Thokbirim | logo

৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

জীবনের যত অম্ল-মধুর স্মৃতি ।। হার্ডডিস্কের মেমোরি ।। জর্জ রুরাম

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৮, ২০২০, ১৮:৩৮

জীবনের যত অম্ল-মধুর স্মৃতি ।। হার্ডডিস্কের মেমোরি ।। জর্জ রুরাম

শিশুকাল থেকেই আমি মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত। আমাকে নাকি চাম্পা কলা চেটকিয়ে খাওয়ানো হতো।

আমার জন্ম রাণীখং গ্রামে।ডাকঘর রাণীখং, উপজেলা দূর্গাপুর, জেলা নেত্রকোণা। বাড়িটা রাণীখং হাই স্কুলের পশ্চিমে, টিলার উপর। এখানেই আমার শিশুকাল, বাল্যকাল কেটেছে।

গ্রামে আমি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এরপর আমি পরবাস। পঞ্চাশ দশক থেকে বান্দুরা, ঢাকা, করাচি ছাত্রাবস্থায় ঘরের বাহিরে। পেশাগত চাকুরির খাতিরে ১৯৭২, আগস্ট মাস থেকে খৃস্টীয় সাহিত্য সংসদ, প্রতিবেশী, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ ও জয়রামকুড়ায় কাজ করেছি ২০১৬ পর্যন্ত।

আমার অফিসিয়াল নাম জর্জ নীলু রুরাম। এটাই আমার বাপ্তিজম কার্ডে রেকর্ডকৃত নাম। আমার জন্মসাল গির্জার বাপ্তিজম কার্ডে ২৮ডিসেম্বর, ১৯৪৬। কিন্তু ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় আমার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে লেখা হয় ৪ মার্চ, ১৯৪৫। এখন এটাই অফিসিয়াল রেকর্ড। একাডেমিক রেকর্ডটাই এখন ব্যবহার করি। বাবা রাণীখং মিশনে কাজ করতো। ময়মনসিংহে যাওয়া আসা করত পদব্রজে। একদিন গিয়ে মার্কেটিং করত মিশন ফাদারদের জন্যে তারপর তিন দিনের মাথায় আবার পদব্রজে মিশনে ফিরে আসতো।

বাল্যকালে রাণীখং স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। যতদূর মনে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ছিলো, শুভ-রূপ (দুবোন), কুৎচিলা, যতীন্দ্র চন্দ্র সিংহ, বশির, আবদুল গণি। শুধু এদের নামগুলোই মনে পড়ছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি পড়েছি বিরিশিরি পি,সি.নল মেমোরিয়াল হাইস্কুলে। আমার ক্লাশমেট ছিল রবীন্দ্র হাজং (সেতার বাদক সিলেট), তার বড়ভাই, চিত্তরঞ্জন সাংমা, তার বড় ভাই নির্মল সাংমা, তোতা, ফজলু, পিউস, বোয়ালমারার দুই মামু ভাগিনা, আব্দুল হাই, আশিষ বাউল, রতন বাউল, সূধীর চন্দ্র কর্মকার, সুকুমার সাহা, বিমল সাহা। প্রাইমারিতে যে শিক্ষকদের পেয়েছি তাঁরা হলেন, শ্রদ্ধেয় ডানিয়েল আর, রুরাম, জন হাজং, যোসেফ হাজং, আন্তনী দিদি, সতীন্দ্র রিছিল, ধীরেন রুরাম।

ডানিয়েল স্যার পড়াতেন গণিত ও উর্দু। তিনিই এ কথাটি বলতেন,

ঘসনং মাঞ্জনং চোরা,

মন গেছে বহু দূরা

বজঝি আমি তোমার ভাব

তুই আমারে মারত চাস।

সতীন স্যার খুবই কড়া। সব সময় বাঁশের কঞ্চি আর মিসিনডালে কচি ডাল টেবিলে রাখত। ব্যতিক্রম হলেই বেত। তাও আবার হাতে। আরেকটা শাস্তি ছিল বেঞ্চের উপরে দাঁড়ানো।

বশিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ডে স্মরণে আনতে পারেনি। বিরিশিরিতে মাননীয় শিক্ষকদের পেয়েছি সুভাষ চন্দ্র সাংমা, বকুল স্যার, মিনি বাহাদূর, পণ্ডিত (দূর্গাপুরের), অশ্বিনী স্যার।

মার্বেল খেলতাম সড়কে। রাণীখংএ সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড় ছিল আলবার্ট রিছিল। নীড় নামে মেয়েটাও খেলতো আমাদের সাথে। তার মাবাবা এলাকায় পরে থাকেনি, অন্যত্র চলে গিয়েছিল। রোববারে বিজয়পুর বাজার দিনে সড়কে মার্বেল খেলতাম আর বিক্রি করে লাড়ু খেতাম।

তখনকার দিনে পঞ্চাশ দশকে বিজয়পুর বাজার দারুণ জমতো। আজকালকার প্রজন্মরা শুনলে অবাক হবে যে, মাধবপুর, বামনপাড়া, নয়াপাড়া গ্রামগুলোর গারো মহিলারা বাজারে চাল ব্যবসা করত বিজয়পুর, কামারখালি ও শিবগঞ্জ বাজারে

বিজয়পুর বাজারে স্থায়ী মুদি দোকান ছিল বলরাম ও খলিফার দোকান। খলিফার চা দোকান গারো কাস্টোমারে ভর্তি থাকত। এখনো বলরাম ও খলিফার বংশধর ক্যাম্পের কাছে রয়েছে। পচু খলিফার বড় ছেলে। আসল নাম শামসুল হক। দীপক ও পুলক বলরামের বংশধর।বলরাম খোড়া ছিলেন। ক্যাম্পের ইপিআরদের সাথে ভাল সদ্ভাব ছিল। বলরামের বড় ছেলের নাম রবি সাহা। দীপক ও পুলক তার ছেলে। বিজয়পুর বাজারে নদীর ওপাড়ে ভবানীপুরের লোকেরাও বাজার করতে আসত। নৌকায় করে পারাপার করত। বিরিশিরি স্কুলে আমরা যেতাম এ অঞ্চল থেকে লিনুস রুরাম, শামুয়েল হাজং, পিউস রিছিল, ইগ্নেসিয়াস দাওয়া, সৌল রেমা, অমূল্য দে, যতীন রুরাম, জেমস রুরাম, নলিনী রুরাম।

সকালে ভাত খেয়ে যেতাম আসতাম বিকেলে। তখন তো আজকের মত বাইরে থেকে আসলেই নাস্তা পাওয়া যেত না। তবুও কিছু লাগেনি, খেলতে যেতাম তারপর স্নান। একদল মিলে সোমেশ্বরীতে স্নান। ভালই লাগত।

চলবে...



সীমিত পরিসরে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হলো গুলশান-বনানী ওয়ানগালা

গারো ভাষায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নির্মিত হলো নতুন গান

সহকর্মীদের কর্মজীবনে ঘটে যাওয়া ব্রাদারের কিছু স্মৃতি ।। মানুয়েল চাম্বুগং

মুখ ও দাঁতের যত্নে প্রথম যে ৩টি কাজ আপনাকে করতেই হবে ।। মার্ক প্রত্যয় রেমা

মুখ ও দাঁত নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা ।। ডা. মার্ক প্রত্যয় রেমা

ব্যথাকে নয় রোগকে ভালো করুন ।।  ডেন্টাল সার্জন মার্ক প্রত্যয় রেমা

বাবা’রা কেমন হয়? ভাবি… ।। পরাগ রিছিল

ওয়ানগালার তাৎপর্য ও গুরুত্ব || রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক

ওয়ানগালার ইতিহাস ।। রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক

দওক্রো সুআ রওয়া বা ঘুঘু পাখির নাচ ।। তর্পণ ঘাগ্রা

বাসন্তী রেমার নতুন জীবনের সূচনা, তৈরি হচ্ছে দোকান ও পাঠাগার

শুভ বিজয়া দশমী ।। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হল দুর্গাপূজা

নভেম্বরে নতুন গান ‘সালনি থেং’সুয়ে’ নিয়ে আসছে গারো ব্যান্ড দল-ব্লিডিং ফর সার্ভাইভাল




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost