Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যুর আগেই স্বর্গবাসী চিজং নকমা

প্রকাশিত : আগস্ট ২৫, ২০২০, ১১:০৩

মৃত্যুর আগেই স্বর্গবাসী চিজং নকমা

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ বাড়িতেই আছি। ফলে বাড়িতে কী হচ্ছে না হচ্ছে নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে। চিজং নকমাকে নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক কিছুই লেখা হয়েছে। তাই নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু হঠাৎ ফেসবুকে একটি ছবি ও কিছু লেখা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম! ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম! আমি ক’দিনের জন্য গ্রামের বাইরে ছিলাম তাই আপাতোত বাড়িতে কী হচ্ছে না হচ্ছে দেখার সুযোগ পাইনি। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব! ফেইসবুকের কল্যাণেই জানতে পারলাম, মৃত্যুর আগেই নাকি স্বর্গবাসী হয়ে গেছেন চিজং নকমা!

এক.

আপনারা ছবিতে দেখতেই পাচ্ছেন লেখা আছে, ‘ডাক নাম চিজংনকমা তথা আবিমা(মধুপুর,বাংলাদেশ) গারোদের মাঝে সুবিশাল জমিদার, উনার শূন্যতা অপূরণীয়। প্রার্থনা করি ওনার আত্মা স্বর্গবাসী হউক’।

এমন লেখা পড়ে শরীরে মোচড় দিয়ে উঠলো। ভাবনাতে নানা চিন্তা ঘুরাপাক খেতে লাগলো। অসম্ভব দুচিন্তায় পড়ে গেলাম। আসলে সত্যিই কী মারা গেলো(!)এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে অথবা আবার  অসুস্থ হলো কিনা!  আমি জানি না, কেউ জানালো না, কেউ কিছু বললো না। তা তো হতে পারে না। কারণ কোনকিছু খবর বা ঘটনা এখন বাতাসের সাথে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মারফতে।

দুই.

প্রাচীন (বয়স্ক) মানুষরা সবার জন্য বটবৃক্ষের মতো। যিনি সকলকে আগলে রাখেন, ছায়া দিয়ে রাখেন। আমরা কখনো প্রত্যাশা করি না; বটবৃক্ষের মৃত্যু ঘটুক। কিন্তু এমন লেখা পড়ে সত্যিই মনে হচ্ছে বটবৃক্ষের মৃত্যু হয়েছে। এমন সংবাদ বা লেখা কখনো আশা করি না (যদিও বাস্তবতা মানতে হয়)। তবে যখন কেউ না জেনে, সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে মিডিয়াতে গুজব ছড়িয়ে দেয়, জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে দেয় তখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। সাময়িক ভ্রান্তি কেটে গিয়ে সত্যটুকু জেনে গেলে হাস্যরসে তৈরি করে বিষয়টি!!

তিন.

এখানে ‘জমিদার’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই শব্দ ব্যবহারে আমার আপত্তি রয়েছে। কারণ তিনি তো জমিদার না,কখনো ছিল না, এই আধুনিক সময়ে জমিদার আছে বলে জানা নেই। উইকিপিডিয়া জমিদার সম্পর্কে লেখা আছে,”মুগল আমলে জমিদার বলতে প্রকৃত চাষির ঊর্ধ্বে সকল খাজনা গ্রাহককে বোঝানো হতো। প্রকৃত চাষি জমিদার নয়, কারণ সে কখনও তার জমি খাজনা বা ভাড়ায় অন্য কাউকে প্রদান করে না। জমিদাররা শুধু খাজনা আদায়ের স্বত্বাধিকারী, জমির স্বত্বাধিকারী নয়। পক্ষান্তরে, জমির মালিকদের বলা হতো রায়ত বা চাষি যাদের নামে জমাবন্দি বা রেন্ট-রোল তৈরি হতো। এই ধারণায় জমিদারগণ রাজস্বের চাষি ছিল মাত্র। এরা ছিল সরকার এবং হুজুরি (স্বতন্ত্র) তালুকদার ব্যতীত নিম্নস্তরের রাজস্ব চাষিদের মধ্যস্থ পক্ষ। হুজুরি তালুকদারগণ খালসায় (খাজাঞ্চি খানায়) সরাসরি রাজস্ব প্রদান করত।”

চার.

ছোট মস্তিষ্কে আমার ক্ষুদ্র  প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলাম। এমন অসত্য-মনগড়া লেখা কখনো কাম্য করি না। এটিও একটি গুজব। গারো সম্প্রদায়ের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিকে নিয়ে এমন গুজব মেনে নেয়া যায় না। চিজং নকমাকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে থাকলে অন্যভাবেও লেখা যেতো। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকি না কেন খুব সহজেই যোগাযোগ করা যায়, তথ্য নেয়া যায়। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো কিছু লেখা বা ছবি আপ করার আগে অন্তত সত্য-মিথ্যাটুকু যাচাই করে নিতে পারি যাতে যাকে নিয়ে লিখছি, যার ছবি পোস্ট করছি সে যেন কোনোভাবে আহত হন। বিশেষ করে আমাদের গারো সমাজে এখনও মিডিয়ার প্রবাব তেমন আসেনি বা পড়েনি ফলে তাদের কাছে যে কোনো গুজব অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতাম পারলাম তিনি (নকমা) দুপুরে ঘুমাচ্ছেন। শুনে শান্তি লাগলো। তিনি মোটামোটি সুস্থ্ আছেন, যদিও শরীর দুর্বল। সবাই প্রার্থনায় স্মরণে রাখবেন যেন তাড়াতাড়ি শারীরিক দুর্বলতা থেকে দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন।

।।জাডিল মৃ, বিশেষ প্রতিনিধি থকবিরিম

আরো লেখা..

http://ঢাকা ওয়ানগালা (বনানী-গুলশান) অক্টোবরের শেষ শুক্রবার

http://মান্দি মেয়ে হারিয়ে যায়, যায় কি? ।। জাজ্রিং মারাক




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost