Thokbirim | logo

২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের সংহতি প্রকাশ: বাসন্তী রেমার পাশে থাকার প্রত্যয়

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০, ২০:৪৯

দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের সংহতি প্রকাশ: বাসন্তী রেমার পাশে থাকার প্রত্যয়

১৪ সেপ্টেম্বর বন বিভাগ বিনা নোটিশে মধুপুর গড়াঞ্চলের পেগামারী গ্রামের গেটিস যেত্রা এবং বাসন্তী রেমার আবাদি জমির কলাবাগান কেটে সাবার করে দেয়। জমির পরিমাণ ছিলো  ৪০ শতাংশ। বিভিন্ন সমিতি এবং লোকজনের কাছে ধার-দেনা করে তিনি এই বাগান করেছিলেন। কলাবাগান কাটাকে কেন্দ্র করে পুরো মধুপুর গড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও লেখালেখি হয় এবং নিন্দাপ্রতিবাদ জানানো হয়।

গতকাল শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০) দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বাসন্তী রেমার গ্রামের বাড়ি পেগামারী আসেন এবং কর্তনকৃত কলারবাগান  পরিদর্শন করেন। আদিবাসীদের বন্ধু বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই সময় বাসন্তী রেমার বাড়িতে উপস্থিত গ্রামবাসীদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। তাঁরা  গ্রামবাসীর আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন এবং বাসন্তী রেমার দুঃখে সমবেদনা জানান। বাসন্তী রেমার উঠানে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস,  আধিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, কথাসাহিত্যিক অদিতি ফাল্গুনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন কণা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, জনউদ্যোগের সমন্বয়কারী তারেক মিঠুল, কাপেং ফাউণ্ডেশনের প্রতিনিধি উজ্জ্বল আজিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক রিপন চন্দ্র বানাই, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের আহ্বায়ক অনন্ত বিকাশ ধামাই, গারো ছাত্র নেতা জন যেত্রা, গারো নেতা অজয় মৃ, জয়েনশাহী আদিবাসী পরিসদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, কোচ সম্প্রদায়ের বিশেষ প্রতিনিধি গৌরাঙ্গচন্দ্র বর্মণ  প্রমুখ।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন কণা বলেন, আমি ঢাকা থেকে এসেছি বাসন্তী রেমাকে সাহস দিতে নয়, বাসন্তী রেমার কাছ থেকে সাহস নিতে। তিনি আরো বলেন, দোখলা রেঞ্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কারণ এখানেই বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছে। সংবিধানে দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু এখানকার আদিবাসীদেরকেই বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে, তাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা খবর পাই যে, বন্য হাতি এসে ফসল তছনছ করে দেয়। কলাবাগান দেখে আমার মনে হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্য হাতির মতোই কলাবাগান নষ্ট করেছে। এটি কি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান করতে পারে?

কলাগাছের কষের মধ্যে আমি আদিবাসীদের রক্ত দেখতে পাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাসন্তীদি খুব আশা নিয়ে দুই থেকে তিনটি এনজিও থেকে ঋণ করে বাগানটি করেছিলেন। আজকে কলাগাছকে হত্যা করেছে পরে আধিবাসীদের হত্যা করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে প্রত্যেকের সমান অধিকার রয়েছে। কাজেই সবাই বুক ফুলিয়ে চলবেন। আপনাদের বাপ দাদার মাটি ছেড়ে কেউ যাবেন না। যত কষ্ট হোক যন্ত্রণা হোক যাওয়া কোন সমাধান না। আমাদের তাৎক্ষণিক দাবি হচ্ছে, তাকে যথার্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সবাইকে এক থাকতে হবে। এই বার্তাই আমরা দিতে আসছি যে, বাসন্তীদি একা না, আমরা সাবাই মিলে আপনাদের পাশে আছি। আমরা কথা দিয়ে যাচ্ছি। যতবার অন্যায় হবে ততবারই আমরা আসবো। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব।’

সঞ্জীব দ্রং বলেন, জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ৫ ভাগ। এই ভাগ মানুষই শতকরা ৮০ ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে। এই বাংলাদেশেও পাহাড়, নদী, জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করে? এই মধুপুর বনকে সংরক্ষণ করে? বন লাভ বা মুনাফার কোনো বিষয় না। অরণ্য হলো জীবনের প্রতীক। মধুপুর বনকে মান্দি বা গারোরা বলেন আদি মা, মাটির মা। এই সংস্কৃতি তো আমাদের রাষ্ট্র বা বন বিভাগ জানে না। আজকে বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি এই ঘটনায় ব্যথিত হতেন। বাসন্তী দিদির জন্য আমি নিশ্চিত তাঁর আত্মা হাহাকার করছে। কারণ তিনি গরীব দুখী মানুষের কথা ভাবতেন।

জয়েনশাহী আদিবাসী পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীদের জমির যেন আইননত স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির অভাবেই এই সমস্যাগুলোতে পড়তে হয় আদিবাসীদের।

 

।। বিশেষ প্রতিনিধি, মধুপুর




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost