ছিলো,

সেই হাতকে ধরতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু সেতো তখনও ছায়া-ম্লান,

সেই কি তোমার স্নিগ্ধ হাত ছিল?

 

সেই দিন দেবদূত মস্তিষ্কে ভর করেছিল,

ভূমিকম্প হয়েছিল মনের ভেতর।

জানি না কোথায় নিজেকে হারিয়েছিলাম,

হয়ত অজান্তে তোমার বুকের মাঝেই।

 

বসন্তের বসন্ত মনের স্বপ্নবুনা,

বাসর সংগীত চয়নের নীড় বন্ধনে,

তোমার আমার সাতকাহন প্রেম,

অবিস্মরণীয় এক পরিণত গল্প।

তাং ১১/১২/২০

 

মুক্তিযুদ্ধ

 

অতঃপর স্বাধীনতা তুমি এলে নয় মাস পর

 

স্বাধীনতা তুমি আসবে বিশ্বাস ছিলো মনে,

কথা দাওনি, তবু অপেক্ষায় ছিলাম পরবাসে।

দেখেছি বিভীষিকাময় আকাশে বতাসে,

নির্ঘুম জনতার লাল গালিচার মঞ্চ তোমার জন্য

সাজানো ছিলো যথা মর্যাদায় অন্তরে!

 

জানি তুমি আসবে বলেই যুদ্ধ হয়েছিল,

ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা,

এতটুকু প্রাণের ভয় করেনি তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’

লাঞ্ছিত লক্ষ সতীত্ব-ছেদের রক্তে সিক্ত হয়েছিল মাটি;

ইজ্জতের মূল্যে উপ্ত হয়েছিল স্বাধীনতা!

 

যখন তোমার আসবার যথা সময় হলো,

আকাশে-বাতাসে অস্ত্রের গর্জন, বারুদের গন্ধ

আনাচে-কানাচে গলিত লাশের দুর্গন্ধ; স্বজন হারা।

পথে বাঁধা দিয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি,

ভেঙে দিতে বাঙালিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন!

 

স্বাধীনতা তুমি ১৯৪৭, ‘৫২, ‘৬৪, ‘৭০ এর চেতনা,

’৭১ এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। বিজয় দিবস,

অতঃপর, স্বাধীনতা তুমি এলে নয় মাস পর;

যুদ্ধাহত ক্ষতবিক্ষত বিজয়ের বেশে বাংলায়;

নম তব নম মহান স্বাধীনতা মম!

তাং ১৬/১২/২০



 

 

 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost