বড়দিন সকল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য কাঙ্খিত দিন। এ দিনটিকে ঘিরে খ্রিস্টানদের মধ্যে মাসব্যাপী চলে আধ্যাত্মিক, মানসিক, জাগতিক ও বাহ্যিক প্রস্তুতি। যিশু খ্রিস্টের জন্মতিথি পালনে শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেই আনন্দের সাড়া পড়ে তা নয়-এ আনন্দ জাতি, বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে- সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এ আনন্দের কারণ-যিশু খ্রিস্টের জন্মের সংবাদ নিয়ে আসে শান্তি, জগতে নিয়ে আসে আলো, নিরাশা হতাশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে আশার বাণী, আর পাপী মানুষের পরিত্রাণের পথ।
বাইবেলের লেখকগণ যিশু খ্রিস্টের জন্মের বহু বছর পূর্বে ঈশ্বরের দৈববাণীর শক্তিতে ঘোষণা করে আসছিলেন, এ জগতে এক ত্রাণকর্তা জন্মগ্রহণ করবেন, এদের মধ্যে প্রবক্তা ইসাইয়া ছিলেন অন্যতম। তিনি লিখেছেন “প্রভু নিজেই তোমাদের এই নিদের্শনটি দেবেন, শোন একটি যুবতী এখন সন্তান সম্ভাবনা যে একমাত্র সন্তানের জন্ম দিবেন, সে তার নাম রাখবে ইম্মানুয়েল।” (৭:১৪) এ ভবিষ্যৎ বাণীটি করেছিলেন যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৭০০ বছর আগে। যিশু খ্রিস্ট প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে এ জগতে শাসন করতে এসেছিলেন, যাতে এ জগতের মানুষ চিরকাল ধরে শান্তি-সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করে, যা প্রবক্তা ইসাইয়া সুস্পষ্টভাবে তার ভবিষ্যত বাণীতে বলেছিলেন এই ভাবে-
“কারণ এক শিশু জন্ম নিয়েছেন আমাদের জন্য, এক পুত্র সন্তানকে দেওয়া হয়েছে আমাদের, তাঁর কাঁধে রয়েছে আধিপত্য-ভার, তাঁর নাম রাখা হলো আশ্চর্য মন্ত্রণাদাতা, শক্তিশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ। সীমাহীন শান্তিতে তিনি আধিপত্য প্রসারিত করবেন-দাউদের সিংহাসন ও রাজ্যের উপর ন্যায় ও ধর্মময়তা ও দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত ও সুদৃঢ় করার জন্য এখন থেকে চিরকাল ধরে”(ইসা-৯:৫-৬)।
কেনইবা যিশু এসেছিলেন এ পৃথিবীতে, তার এ পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কী? যিশু নিজেই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। “প্রভু ভগবানের আত্মিক প্রেরণা আমার উপর অধিষ্ঠিত। ভগবান নিজেই আমাকে অভিষিক্ত করেছেন। তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন দীন-দরিদ্রদের কাছে মঙ্গলবার্তা শোনাতে, ভগ্ন হৃদয়ের ক্ষত স্থান বেঁধে দিতে, বন্দির কাছে মুক্তি আর কারারুদ্ধদের কাছে নিস্কৃতির কথা শোনাতে।” এ কথার মমার্থ হলো যিশু এসেছেন আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে এবং সার্বিক মুক্তির পথ দেখাতে। এ পৃথিবীর মানুষ স্বাধীন সত্বা নিয়ে জীবন যাপন করে একটি শান্তিময় পরিবেশে বাস করতে পারে। তাই তাকে (যিশু) যারা বিশ্বাস করবে, তার বাণীতে জীবন যাপন করবে, তার শিক্ষা মনে প্রাণে গ্রহণ করবে, তারাই পাবে-“তখন নেকড়ে বাঘ মেষশাবকের সঙ্গে বাস করবে, চিতাবাঘ শুয়ে থাকবে ছাগল ছানার পাশে, বাছুর আর সিংহের বাচ্চা এক সঙ্গ চড়ে বেড়াবে। একটি ছোট ছেলে তাদের পথ দেখিয়ে দেবে। গরু আর ভাল্লুক তখন মিলে মিশে থাকবে। বাচ্চারাও একসঙ্গে শুয়ে থাকবে…” অর্থাৎ জগত জুড়ে শান্তি, একতা ও ভালবাসা বিরাজমান থাকবে।
যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা হতাশা নিরাশা ও সমস্যাগ্রস্ত মানুষের আশার বাণী নিয়ে আসেন। তিনি নিঃস্ব হয়ে এ জগতে এসেছিলেন যাতে হত দরিদ্র মানুষের সাথে একাত্ম হতে পারেন, তাদের সাথে একাকার হতে পারেন। পৃথিবীর সকল মানুষকে এই আশ্বাস বাণী শুনিয়েছিলেন, শুনিয়েছিলেন মঙ্গল বাণী। প্রবক্তা জেফানিয়া বলেছিলেন-“ভয় করো না সিয়োন, নিরাশায় যেন অবশ না হয় তোমার হাত। কারণ, তোমাদের ঈশ্বর, স্বয়ং ভগবান এখন তোমাদের কাছেই রয়েছেন, মহাযোদ্ধা, মুক্তিদাতা তিনি, তোমাকে নিয়ে তিনি গভীর আনন্দে আনন্দিত হবেন, তার প্রেমে তিনি তোমাকে নতুন করে গড়ে তুলবেন।”(৩:১৮) এ বাণীর মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, ঈশ্বর মানুষকে কতই না ভালবাসেন।
ঈশ্বর নিজেই ভালোবাসা। এ ভালোবাসার মন্ত্র নিয়ে এ দুনিয়াতে যিশু এসেছিলেন- নতুন পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এ পৃথিবীকে নতুন স্বর্গ-রাজ্য স্থাপন করার জন্য। নতুন পৃথিবী-নতুন স্বর্গ গড়ার লক্ষ্যে তিনি তার শিক্ষায়, প্রেম ভালবাসা, সেবা ও ক্ষমা এ মৌলিক উপাদানগুলো-বার বার মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। যারা এ মৌলিক উপাদানগুলো অন্তরে ধারণ করবে তারাই হবে খাঁটি, পবিত্র ও শান্তিকামী মানুষ। যিশু নিজেই ছিলেন সেই ধরনের মানুষ। বড়দিনে সবচেয়ে আনন্দের সংবাদটি হলো “ইম্মানুয়েল” যার অর্থ হলো “ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আছেন।” ঈশ্বর সর্বশক্তিমান- তিনি নিজেই যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে মানুষের রূপধারণ করে এ জগতে এসেছেন। সকল মানুষের হৃদয় মন্দিরে তার বাসস্থান। মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সহভাগিতা করার জন্য তার এ জগতে আগমন। তিনি তার সৃষ্টি মানুষকে আপন করে নিয়েছেন, ভালবেসেছেন অন্তর দিয়ে, তার ভালবাসার মানুষ বিনষ্ট হোক তিনি তা চান না। তিনি উদার ও ক্ষমাশীল ঈশ্বর। তাই পাপী মানুষকে পবিত্র করার জন্য, দুর্বল মানুষকে সবল করে তুলার জন্য, অন্ধকারে চলছে যে মানুষ তাদের আলোর পথে আনার জন্য মানবদেহ ধারণ করেছেন। সৃষ্টিকর্তা-সৃষ্ট মানুষের সাথে বাস করতে আসা বড় আনন্দের সংবাদ।
ভালবাসা-আশা-বিশ্বাস এ তিনটি মঙ্গল বার্তা নিয়েই যিশুর জন্ম। ভালবাসা মানুষের মাঝে আনে প্রেম-প্রীতি, সেবা ও ক্ষমা। আশা মানুষের জীবনে আনে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ ও ঈশ্বরের সাথে মিলনের আকাঙ্খা, আর বিশ্বাস হলো ঈশ্বর ও মানুষের সম্পর্ক স্থাপনের একটি উপায় ও স্বর্গীয় শান্তি লাভের পথ। তাই বড়দিন সকল মানুষের মিলনানন্দের একটি মহোৎসব। শুভ বড়দিন।
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত