Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ওয়ানগালার তাৎপর্য ও গুরুত্ব || রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৫, ২০২০, ১৫:২৫

ওয়ানগালার তাৎপর্য ও গুরুত্ব || রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক

ওয়ানগালা গারোদের প্রধান কৃষি উৎসব। এ উৎসব শুধু আমোদ-প্রমোদ, নাচ-গান, ভোজন-পানেরই নয়, এতে যুক্ত রয়েছে দেবদেবীগণ। যারা ফসল দেন, রক্ষা করেন, স্বাস্থ্য দেন, আশীর্বাদ করেন, সেসব দেবদেবীদের স্মরণ করা, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা তাঁদের ধন্যবাদ দেয়া, পূজা-অর্চনা করা ও সম্মুখ বছরের জন্যে স্মরণ করা, তাঁদের কাছে অনুরূপ আশীর্বাদ চাওয়ার উৎসবই ওয়ানগালা উৎসব। তার সঙ্গে রয়েছে যেসব মঙ্গল ও আশীর্বাদ তারা পেয়েছে, তার আনন্দ প্রকাশের জন্যে আমোদ-প্রমোদ, ভোজন-পান, বাদ্য-বাজনা, নাচ-গান ইত্যাদি। এভাবে দেবদেবীদের না ভুলে তাদের সঙ্গে গভীর ও ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক বজায় রেখে গারোরা জীবন যাপন করতে চায় এ জগতে। তাই তারা প্রতি বছর দেবদেবীদের স্মরণার্থে পালন করে থাকে এ ওয়ানগালা উৎসব।

দূর অতীত থেকেই, অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকেই সত্য-অসত্য সব জাতির মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিলো। কারণ জীবন ধারণের জন্যে খাদ্যের প্রয়োজন ছিলো এবং এখনো আছে। তাই কৃষি কাজের আরম্ভে, শস্য বপন কালে, বাড়ন কালে, চয়ন কালে, চয়নোত্তর কালে মানুষ যুতে যুগে কৃষি উৎসব পালন করে এসেছে। তারা  দেবদেবীদের স্মরণ করেছে, তাঁদের সম্মান দিয়েছে, নিজেরাও মনের আনন্দে আমোদ-প্রমোদ করেছে। দেবদেবীদের সঙ্গে তাদের সর্ম্পকের ঘনিষ্ঠতা বরাবর বজায় রেখে চলেছে।

বাইবেলে কৃষি ও কৃষি ভিত্তিক ধর্মীয় আত্মিক পর্ব পালনের কথা আছে। আদি মানব আদম বাগানের কৃষিকাজ করতে ও তা রক্ষা করতে তাঁকে এখানে রাখা হয়েছিলো। এ কথা আমরা সবাই জানি এবং বিশ্বাস করি। আর এতে আমরা জানতে পারি, ঈশ্বর শুধু মানুষই সৃষ্টি করেননি, তাঁর খাদ্যের কথাও চিন্তা করেছিলেন এবং  ব্যবস্থাও করেছিলেন। তাঁর দু ছেলে (কাইন ও আবেল) যথাক্রমে ভূমির ফসল ও পাপের প্রথমজাত কয়কটি পশু ঈশ্বরের নামে উপহার উৎসর্গ করেছিলেন। এমনিভাবে বাইবেলের লেবিয়, গণনা ও দ্বিতীয় বিবরণ ইস্রায়েলের বিবরণ পুস্তকে ইস্রায়েল জাতির পালনীয় পর্ব উৎসব উদযাপনের নির্দেশ দেখা যায়। ভক্ষ নৈবেদ্য, পেয় নৈবেদ্য, সহস্র অগ্রিমাংশের আঁটি, দোলনিয় নৈবেদের‌্য আটি, সপ্তম মাসের পনের তারিখে ভূমির ফসল সংগ্রহ করলে পর ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সাত দিন উৎসব পালন। আর ঈশ্বর তাদের ভূমিজাত সবরকম শস্যের দশমাংশ ও অগ্রিমাংশ তাঁকে দিতে বলেছিলেন। এ প্রসঙ্গে সন্তান-সন্ততিদেরকে শিক্ষা দিতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন যেন তারা নিজেদের শ্রমে ও বুদ্ধি বলে এ সব ধন-সস্পদ পেয়েছে বলে মনে মনে অহংকার না করে, ঈশ্বরকে ভুলে না যায়। কারণ তিনিই তাদের এ সব পেতে সামর্থ দেন। আর তিনি তাদের আদেশ করেছিলেন, যেন তারা ঈশ্বরের মনোনীত স্থানে তাদের ছেলেমেয়ে, দাসদাসী, লেবিয়, বিদেশি, পিতৃহীন ও বিধবা সবাই ঈশ্বরের সম্মুখে আনন্দ করে। বাইবেলের এসব আদেশ-নির্দেশ জানতো না। কিন্তু তারা এসব শিক্ষা ও নির্দেশ তাদের পৌরার্ণিক কাহিনিগুলোর দেবদেবীদের কাছ থেকে পেয়েছে। বিশেষভাবে সালজং, দেবতা গারোদের পূর্ব-পুরুষদের ধানের বীজ দিয়েছেন। কৃষি শিক্ষা দিয়েছেন, তাকে না দিয়ে ভূমির কৃষিজাত ফসলাদি খেতে নিষেধ করছেন, তাঁকে স্মরণ করতে বলেছেন, প্রতি বছর আশীর্বাদের কথা বলেছেন। তাই গারোরা প্রতি বছর সমাষ্টিগতভাবে ওয়ানগালা উৎসব করে আসছে। আর এটাই বছরের শেষ ও প্রধান উৎসব।

গারোদের ওয়ানগালা উৎসব মূলত জুমচাষকে কেন্দ্র করে হলেও সমভূমিতে যেসব গারো কাদামাটি চাষ করে, তারাও ওয়ানগালা উৎসব পালন করে থাকেন। কারণ গারোরা সাধারণত ও প্রধানত কৃষি নির্ভর জীবন যাপন  করে থাকে।, তারা বছরে বারো মাসই কৃষিতে নিযুক্ত থাকে। ‘রবিনস বার্লিং’ তাদের বারো মাসের কৃষি কাজ তাঁর ‘রেংসাংগ্রি’ নামজ পুস্তকে প্রথম ও দ্বিতীয় বছরের কৃষি খেতের কৃষিকাজের কৃষিচক্র সুন্দরভাবে এঁকে   দেখিয়েছেন। সেগুলো নিম্নরূপ-

(০১)    নকনা কর্তৃক জমি বণ্টন-নভেম্বর মাস।

(০২)    নতুন জমি পরিস্কারের আরম্ভ (আ۰আ ওয়াতা)–ডিসেম্বর মাস।

(০৩)   জমিতে বরাং (পাহারা ঘর) এর জন্য স্থান নির্বাচন ও পূর্ব প্রস্তুতি জানুয়ারি মাস।

(০৪)    দে۰এন বিলসিয়া এবং রামা খ্রিতা–ফেব্রুয়ারি মাস।

(০৫)    আ۰উতা (দ্বিতীয় বর্ষের জমির ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার)– ফেব্রুয়ারি মাস।

(০৬)   আসিরক্কা (মন্দশক্তি তাড়ানো)–মার্চ মাস।

(০৭)    গামদিম দাং۰আ (দ্বিতীয় বর্ষের জমি পরিস্কার করা)–মার্চ মাস।

(০৮)   (কাটা গাছ ও ঝোপ-জঙ্গল পোড়ানো)–মার্চ মাস।

(০৯)   আ۰গালমাকা– মার্চ মাস।

(১০)    বোরাং তৈরি–এপ্রিল মাস।

(১১)    আজাকরা (দ্বিতীয় বর্ষের শস্য খেতে প্রথম নিড়ানো)–এপ্রিল মাস।

(১২)    আজকরা (প্রথম বর্ষের শস্য খেতে প্রথম নিড়ানো) –মে মাস।

(১৩)   (ভুট্টা ফসল তোলা)–জুন মাস।

(১৪)    আ۰ব্রেং দাংআ(দ্বিতীয় বর্ষের শস্য খেতে নিড়ানো)–জুন মাস।

(১৫)    ডম আমুয়া–জুন মাস।

(১৬)   বামিল (প্রথম বর্ষের ক্ষেত নিড়ানো)–জুলাই মাস।

(১৭)    জোয়ার তোলা–জুলাই মাস।

(১৮)   আ۰ব্রেং রাৎতা (দ্বিতীয় বর্ষের কৃষি খেতে আর্বজনা কেটে ফেলা)–জুলাই মাস।

(১৯)    গামফাং দাংআ (প্রথম বর্ষের কৃষি ক্ষেত নিড়ানো)–আগস্ট মাস।

(২০)    রংচুগালা (আগস্ট মাস)।

(২১)    মি۰মিসি (ধান তোলা)–আগস্ট মাস।

(২২)     (পুরাতন ক্ষেত ত্যাগ করা বা বিশ্রাম দেয়া)–আগস্ট মাস।

(২৩)    আহাইয়া বা জামেগাপ্পা–সেপ্টেম্বর মাস।

(২৪)    মু۰রাদরাতা(খেতের বাকি ফসলগুলো যাতে ভাল হয়, সেজন্য খেতের আর্বজনা দূর করা)–সেপ্টেম্বর মাস।

(২৫)    ওয়ানগালা –অক্টোবর মাস।

(২৬)   আ۰বিয়া (কার্পাস খেতে শেষ নিড়ানো)–অক্টোবর মাস।

(২৭)     (মরিচ তোলা)–অক্টোবর মাস।

(২৮)   (কার্পাস তোলা)–নভেম্বর মাস।

উক্ত কৃষি চক্র থেকে ও বাস্তব থেকে জানা যায়, গারোরা দ্বিতীয় বছরের ক্ষেত তৃতীয় বছরে ব্যবহার করে না। গারোরা সে জমিতে ছয় বছর বিশ্রাম দেয়। এটাও অনেকটা বাইবেলের আদেশের অনুরূপ। বাইবেলের  লেবিয় পুস্তকের পঁচিশ অধ্যায়ে ঈশ্বর ভূমিকে বিশ্রাম দিতে বলেছেন। এ কৃষি চক্র থেকে আমরা জানতে পাই যে, ওয়ানগালার আগেই সব খাদ্য-শস্য তোলা শেষ হয়ে যায়। ওয়ানগালার পরে খেতে থেকে যায় শুধু মরিচ কার্পাস ফসল। তাই খাদ্য শস্য তোলা শেষ হলেই গারোরা ওয়ানগালা উৎসব পালন করে থাকে। এ উৎসবের মূল উৎস গারো পৌরাণিক কাহিনি ও দেবদেবীগণ। কে প্রথমে ধানের বীজ পেয়েছে, কে প্রথমে জমি চাষ করেছে, কে প্রথমে মদ তৈরির উপাদান পেয়েছে, কে প্রথমে পাতালপুরিতে ওয়ানগালা দেখেছে, কে প্রথমে ওয়ানগালা উৎসব আরম্ভ করেছে, প্রভৃতি সবই গারো পৌরাণিক কাহিনিগুলোতে আছে। তাই তারা খুব গুরুত্ব দিয়েই উৎসব পালন করে। আর আ۰সিরক্কা স্থানের প্রথম পাকা (আশু পক্ক) ধানের ছড়ার আটি সালজং দেবতার স্মরণে ও নামে ঘরের কপালির উপরে ও ঘরের ভিতরে মালজুরির উপর-চালে টাঙিয়ে রাখে। একে ‘মিৎদে মিদং’ বলে।

ওয়ানগালা নন-খ্রিষ্টীয়ান গারোদের প্রধান বার্ষিক উৎসব। এই উৎসব কৃষির সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত, ধমীয় বিশ্বাসের সঙ্গেও এটা সর্ম্পকযুক্ত। বর্ষা বিদায়ের পর শীতের আগমনের আগে বর্ষার ফসল তোলার সেপ্টেম্বর মাসের শেষার্ধ হতে অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে প্রাচীন গারো বর্ষ পঞ্জিকার অষ্টম মাস আঃনিজাতে বাংলার শরৎকালে এ ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হয়

ওয়ানগালা নন-খ্রিষ্টীয়ান গারোদের প্রধান বার্ষিক উৎসব। এই উৎসব কৃষির সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত, ধমীয় বিশ্বাসের সঙ্গেও এটা সর্ম্পকযুক্ত। বর্ষা বিদায়ের পর শীতের আগমনের আগে বর্ষার ফসল তোলার সেপ্টেম্বর মাসের শেষার্ধ হতে অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে প্রাচীন গারো বর্ষ পঞ্জিকার অষ্টম মাস আঃনিজাতে বাংলার শরৎকালে এ ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হয়

গ্রামের সবাই যখন খেতের খাদ্যশস্য সব ঘরে তোলার কাজ শেষ করে, তখন নকমা গ্রামবাসীদের ডেকে এনে ভোজে আপ্যায়ন করেন এবং ওয়ানগালার দিন তারিখ ঘোষণা করেন এতে ওয়ানগালার জন্যে প্রস্তুতি নিতে গ্রামবাসীরা যথেষ্ট সময় পায়। তারিখ ঘোষণার পর তাদের মধ্যে প্রস্তুতির সাড়া পড়ে যায়। ধনী-গরিব সবাই মদ প্রস্তুত করে। হাট-বাজার করে, গরু, শূকর, মোরগ, বাসন-কোসন প্রভৃতি কিনে, পরিবার পরিজনদের জন্যে কাপড়-চোপড় কিনে। গ্রামের পথ-ঘাটগুলো পরিস্কার করে, বাড়িঘরগুলো মেরামত করে। অন্যান্য গ্রাম থেকে যেসব অতিথি আসবে, তাদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। ওয়ানগালার পর্ব দিনে নকফান্থেতে সন্ধ্য-ভোজের আয়োজন করে। গ্রামের সবাই সেই সান্ধ্য-ভোজে অংশগ্রহণ করে। মহিলা ও ছেলেমেয়েরা নকপান্থের ভেতরে ঢুকে না। তারা নকফান্থের সম্মুখের প্রাঙ্গণে বসে। সবাইকে ভোজে আপ্যায়নের পর নকফান্থের যুবকেরা বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজিয়ে ওয়ানগালার নাচ-গানের মহড়া দেয়। পরদিন থেকে ওয়ানগালার শুরু হয়।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের নাম ‘রুগালা’। এইদিনে ভোর বেলায় ‘নকমা’ ‘আসিরক্কা’ স্থানে গিয়ে সালজং দেবতার পূজা করেন। দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরেন। অনেক লোক সমবেত হলে পরে দুপুরের পরে তিনি প্রথমে ভাণ্ডার দেবী (রংদিক মিৎদে) ও গৃহ দেবতার (নকনি মিৎদে) পূজা করেন। পরে ঘরের মালজুরিতে সাজানো নতুন শস্য, শাক-সব্জি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বাদ্যযন্ত্রগুলোর উপর মদ ঢেলে সালজং দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করেন। পরে পর্যায়ক্রমে গ্রামে সবার বাড়িতে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের নাম ‘সাসাৎ সওয়া’ (সালজং দেবতার উদ্দেশ্যে ধূপ নৈবেদ্য উৎসর্গ)। এই দিনের অন্যান্য আকর্ষণীয় দিক হলো-‘ফুরা ওয়ান্থি থককা’ ও রাজকীয় বেশে নকমা ও খামালেরা প্রত্যেক বাড়ির গৃহ প্রাঙ্গণে বৃহৎ বৃত্তাকারে নৃত্য-গীতরত লোকদের মাঝখানে কৃত্রিম ঘোড়ায় চড়ে নৃত্য করা। এটিকে ‘গুরে রদিলা’ বলা হয়। Major A. Playfair এটিকে তাঁর The Garos বইয়ে ‘ওয়ানগালায় গুরে ওয়াৎতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তৃতিীয় দিনের অনুষ্ঠানের নাম ‘দামা গগাতা’ বা ‘জল ওয়াৎতা’ বা ‘রুস্রাতা’। এসবের অর্থ অনুষ্ঠান শেষে নকমার বাড়িতে বাদ্যযন্ত্রগুলো জমা দেয়া, দেবতাদের বিদায় দেয়া, শেষ বারের মতো শেষ পেয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করা। এদিন সবার বাড়িতে সালজং দেবতা ও ধান্য শস্যের জননী ‘রক্ষিমে’র উদ্দেশ্যে মদিরা ও ধূপ উৎসর্গ করে সন্ধ্যের আগে সব বাদ্যযন্ত্রগুলো নিয়ে নকমার বাড়িতে আসে। তখন নকমা ‘সালজং দেবতা’ ও ‘রক্ষিমে’র জন্যে শেষ বারের মতো মদিরা ও ধূপ উৎসর্গ করে প্রার্থনা জানান এবং তাদের ওয়ানগালা উৎসবের অনুষ্ঠান নকমার ঘরেই আরম্ভ ও নকমার ঘরেই সমাপ্ত হয়। তাই মি. মিহির এন, সাংমার ‘মানিয়ানি বিদিক’ বইয়ের ওয়ানগালা কবিতায় বলা হয়েছে-

‘‘রুগালা আ۰বাচেংজক নকমানি নক্কোন,

মাৎচাতো থমথমজক আপসান বিয়াপোন।

খ্রাম গগাত মানা۰জক, জল-ওয়াতা ইন্না,

রক্ষিমেমোন ইনজক, পাতিপিলথাইচিনা।’’

ওয়ানগালা উৎসব বর্ণনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাই বর্ণনা করিনি। ওয়াগালা’র ভোজন-গান, বাদ্য-নৃত্য, গীত-এসব মনের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। এটা বাহ্যিক বিষয়। কিন্তু দেব-দেবীদের ভুলে ন যাওয়া, তাঁদের স্মরণ করা, তাঁদের আশীর্বাদের প্রতিদানে তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো ভয় করা, মান্য করা ও সেভাবে জীবন যাপন করাই ওয়ানগালা’র নিগূঢ় ও আসল বিষয়। তাই বলতে চাই ওয়ানগালা’র তাৎপর্য ওয়ানগালাতেই নিহিত আছে-

‘‘আ۰চিক রাংনি মিংসিংগিপা দাল্লা মানিয়ানি, বিলসি বন্নাংআচিবারা দংআ ওয়ানগালানি।

ওয়ান আরো গালা,

উনি অর্থ আরো,

ডমংগিনিয়ান দারাং,

খুসি আং۰এ রিং۰এ মিদ্দেন রুগানা।

পাতিগিপা রারনগিপানা মিমা মিসিরাংকো,

আক্কোরুকো মেগারুকো মে۰সু সামাজাকরাংকো

সালজং না মিদ্দেনা,

আন۰চেংগিজা চানা

আসি নামজা খেন্না,

ওয়ানাগালা  খিংখিং চা۰জা নাম্মে দাকেন নিম্মা।”

ওয়ানা মানে পাতা, গালা মানে ঢালো বা ফেলো। এখানে আসল অর্থ হলো-ওয়ান মানে নৈবেদ্য, গালা মানে উৎসর্গ। আমরা এভাবেও বলতে পারি-আন۰আ, চিন۰আ ও গালা, এ তিনে মিলে ওয়ানগালা। অর্থাৎ পাতা পারে নৈবেদ্যর বস্তু রেখে পানীয় মদিরা ঢেলে উৎসর্গ করা। এখানে লক্ষণীয় বিষয়, সালজং মিদ্দে  (দেবতা, নৈবেদ্যর বস্তুসমূহ, সেগুলো দেবতাকে দেবার আগে খাওয়া নিষেধ, তা মানা। ‘নিম্মা’ মানে মানা বা পালন করা। কেন?-আসি নামজা খেন্না, অর্থাৎ না মেনে খেলে অমঙ্গলের ভয়। ওয়ানগালা মঙ্গলের জন্যে। আদেশ মানলে মঙ্গল নিশ্চিত, না মানলে অমঙ্গলেও নিশ্চিত। এজন্যই ওয়ানগালা গারোদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ।

সিমসাং ওয়ানগালায় মান্দি যুবকযুবতীদের নাচ

সিমসাং ওয়ানগালায় মান্দি যুবকযুবতীদের নাচ

বাইবেলও আমাদের এ শিক্ষা-ই দেয়, যেন আমরা ঈশ্বরের আজ্ঞার অবাধ্য না হয়ে তাঁর আজ্ঞাবহ হই। কারণ, তাঁর বাধ্যতায় আছে মঙ্গল ও আশীর্বাদ। আর তাঁর অবাধ্যতায় আছে অমঙ্গল ও অভিশাপ। তাই ওয়ানগালার প্রেক্ষাপটে বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকের ছাব্বিশ অধ্যায়ের দশ ও এগারো পদের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখা শেষ করতে চাই। ঈশ্বর বলেছেন-‘এখন, হে সদা প্রভু, দেখ, তুমি আমাকে যে ভূমি দিয়েছ, তার ফলের অগ্রিমাংস আমি এনেছি। এ বলে তুমি নিজ ঈশ্বর সদাপ্রভুর সন্মুখে তা রেখে নিজ ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রণিপাত করবে। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে ও তোমার পরিবারকে যেসব মঙ্গল দান করছেন, সেসবে তুমি ও লেবিয় ও  তোমার মাঝে যেসব বিদেশি তোমরা সবে আনন্দ করবে।’ ঈশ্বরের এ আদেশ মতে ভূমিজাত শস্যাদি তাঁকে দিয়ে, ধন্যবাদের উৎসব করে আনন্দ করার বাধা কোথায়?



সোমেশ্বরী(সিমসাং)নদীর অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

আত্মকথা ।। আমার বাইপাস অপারেশন ।। ফাদার ‍শিমন হাচ্ছা

সংগঠনের ৩১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএমএসসি

বাসন্তী রেমার হাতে তুলে দেওয়া হলো দুই লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা 

কোভিড-১৯ ।। নিজে সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি।। মানুয়েল চাম্বুগং

সামনে আরো ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় গান নিয়ে আসতে পারবো আশা করছি ।। পিংকি চিরান (এফ মাইনর)

গানের শিক্ষক পল্লব স্নাল স্মরণে ।। মতেন্দ্র মানখিন

রাঙামাটিতে চলন্ত সিনজিতে আদিবাসী কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা, আটক ২


 


https://www.youtube.com/watch?v=EZg4QaI2S34&t=6s




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost