Thokbirim | logo

২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

পালাগান সেরেজিং ।। পর্ব-৫।।মতেন্দ্র মানখিন

প্রকাশিত : আগস্ট ০৬, ২০২০, ১১:৩২

পালাগান সেরেজিং ।। পর্ব-৫।।মতেন্দ্র মানখিন

পূর্ব প্রকাশের পর…

সেরেনজিং যাকে নিয়ে কল্পনা করেছে এতদিন তার মনের কথা জানতে পেরে প্রেমের বন্যা বয়ে যায় তার উচ্ছলা যৌবন নদীতে। সারাক্ষণ ঘুম হয়নি সে রাত। কল্পনার চোখে শুধু ওয়ালজান। ওয়ালজান কতো ভাল। যেমন তার স্বাস্থ্য, তেমন তার রূপ। যেমন তার কর্ম তার মন। পরদিন সকালে তারা চললো খড়িকাঠ সংগ্রহে। পথে কোনো আলাপ নেই। আজ ওরা ঢুকেছে গভীর জঙ্গলে। কিছুক্ষণ গাছের ডাল কাটার পর সেরেনজিং ও ওয়ালজান বিশ্রাম নিতে বসলো। একটা কাছের মূলে। সেরানী পাশেই ছিল। ব্যাপার বুঝে কাজের ছলনায় সেরানী দা হাতে একটু দুরে চলে গেলো। ওয়ালজান একটা বিড়ি ধরিয়ে সেরেনজিংয়ের মুখ পানে চেয়ে তা টানতে লাগল। পলকহীন নয়ন তার। সেরেনজিং ওয়ালজানের এ চাহনি এখন বুঝে।

-কী দেখছো দাদা?

-দেখছি তোমার রূপ সৌন্দর্য। কিন্তু আজ তোমার চোখ লাল কেন বলতো?

-সেতো তুমি করেছো।

-আমি কী করলাম? আমি কি তোমার চোখে আঘাত করেছি কখোনো?

সেরেনজিং আল্প হেসে বলে

– চোখে করনি মনে করেছো। আর সে মনই আমাকে সারারাত ঘুমাতে দেয়নি।

ওয়ালজান নিরুত্তর। হাত থেকে বিড়িটা ফেলে দিয়ে দু হাতে সেরেনজিংয়ের মুখখানা তোলে ধরে ওপরে।

-সত্যি বলছ সেরেনজিং?

সেরেনজিং ভিজা কণ্ঠে উত্তর দেয়,

“সিমাংজলল দোগিপা চিরিং নাথক নিকগিজা

দাদা নাংখো নিকগিজা রোনা মানজা দিক দিকসা।”

বাংলা

সিমসাং জলে উজায় মাছ দেখা যায় না

তোমারে না দেখে আমি থাকতে পারি না।

ওয়ালজাম সেরেনজিংয়ের মুখখানা আর কাছে টেনে ধরে বলে,

-তবে বলো তুমি আমার।

-জানি না কপালে কী আছে। তবে এই টুকু মনে রাখো আহারে বিহারে শয়নে স্বপনে একমাত্র তুমিই আমর কল্পনা।

ওয়ালজান সেরেনজিংয়ের  মুখখানা তোলে ধরে চুম্বন করে। সেরেনজিং ওয়ালজানের গ্রীবা জড়িয়ে ধরে তৃপ্তি শ্বাস ফেলে। নিবিড় বন। দুটো প্রাণি। একান্ত কাছাকাছি ওয়ালজান বনের লতাপাতা জড়িয়ে দিল সেরেনজিংয়ের গলায়। খোপায় পরিয়ে দিল বনফুল। সাক্ষী রইল নিশ্চল পাহাড় আর গভীর অরণ্য। বিপদ ঘটলো সেরেনজিংয়ের মেসো সিমরেং। ঐ সময়ে কী একটা কাজে ঐ জঙ্গল পথে সিমরেং যাচ্ছিল অন্য বনে। সে জানত ওরা এ বনে কাঠ সংগ্রহ করতে আসে। জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহের কোন শব্দ না পেয়ে তার মনে সন্দেহ জেগে উঠল। কদিন ধরে সেরেনজিং ও ওয়ালজানের কিছুটা পরিবর্তন দেখতে পাচিছল সিমরেং। যে কথা সেই কাছ। গাছের আড়াল থেকে ওয়ালজান ও সেরনজিংয়ের সব কা- কারখানা দেখে ফেলে সে। রাগে আর সেদিন সিমরেং কাজে গেলেন না। বাড়ি পৌছে স্ত্রীর কাছে সব খুলে বলল। সাথে সাথে প্রস্তাবও ঠিক হয়ে গেলো। সিমরেং এর এক আপন ভাগ্না আছে। নাম থোরা। ছেলেটা হাবা গোছের বটে কিন্তু বিয়ে  করার বয়স হয়েছে তার। স্বামী স্ত্রী সিদ্ধান্ত হয়েছে থোরার সাথেই সেরেনজিংয়ের বিয়ে হবে। এতে সবকূল ঠিক থাকবে। না আর বিলম্ব করা চলে না। ঐ সময় থোরার বাবা এসেছিল  সিমরেংয়ের বাড়িতে কাজে। ভালোই হল। সবাই একসাথে বসে বিয়ের পাকা আলাপ হয়ে গেলো। সামনে মাসের ওয়ানগালা উৎসবের সময়ে তাদের বিয়ে হবে।

চলবে…




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost