Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

গারো অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মের আগমন  ।।  পর্ব-৫ ।। মণীন্দ্রনাথ মারাক

প্রকাশিত : আগস্ট ০৩, ২০২০, ১০:০৪

গারো অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মের আগমন  ।।  পর্ব-৫ ।। মণীন্দ্রনাথ মারাক

রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাক গারোজাতিসত্তার একজন পণ্ডিতজন এবং সমাজ চিন্তক। তিনি পুরো জীবনটাই লেখালেখি আর সমাজ ভাবনায় ব্যয় করে যাচ্ছেন। বর্তমানে উনার বয়স প্রায় ৮৫ বছর। রেভা. মণীন্দ্রনাথ মারাকের  ‘ গারো অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মের আগমন ’ লেখাটি থকবিরিম পাঠকদের জন্য  লেখকের প্রকাশিতব্য ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিক প্রকাশ করা হচ্ছে। ‘গারো অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মের আগমন’ লেখাটির আজ পর্ব-৫ প্রকাশ করা হলো-সম্পাদক।

জ্ঞানতাপস মণীন্দ্রনাথ মারাক

১৯০১ সনেই নয়নকান্দি মণ্ডলীর কিছুলোক হালুয়াঘাটে চলে যান। তাঁরাই হালুয়াঘাট চার্চ অব ইংল্যান্ডের আদি খ্রিষ্টান। ১৯০৬ সনে রেভা: জয়নাথ চৌধুরী এসে এ মিশনে কাজ আরম্ভ করেন। ১৯০৯ সনে ১১ই জুলাই রবিবার গির্জা উপাসনার পর আহার করেন। আহারে তিক্ত স্বাদ পান। খাবার পর উদর ভীষণভাবে ব্যথা করে। স্থানীয় ডা: এসে চিকিৎসা করলেই ভাল হলেন না। ঐদিন বিকালেই তিনি মারা যান। মারা যাবার আগে তিনি উপস্থিত লোকদেরকে বলেন-তোমরা খ্রিষ্টে বিশ্বাস স্থির থাক, আর আমার ছেলেকে দেখো। তাঁর মৃতু্তে চার্চের লোকেরা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে সন্দেহে ময়মনসিংহে পোস্ট মর্টেম করতে নিয়ে যান। পোস্ট মর্টেমের ফলাফল জানা যায়নি। তাঁর মৃত দেহ আর হালুঘাটে আনা হয়নি। ময়মনসিংহ ব্যাপ্তিস্ট মিশনের কবরস্থানে তাঁর মরদেহ কবরস্থ করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর শিক্ষক অশ্বিনি সরকার মিশন তত্ত্ববধান করেন। হালুয়াঘাটের সেন্ট এন্ড্রুজ মিশনই গারো অঞ্চলের চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান কর্মকেন্দ্র। অন্যান্য কেন্দ্রগুলো হলো-সাতকুরা, ইদিলপুর, খাগগড়া, রাঙাঝোরা, কাপাসিয়াপাড়া, পানিহাটি, তুরা, বড়জানী, কুমিরা, শশা, শম্ভুগঞ্জ, কাতলমারি, বিষামপুর ও ঢাকুয়া। সাতকুরা কেন্দ্র এখন আর নাই। বর্তমানে পূর্ব বারমারিতেও চার্চ অব ইংল্যান্ডের কেন্দ্র আছে। গারো অঞ্চলে চার্চ অব ইংল্যান্ডের নিবেদিত প্রাণ ও কর্মবীর ছিলেন আচার্য্য ফাদার মহেন্দ্র চক্রবর্তী, ফাদার ভুপাল সরকার, ফাদার পাঞ্জা প্রমুখ। মানুষের মুখে তাঁদের প্রশংসা শুনা যায়। উল্লেখ্য যে, হালুয়াঘাট মিশনের শতবর্ষ পূর্ণ হয়ে গেছে। এই চার্চ সম্বন্ধে আমার বিশেষ জানা নাই। পাঠকের অনুরোধ করি সুযোগ পেলে জাতীয় খ্রিষ্ট প্রচার সমিতি কলিকাতা কর্মপরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ’হালুয়াঘাট’পুস্তকটি পাঠ করবেন। ১৮৯৯ সনে ঢাকা ব্যাপ্টিস্ট মিশন ভাওয়াল গড়ের গারোদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে দুজন প্রচারক প্রেরণ করেন। এলাকাটি নারায়নগঞ্জ মিশনের অধীনে থাকায় নারায়নগঞ্জের মিশনারি রেভা: র‌্যানস ফোর্ড, রেভা: সাটন পেজ ও রেভা: নোবল পর্যায়ক্রমে ভাওয়াল গড়ের গারোদের মধ্যে কাজ করেন। বাঙালি প্রচারক ভুবন মোহন দাস, বিহারী লাল বিশ্বাস, চন্দ্র কান্ত বৈদ্য প্রমুখ কাজ করেন। গারো ব্যাপ্টিস্ট ইউনিয়নের প্রচারক জয়নাথ কুবিও মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে প্রচার করেন। তাঁদের পরিশ্রমে উজলাবো, চাঁনপুর, নয়নপুর, পাখিরচালা, কেওয়াচালা, দুলমা, সোনাখালী, মল্লিকবাড়ি প্রভৃতিতে গারো ম-লী স্থাপিত হয়। কিন্তু পরে এই অঞ্চলের অনেক গারো আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে গমন করেন।

১৯০৯ সনে টাকশাল পাড়ায় গারো ব্যাপ্টিস্ট ইউনিয়নের ১৭তম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্থানীয় মণ্ডলীর নেতাদের মধ্যে মতভেদ ও বিবাদ হয়। অনৈতিক কাজকর্ম ও ঘটে। একটা কাজ থানা পর্যন্ত গড়ায়। এসব কারণে বেশ ক’জন লোককে মণ্ডলী থেকে বহিস্কার করা হয়। তাঁরাই ১৯১০ সালে ঢাকায় বিশপের কাছে যান। ১৯১১ সনে রোমান ক্যাথলিক মতে বাপ্তিষ্ম দেওয়া হয়। টাকশাল পাড়ার ঐসব লোকদের সঙ্গে কামারখালি ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর লোকেরা পরে যোগ দেন। ১৯১২ সনে রাণীখং মিশন স্থাপিত হয়। এই মিশনকে কেন্দ্র করে কলক্রমে নিম্ন লিখিত মিশন বা প্যারিশ স্থাপিত হয়। যথা-১। ময়মনসিংহ (১৯২৭) ২। বিড়ইডাকুনী (১৯২৮) ৩। ভালুকপাড়া (১৯২৪) ৪। বালুচরা (১৯৩০) ৫। মরিয়মনগর (১৯৩৭) ৬। বারমারী (১৯৪২) ৭। জলছত্র (১৯৬০) ৮। বরয়াকোনা (১৯৮৯) ৯। পীরগাছা ১০। ঝলঝলিয়া। বর্তমানে দর্গাচালা ও ঢাকুয়ায় মিশন স্থাপিত হয়েছে। সম্প্রতি ডনবস্কো ফাদারগণ উৎারাইলে ২০০৯ সালে নতুন মিশন স্থাপন করেছেন। ১৯৮৭ সনে ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে এই ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল একজন গারো। তিনি হলেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ পনেন পল কুবি (সিএসসি)। এই ধর্ম প্রদেশের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৮০ হাজারের উপরে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলায় গারো অধ্যুসিত এলাকা নারায়নতলা (মুগাইপাড়) মিশন রয়েছে। বাংলাদেশে গারো খ্রিষ্টানের সংখ্যা ক্যাথলিকদের মধ্যেই বেশি এই চার্চ সম্বন্ধে জানবার জন্যে পাঠকদের রাণীখং মিশন শতবর্ষ পূর্তি স্মরণিকা ও গারো অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মের আগমন এবং অবদান পড়বার অনুরোধ জানালাম।

চলবে…




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost