Thokbirim | logo

১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

কতকাল এমন হতাশার মা‌ঝে অ‌ধিকারহীনতায় বেঁ‌চে থাকবো।। দীলিপ পাহান

প্রকাশিত : আগস্ট ১৪, ২০২০, ১০:৫২

কতকাল এমন হতাশার মা‌ঝে অ‌ধিকারহীনতায় বেঁ‌চে থাকবো।। দীলিপ পাহান

রাজশাহী সদর থে‌কে ২২/২৩ কি‌লো‌মিটারদূ‌রে মোহনপুর উপ‌জেলাটি অব‌স্থিত। পান উৎপাদন/পান বর‌জের বাজারজাত কর‌ণের জন্য এ উপ‌জেলাটি সুপ‌রি‌চিত । যে দি‌কে তাকা‌নো যায় যত দূর চোখ যায় শুধু পা‌নের বরজ চো‌খে প‌ড়বে । এখানকার মানুষজন এত কর্মব্যস্ত যে পা‌শে কোন কিছু ঘটনা ঘ‌টে গে‌লেও ঐ‌দি‌কে তা‌দের ম‌নো‌নি‌বেশ তেমন নেই । পা‌নের বরজ নি‌য়ে সারা‌দিন ব্যস্ত থা‌কেন ।

পা‌নের বর‌জে পানপাতা আহর‌ণের জন্য ২ বেলা মা‌লি‌কের খে‌য়ে শ্রমমূল্য ৩৫০ – ৪০০ টাকা আ র পা‌নের বরজ তৈ‌রি‌তে যারা মি‌স্ত্রি হি‌সে‌বে কাজ ক‌রেন তা‌দের শ্রমমূল্য ২ বেলা মা‌লি‌কের খে‌য়ে ৫০০ – ৭০০ টাকা পর্যন্ত হ‌য়ে থা‌কে । অন্যান্য কা‌জের চে‌য়ে ‌যে‌হেতু পা‌নের বর‌জে শ্রমমূল্য বে‌শি তাই স্থানীয় শ্র‌মিকরা পা‌নের বর‌জে বে‌শি শ্রম বি‌ক্রি ক‌রেন ।

সে‌ক্ষে‌ত্রে কৃ‌ষি কা‌জের অন্য দি‌কে ধা‌নের বীজ উত্তোলন, ধান বপন, আগাছা প‌রিস্কা‌রের ক্ষে‌ত্রে শ্র‌মিক সংক‌টের মু‌খে প‌ড়ে ভূ‌মিমা‌লিক পক্ষ । এ সময় পার্শ্ববর্তী তা‌নোর, ‌নিয়ামতপুর,মান্দা, না‌চোল, চাঁপাই­ নবাবগঞ্জ সদর উপ‌জেলার আদিবাসী পুরুষ ও নারী শ্র‌মিক‌দের দ‌লে দ‌লে সেখা‌নে কাজ কর‌তে আস‌তে দেখা যায় ।

‌মোহনপুর সদর থে‌কে প্রায় ৫ – ৭ কি‌লো‌মিটার দূ‌রে ঘাসিগ্রাম ইউনি‌য়নের অন্তর্গত শামপুর বাজার । ‌সেখা‌নে তা‌নোর,‌নিয়ামতপুর ও না‌চো‌লের প্রায় ৫০ – ৬০ জন সাঁওতাল,মুণ্ডা ও র‌বিদাস আ‌দিবাসী জন‌গোষ্ঠীর নারী ও পুরুষ শ্র‌মিকরা শ্রম বি‌ক্রি কর‌তে এসে‌ছে । তারা বাজা‌রের পা‌শে মা‌ঠে ছোট ছোট ঝুপ‌ড়ি ক‌রে কেউবা বাজা‌রের দোকান আবার কেউবা হা‌টের বাং‌লোয় ভাড়া নি‌য়ে থা‌কেন ।

আ‌মি আর সহকর্মী আইচন পাহান প্রায় ফ্রি থাক‌লে তা‌দের সা‌থে দেখা কর‌তে যেতাম । যে‌হেতু আমরা আ‌দিবাসী , আ‌দিবাসীর যেকোন গোষ্ঠীর মানুষজন দেখ‌লে তা‌দের সা‌থে না মিশ‌লে বা কথা না বল‌লে ভাল লা‌গে না । এক‌দিন গল্প কর‌তে কর‌তে তারা জানা‌লেন ,‌সেখানকার হো‌টেলগু‌লো‌তে তা‌দের চা সহ অন্যান্য খাবার খে‌তে দেয় না । এমন‌কি যখন তারা কোন ভূ‌মিমা‌লি‌কের মা‌ঠে কাজ ক‌রেন তখন তা‌দের খাবার দেওয়া হ‌লেও শ্র‌মিক‌দের (আ‌দিবাসী‌দের) নি‌জের পা‌ত্রে নি‌য়ে খে‌তে হয় ।

এবার বুঝুন , যে আ‌দিবাসী শ্র‌মিকরা তা‌দের ঘাম ঝ‌রি‌য়ে সোনার ফসল উৎপাদ‌নে সাহায্য ক‌রে তা‌দের মানুষ হি‌সে‌বে কতটুকু মূল্যায়ন করা হয় । আ‌গে থে‌কে জানতাম তা‌নো‌রের বি‌ভিন্ন হো‌টেল রেস্টেু‌রে‌ন্টে আ‌দিবাসী‌দের খে‌তে দেওয়া হয় না এখন থে‌কে নতুন ক‌রে জানার ঝু‌লি‌তে যুক্ত হ‌লো যে মোহনপু‌রের শামপু‌রের বাজা‌রের হো‌টেলগু‌লো‌তে আ‌দিবাসীদের চা সহ অন্যান্য খাবার ‌খে‌তে দেওয়া হয় না এমন কি তা‌দের বা‌ড়ির ব্যবহার্য পা‌ত্রে খে‌তে দে‌ওয়া হয় না । বাহ ! কি সম্প্রীতির আর অসাম্প্রাদা‌য়িক চেতনার বাংলা‌দেশ !

আ‌দিবাসী‌দের মা‌য়ের ভাষা আর জা‌তির প‌রিচ‌য় নি‌য়ে প্রায় একটা কথা শুন‌তে শুন‌তে বড় হ‌য়ে‌ছি আর এখ‌নো শুন‌তে হয় এরা সাঁতাল আর এটা সাঁতাল পাড়া । আ‌দিবাসীদের যে কোন গ্রা‌মে ঘুর‌তে গে‌লে বা‌ আ‌দিবাসীর যেকোন জন‌গোষ্ঠীর লোক হোক না কেন এ শব্দ‌টি শুন‌তে পায় যে এরা সাঁতাল।

এত হেয় আর ছোট ক‌রে বলা হয় যা আমা‌দের আ‌দিবাসী‌দের হৃদ‌য়ে খুব কষ্ট লা‌গে । চুল বড় দেখ‌তে কা‌লো ,পোশাক প‌রিচ্ছদ একটু ময়লা হ‌লে সে য‌দি বাঙা‌লিও হয় তা‌কে সাঁওতা‌লের সা‌থে তুলনা করা হয় আর বলা হ‌য়ে থা‌কে তুই সাঁতা‌লের থে‌কেও খারাপ । অদ্ভূদভা‌বে এই সাঁ‌ওতাল শব্দ‌টি উচ্চারণ করা হয় ।

তারা স্বীকার কর‌তেই চাই না বুঝ‌তেই চাই না আ‌দিবাসী জন‌গোষ্ঠীর ভেতর বহুভাষাভা‌ষির আর বহু জা‌তি‌গোষ্ঠীর মানুষ থা‌কে । সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওরাও,­‌ সিং, রাই, মাহা‌তো বা‌ যে কোন

আ‌দিবাসী জন‌গোষ্ঠীর মানুষ দেখ‌লেই সাঁতাল ব‌লে । এরা যে প্র‌ত্যেকে আলাদা আলাদা জনগোষ্ঠী তারা স্বীকার ক‌রে না । হেয় ক‌রে আর সাঁতাল ব‌লে । আর ভাষার কথা কিবা বলব আ‌দিবাসীরা যখনই মা‌য়ের ভাষায় কথা ব‌লে তারা এমন ভা‌বে চে‌য়ে থা‌কে আবার কটু‌ক্তি ক‌রে ম‌নে হয় যেন আমরা ভিনগ্র‌হের বা‌সিন্দা ।

‌নি‌জের মা‌য়ের ভাষায় স্বাধীনভা‌বে হা‌টে বাজা‌রে স্কুল ক‌লে‌জে কথা বল‌তে পা‌রি না । কথা বল‌লে আমা‌দেরকে অন্য চো‌খে দেখা হয় অথচ এক‌দিন ৫২ তে মা‌য়ের ভাষায় স্বাধীনভা‌বে কথা বলা জন্য বাংলার দামাল ছে‌লেরা ভাষা রক্ষার জন্য আ‌ন্দোলন ক‌রে‌ছিল ।

‌দে‌শে আন্তর্জা‌তিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয় ঠিকই ‌কিন্তু অপরদি‌কে অন্যধ‌র্মের, ব‌র্ণের মানু‌ষের মা‌য়ের ভাষার সম্মান করা হয় না । ‌যেখা‌নে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও স্বাধীন রাষ্ট্রযণ্ত্র আ‌দিবাসী‌দের আত্নপ‌রিচয়টা বিশ্ববাসীর কা‌ছে ইতিহা‌সের পাতায় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী , ক্ষুদ্র জা‌তিস্বত্ত্বা ব‌লে প‌রিচয় করায় । আর পাশাপা‌শি সকল আ‌দিবাসী‌দের নিজস্ব মাতৃভাষা/সংস্কৃ‌তি থাক‌লেও সরকার তা রক্ষার জন্য বা স্বীকৃ‌তি প্রদা‌নের জন্য বরাবর অনীহা প্রকাশ কর‌ছে ।

রাষ্ট্রই যখন বৈষম্য সৃ‌ষ্টি ক‌রে তখন সে দে‌শের নাগ‌রিকগণ তো এর বাই‌রে থাক‌তে পা‌রে না । আর কতকাল এমন বৈষ‌ম্যের স্বীকার হ‌তে হ‌বে বাংলা‌দে‌শের আ‌দিবাসী‌দের আর কতকাল এমন হতাশার মা‌ঝে আমরা বেঁ‌চে আ‌ছি অ‌ধিকারহীনতায় ।

প্রচ্ছদ শিল্পী তিতাস চাকমা

আরো লেখা

কোভিড-১৯ ও আদিবাসী সক্ষমতা ।। পর্ব-১।। পাভেল পার্থ

কোভিড-১৯ ও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ।। সোহেল হাজং

রাষ্ট্রের অ্যান্টাগনিজম ।। নিগূঢ় ম্রং




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost