পূর্ব প্রকাশের পর…
রেভা. জন এলিসনের সময়ে ময়মনসিংহে গারো ছেলেদের জন্য একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। সেই স্কুল ময়মনসিংহ শহরে চলিতে থাকে। কিন্তু নানা অসুবিধার কারণে গারো পরিবেশে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রেভা. জয়নাথ চৌধুরী সেই স্কুল ১৮৯৬ সনের ২৭শে এপ্রিল বিরিশিরিতে স্থানান্তর করেন। এই স্কুলই বর্তমান পি. সি. নল মেমোরিয়াল হাইস্কুল। এই স্কুল বিরিশিরিতে গারো ছেলেদের জন্য স্থানারিত হইলে মিস. এম. ফুলারের প্রবল ইচ্ছা জাগে বিরিশিরিতে গারো মেয়েদের জন্য একটা স্কুল স্থাপন করা। তাই তিনি বালিকা স্কুলের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন ও বাজেট তৈরি করেন ১৮৯৭ সনে। কিন্তু সনটা ছিলো বড় দুর্যোগের সন। এই সনে ১২ই জুন, বাংলা ১৩০৪, ৪ঠা জৈষ্ঠ, শনিবার বৈকালে শতাব্দীর সংর্বাপেক্ষা ভীষণ ভূমিকম্প হয়। ইহাতে এই এলাকার অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধিত হয়। এই সময়ে কানাই সাংমার বড় মেয়ে চারুবালার জন্ম হয়। সকলেই এই মেয়েকে কম্প বলিয়া ডাকিত। বড় হইয়াও তিনি এই নামেই পরিচিত ছিলেন। এই সনের আগস্ট মাসে মিস এম. ফুলার বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য তাঁহার তৈরিকৃত পরিকল্পনা ও বাজেট অস্ট্রেলিয়ায় প্রেরনের জন্য ময়মনসিংহে গমন করিলে সেই রাত্রিতে তিনি হঠাৎ করিয়া কলেরায় আত্রুান্ত হন এবং ৪ঠা আগস্টের ভোরের দিকে পরলোকে গমন করেন। এই পরম হিতৈষী মহিয়সী মিশনারির কবর এখনও ময়মনসিংহ শহরে খ্রিষ্টানদের কবর খোলায় বিদ্যমান আছে।
রেভা. জয়নাথ চৌধুরী মিস এম. ফুলারের বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ইচ্ছা, চেষ্টা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্বভার নিজেই গ্রহণ করেন। তিনি ১৮৯৮ সনে বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনাসহ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ান ব্যাপ্টিস্ট ফরেন মিশন, মেলবোর্নে প্রেরণ করেন। এই আবেদন মঞ্জুর করা হয়। তাই তিনি ১৮৯৯ সনের ১৯শে জুন ১০জন ছাত্রীকে নিয়া বালিকা বোর্ডিং স্কুল আরম্ভ করেন। এই ১০জন ছাত্রীর নাম-রামেশ্বরী মারাক, নীলজান মারাক, আজাং মারাক, স্বর্নমনি সাংমা, তনি মারাক, যামিনী সাংমা, গিন মারাক, পয়ালী দারিং, সাকমি দারিং,(সাকামি দারিং না হইয়া সাকমি ম্রং হইতে পারেন, কারণ সাকমি ম্রং রেভা. সাঙ্গিন সাংমার শাশুড়ি ছিলেন) ও জিন সাংমা।শিক্ষক ছিলেন মি. বিহারী লাল বাউল এবং সেলাই শিক্ষিকা ছিলেন তাঁহারই স্ত্রী মিসেস কিরণবালা বাউল। এই দশজন ছাত্রী ছাড়াও পরে পাঁচ/ছয় জন ছাত্রী ডে-স্কলার রূপে এই বিদ্যালয়ে যোগ দেয়।
১৯০০ সনে এই বিদ্যালয়ের জন্য ভিক্টোরিয়ান ব্যাপ্টিস্ট ফরেন মিশন সোসাইটি ৬০০.০০ টাকা মঞ্জুর করে। ১৯০১ সনে বালক ও বালিকা বিদ্যালয়কে একত্রীকরণের চিন্তুা করা হয়। জুলাই মাসে ভীষণ ঘুর্ণিঝড়ে মিস এম. ফুলারের জীবিতকালে নির্মিত বিদ্যায়ের দুইটি ছনের ঘর ভাঙিয়া যায়। পরে বালক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী স্থানে বালিকা বিদ্যালয়টি নির্মিত হয়। এই বৎসর বোর্ডিং এ দশ জন গারো মেয়ে ছিলো, তাহাদের নাম ও গ্রাম নিম্নরূপ-সমনি সাংমা, গ্রাম-চেংগিনী, প্রমিলাবালা মারাক ও দেদেক মারাক গ্রাম- কামারখালী, সাকমি মারাক(ম্রং), গ্রাম-মনসাপাড়া, (পূর্বে ছিলেন মাইজ জয়রামপাড়া), জিরি মারাক, গ্রাম-বেলসি, পয়ালি দারিং, গ্রাম-বেলসি, শ্যামা থকসি, গ্রাম-স্বল্পকরুনিয়া, যামিনী সাংমা, গ্রাম-বেলসী, গনজি সাংমা, গ্রাম-চেংগিনী ও নীলজান মারাক, গ্রাম-মাইজপাড়া।
১৯১২ সন বিরিশিরি মিশনের জন্য একটি স্মরণীয় বৎসর। এই বৎসর বেভা: পি, সি, নল ও মিসেস নল স্থায়ীভাবে থাকিবার জন্য বিরিশিরিতে আসেন। মিসেস নল বালিকা বিদ্যালয়ের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় বিশ বৎসর যাবৎ এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব বহন করেন। এই বৎসর এপ্রিল মাসে ভীষণ ঝড় ও শিলবৃষ্টি হয় এবং মিশনের প্রভৃত ক্ষতি সাধন করে। ছয়টি ঘর সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়, সাতটি ঘরের ছাদ উড়াইয়া নিয়া যায়। অনেক গাছপালা নড়িয়া যায়। মে মাসে বালিকা বোর্ডিং-এর শ্যামা ও সমনি নামে দুই মেয়ে কলেরায় মারা যায়। তাঁহাদের কাপড়-চোপড় আগুনে পোড়া দিলে এক বিরাট অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়া যায়। বারটি ঘরবাড়ি পুড়িয়া ছাই হইয়া যায়। বালিকাদের ডরমিটারি, ম্যাট্রনের বাড়ি, বৃন্দাবন মারাক, কানাই সাংমা, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি ভষ্মীভূত হয়। গুডাম ঘর পুড়িয়া যাওয়ায় চাল, ডাল, তৈল, হিসাব বহি, বাসন-কোসন প্রকৃতি বিনষ্ট হয়। ১৬ই জুন প্রবল বন্যা আসে। গত ২০/২১ বৎসরে এত প্রবল ও ভীষণ বন্যা হয় নাই। এই বন্যায় ঘরের মাটির মেঝেগুলি নষ্ট হয়। মিশনের ঘর তৈরির জন্য সংগৃহীত ত্রিশ ফুট দীর্ঘ ৬১টি শক্ত গজারি খুঁটি ভাসাইয়া নিয়া যায়। বন্যার পর মাত্র ২০টি খুঁটি খুঁজিয়া পাওয়া যায়।
চলবে…
লেখক পরিচিতি
গারো সম্প্রদায়ের জ্ঞানতাপস, পণ্ডিতজন রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বর্তমনে তিনি দুর্গাপুর থানা ধীন নিজ বাড়ি বিরিশিরির পশ্চিম উৎরাইল গ্রামে বসবাস করছেন। দুই ছেলে এক মেয়ে। স্ত্রী প্রতিভা দারিংও একজন শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাকের অনেক লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। উনার ‘বিরিশিরি মিশিন এবং ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর ইতিহাস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বই।

লেখক মণীন্দ্রনাথ মারাক
বিরিশিরি বালিকা বিদ্যালয়ের ইতিহাস ।। পর্ব-১ ।। মণীন্দ্রনাথ মারাক
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
‘আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান’
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত