গারো সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারের নাম ফরিদ জাম্বিল। তিনি একজন সঙ্গীত শিক্ষকও। স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন কমলাকান্দা থানার তারানগর গ্রামে। দীর্ঘদিন থেকেই তাঁর গানের সাথে বসবাস। বাংলাদেশ বেতারের বহুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ সালগিত্তাল’-এ প্রথম গান করেন ১৯৭৮সালে। তিনি কমলাকান্দা উপজেলা শিল্পকলার গানের শিক্ষক হিসেবে আছেন ২০১৩ সাল থেকে। সংসার জীবনে দুই ছেলে তিন মেয়ের পিতা তিনি। ফরিদ জম্বিলের সাথে কথোপকথনের বিশেষ অংশ থকবিরিম পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
থকবিরিম : কেমন আছেন দাদা?
ফরিদ জাম্বিল: আছি বলতে মোটামুটি আছি, শারীরিক তেমন ভাল না। দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছি।
থকবিরিম : আপনার সঙ্গীত জীবন কত বছরের হল?
ফরিদ জাম্বিল: বলতে পারো ছোট বেলা থেকেইা। ছোটকাল থেকেই আমি গান বাজনা করতাম। ব্যাপকভাবে আমি ১৯৭৮/ ৭৭/৭৫সাল থেকে সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছি।
থকবিরিম : সঙ্গীত জীবনে আপনার হাতে খড়ি কীভাবে হয়?
ফরিদ জাম্বিল: হাতে খড়ি…আমার মিশন পর্যায় থেকে গানের জগতে আসা। আপনি তো জানেন আমাদের তো একটা প্যারিস আছে ওখানে আমাদের যে গির্জা হয় সেই ম-লীর উপাসনার জন্য নিয়মিত গান করতে হয়। তো সেই প্যারিস থেকে আমাকে সঙ্গীত প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
থকবিরিম : এটা কোন সাল?
ফরিদ জাম্বিল: এটা হচ্ছে ১৯৭৭ কি ৭৮ সাল। সেই সময় আমি ঢাকাতে গিয়ে একটানা গানের প্রশিক্ষণ নিই এবং প্রয়োজনীয় যে শিক্ষাটা দরকার সেই শিক্ষা নিই। ওস্তাদের কাছে শিক্ষা নিই।
থকবিরিম : কে বা কারা আপনাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে?
ফরিদ জাম্বিল: অনুপ্রেরণা বলতে আমাকে গির্জার পাদ্রীরা (ফাদার) গান শেখার জন্য ১৯৭৮ সাল থেকে পাঠায়।
থকবিরিম : দাদা আমি বলতে চাইছি… ছোট বেলা থেকে….
ফরিদ জাম্বিল: ও আচ্ছা… সেই অনুপ্রেরণা হচ্ছে…আগে তো টিভির প্রচলন ছিল না। রেডিওর প্রচলন ছিল ব্যাপকভাবে। আমরা সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে রেডিও শুনতাম। ভাল ভাল শিল্পীরা গান করতো, তাদের গানগুলি শিখতাম তারা যেভাবে গায় সেইভাবে গাইবার চেষ্টা করতাম। তো এভাবে ধীরে ধীরে সঙ্গীত জীবনে প্রবেশ করি। আমার অজান্তেই আমি কীভাবে গানকে ভালবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেই বলতে পারব না। বলা যায় আমার অজান্তেই হয়ে গেছে। তবে রেডিও বড় বড় শিল্পীরাই মূলত আমার গানের প্রেরণা।
থকবিরিম : যখন কেউ আপনার গানের প্রশংসা করে তখন আপনার কেমন লাগে?
ফরিদ জাম্বিল: আমার গানে যদি কেউ মুগ্ধ হয়ে থাকে কারো অন্তরে লেগে থাকে এবং কেউ যদি আমার গান পছন্দ করে থাকে তাহলে সেটা আমার কাছে বড়ই পাওয়া। আর ভাল তো লাগেই। আমার যে চেষ্টা তখন আমার মনে হয় আমি কিছুটা হলেও দিতে পেরেছি।
থকবিরিম : গারো ভাষায় গারো গান শিখিয়ে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
ফরিদ জাম্বিল: আমাদের যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে ওরা আমাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায় আমাকে আহ্বান করে গান শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। আমি যাই তাদের ডাকে সাড়া দেবার জন্য, আমার কষ্ট হয় ঠিকই কিন্তু আমার মধ্যে নিজস্ব যে গুণটি আছে তা আমার পরের প্রজন্মকে দেবার চেষ্টা করছি। এতে আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে এসেছি সেই উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল হবে। নিজের ভিতরের কালচারটাকে প্রকাশ করে এখন তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলেই আমরা যা করতে পারিনি তা তারা ভবিষ্যতে করতে পারবে বলে মনে করি। আর এই চিন্তা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি যেন তারা প্রেরণা পায় আর কাজ করে যেতে পারে।
থকবিরিম : গারো ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় গান শেখাচ্ছেন না?
ফরিদ জাম্বিল: না বাংলাতেও আমি গান শেখাই। আমি কলমাকান্দা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি… এটা সরকারি একাডেমি। এটা গত দুবছর আগে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং সেখানে আমি প্রথম থেকেই সঙ্গীত টিচার হিসেবে গান শেখাচ্ছি। এবং উপজেলা পর্যারে আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে আমি তাদের কাছে সঙ্গীত শিখাই। আমি শুধু গারো বা আচিক গান না বাংলা গানও শিখাই।
থকবিরিম : প্রথম বেতারে গান করার অভিজ্ঞতা বলেন…
ফরিদ জাম্বিল: সেই ১৯৭৮সালের সময় আমি বনানীতে সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নিতে আসি। বনানীতে আমাদের গানের প্রশিক্ষণ চলছিল সেই সময় একদিন সালগিতালের পরিচালক মাইকেল মৃত্যুঞ্জয় রেমা আসলেন। তিনি আমার গান শুনলেন আর গান শোনার পর বললেন-আপনি আমাদের অনুষ্ঠানে গান করেন। প্রথমে আমি অবাক হয়ে যাই। আসলে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না! যাই হোক মাইকেলের মাধ্যমেই বেতারে গান করার সুযোগ পাই। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত নিয়মিত গান করে আসছি।
থকবিরিম : রেডিওতে প্রথম গান করার অনুভূতি কেমন ছিল?
ফরিদ জাম্বিল: অনুভূতিটা এরকম ছিল, এই যে রেডিওতে গান করা কত কঠিন ব্যাপার যেটা আমি কল্পনা করি নাই। হঠাৎ করে মাইকেল বাবু আমার কাছে গিয়ে প্রস্তাব করলেন আর আমি চিন্তা করলাম শুধু বাংলা না সারা বিশ্বে আমার গান মানুষ শুনবে এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।
থকবিরিম : পারিশ্রমিক কত পেয়েছিলেন সেই সময়?
ফরিদ জাম্বিল: কত যে পেয়েছি তা মনে নাই, তবে খুবই কম পেয়েছি।
থকবিরিম : গান লেখার কারণাটা একটু যদি বলতেন
ফরিদ জাম্বিল: আমাদের নিজস্ব ভাষায় গানের বড় অভাব। গুটি কয়েক গান আছে যা ঘুরেফিরে বারবার গাওয়া হয়। আর একটা কথা আমি যেটা চাই সেইটা সব গানে পাই না তাই আমি ঠিক করি গান লিখব। আমাদের নিজস্ব কালচার নিয়ে অনেক গান লেখা যায়-যা রুচি সম্মত। তা নিজস্ব লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করি।
থকবিরিম : প্রজন্মের কাছে মান্দি গানের অবস্থা কেমন দেখছেন?
ফরিদ জাম্বিল: সেই ৭৮সাল থেকে আমরা কয়েকজন মিলে একই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন মিশনে অবস্থান করি এক সপ্তাহ পাঁচ দিন ছয় দিন এইভাবে। তখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা গারো গান করবে কী উচ্চারণ-ই করতে পারতো না, বলে দেবার পরও তারা উচ্চারণ করতে পারতো না। এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা নিজে নিজে উচ্চারণ করতে পারে এবং সুন্দর নিজস্ব ভাষায় গান করতে পারে।
থকবিরিম : গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা…
ফরিদ জাম্বিল: আমি ২০০০৭ সালে সরকারি জব থেকে অবসর নিই। এরপর থেকে গান নিয়ে কাজ করছি। আশা করি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন গান নিয়ে কাটিয়ে দেব। আমি চাই নিজের ভাষায় গান রচনা করে যেতে আর তা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে দিয়ে যেতে।
থকবিরিম : গান নিয়ে একটা ঘটনা বলুন..
ফরিদ জাম্বিল: আমি যখন মান্দি এলাকাতে গান করি গান নিয়ে কাজ করি সেই সময় সেই সুদূর মরিয়মনগর থেকে কলমাকান্দা বিরিশিরি পর্যন্ত কোনো যানবাহন ছিল না.,.আমাকে পায়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হতো গান শেখানোর জন্য। এক সপ্তাহ দু সপ্তাহ লেগে যেতো পৌছাতে।
থকবিরিম : দাদা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
ফরিদ জাম্বিল: আপনাকেও!
বিশেষ ধন্যবাদ নৃত্য শিল্পী অভ্র নকরেক। ছবি থকবিরিম।
করোনাকালে ভালো নেই শিল্পী ফরিদ জাম্বিল
https://www.youtube.com/watch?v=rOeLHAyGunY
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত