মহামারীর কত নাম!
কোনো ভাষায় কোনো শব্দের চল সেই ঘটনার ঐতিহাসিকতা জানান দেয়।করোনাকালে আমরা বাংলায় ‘মহামারী ও অতিমারী’ শব্দগুলোই বেশি শুনেছি। আদিবাসী ভাষাগুলোতেও মহামারী পরিস্থিতিকে বোঝানোর জন্য শব্দ-প্রত্যয় আছে। মান্দি-গারোদের আচিক ভাষায় মহামারী মানে ‘সিগ্রেমা’। কোচ ভাষায় ‘মালাংনি’, খুমি ভাষায় ‘কাংহয়’, ম্রো ভাষা ‘হয়’, লেঙ্গাম ভাষায় ‘ঙিয়াপখ্লাম, পাংখোয়া ভাষায় ‘রি-পুই’, সাঁওতালি ভাষায় ‘মারাংনাস’, খাসি ও জৈন্তিয়া ভাষায় ‘ইয়াপখ্লাম’, কড়া ভাষায় ‘দুরদশা’, রবিদাস ভাষায় ‘আকাল গিরালবা’, বম ভাষায় ‘পুলপি’, খিয়াং ভাষায় ‘লগা’, লুসাই ভাষায় ‘হৃ পুই’, পাহাড়িয়া ভাষায় ‘তালহৗরি’ মীতৈ মণিপুরী ভাষায় ‘লাইচ্যৎ’, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় ‘মুর্কি’। এইসব শব্দব্যঞ্জনা কী প্রমাণ করে? জানানা দেয় এসকল ভাষাভাষিরা বিগত মহামারী পরিস্থিতিগুলো সামাল দিয়েছেন। তাহলে তাদের নিশ্চয়ই কিছু অভিজ্ঞতা আর বেঁচে থাকবার নিজস্ব কৌশল আছে। কিন্তু করোনা মহামারীর শুরু থেকে আমরা সেসব কী হদিশ করেছি? মর্যাদা বা স্বীকৃতি দিয়েছি। আমরা কেবল তাকিয়ে আছি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর নানাবিধ বহুজাতিক কোম্পানির দিকে।
মহামারীর বিরুদ্ধে তিন শক্তি
মহামারী সামালের ক্ষেত্রে আদিবাসী স্বাস্থ্যবিদ্যা তিনটি বিষয়কেই আদিকাল থেকে মান্য করেছে। ১. পরিবার ও পাড়ার সকলে মিলে লকডাউন, বিচ্ছিন্নতা ও সঙ্গনিরোধের নিয়মপালন, ২. বিশেষ কৃত্য ও প্রার্থনা এবং ৩. খাদ্যাভাস ও লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর যখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না তখন আদিবাসী গ্রামগুলো কিন্তু এসব বিধি মানছে। তাহলে আদিবাসী সমাজের এই বিশেষ শক্তি ও কৌশলগুলি কী? টক, তিতা স্বাদের খাবার গ্রহণ থেকে শুরু করে ভেষজ গ্রহণ এবং প্রচুর পানি পান কিন্তু সকলেই চর্চা করছেন। এগুলো পালন করতে গেলে সবসময় কেবল অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে দরবার নয়; চারপাশের প্রাণসম্পদ চেনাজানার একটা বড় বিষয় থাকে। আর আদিবাসী গ্রামগুলো কঠোরভাবে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। বান্দরবানের বমপাড়া হোক কী মৌলভীবাজারের খাসিপুঞ্জি হোক। পরিবার, পাড়া ও গ্রামপ্রধান সকলের মাধ্যমে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা কেউ অমান্য করছে না। কারণ অমান্য করলে তার আর মহামারীকালে গ্রামে ফেরা হবে না। সবকিছু আবার ঠিকঠাক হওয়ার পর তিনি আবার গ্রামে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু দেশে তো আদিবাসী জনগোষ্ঠী মাত্র তিরিশ লাখ। তাহলে বাদবাকী ষোলো কোটি মানুষের অধিকাংশই কেন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এর সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি। এখানে আদিবাসী সমাজ থেকে শিক্ষা ও কৌশল নানাকিছুই গ্রহণ করা যেতে পারে।
লকডাউন এক আদিপদ্ধতি
মহামারী সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে ঘর, পাড়া, রাস্তা, গ্রাম বন্ধ করে দেয়া, সাময়িক বিচ্ছিন্নতা, কোথাও দূরে কিছুদিন চলে যাওয়া, সঙ্গনিরোধ এসব আদিবাসী সমাজের বেশ প্রাচীন পদ্ধতি। লকডাউনের মাধ্যমে গ্রামবন্ধ করাকে বমরা বলে ‘প্লেংখাম’। মান্দিরা ‘সঙ দেংচেংআ’, কোচেরা ‘চিংয়ে হারিকু খাই চিয়ে আ’, খুমিরা ’আভাং আখো’, পাংখোয়ারা ‘খোয়া খার’, চাকমারা ‘আদাম বন গরানা’, ¤্রােরা ‘খাং কোয়া’, লেঙামরা ‘খাং চোনং বাই ঙিয়াপখ্লাম’, ত্রিপুরারা ‘কামি নি লামা মুথুকজাক’, সাঁওতালরা ‘আতো কুলুপ’, খাসিরা ‘খাং কারদেপ ছোনং বাহ ইয়াপখ্লা’, কড়ারা ‘বাধ দেয়া’, রবিদাসরা ‘উঘর না যায় পড়ি’, লালেংরা ‘গাওরাখলা আবইল্যা বনসোয়ে’, খিয়াংরা ‘হেনেই’, লুসাইরা ‘খুয়া যারহ’, জৈন্তিয়ারা ‘খাং সোনং’, তঞ্চংগ্যারা ‘পাড়া বন করা’, ওঁরাওরা ‘গাও বাইন্ধ লিবে’, মীতৈ মণিপুরীরা ‘খুন চংনদবা’, মারমারা ‘রোয়া খাং’, কডারা ‘টলা বন্ধ’, কোলরা ‘মাতো টল’ এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা বলে ‘গরে ত না নিকুলানি’।
চলবে…
কভার প্রচ্ছদ শিল্পী তিতাস চাকমা
লেখক পরিচিতি
পাভেল পার্থ : প্রাণবৈচিত্র্যের গবেষক ও লেখক। আদিবাসীদের পরম বন্ধু।

পাভেল পার্থ
আরো খবর
কোভিড-১৯ ও আদিবাসী সক্ষমতা ।। পর্ব-১।। পাভেল পার্থ
কোভিড-১৯ ও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ।। সোহেল হাজং
আদিবাসী ধর্মের আধ্যাত্মিকতা ।। গৌরব জি. পাথাং
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত আদিবাসী ফোরামের প্রবন্ধমালা
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত