২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর আমার জীবনের এক স্মরণীয় ও অতি আনন্দের দিন। আনন্দিত হওয়ার দুটি দিক: প্রথমত, যাজকরূপে অভিষিক্ত হয়েছি বলে আমি খুবই আনন্দিত। এই দিনে আমি পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক দেশ বিদেশের প্রায় ৮০ হাজার লোকের উপস্থিতিতে যাজকরূপে অভিষিক্ত হয়েছি। আমার সাথে আরো ১৫ জন ডিকন যাজকরূপে অভিষিক্ত হয়েছেন। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের সান্নিধ্য ও স্পর্শ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। বলতে পারি এটা আমার জীবনে ঈশ্বরের এক মহাদান ও মহাঅনুগ্রহ। ঈশ্বর আমাকে তাঁর সেবকরূপে মনোনীত ও অভিষিক্ত করেছেন বলে তাঁর ধন্যবাদ ও প্রশংসা করি।
দ্বিতীয়ত, পুণ্যপিতার উপস্থিতি, সান্নিধ্য, স্পর্শ ও আশীর্বাদ এবং দেশ বিদেশের প্রায় এক লক্ষ মানুষের উপস্থিতি আমার আনন্দের আরেকটি কারণ। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অনুভব করেছি ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসা। তাদের প্রার্থনা, একাত্বতা, সাহায্য সহযোগিতা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা আমাকে এই পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি যুগিয়েছে। বুঝতে পেরেছি, খ্রিষ্টভক্তগণ মণ্ডলীকে, ধর্মকে, পোপকে ও আমাকে কত ভালোবাসে। খ্রিষ্টভক্তগণ পোপকে একনজর দেখার দেখার জন্য এবং তার সান্নিধ্য লাভের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন, শুধু তাই নয় তারা অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। আমি ভাবছিলাম, তাঁর স্পর্শ ও সান্নিধ্য লাভের জন্য কত টাকা ব্যয় করে মানুষ ভ্যাটিকানে যান। আর আমি এতই ভাগ্যবান যে পোপ ফ্রান্সিস নিজে বাংলাদেশে আগমন করেছেন এবং আমাকে অভিষিক্ত করেছেন। তাই আনন্দে উল্লসিত হয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছি, তুমি অভিষিক্ত করেছ আমায় তোমার সেবাকাজে/যাজক করেছ তাই এতগান হৃদয় বীণায় বাজে/তোমারই গৌরবেতে।
পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসবেন জেনে আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। পোপকে দেখে আমার চোখ জুড়াবে, তাপিত প্রাণ শীতল হবে এটাই আমার আশা-আকাক্সক্ষা ছিল। কারণ ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় জন পল যখন বাংলাদেশে আসেন তখন আমি ছোট ছিলাম বলে তাকে দেখার সুযোগ পাইনি। এবার সেই সুযোগ পাব বলে তাতেই আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু ঈশ্বরের কি অনুগ্রহ! যা চাইনি, তা-ই পেয়ে গেলাম। চেয়েছিলাম পোপকে দেখতে কিন্তু তাকেই পেয়ে গেলাম। তার সান্নিধ্য, স্পর্শ, আশীবার্দ তো পেলামই তাকেও আশীর্বাদ দেওয়ার সুযোগ পেলাম। এটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পোপের আগমন উপলক্ষ্যে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বাহ্যিক প্রস্তুতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সব ধর্মপল্লীগুলোতেই প্রার্থনা, আরাধনা ও খ্রিষ্টযাগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই সময় অর্থাৎ মে-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় চিকুনগুনিয়া রোগের প্রভাব প্রকট ছিল। অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। আমি এই রোগে আক্রান্ত না হলেও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় প্রায় তিন সপ্তাহ বিশ্রামে ছিলাম। সেই সময়ও পোপের আগমনের ছোঁয়া পেয়েছিলাম। তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটি গান লিখেছিলাম: জয় জয় হে রাজন, জয় জয় তব আগমন। শুভেচ্ছা স্বাগতম, লহো অভিনন্দন। হে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস, দুহাত ভরে দিও গো আশিস—। আমার মনে অনেক আনন্দ ছিল।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই আমরা ১৬ জন ঢাকার বনানী সেমিনারিতে চলে আসি। এখানে থেকে আমরা উপাসনার বিভিন্ন বিষয় অনুশীলন করতে থাকি। খ্রীষ্টযাগে কি হবে, কেমন হবে, কেমন করতে হবে, কি কি থাকবে, উপাসনায় কি উত্তর দিতে হবে সব অনুশীলন করতে থাকি। শেষের দুইদিন ২৯-৩০ নভেম্বর আমরা ঢাকার সোহরাওর্দী উদ্যানে গিয়ে উপাসনার বিভিন্ন দিক অনুশীলন করেছি। ইতোমধ্যে ভ্যাটিকান নিউজ ও উকান নিউজে সাক্ষাৎকারও দিলাম।

ফাদার গৌরব জি. পাথাং
৩০ নভেম্বর ঢাকায় কোন রাত ছিল না। কথাটি বললে আশা করি ভুল হবে না। কারণ কাজের ব্যস্ততায় অনেকেই জেগে জেগে কাজ করেছেন, দূর দূরান্ত থেকে যারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তারা মাঝ রাত থেকেই ঢাকার বুকে পা দিয়েছেন। তাদের কারণে ঘুমন্ত মানুষেরাও জেগে উঠে তাদেরকে সেবা দিয়েছেন। ১ ডিসেম্বর ভোরের আলো ফুটে উঠার আগেই প্রস্তুত হয়ে খ্রিষ্টভক্তগণ সোহরাওর্দী উদ্যানের দিকে রওনা দিয়েছেন। আমরাও দেরী না করে ১৬ জন ডিকন আমাদের পিতা-মাতাসহ সোহরাওর্দীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেতে যেতে চোখে পড়ল রাস্তার দুই পাশে পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। তা দেখে খুবই ভাল লাগল। পুণ্যপিতার প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি তথা রাষ্ট্রের সম্মান চোখে পড়ার মত। ভিআইপি গেইট পার হয়ে পিতা মাতাকে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে ষ্টেজে উঠলাম। এবার পুণ্যপিতার আগমনের পালা। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরই খবর এলো পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস আসছেন তাই সবাই যেন প্রস্তুত থাকে। তিনি এলেন, গাড়ি থেকে নামলেন। সঙ্গে সঙ্গেই মাইকে ধ্বণিত হল- পুণ্যপিতা ফ্রান্সিস, দাও তোমার শুভাশিস। তিনি খোলা জীপে উঠে মাঠ প্রদক্ষিণ করতেই খ্রীষ্টভক্তদের করতালি ও হর্ষধ্বণিতে সোহরাওর্দী উদ্যান মুখরিত হয়ে উঠল। একটু ছোঁয়া, একটু পবিত্র হাতের কোমল স্পর্শ পাওয়ার আশায় অনেকেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউবা পেয়েছেন, কেউবা পাননি। কিন্তু এক নজরে দেখেই তৃপ্ত হয়েছে অনেকের চোখ। মাঠ প্রদক্ষিণ করে যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে পোপ ফ্রান্সিস নির্ধারিত সাক্রিষ্টিতে গিয়ে আমাদের সাথে দেখা করলেন। আমাদের উদ্দেশ্যে যাজকীয় জীবনে সৌন্দর্য-মাহাত্ম্য, আনন্দ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বললেন। পরে তিনি মা মারিয়ার নিকট প্রার্থনা করার অনুরোধ করলেন এবং একসাথে আমরা ইংরেজিতে প্রার্থনা করলাম। অতঃপর তিনি সবাইকেই রোজারী মালা দিয়ে প্রার্থনা করতে বললেন। আমরা তার হাত চুম্বন করে আশীবার্দ নিলাম।
খ্রিষ্টযাগের শোভা যাত্রায় এসে দাঁড়ালাম। “এসো তার মন্দিরে করি স্তব গান” — এই গানের ছন্দে ছন্দে এগিয়ে চললাম। শোভাযাত্রা শেষে বেদীর একপাশে এসে দাঁড়ালাম। তিনি আমাদের সামনে এসে প্রত্যেককেই ধুপারতি দিলেন। পোপ আমাদের ধুপারতি দিবেন তা ছিল কল্পনার বাইরে। দেখলাম পোপ হয়েও আমাদেরকে ধুপারতি দিলেন। এটা বড় সুভাগ্যের ব্যাপার। যথাসময়ে অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হল। তিনি আমাদের প্রত্যেককের মাথায় হাত রেখে প্রার্থনা করলেন। আমরা তার পবিত্র হাতের ছোঁয়া পেলাম। ভাবছিলাম, সব কিছু মাথা পেতে নিচ্ছি, পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করছি। তারপর তিনি অভিষেক তেল দিয়ে আমাদের দুই হাত লেপন করলেন। তার ফলে দুই হাত পবিত্র হয়ে উঠল। পবিত্র তেল মোছার জন্য পিউরিফিকেটর দেওয়া হল। পিউরিফিকেটরে হাত মুছলাম এবং সারা জীবন স্মৃতিচিহ্নরূপে রেখে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। পরে তা স্মৃতিচিহ্নরূপে সযতেœ রেখে দিলাম। শান্তি-শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি হাসিমুখে আমাকে আলিঙ্গন করে বুকে টেনে নিলেন। আমিও তাকে আলিঙ্গন করলাম। এই আলিঙ্গনে তাকে আমি আপন করে পেলাম। খ্রীষ্টযাগের পর একসাথে ছবি তোলা হল। স্মৃতিতে চিরদিনের জন্য গেঁথে গেলাম। পরে তিনি আবার সাক্রিষ্টিতে গিয়ে আমাদের দু’হাত চুম্বন করে আমাদের ধন্য করলেন এবং আমাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ যাচনা করে বিনম্র্রতার আদর্শ প্রকাশ করলেন। আমরা ১৬ জনই তাকে ইংরেজিতে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে আশীর্বাদ প্রদান করি। খ্রীষ্টযাগ সমাপ্ত হতেই আমি এক বাড়িতে গেলাম এক ছোট মেয়েকে পুণ্যপিতার আশীর্বাদিত ও অভিষিক্ত তেলে লেপন করা হস্তে আশীর্বাদ করতে। কারণ সেই মেয়েটি অনেকদিন ধরেই শারীরিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থতায় ভুগছে। সেই পরিবারের লোকেরা আমাকে পেয়ে খুবই আনন্দিত হল। তারা বলতে লাগল, আমরা পোপের স্পর্শ পাইনি ঠিকই, কিন্তু তোমার হাতের স্পর্শ পাওয়ার মাধ্যমেই পোপের স্পর্শ পেয়েছি। ভাবছিলাম, লোকদের বিশ্বাস ও ভক্তি কত গভীর! যাজকদের প্রতি লোকদেও ভক্তি ও ভালবাসা যে কত গভীর তা বুঝতে আর বাকি রইল না। ৩ ডিসেম্বর ফৈলজানা মিশনে ফিরেই পর্বীয় খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করলাম। খ্রিষ্টযাগের পর আমার হস্তচুম্বনের জন্য সারিবদ্ধভাবে সবাই আসতে লাগল। সবাই বলছিল, আপনি পোপের স্পর্শ পেয়েছেন, সেই স্পর্শ আমাদেরকেও দেন। আপনার পবিত্র হাতে আমাদেরকে আশীর্বাদ করেন। খ্রীষ্টভক্তগণ সবাই একে একে আমার হাত চুম্বন করলেন এবং আশীবার্দ নিলেন। তাদের ভক্তি, বিশ্বাস ও ভালবাসা আমায় মুগ্ধ করল এবং সামনে এগিয়ে যাবার শক্তি দিল। আজ উপলব্ধি করছি, পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক যাজকরূপে অভিষিক্ত হওয়ায় আমার প্রতি খ্রিষ্টভক্তদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চাওয়া একটু ব্যতিক্রম। ওরা চান, আমি যেন পোপের মতই পবিত্র ও আদর্শ মানুষ হই।
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
-
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবতোষ যেত্রা আর নেই
: হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পাস্টার...
-
কেনিয়ার কৃষকরা হাতি তাড়াচ্ছে মৌমাছি দিয়ে
: কেনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কৃষকরা।...
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত