চুনিয়ায় বসবাসের দিনগুলোতে মাঝেমাঝে প্যাগামারি গ্রামে যেতাম জনিক আচ্চুর সঙ্গে। বন পেরিয়ে, নিচু জমির আল ধরে। কারণ প্যাগামারি গ্রামে আমার দাদা-দিদিদের কয়েকজনের বাড়ি। ওখানে একদিন বাসন্তী এসে বলল, মানি (এক্ষেত্রে পিসি) আমি তোমার নামছিক (ভাইয়ের মেয়ে)। তোমাকে ফোন করব মাঝে মাঝে। আমার নাম বাসন্তী রেমা। বাসন্তী ফোন করেনি। কিন্তু দেখা হলেই উজ্জ্বল হাসি হেসে নানা কথা বলে। কাল খবর পেলাম বাসন্তীর কষ্টে গড়া কলাবাগান কেটে দিয়েছে বনবিভাগের লোকেরা। একটা ফসলের ক্ষেত গড়ে তুলতে কত পরিচর্যা, কত পরিশ্রম দরকার হয়। আমি জানি না। শুধু অনুমান করি। যত্নে গড়া ফসল চোখের সামনে কেটে নষ্ট করলে কেমন লাগে, সেটাও কেবল অনুমান করি। তাতেই খুব কান্না পায়।
আমতলী গ্রামে ৫ একর জমির আদা, আনারস, পেঁপে, হলুদ কলা ট্রাক্টর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্যাগামারিতে আমার নামছিক বাসন্তীর কলাবাগানের মনভাঙা ছবি সবাই দেখেছেন। আমাদের অবাক লাগছে এমন কেন হয়? কেন এমন করা হলো? যারা মধুপুর জঙ্গলের মনোরম সবুজ দেখেছেন, তারা জানেন সত্যি কত সুন্দর এখনো সেসব। তবু এমন হয়। আগেও হয়েছে বহুবার।
প্রকৃতির নিয়মে বনে কিছু মানুষ বাস করতেন। তারা বনকে জানতেন এবং যত্ন করতেন। সেসব অপরূপ সুন্দর কিন্তু কঠিন জীবন। তারপর যখন শক্তিশালী রাষ্ট্র তৈরি হলো, রাষ্ট্র ভাবল, এই সব জমি, জলা, পাহাড়- আমার! যেখানে লোক বেশি, সেখান থেকে কিছু লোক নিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি বনের ফাঁকা জায়গায়। তারপর দারুণ হয়েছে ব্যবস্থাপনা, ভেবে শ্লাঘা অনুভব করল। কিন্তু নতুন মানুষেরা বনে বেঁচে থাকার নিয়ম জানতেন না। বন ধীরে ক্ষয় হয়ে গেছে। আদিবাসী শতশত গ্রাম নেই হয়ে গেছে। বনের মানুষ হাতদুটো নিয়ে নগরে এসেছে। বনের দখল নিয়েছে মানব শরীরের জান্তব কিছু প্রাণি।
বৃটিশ আমলে সুগঠিত রাষ্ট্রের সময় থেকেই মধুপুরেও এসব হয়েছে। বারবার বাইরের লোক নিয়ে বনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা বনকে শুধু হত্যা করেছে। আর নানাধাপে সংরক্ষিত বন, ইকো পার্ক করার প্রক্রিয়ায় বন, বন্যপ্রাণি, বনের মানুষ সবাইকে আরো শীর্ণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এবং রক্ষক বলে পরিচিতরা বনের গাছ কেটে নেন। আর হিসেব মেলাতে বনবাসী মানুষের নামে মামলা দেন। কত পরিবার সমস্ত উপার্জন দিয়ে বছরের পর বছর কেবল মামলার খরচ যোগাচ্ছে।
ভাল করে অনুভব করতে যদি চান, বুঝবেন সংরক্ষণ শুধু শীর্ণতা এনেছে। বনের পুষ্টিকর আলু, আনারসের জায়গা নিয়েছে অ্যাকাশিয়া।
।। ফারহা তানজীম তিতিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আদিবাসী সম্প্রদায়ের বন্ধু
আরো লেখা…
নতুন কোনো অশনি সংকেত মধুপুর গড়াঞ্চলের গারো সম্প্রদায়ের জন্য?
বনবিভাগ কর্তৃক জোরপূর্বক বাসন্তী রেমার ৪০ শতাংশ জমির কলাগাছ কর্টন
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত