১৯৩৯ সনে শিক্ষিকাদের থাকার ঘরের অভাবের জন্য সাময়িকভাবে থাকিবার জন্য পুরাতন স্কুল ঘরটি তাহাদের জন্য দেওয়া হয়। ১৯৪০ সনে এই স্কুল মিডল ইংলিশ স্কুল রূপে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এই বৎসর বিরিশিরিতে গারো ব্যাপ্টিস্ট ইউনিয়নের স্বর্ণ জুবিলি পালিত হয়। এই জুবিলি উৎসব পালন সফল করিবার জন্য প্রস্তুতি মূলক অনেক কাজ করিতে হয়। এই স্কুলের মেয়েরাও কায়িক শ্রম দিয়া ইউনিয়নকে এই কাজে সাহায্য করে। এই জুবিলিতে স্কুলের মেয়েরা নানা প্রকার ড্রিল-তলোয়ার ড্রিল, মেপল ড্রিল প্রভৃতি প্রদর্শন করে। এই জুবিলিতে কীভাবে খ্রিষ্টধর্ম গারো অঞ্চলে আসিয়াছে এবং খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণে গারোদের কী পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে তাহা “উদিত সূর্য” নামে ঐতিহাসিক Pageant প্রদর্শন করা হয়। এই স্কুলের ছাত্রীরাও এই Pageant প্রদর্শনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে।
১৯৪১ সনে কালু দারিং বঙ্গদেশে (বঙ্গ প্রদেশে) সরকারি প্রাথমিক সূচিকর্মের ডিপ্লোমাতে প্রথম স্থান অধিকার করিয়া একটি রূপার মেডেল লাভ করে। দীর্ঘদিন দক্ষতার সহিত কাজ করিয়া প্রধান শিক্ষিকা জিংমি মারাক এই বৎসর বিবাহের জন্য পদত্যাগ করিয়া চলিয়া যান। বোর্ডিং এর ম্যাট্রন যামিনী মারাকও স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করিয়া বাড়িতে চলিয়া যান। এই বৎসর স্কুলে ছাত্রীরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে ব্রহ্ম দেশের উদ্বাস্তুদের জন্য জামা-কাপড় সেলাই করিয়া প্রেরণ করে।
১৯৪২ সনে কামিনী মারাক নূতন ম্যাট্রন নিযুক্ত হন। সরোজবালা সাংমা (নানকি) গালর্স গাইড ও ব্লু বার্ডস গঠন করেন। এই বৎসর মেয়েরা বৈথেল সপ্তাহের মেলার আয়ের দ্বারা পেন্সিল, খাতা, রাবার এবং রুলার কিনিয়া বৈথেল মিশনকে দান করে।
১৯৪৩ সরোজবালা সাংমা উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য কলিকাতায় গমন করেন। মতিজান নার্সিং ট্রেনিং এর জন্য জিয়াগঞ্জে গমন করেন। আর সিরজিনিও নার্সিং ট্রেনিং-এর জন্য কলিকাতার ডাফরিন হসপিটালে চলিয়া যান। এই বৎসর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সুচিকিৎসকের বার্ষিক প্রদর্শনীতে সূচিকর্ম প্রদর্শনের জন্য স্কুল ইন্সপ্যাক্ট্রেস মিস সুমরা বিশ্বাস এই স্কুলের বারজন ছাত্রীকে ঢাকায় নিয়া যান। এই বৎসর সারা প্রদেশে সরকার ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এই কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় এই স্কুলে সমস্ত ছাত্রীই পাশ করে। উল্লেখ্য এই যে, এই স্কুলের ছাত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের এক জাতি মেয়ে শোভা, সারা প্রদেশের ৭৫৩ জন ছাত্র/ছাত্রীর মধ্যে উক্ত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে। পরবর্তীতে এই শোভা চাকমা বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মি. প্রভুদান হালদারকে বিবাহ করেন।
১৯৪৪ সনে মিস ফ্লো হ্যাসি ফারলোতে গমন করেন এবং মিস জে. এ. রেডম্যান তাঁহার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই বৎসর এই স্কুল Middle Needlework Diplomaতে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়া একটি কাপ লাভ করে। এই বৎসর একটি American Army Dental Unit বিরিশিরিতে আসে। এই দলের দন্ত চিকিৎসক Captain Cohen অধিকাংশ ছেলে মেয়ের দাঁত ভাল দেখিয়া খুশি হন। আর যাহাদের দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজন, তিনি তাহাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করিয়া যান।
১৯৪৫ সনে হিরা দারিং সহকারী ম্যাট্রন নিযুক্ত হন। এই বৎসর ভীষণ বন্যা হয়। বোর্ডিং এর মেয়েদের এই বন্যার সময়ে চাল, ডাল, লাকড়ি, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি নিয়া গির্জাঘরে আশ্রয় নিতে হয়। এই বৎসর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হয় আগস্ট মাসে। অশান্ত জগৎ শান্ত হয়। তাই শান্তি স্থাপন উপলক্ষে এই স্কুলের মেয়েরা “বিজয় পতাকা” নাটকটি মঞ্চস্থ করিয়া বিজয় উৎসব পালন করে।
চলবে…
লেখক পরিচিতি
গারো সম্প্রদায়ের জ্ঞানতাপস, পণ্ডিতজন রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বর্তমনে তিনি দুর্গাপুর থানা ধীন নিজ বাড়ি বিরিশিরির পশ্চিম উৎরাইল গ্রামে বসবাস করছেন। দুই ছেলে এক মেয়ে। স্ত্রী প্রতিভা দারিংও একজন শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাকের অনেক লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। উনার ‘বিরিশিরি মিশিন এবং ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর ইতিহাস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বই।

লেখক মণীন্দ্রনাথ মারাক
আরো লেখা
বিরিশিরি বালিকা বিদ্যালয়ের ইতিহাস ।। পর্ব-৫ ।। মণীন্দ্রনাথ মারাক
বিরিশিরি বালিকা বিদ্যালয়ের ইতিহাস ।। পর্ব-৪ ।। মণীন্দ্রনাথ মারাক
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত