মাননীয় প্রধান মন্ত্রী,
আপনি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালবাসা গ্রহণ করুন। আমি সেই মেয়ে যে , ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টা জেলার পক্ষে আদিবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে আপনার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছিলাম।আমাদের সুখ-দুঃখের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ১৯৭১রে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমার বাবা ও বড়দুইদাদা মহান মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পরেও শুধুমাত্র আমার বড়দাদা আলবার্ট সম্মানী ভাতা পাচ্ছে।
১৯৭৫রে যখন মহাকালের,মহানায়ক, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তখন আমার দুই বড় দাদা আদিবাসী+বাঙালি মিলে এই জঘণ্য হত্যার প্রতিশোধ নিতে প্রতিরোধ মুক্তিযোদ্ধাদল গড়ে তুলে।যার ফলশ্রুতিতে আমাদের পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। আমি তখন ময়মনসিংহ হোলিফ্যামিলি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছি। বার্ষিক পরীক্ষার পর স্কুল দীর্ঘদিনের ছুটি বড়দিন পর্যন্ত। বাবা লুকিয়ে, বড়দুইদাদা প্রতিরোধ মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে কে বাড়িতে নিয়ে আসবে?
অগত্যা আমার মায়ের মাসতুতো ভাই ফুটবল খেলোয়াড় জগদীশ মানখিনের ছোট কাকা আমার মামা সহিন্দ্র তিনি সাহস করে ময়মনসিংহে আমাকে নিতে যান। আর কনভেন্টের সিঃও মাদার ও দিদিমণিরা আমাকে শাড়ি পরিয়ে, ঘোমটা দিয়ে মামার সাথে ব্যাগ, বাক্স নিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দেয়।ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে এসেছি। কিন্তু জামালপুর গুদারা ঘাটে মানুষগুলো গুঞ্জন শুরু করছে। এভাবে শেরপুরে বাসে উঠার পর বেশি বেশি কানাঘুষা চলছে।
মুজিব বাহিনীর লোক,আলবার্ট, নরবার্ট এর ছোট বোন নিশ্চয়ই। সারাটা রাস্তায় শুধু বদনাম বঙ্গবন্ধুর আর যারা তাঁর অনুসারীদের। তারপর জুলগাঁও তেমাথা সড়ক। এখানে গাড়ি থামানো হলো, নামানো হলো আমাদের অর্থাৎ মামা ভাগ্নিকে। গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হলো কিন্তু ড্রাইভার ভাই আমার জিনিস পত্র নামাতে দিলেন না। আমাকে বলে গেলেন, আপনার ভাগ্নির জিনিসপত্র বাড়িতে পাঠানো হবে। আমি কৃতজ্ঞ তার কাছে।
গাড়ি থেকে নামানো হলে মামাকে টেনে হিঁচড়ে বেত দিয়ে মেরে বাংকারে ঢুকানো হয়।আর আমাকে একজন দয়ালু আর্মি অফিসার ১টা চেয়ার এনে বসতে দেয় আর বলেন, আমি থাকতে কেউ তোমাকে ছুঁতে পারবেনা আমি শুধু কাঁদছি ঠিক ঐ মূহূর্তে আমাদের মিশনের বিদেশি ফা. রোনাল্ড রিগ্যান ট্রিপি (বর্তমানে প্রয়াত, আমেরিকান) আর আমাদের পূর্ব গজারিকুড়ার পুলিশ দিলিপ হাউই (বর্তমানে অবসরে মুক্তিযোদ্ধা) উনারা দু’জন উল্কার বেগে এসে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।
এ যাত্রায় বাঁচলেও বাড়িতে উপদ্রব শুরু হলো। মুসলিমদের সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদ। দুদিনের পর ঈদ। সেদিন ছিল রোববার শুধু মা ছিল বাড়িতে। গির্জা শেষে যেই বাড়িতে পৌঁছলাম, সেই মূহূর্তে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করেছে সেনাদল আর স্থানীয় রাজাকার, চেয়ারম্যান, মেম্বার সাথে আরো চেলাপেলার দল। ছোট ভাই বোন দৌঁড়ে এসে বললো বাবাকে আর আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। আর অমনি বাবা আমাকে নিয়ে বাড়ির পিছন দিক বাঁশঝাড়ের ভিতরে ঢুকে সোজা উত্তর মুখী হয়ে দৌড়ে মিশনে এসে ঢুকি । এরমধ্যে কতবার যে আছাড় খেয়েছি, পরনের শাড়ি ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে, তা একমাত্র মা মারীয়া আর ঈশ্বরই জানেন।
পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত ফা. বাবাকে তাঁর গুদাম ঘরে আর আমাকে মেয়েদের সাথে হোস্টেলে ছাত্রীদের সাথে সুদীর্ঘ ১মাস খেতে, থাকতে দিয়েছিলেন। এরপর আমি বাড়িতে নিরাপদ নয় বলে মিশনের কাছে শ্রদ্ধেয় দিদি ফিলোমিনা ম্রং এর বাড়িতে মা এবং আমি আশ্রয় পেয়েছিলাম।যেদিন আমাদের বাড়ি ঘেরাও করেছিল আমাকে আর বাবাকে না পেয়ে আমার দাদুকে আর মাকে হাতকড়া লাগিয়ে ভারুয়া বাজারে ছেড়ে দিয়ে যায়।আর সেদিন এই সেনাবাহিনীর লোকেরা আমাদের দুইটা বড় বড় বলদ এবং দুই বস্তা চালও নিয়ে যায়। তারপর বাবার পরম বন্ধু স্বর্ণ কাকা হাজং (জেনারেল সেক্রেটারি টি.ডব্লিউ.এ কেন্দ্রিয় কমিটি ময়মনসিংহ), প্রয়াত ফা. পৌল তাদের প্রচেষ্টার ফলে আমি আর বাবা বাড়িতে ফিরে আসি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আমরা সর্বশান্ত হই।
আমরা ইউ.এন. ও, এবং ডি সি অফিস থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় পর্যন্ত গিয়েছি।কিন্তু অরণ্যে রোদন ছাড়া আমরা এ পর্যন্ত কি পেয়েছি? ভিডিও কন্ফারেন্সে হাজী অছি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারি করণের জন্য লিখেছিলাম, তাও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কলম দিয়ে ঘ্যাঁচ করে কেটে দিয়েছিলেন, আমাকে বলতে সুযোগ দেওয়া হয় নাই।
আজ চোখের জলে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এবং লেখার সুযোগ পেয়ে আপনাকে আমার মনের মধ্যে পোষণ করে রাখা দুঃখগুলো সবিস্তারে জানালাম। আপনি দীর্ঘজীবী হোন। মহান ঈশ্বর আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে এবং এই দেশকে সুরক্ষা করুন।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত