Thokbirim | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

গারো সম্প্রদায়ের প্রচলিত খেলাধূলা ।। শেষ পর্ব।। মতেন্দ্র মানখিন

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০, ১১:০০

গারো সম্প্রদায়ের প্রচলিত খেলাধূলা ।। শেষ পর্ব।। মতেন্দ্র মানখিন

১০.সাআক মামা

‘সাআক মামা’ মানে অসুন্দর। গারো ছোট ছেলেমেয়েরা ভিজা মাটি কোন কৌটা, নারিকেলের খোল অথবা বাটির মধ্যে সম্পূর্ণ ভরাট করে উপুর করে মাটিতে জোরে চাপ দেয় এবং বাতির চারদিকে আঙুল দিয়ে ঘুরে ঘুরে বলতে থাকে। সাআক মামা- সাআক সাইক মামা। অর্থাৎ তার বাতিটা যাতে সুন্দর আকৃতি ধারণ করে তার জন্য বিপরীত কথা অসুন্দর হোক ‘খারাপ হোক এই কথা বলে। পরে বাতি উল্টিয়ে দেখে ঐ মাটি সুন্দর আকৃতি ধারণ করেছে। কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা এই খেলা খেলতে বেশি পছন্দ করে।

১১. ফুল¬ খা.লা

এটা একটি আধুনিক খেলার মত প্রায়। সাধারণত মেয়েরাই এই খেলা খেলে থাকে। অনেকটা বাংলা ছড়ার মত ছন্দ বলে দুই চার পাঁচজন মিলে এ খেলা চলে। ৪টি মাঝারি আকারের গুটি বা পাথর নিয়ে ছড়ার সাথে সাথে তাল রেখে গুটিগুলো একবার উপরে আরকবার মাটিতে রেখে এই খেলা হয়। যেমন- “ফুল্লাদের ফুল টুকখাইয়া  তুল, টুকখাইয়াতুল দুলি ইত্যাদি। ৪/৫ জন গোল হয়ে বসে পালাক্রমে এই খেলা খেলে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যে নাকি এক নাগারে খেলা চালিয়ে যেতে পারে সেই খেলায় জয়ী হয়।

১২. নকদাং দা.কা

গারো ছেলে-মেয়েরা গাছের ছায়ায় সুবিধামত জায়গায় মাট দিয়ে ঘর তৈরি করে ঘর-সংসারের খেলা করে। আম, কাঠাল ইত্যাদি পাতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর রংবেরং এর ও নানা আকৃতির গরু, ছাগল বানিয়ে আর পাতা  দিয়েই হাড়ি পাতিল বানিয়ে রীতিমত ছোট খাটো সংসার সাজায়। ঐ সংসারে স্বামী স্ত্রী থাকে, ছেলে মেয়ে থাকে চাকর বাকর থাকে। এভাবে খেলার মাধ্যমে তারা পরিবারিক ও সাংসারিক জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। গারো ভাষায় নকদাং মানে সংসার দা.কা মানে করা।

১৩.গোলাদাবারি

এই খেলা শীতের শেষে বসন্ত বা গ্রীস্মকালের চাঁদনী রাতে বা দিনের বিকালে ছেলে-মেয়ে যুবক যুবতীরা দলবেধে খেলে থাকে। একেক দলে ১০/১২ বা তার চেয়ে অধিক সংখ্যক ছেলে মেয়ে,যুবক যুবতী নিয়ে এই খেলা হয়। এই খেলায় সুন্দর পদ্ধতিতে খেলোয়ার ভাগাভাগী হয়। প্রথমে দুই দলের জন্য দুইজন দল নেতা নিয়োগ হয়। বাকি খেলোয়াড়রা তখন জোড়ায় জোড়ায় অন্যত্র গিয়ে কোনো কিছু জিনিসের নামের প্রতীক বাছাই করে এসে দলনেতাদের প্রশ্ন করে। হাতি চায় না ঘোড়া চায়? অথবা বন চায় না মাটি চায়/ ইত্যাদি। দলনেতা যা চায়বে সে হিসেবে সে ঐ দলনেতার ভূক্ত হবে। লোক ভাগাভাগী শেষ হলে মাঠের নিকিণষ্ট সীমারেখা ঠিক করে খেলা শুরু করে। যে কোনো দল প্রথম খেলা শুরু করতে পারে। মাঠের যে কোন এক দিকে ‘গায়মা’ বা সেন্টার ঠিক করা হয়। দলের যে লোকটি খুব পটু তাকেই গায়মা রক্ষার জন্য রাখা হয়। যাকে গায়মাতে রাখা হয় সে যদি ঐ স্থান ছেড়ে নড়চড় করে তাহলে  ঐ খেলা বাতিল বলে গণ্য হয়। কাজেই গায়মা যে হবে তাকে সব সময় ঐ স্থান রক্ষা করে চলতে হয়। ঐ স্থান ছেড়ে দাঁড়ালেই  বিপক্ষদল স্পর্শ করার জন্য তৎপর হয়ে উঠবে এমতাবস্থায় যাকে স্পর্শ করে সেই আউট বা মরা হবে। সে তখন  খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যারা দৌড়িয়ে সীমা রেখা অতিক্রম করতে পারবে তারা জীবিত বলে গণ্য হবে এবং তারা  হাত ধরাধরি করে গায়মাকে সীমা অতিক্রমের সাহায্য করবে। এই ভাবে গায়মার লোক যখন সীমানা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে তাহলে তাদের চুড়ান্ত বিজয় হবে। আর যদি গায়মা সীমা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সকলই মরা বা মৃত বলে গণ্য হবে এবং অন্য দল এসে তখন খেলা শুরু করবে।

এ পর্যন্ত যে ১৩/১৪টি খেলার বর্ণনা দেয়া হল তা গারোদের নিজস্ব খেলাধূলা। এরপর আরও খেলা আছে সেগুলো অন্যান্য সমাজের প্রচলিত। যেমন হা-ডু-ডু, দাড়িয়া বান্দা, কানাাছি, বাঘ ও ছাগল, চেয়ারদখল, তিন পায়ে দৌড় ইত্যাদি।

 

আরো লেখা…

গারো সম্প্রদায়ের প্রচলিত খেলাধূলা ।। পর্ব-১ ।। মতেন্দ্র মানখিন

গারো সম্প্রদায়ের প্রচলিত খেলাধূলা ।। পর্ব-২ ।। মতেন্দ্র মানখিন

গারো সম্প্রদায়ের প্রচলিত খেলাধূলা ।। পর্ব-৩ ।। মতেন্দ্র মানখিন

https://www.youtube.com/watch?v=4YD5GHH2N3o

 




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost