ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসে আছি। এতটাই ভারাক্রান্ত যে কোনকিছুই মনকে প্রশান্তি দিচ্ছে না। চারিদিকে এত সমস্যা এত সমস্যা যে, কোনটা রেখে কোনটা সমাধানের কথা বলবো, কোনটা দেখবো কোনটা লিখবো কোনটাকে সবেচেয়ে বেশি গুরুত্বসহকারে নিবো। ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িছে। সে-ই জন্যই শুধু বর্তমান আলোচিত তিনটা বিষয় তুলে ধরতে চাই। বর্তমান সময়ে আদিবাসীরা নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে অবিরত সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি তিনটি গারো এলাকায় বিরাট সমস্যা চলছে। সেই এলাকার গারো আদিবাসীরা খুবই আতঙ্কিত অবস্থায় আছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় তিনটা এলাকাই যেমন প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর তেমনি সম্পদশালী, নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। আবার তিনটি এলাকাই পর্যটন এলাকা হিসাবে সমৃদ্ধ, স্বীকৃত। মধুপুর থেকে বিরিশিরি, বিরিশিরি থেকে সিলেট সমস্যা চলছে তো চলছেই। ইতিমধ্যে আপনারা অনলাইন মিডিয়া কিংবা দৈনিক সংবাদপত্রের মাধ্যমে নিশ্চয়ই অবগত আছেন মধুপুরে গত ১৪ সেটেম্বর’২০ সোমবার সকাল ৯-১০ ঘটিকার দিকে মধুপুরের শালবন ঘেরা পেগামারী গ্রামের বাসন্তী রেমা নামে একজন গারো আদিবাসীর ৪০ শতাংশ জমির ৫০০ টির অধিক কলাগাছ বিনা নোটিশে বনবিভাগ কর্তন করেছে । যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মতো। জানা যায়, বাসন্তী রেমা লোকজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে সমিতি, ক্রেডিট থেকে ঋণ তুলে তিলেতিলে গড়ে তুলেছিলেন স্বপ্নের কলা বাগানটি। এই ধারদেনা ঋণ ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানোর প্রহর গুনছিলেন। মনের স্বপ্ন বাস্তাবায়নে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বনবিভাগ বিনা নোটিশে কিছু না জানিয়ে স্বপ্নের কলাবাগানটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।
আপনারা জানেন মধুপুর একটি গারো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে গারোদের বসবাস শতশত বছর আগে। এই যে যুগ যুগ ধরে চাষাবাদ করে আসছে এইখানে বনবিভাগ উডলট প্রকল্প বাস্তাবায়নের নামে গারোদের জমি দখলের যে চেষ্টা, যা সত্যিই আতঙ্কের । কিন্তু দেখা যায়, যারা হাজার হাজার একর জমি বনখেকোরা দখল করে আছে তাদের বেলায় কোন পদক্ষেপ নিতে তো দেখি না। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন সেটা কেমন বনায়ন(!) আমার জানা নেই। এমনো শুনেছি শালবনে(গজারি গাছে) জৈব সার দিতে। সেটা আমার বোধগম্যে আসে না যে, বনে আবার কিসের জন্য জৈব সার প্রয়োজন(!) যেখানে প্রাকৃতিকভাবেই জৈব সারের ভরপুর। যুগের পর যুগ যে মধুপুরে বসবাসরত আদিবাসীদের নানা সমস্যা চলছে, আসলেই এর দারভার কার! কেন এখনো স্থায়ী সামাধান হচ্ছে না। কেনইবা বারবার শুধু আদিবাসীদের জমিতে চোখ যায়। কেনইবা হাজার হাজার একর বনের জমি উদ্ধার হচ্ছে না। কিংবা প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন কেন করা হচ্ছে? অনেকগুলো প্রশ্ন মাথার ভেতর ঘুরপাক খায়। কত প্রশ্ন থাকে কিন্তু কোন উত্তর নেই। যেই বা যারা প্রতিবাদ করবে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যায়। সাময়িকভাবে এর সামাধান হলেও স্থায়ী কোন সামাধান এখন পর্যন্ত হয়নি।
বিরিশিরি
আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি কামারখালী এবং রানিখং গ্রামের মানুষজন নিজেদের উদ্যোগে নদী ভাঙনরোধে বস্তা ফেলে বাঁধ তৈরি করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। যাতে নদী ভাঙন রোধ করা যায়। কিন্তু যে কাজ রাষ্ট্রের করার কথা সেখানে কেনইবা গ্রামের মানুষদের বস্তা ফেলতে হচ্ছে? প্রশ্নন থেকেই যায়। রাষ্ট্র কি চায়, আদিবাসী গ্রাম বিলীন হয়ে যাক? পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি নিচিহ্ন হয়ে যাক? প্রশাসন কথা দিয়েও কথা রাখেনি,যা ভিডিওতে আমরা দেখেছি, নানা সূত্রে নিউজ পড়েছি। জানি না আর কত ঘরবাড়ি বিলীন হলে গ্রাম নিচিহ্ন হলে প্রশাসনের টনক নড়বে!
বনখেকো’রা যেমন মধুপুরের বন ধ্বংস করেছে, করে চলছে। ঠিক তেমনি বালুখেকোরা বিরিশিরি সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। বালু খেকোদের জন্যই আজ গারো গ্রাম বিলীনের পথে নিচিহ্ন হতে সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন গ্রামের মানু্ষজন সেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধ তৈরি করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। জানি না এর স্থায়ী সমাধান কবে হবে! স্থায়ী বাঁধ আদৌ হবে কিনা(!) প্রশ্ন থেকেই যায়।
সিলেট
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় বড়গোপটিলায় ‘বড়গোপ গারো মাঠটি’ অবস্থিত। ভাগ্যক্রমে সেখানে দু’বার যাওয়া সুযোগ হয়েছে। আশেপাশে এলাকায় এমন মাঠ চোখে পড়েনি। মাঠটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং অনেক বড় একটি মাঠ। মাঠের পাশে স্কুল রয়েছে। এবং মাঠের আশেপাশে গারো জাতির বসবাস। বলা যায় গ্রামের একমাত্র খেলাধুলার জায়গা এই মাঠটি। কিন্তু কি্ছুদিন আগে এই মাঠটি নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী সাথে বাঙালিদেরর বিরোধ বাঁধে। অনেক টালবাহানার পরে সামাজিক শালিস ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত খেলার মাঠ ফিরে পেয়েছে তাহিরপুর সীমান্তের উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন। যা সত্যিই আনন্দের সংবাদ। এই যে চারিদিকে অস্তিত্বের সংকট এইসব যখন শুনি ভারাক্রান্তে চিন্তা করতে বাধ্য হই। এই রাষ্ট্র যদি আদিবাসীবান্ধব হয়ে থাকে, তাহলে আদিবাসীদের কেন এত দুঃখ কষ্ট। কেন বার বার অস্তিত্বের সংকটে পড়তে হয়? পড়তে হচ্ছে? এই করোনাকালীন সময়েও গারো জাতির টিকে থাকার লড়াই সংগ্রাম চলছেই…
আরো পড়ুন
করোনাকালীন সময়ে গ্লাবস, মাস্ক, অ্যাপ্রোন ছাড়াই ডিউটি করতে হয়েছে ।। সাইনী চেক্সী ম্রং
সোমেশ্বরী নদীর তীব্র ভাঙনে আদিবাসী পরিবারগুলো দিশেহারা
https://www.facebook.com/thokbirim/videos/782974379102661
লেখক ও মানবাধিকারকর্মী সঞ্জীব দ্রং
ব্রাদার গিউমের বাংলাদেশে বসবাসের সময় ৪০ বছর পূর্ণ হলো এই বছর। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে ব্রাদার বাংলাদেশের মানুষজনদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সেই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই প্রথম বাংলাদেশে অবস্থানরত নেদারল্যান্ডবাসী ব্রাদার গিউম নেদারল্যান্ড রাজার বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার অ্যাওয়া্র্ড অব দ্যা কিং’ পেলেন। সেই সম্মাননা প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলছেন বিশিষ্ট লেখক ও মানবাধিকারকর্মী সঞ্জীব দ্রং
Gepostet von Thokbirimnews.com am Freitag, 9. Oktober 2020
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
-
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবতোষ যেত্রা আর নেই
: হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পাস্টার...
-
কেনিয়ার কৃষকরা হাতি তাড়াচ্ছে মৌমাছি দিয়ে
: কেনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কৃষকরা।...
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত