Thokbirim | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

আজিয়া হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২৪ বছরে পা রাখল ।। বাবুল ডি’ নকরেক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৯, ২০২০, ১২:৪২

আজিয়া হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২৪ বছরে পা রাখল ।। বাবুল ডি’ নকরেক

এক

সংগ্রামী সহযোদ্ধাগণ, সবাইকে আজিয়ার সংগ্রামী শুভেচ্ছা। আজ থেকে ২৪ বছর আগে ১৯৯৬ সালে মধুপুর আবিমার দুঃসময়ে আজিয়ার জন্ম হয়েছিল। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রগতি এই ৩টি মূল বিষয়কে সামনে রেখে আমি, আমার বন্ধু প্রশান্ত চিরান, জর্জ নকরেক, লুই চিরান (সাংমা), প্রশান্ত রুগা, রেখা নকরেক, রজতি চিরানকে সাথে নিয়ে আজিয়া প্রতিষ্ঠা করি। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রগতিই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে সর্বোপরি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।  “WE NEED CHANGE” ছিল আমাদের স্লোগান। আমরা যেখানে যেখানে পরিবর্তন প্রয়োজন, সেখানে পরিবর্তন আনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নীরবে কাজ করে গেছি। আজিয়া’র সদস্য হওয়ার জন্য আমরা বয়স অবারিত রেখেছি। এখানে যে কোন বয়সের গারো জনগোষ্ঠীর যে কেউ সদস্য হতে পারেন এবং নির্বাচন করতে পারেন। বাগাছাস, গাসু, জি এস এফ এবং অন্যান্য সংগঠনের বর্তমান প্রাক্তন নেতা – কর্মীদের জন্যও এর দ্বার সব সময় উন্মুক্ত ছিল আশা করি আমাদের পরবর্তী প্রজম্মও সে ধারা অব্যাহত রাখবেন।

 

দুই

আবিমা’র ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিল। তাই আমরা সেদিকে  নজর দিয়েছি। আমরা মিছিল মিটিং করি নি। কিন্তু প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক রেখে আমাদের ছেলে মেয়েদের সরবোচ্চ ভর্তির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ২৪ বছর আগে, আবিমায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ার সংখ্যা ৫ আঙুলে গোনা যেত! আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্কুল – কলেজ পড়য়া সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছি। বিগত ২৪ বছরে তাঁর সুফল আমরা নিজের চোখে দেখেছি। আমরা শতাধিক গারো ছাত্র – ছাত্রীকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পড়াশুনায় সহযোগিতা করেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভর্তির জন্য ১ টি আসনের বিপরীতে ৫ টি আসন নিশ্চিত করেছি। সেখানে শুধু মাত্র গারোদের জন্য এমফিল ও পি এইচ ডি করার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে! গারো ছেলে-মেয়েদের এম ফিল এবং পি .এইচ . ডি করার জন্য সুযোগ আজিয়া এনে দিয়েছে। যা এখনও চলমান।

তিন

আজিয়া ব্রহ্মপুত্রের এপাড়ের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজিপুর, জামালপুরের গারোদের একত্রিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে।  আশা করি তা অব্যাহত থাকবে। আমরা শিক্ষা বিস্তার, সংস্কৃতি উন্নয়ন, প্রগতি, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং রাজনৈতিক সচেতনতার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করেছি। আমরা নতুন প্রজন্মকে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছি। আমরা দেখিয়েছি, মানুষ  ইচ্ছে করলে অনেক দূর যেতে পারে। আমরা দেখিয়েছি, ইচ্ছে থাকলে বাবা মায়ের  টাকা না থাকলেও পড়াশুনা চালিয়ে নেওয়া যায়। আজিয়ার প্রায় প্রতিটি নেতা – কর্মী কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় পার্ট – টাইম জব কিংবা টিউশনি করে পড়াশুনা করেছেন।

চার

পড়াশুনা শেষে, আমাদের নেতা – কর্মীরা যেন বেকার না থাকেন আমরা সেদিকেও  দৃষ্টি দিয়েছি। আমরা আমাদের যোগাযোগ, নেটওয়ার্ক সকল এনজিও, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জাতি সঙ্ঘ পর্যন্ত বিস্তৃত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। গারো ছেলে-মেয়েরা যান সরকারী চাকুরী পায়, তার জন্য সরকারের সরবোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত লবি এন্ড এডভোকেসি করা হয়েছে। এর সুফল আমরা পেয়েছি।

পাঁচ

আমাদের সব থেকে বড় অর্জন, আমরা মৃত প্রায় ‘জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ’ কে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছি! ৩৫ বছর পর জয়েনশাহীকে পুনরায় উজ্জিবিত করার পেছনে আজিয়ার ভূমিকা অনেক। আজিয়ার জন্ম না হলে হয় তো জয়েনশাহী উন্নয়ন পরিষদ নির্বাচন বিহীনতার ৫০ বছর অতক্রম করত আজ! আমরা জয়েনশাহীর নির্বাচন চেয়েছি, নির্বাচন হয়ে ৩৫ বছর পর। নির্বাচনে জেতা আমাদের লক্ষ ছিল না। আমাদের লক্ষ ছিল আমাদের মাতৃ সংগঠন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলুক।  জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ আবারও আগের ধারায় ফিরে যাচ্ছে। এটা দুঃখ জনক।  মনে রাখতে হবে, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ আমাদের  মাতৃ সংগঠন। এই সংগঠনের অনেক লড়াই – সংগ্রামের ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে, এর সাথে  আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত। এই সংগঠনকে গতিশীল এবং গণতান্ত্রিক পথে রাখাও আমাদের দায়িত্ব। তাই এই সংগঠনের নেতাদের বিনা নির্বাচনে চেয়ার দখল করে থাকতে দেয়া যাবে না, ঘুমাতে দেয়া যাবে না। তাঁদের মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙ্গাতে হবে, প্রয়োজনে সাহায্য- সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের এখানে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, বাগাছাস, গাসু এবং জি এস এফ রয়েছে।  তাঁদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে একযোগে কাজ করতে হবে।

ছয়

আজিয়া হাটি হাটি পা পা করে ২৪ বছরে পা রাখল। আজিয়া এখন পরিপূর্ণ যুবক। আমি বিশ্বাস করি আজিয়ার আগামী নেতৃত্ব যেখানে যা পরিবর্তন আনা দরকার, সেখানে যুগোপযুগী পদক্ষেপ নিবেন। আমি তাঁদের সফলতা কামনা করি।

“এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়।”

আমি বিশ্বাস করি, আজিয়া এখন যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত। আজকের এই মহেন্দ্র ক্ষণে আমি আজিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে, আজিয়ার বিগত কেন্দ্রীয় পরিষদের সংগ্রামী সহযোদ্ধা আজিয়ার মহাসচিব, মিঃ প্রশান্ত চিরান এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের পক্ষে আমাদের পরবর্তী প্রজম্মের হাতে আজিয়া’র সাংগঠনিক নেতৃত্ব তুলে দিতে পেরে আনন্দিত, গর্বিত। আজিয়া’র সব থেকে বড় সফলতা, আমরা আমাদের যোগ্য উত্তরসূরি প্রস্তুত করতে পেরেছি, যোগ্য  নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারছি।

সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকের সাথে অনেক সময় কঠোর হতে  হয়েছে, কারো কারো সাথে দ্বিমত পোষণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়েছে। কাউকে কাউকে মনঃকষ্টও দিতে হয়েছে। গত ২৪ বছরে, ১২ বছর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের অনুপস্থিতিতে গত ৮ বছর আমার স্নেহ ভাজন, সহযোদ্ধা মি. মিথুন হাগিদক এবং আমাদের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদিকা মিসেস সুপর্ণা ম্রং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন, আজিয়াকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। ২৪ বছরের পথ চলার মাঝখানে আমাদের সহযোদ্ধা জর্জ নকরেক এবং লুই চিরান ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা তাঁদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি।  নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন দিতে না পারা টা আমাদের একটি ব্যর্থতা। এজন্য আমি আমাদের কেন্দ্রীয় পরিষদের সকলের হয়ে ক্ষমাপ্রার্থী।

গত ২৪ বছরে আমাদের যেমন সাফল্য অনেক, তেমনি ব্যর্থতাও অনেক। সাফল্যের  জন্য আমার সহযোদ্ধা, নেতা – কর্মীদের ধন্যবাদ। তাঁদের শ্রম, সময়, ঘামের  বিনিময়ে আমাদের এই অর্জন। সকল ব্যর্থতার দায়ভার আমার। আমার ভুলগুলো ক্ষমা করবেন। আমি আজকের এই মহেন্দ্রক্ষণে, আজিয়ার কেন্দ্রীয় পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করছি।

বাবুল ডি’ নকরেক

প্রেসিডেন্ট (প্রাক্তন), আজিয়া সেন্ত্রাল কেবিনেট

নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

 

বাবুল ডি’ নকরেক :  প্রেসিডেন্ট (প্রাক্তন), আজিয়া সেন্ত্রাল কেবিনেট। কবি ও গল্পকার। বর্তমানে তিনি  নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র-এ বসবাস করছেন।



https://www.youtube.com/watch?v=LS48RytSUrA&t=58s

দওক্রো সুআ রওয়া বা ঘুঘু পাখির নাচ ।। তর্পণ ঘাগ্রা

দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক নিউজপোর্টালের উপর মানুষ নির্ভর করবে।। নিখিল মানখিন

আবিমা গারো ইয়ুথ এসোসিয়েশন (আজিয়া)’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন

আত্মকথা ।। জীবনের বাঁকে নোঙ্গর ।। ফাদার শিমন হাচ্ছা

আত্মকথা ।। আমার বাইপাস অপারেশন ।। ফাদার ‍শিমন হাচ্ছা

আমার প্রিয় মানুষ সুভাষ জেংচাম ।। ফা. শিমন হাচ্ছা

 

 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost